সাগরে জেগে ওঠা ভূখন্ড সম্ভাবনার নতুন দুয়ার

এইমাত্র জাতীয় জীবন-যাপন সারাদেশ

বিশেষ প্রতিবেদক : বাংলাদেশের সমুদ্র তটে জেগে ওঠা নতুন ভূখন্ড ব্যবহার উপযোগী করতে সরকারের সঙ্গে কাজ করছে বেসরকারি সংস্থা সেন্টার ফর এনভায়রনমেন্টাল অ্যান্ড জিওগ্রাফিক্যাল ইনফরমেশন সার্ভিস (সিআইজিএস), চর ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড সেটেলমেন্ট প্রজেক্ট (সিডিএসপি), অ্যাকুয়াচারি ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রাম (ইডিপি), ইনস্টিটিউট অব ওয়াটার মডেলিংসহ (আইডব্লিউএস) এক ডজন সংস্থা। নতুন ভূমির ফিজিবিলিটি স্টাডি করে এটি ব্যবহারের কর্মপরিকল্পনা ঠিক করে সরকারকে জানিয়েছে তারা। নেদারল্যান্ডস ও ইফাদের আর্থিক সহায়তায় ১৯৭০ সাল থেকেই নতুন ভূমি উদ্ধারে সমন্বিতভাবে কাজ করছে বাংলাদেশ। সমন্বিত এমন কার্যক্রমের সুফলও মিলছে। প্রতি বছর গড়ে অন্তত ২০ বর্গকিলোমিটার নতুন চরের দেখা মিলছে।
সাগরের বুক চিরে জেগে ওঠা ভূমি নতুন স্বপ্নও দেখা দিচ্ছে। হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগে নতুন ভূমিতে হচ্ছে অত্যাধুনিক কলকারখানা। হচ্ছে অর্থনৈতিক অঞ্চল, বিদ্যুৎকেন্দ্রও। মিরসরাইয়ে ৩০ হাজার একরের বিশাল ভূমিতে হচ্ছে দেশের সর্ববৃহৎ অর্থনৈতিক অঞ্চল। বঙ্গবন্ধু শিল্পনগরী নামে পরিচিত নতুন ভূমির এ অর্থনৈতিক অঞ্চলে এরই মধ্যে ৮২ হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ প্রস্তাব এসেছে। মহেশখালীর নতুন ভূমি ঘিরে হয়েছে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাসের (এলএনজি) টার্মিনাল। কয়লাভিত্তিক ১২টি, বায়ুভিত্তিক একটি ও সৌরশক্তির দুটিসহ ১৪টি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের মহাপরিকল্পনা আছে এ দ্বীপে। একটি গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণের কাজও এগিয়ে চলেছে মহেশখালীতে। সন্দ্বীপের জেগে ওঠা নতুন ভূমি ঘিরেও হচ্ছে উন্নয়ন পরিকল্পনা। অর্থনৈতিক অঞ্চল হবে সেখানে। আবার লবণশিল্পের জন্য আলাদা একটি জোন করারও পরিকল্পনা আছে সন্দ্বীপে।
১৪৮ বর্গকিলোমিটার আয়তনের সন্দ্বীপের তিন পাশে গড়ে ওঠা নতুন ভূমির পরিমাণ মূল সন্দ্বীপের প্রায় দ্বিগুণ। আবার নোয়াখালী জেলা ঘিরে গড়ে উঠেছে নিঝুমদ্বীপ, চরকবিরা, চরআলীম, সাগরিয়া, উচখালী, নিউ ডালচর, কেরিংচরসহ প্রায় পাঁচ হাজার বর্গকিলোমিটারের নতুন ভূমি। এ জেলার দক্ষিণ প্রান্তে জেগে ওঠা নতুন ভূমির মধ্যে প্রায় সাত হাজার হেক্টরে বনায়নও করেছে বন বিভাগ। নতুন ভূমি জেগে উঠেছে খুলনার সুন্দরবন এলাকা ঘিরেও। ভূমি মন্ত্রণালয় বলছে, আস্তে আস্তে টেকসই হয়ে ওঠা নতুন ভূমির পরিমাণ অন্তত ১০ লাখ হেক্টর। তবে টেকসই হওয়ার অপেক্ষায় থাকা নতুন ভূমি আছে আরও প্রায় ২০ লাখ হেক্টর।
জেগে ওঠা নতুন ভূমির সর্বোচ্চ সদ্ব্যবহার করতে ২০১৬ সালে ‘কৃষিজমি সুরক্ষা ও ভূমি ব্যবহার আইন’ নামে নতুন একটি আইন প্রণয়ন করার উদ্যোগ নেয় ভূমি মন্ত্রণালয়। এ প্রসঙ্গে ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ সম্প্রতি বলেন, নতুন ভূমির সর্বোচ্চ সদ্ব্যবহার করতে কাজ করছে ভূমি মন্ত্রণালয়। এ জন্য একটি আইন চূড়ান্ত করা হচ্ছে। এই আইনের খসড়ায় ভূমি ব্যবস্থাপনা, ভূমি উন্নয়ন, ভূমি ব্যবহার ও কৃষিজমি সুরক্ষাসহ ভূমি-সংক্রান্ত বিষয়াদি সম্পর্কে দিকনির্দেশনা থাকবে। বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের মতামতও নেওয়া হচ্ছে। ভূমির সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করতে হাইকোর্টেরও একটি নির্দেশনা আছে।
বেজার নির্বাহী চেয়ারম্যান পবন চৌধুরী বলেন, জেগে ওঠা নতুন ভূমি বাংলাদেশের জন্য আশীর্বাদ হয়ে উঠেছে। এরই মধ্যে নতুন ভূমি ঘিরে ব্যাপক উন্নয়ন পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। সরকারের পরিকল্পিত ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চলের অনেকগুলোই হবে এই নতুন ভূমিতে। দেশি-বিদেশি নানা প্রতিান হাজার হাজার কোটি টাকা নিয়ে এগিয়ে আসছে বিনিয়োগ করতে। ব্যবসাবান্ধব ও দূরদর্শী নীতি দিয়ে এসব বিনিয়োগকে বাস্তব রূপ দিতে চাই। অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলো কর্মচঞ্চল হলে লক্ষাধিক লোকের নতুন করে কর্মসংস্থান হবে। বাড়তি আয় হলে নতুন করে তখন ঘুরে দাঁড়াবে লক্ষাধিক পরিবারও।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের গবেষণা কর্মকর্তা ড. শাহ মো. মোয়াজ্জেম বলেন, নতুন ভূমির সর্বোচ্চ সদ্ব্যবহার করতে হলে দরকার দূরদর্শী নীতিমালা। কোন প্রক্রিয়া অনুসরণ করে কারা এ ভূমি ব্যবহার করতে পারবে, বিনিময়ে সরকার কীভাবে লাভবান হবে, কারা এসব স্থাপনায় কর্মসংস্থানের সুযোগ পাবে- এসব গভীরভাবে বিশ্নেষণ করতে হবে মন্ত্রণালয়কে। শুধু ভূমি মন্ত্রণালয় নয়; এ নীতিনির্ধারণে বাডুজ্য, শিল্প, বন ও পরিবেশসহ সংশ্নিষ্ট সব মন্ত্রণালয়কেও সম্পৃক্ত করতে হবে। নতুন ভূমি কীভাবে টেকসই করা হবে, পরিবেশ কীভাবে সুরক্ষিত থাকবে সেদিকেও নজর দিতে হবে সবাইকে। সন্দ্বীপের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বিদর্শী সম্বৌধি চাকমা বলেন, সন্দ্বীপের চারপাশে প্রচুর নতুন ভূমি জেগে উঠেছে। এসব ভূমি টেকসই করতে কাজ করছে বন বিভাগ। আবার কিছু ভূমি এরই মধ্যে টেকসই হয়ে যাওয়ায় অর্থনৈতিক অঞ্চলসহ নানা ধরনের শিল্পকারখানা স্থাপনের প্রস্তাব আসছে। নতুন ভূমির মালিকানা ঠিক করতে সম্প্রতি জরিপও হয়েছে সন্দ্বীপ সীমানায়।
সম্ভাবনার নতুন দুয়ার : নতুন ভূমি খুলে দিয়েছে সম্ভাবনার এক নতুন দুয়ারও। কারণ নতুন ভূখন্ডে ভূমিহীনদের পুনর্বাসন করা, কৃষি উৎপাদন বাড়ানো ও বেকারত্ব হ্রাসেরও সুযোগ তৈরি করেছে। মহেশখালীর নতুন ভূমি ঘিরে হচ্ছে বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের মহাপরিকল্পনা। ১৪টি বিদ্যুৎকেন্দ্র ছাড়াও এ দ্বীপে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) প্রতিান ইস্টার্ন রিফাইনারি তৈরি করছে দেশের সবচেয়ে বড় তেলের ডিপো। পেট্রোবাংলার একটি প্রতিান জিটিসিএল নির্মাণ করছে মহেশখালী ও আনোয়ারা গ্যাস সঞ্চালন লাইন। পুরো দ্বীপে জমি আছে ৮৬ হাজার একর। কিন্তু এর ২৭ হাজার একরেই পাঁচটি অর্থনৈতিক অঞ্চল নির্মাণের পরিকল্পনা নিয়েছে বেজা। আছে ভারী শিল্পকারখানা তৈরির একাধিক প্রস্তাবনা। চীন, যুক্তরাষ্ট্র, থাইল্যান্ড, দক্ষিণ কোরিয়া, মালয়েশিয়া, কুয়েত ও সিঙ্গাপুর হাজার হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ প্রস্তাব নিয়ে এসেছে এই দ্বীপের নতুন ভূমিতে।
একইভাবে দেশি-বিদেশি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ৮১ হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ প্রস্তাব নিয়ে এসেছে সর্ববৃহৎ অর্থনৈতিক অঞ্চল বঙ্গবন্ধু শিল্পনগরীতে। ৩০ হাজার একর আয়তনের এ অর্থনৈতিক অঞ্চলের বিস্তৃত এলাকা নতুন ভূমি। বেজার হিসাবে বঙ্গবন্ধু শিল্পনগরীতে এখন পর্যন্ত বিনিয়োগ প্রস্তাব এসেছে প্রায় দেড় হাজার কোটি ডলারের। বাংলাদেশি টাকায় যা ৮১ হাজার কোটি টাকারও বেশি। এ শিল্পনগরীতে জমি নিয়েছে ৬৯টি প্রতিান। অনেকে কারখানাও স্থাপন করেছে। এসব কারখানায় কাজও করছে শত শত শ্রমিক। পুরোদমে চালু হওয়ার পর শুধু এ শিল্পনগরীই নতুন করে কর্মসংস্থান করবে অর্ধলাখ মানুষের।
সন্দ্বীপের নতুন ভূমিতেও অর্থনৈতিক অঞ্চল করার পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছে সরকার। সেখানে লবণের আলাদা একটি শিল্প জোন স্থাপনের বিষয়টিও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। সম্ভাবনার এ স্বপ্নটি বাস্তব রূপ দিতে ভূমি মন্ত্রণালয়ের পাশাপাশি স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়, পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়, পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়, বিদ্যুৎ ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় এবং বাডুজ্য মন্ত্রণালয় কাজ করছে সমন্বিতভাবে। এসব মন্ত্রণালয় বেসরকারি সংস্থার সহায়তা নিয়ে নতুন ভূমি টেকসই করার কাজ করছে। জেগে ওঠা ভূমি মানচিত্রে যোগ করতে কাজ করছে বিশেষ আরেকটি কমিটি। এরই মধ্যে বেশ কয়েকটি বৈঠকও করেছে তারা। নতুন ভূমি কীভাবে টেকসই করা হবে এবং কোন প্রক্রিয়া অনুসরণ করে এগুলোর যথাযথ ব্যবহার করা হবে, তা নিয়ে কাজ করছে বিশেষ এই কমিটি। ভূমি মন্ত্রণালয় এ কমিটির নেতৃত্ব দিচ্ছে।
প্রতি বছর যোগ হচ্ছে ২০ বর্গকিলোমিটার এলাকা : বাংলাদেশের সমুদ্র তটে জেগে ওঠা নতুন ভূখ- ব্যবহার উপযোগী করতে সরকারের সঙ্গে কাজ করছে বেসরকারি সংস্থা সেন্টার ফর এনভায়রনমেন্টাল অ্যান্ড জিওগ্রাফিক্যাল ইনফরমেশন সার্ভিস (সিআইজিএস), চর ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড সেটেলমেন্ট প্রজেক্ট (সিডিএসপি), অ্যাকুয়াচারি ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রাম (ইডিপি), ইনস্টিটিউট অব ওয়াটার মডেলিংসহ (আইডব্লিউএস) এক ডজন সংস্থা। নতুন ভূমির ফিজিবিলিটি স্টাডি করে এটি ব্যবহারের কর্মপরিকল্পনা ঠিক করে সরকারকে জানিয়েছে তারা। নেদারল্যান্ডস ও ইফাদের আর্থিক সহায়তায় ১৯৭০ সাল থেকেই নতুন ভূমি উদ্ধারে সমন্বিতভাবে কাজ করছে বাংলাদেশ। সমন্বিত এমন কার্যক্রমের সুফলও মিলছে। প্রতি বছর গড়ে অন্তত ২০ বর্গকিলোমিটার নতুন চরের দেখা মিলছে। তবে নদী ও সমুদ্র উপকূলবর্তী জেলাগুলোতে ব্যাপক ভাঙনের কারণে গড়ে হারিয়ে যাচ্ছে এর আট বর্গকিলোমিটার। ভাঙাগড়ার এ খেলার মাধ্যমেই গত চার দশকে বাংলাদেশের ভূখ-ে যুক্ত হয়েছে অন্তত ১০ হাজার বর্গকিলোমিটার বা ১০ লাখ হেক্টর নতুন ভূমি। ক্রসড্যাম ও বনায়নের চলমান প্রকল্পগুলো বাস্তবায়িত হলে ভবিষ্যতে এর সঙ্গে আরও ২০ হাজার বর্গকিলোমিটার বা ২০ লাখ হেক্টর ভূমি যুক্ত হওয়ার সম্ভাবনার কথা বলছেন সংশ্নিষ্টরা।
নতুন ভূমিতে বড় হবে মানচিত্র : সন্দ্বীপের উত্তরে বামনী নদী এবং পশ্চিমে মেঘনা নদী। এরও পশ্চিমে হাতিয়া দ্বীপ। পূর্বে সন্দ্বীপ চ্যানেল। এ চ্যানেলের পূর্ব প্রান্তে চট্টগ্রাম। আর দক্ষিণে বঙ্গোপসাগর। সন্দ্বীপ থেকে চট্টগ্রামের সীতাকু- উপকূলের বর্তমান দূরত্ব ১০ মাইল। নোয়াখালী থেকে ১২ মাইল এবং হাতিয়া থেকে ২০ মাইল। কিন্তু বর্তমানে এ দূরত্ব কমছে ক্রমেই। কারণ সন্দ্বীপের দক্ষিণ-পশ্চিম কোণের আজিমপুর এলাকা থেকে উত্তর-পশ্চিম কোণের দীর্ঘাপাড় ইউনিয়ন পর্যন্ত প্রায় ২০ কিলোমিটার দীর্ঘ এলাকায় জেগেছে নতুন ভূমি। আবার উত্তর-পশ্চিম অংশে থাকা উড়িরচরের দক্ষিণে জেগে উঠেছে আরও প্রায় ১০ কিলোমিটার দীর্ঘ লক্ষ্মীচর ও ভবের চর।
কয়েক হাজার হেক্টর নতুন ভূমি জেগেছে সন্দ্বীপের উত্তর প্রান্তেও। এরই মধ্যে এ ভূমির একটি অংশকে দীর্ঘাপাড় ইউনিয়ন হিসেবে ঘোষণা দিয়েছে সরকার। এ ইউনিয়নে বসবাস শুরু করা কয়েক হাজার ভূমিহীন পরিবারকে সুরক্ষা দিতে ২০১১ সালের জুন মাসে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে প্রশাসক। ২০১২