আধুনিক যন্ত্রপাতি নিয়ে নেমেছে ডিএনসিসি মরবে উড়ন্ত মশাও

এইমাত্র জাতীয় রাজধানী স্বাস্থ্য

বিশেষ প্রতিবেদক : ডেঙ্গু পরিস্থিতি গত বছর ভয়াবহ রূপ নিলে তা সামাল দিতে বেশ হিমশিম খেতে হয় ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনকে। এবার মশার যন্ত্রণা থেকে নগরবাসীকে রক্ষা করতে মশক নিধন কার্যক্রমে আধুনিক যন্ত্রপাতির ওপর জোর দিয়েছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি)। এ জন্য জার্মানি থেকে দুটি ভেহিকেল মাউন্টিং ফগার মেশিন আনা হয়েছে।
ডিএনসিসি সূত্র জানায়, ভেহিকেল মাউন্টিং ফগার মেশিন পিকআপ ভ্যানে বসিয়ে উড়ন্ত মশা নিধন অর্থাৎ এডাল্টিসাইডিং করা যাবে। প্রতিটি মেশিনে ১৫০ লিটার এডাল্টিসাইড রাখা যায়। এ মেশিনের সাহায্যে অনেক দূর পর্যন্ত এডাল্টিসাইডিং করা যায়। কোনো গলির এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্ত পর্যন্ত এ মেশিনের ধোঁয়া চলে যায়। ফলে অল্প সময়ে অনেক এলাকা এডাল্টিসাইডিং করা যায়। প্রতিটি মেশিন চালনা করতে একজন অপারেটর ও একজন ড্রাইভারের প্রয়োজন হয়।
ভেহিকেল মাউন্টিং ফগার মেশিন দুটি গত নভেম্বর থেকে ব্যবহার করা হচ্ছে। এ ছাড়া ১০টি মোটরসাইকেলে ফগার মেশিন স্থাপন করে ডিএনসিসির ১০টি অঞ্চলে ব্যবহার করা হচ্ছে।
ডিএনসিসির প্রতিটি অঞ্চলে দুটি করে ১০টি অঞ্চলে মোট ২০টি মিস্ট ব্লোয়ার বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এই মেশিন মশার ডিম ও লার্ভা নিধনে অর্থাৎ লার্ভিসাইডিংয়ের জন্য ব্যবহৃত হয়। যেসব ড্রেন ঢাকা সেসব ড্রেনের ভেতরে লার্ভিসাইডিংয়ের জন্য মিস্ট ব্লোয়ার খুব উপযোগী। এ মেশিনের সাহায্যে প্রায় ৩০-৪০ ফুট পর্যন্ত দূরত্বে লার্ভিসাইডিং করা যায়। প্রতিটি মেশিন পরিচালনা করতে মাত্র একজন জনবলের প্রয়োজন হয়। ম্যালেরিয়া, অয়েলবিসহ যে কোনো লার্ভিসাইডিংয়ের জন্য এ মেশিন ব্যবহার করা যায়।
এ ছাড়া এডিস ও কিউলেক্স মশা নিয়ন্ত্রণে কীটতত্ত্ববিদদের পরামর্শক্রমে বছরব্যাপী কর্মপরিকল্পনা (স্বল্প মেয়াদি) প্রণয়ন করে তা স্থানীয় সরকার বিভাগে পাঠিয়েছে ডিএনসিসি। সেই সঙ্গে অঞ্চল পর্যায়ে কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়নের নির্দেশনাও দিয়েছে।
শুধু তাই নয়, দীর্ঘমেয়াদি অর্থাৎ পাঁচ বছরের পরিকল্পনাও নিয়েছে ডিএনসিসি। এতে এডিস ও কিউলেক্স মশা নিয়ন্ত্রণে ইনট্রিগেট ভেক্টর ম্যানেজমেন্ট কর্মপরিকল্পনা প্রক্রিয়াধীন। এ ছাড়া এডিস মশা নিয়ন্ত্রণে জনগণের মাঝে সচেতনতা তৈরিতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও কমিউনিটি পর্যায়ে সচেতনতামূলক সভা করবে সংস্থাটি। গত ৫ জানুয়ারি থেকে মাঠপর্যায়ে মশা নিধনে বিশেষ অভিযান পরিচালনার জন্য ছয়দিনে ১ নম্বর ওয়ার্ড হিসেবে কার্যক্রম জোরদার করা হয়েছে।
ডিএনসিসির সূত্র জানায়, এডিস মশা নিধন কার্যক্রম জোরদার করতে ২০০টি সুয়িং ফগ মেশিন, ২৩৮টি পাল্স ফগ মেশিন, ১৫০টি হার্টসন হস্তচালিত মেশিন, ৩৪০টি প্লাস্টিকের হস্তচালিত মেশিন, ২টি ভেহিকেল মাউটেন্ট ফগার, ১০টি মোটরসাইকেলে ফগার ও হস্তচালিত মেশিন সংযোজন এবং ২০টি মিস্ট ব্লোয়ার বা পাওয়ার স্প্রে মেশিন কিনেছে ডিএনসিসি। ভবিষ্যতে আরও ভেহিকেল মাউটেন্ট ফগার মেশিন কেনার পরিকল্পনাও নেয়া হয়েছে।
অন্যদিকে কিউলেক্স মশার প্রজননস্থল (হট স্পট) চিহ্নিত করতে ২ জন কনসালটেন্ট ও ১০ জন শিক্ষানবিশ কীটতত্ত্ববিদ ওয়ার্ডভিত্তিক ১৫ দিনব্যাপী সার্ভে কার্যক্রম পরিচালনা করেছেন। এ ছাড়া মশক নিধন কার্যক্রম জোরদার করতে আউট সোর্সিংয়ের মাধ্যমে প্রতিটি ওয়ার্ডে ১০ জন করে মশক কর্মী নিয়োগ এবং প্রয়োজন সাপেক্ষে আরও অতিরিক্ত জনবল নিয়োগ করার পরিকল্পনা রয়েছে সংস্থাটির।
জানা গেছে, কীটনাশকের গুণগত মান ও কার্যকারিতা নির্ণয়ের জন্য ডিএনসিসির কারিগরি কমিটির পরামর্শক্রমে এডিস মশা ও কিউলেক্স মশা নিয়ন্ত্রণে অধিক কার্যকরী কীটনাশক (ম্যালাথিয়ন) প্রবর্তন করা হয় এবং কীটনাশক বর্তমানে মাঠপর্যায়ে প্রয়োগ করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে ৮ হাজার লিটার লার্ভিসাইড, ৭ লাখ লিটার এডাল্টিসাইড এবং ৩ লাখ লিটার ম্যালেরিয়া ওয়েল’বি প্রয়োগ করেছে সংস্থাটি। স্থায়ী মশক নিধন কর্মীর কার্যক্রম তদারকির (ট্রেকিং) জন্য ২৮৫ জন মশক নিধন কর্মীকে মোবাইল সিম দেয়া হয়েছে।
চলতি মাসের শুরুতে কিউলেক্স ও এডিস মশা নিয়ন্ত্রণে ডিএনসিসির কেন্দ্রীয় মতবিনিময় সভা করে ডিএনসিসি। পরবর্তীতে পর্যায়ক্রমে ১০টি অঞ্চলে ও ৫৪টি ওয়ার্ডে সচেতনতামূলক সভা করবে সংস্থাটি।
এ বিষয়ে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আবদুল হাই বলেন, ডেঙ্গু প্রতিরোধে যথেষ্ট প্রচার করা হয়েছে। জনগণ এখন জানে কেন ডেঙ্গু হয়, কীভাবে প্রতিরোধ করতে হয়। এরপরও যদি কেউ সচেতন না হন, তাকে আইন অনুযায়ী জেল-জরিমানা করা হবে। ভালোবাসা দেয়ার দিন শেষ, এখন থেকে প্রয়োজনে আইন প্রয়োগ করে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে রাখা হবে।
ডিএনসিসির প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোমিনুর রহমান মামুন বলেন, মশক নিয়ন্ত্রণে ইতোমধ্যে ডিএনসিসির রিসোর্স বাড়ানো হয়েছে। এ ছাড়া সার্বক্ষণিক কীটতত্ত্ববিদদের কাছ থেকে পরামর্শ নিয়ে সে অনুযায়ী কার্যক্রম চালানো হচ্ছে। কিউলেক্স মশা নির্মূলে গবেষণা করে সম্ভাব্য প্রজননক্ষেত্র (হটস্পট) চিহ্নিত করে সেগুলো ধ্বংস করা হয়েছে। বাড়ি বাড়ি চিরুনি অভিযান অব্যাহত থাকবে। ডেঙ্গুর কারণে যাতে আর কোনো প্রাণহানি না ঘটে, সে জন্য ডিএনসিসি সব ধরনের পদক্ষেপ নেবে।
ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মশক নিধন কার্যক্রম বিষয়ে সদ্যবিদায়ী মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেন, মশা নিধনের সিস্টেমটাকেই আসলে ঢেলে সাজাতে হবে আমাদের। মশার প্রজননক্ষেত্র বের করে তা ধ্বংস করতে হবে। মানের দিকে বিশেষ নজর দিতে হবে। এখানে ইন্টিগ্রেটেড ভেক্টর ম্যানেজমেন্টের (আইভিএম) আওতায় বছরজুড়ে এডিস মশা নির্মূলে কাজ করতে হবে। কীটতত্ত্ববিদ নিয়োগ দিতে হবে। মশার প্রজননক্ষেত্র, জন্মস্থানেই আগে হিট (আঘাত) করতে হবে। কলকাতার মতো যখন ডেঙ্গু রোগী পাওয়া যাবে, তখন তার বাসায় যেতে হবে। তার বাসার চারদিকে ওষুধ ছিটাতে হবে। জনগণকে সচেতন হয়ে অবশ্যই এগিয়ে আসতে হবে, তা না হলে সিটি কর্পোরেশনের একার পক্ষে সব করা সম্ভব নয়।
এদিকে মশক নিয়ন্ত্রণে সম্প্রতি ডিএনসিসিতে আধুনিক যন্ত্রপাতির সংযোজন করা হয়। মূলত মশক নিধন কার্যক্রমকে আরও গতিশীল ও কার্যকর করতে কীটতত্ত্ববিদদের পরামর্শে এসব যন্ত্রপাতি সংযোজন করা হয়।
বিষয়টি নিশ্চিত করে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের প্রধান জনসংযোগ কর্মকর্তা এ এস এম মামুন জানান, সংযোজিত যন্ত্রপাতির মধ্যে রয়েছে ২০টি মিস্ট ব্লোয়ার এবং ২টি ভেহিকেল মাউন্টিং ফগার মেশিন। এ ছাড়া আরও ৩টি ভেহিকেল মাউন্টিং ফগার মেশিন কেনা হবে।


বিজ্ঞাপন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *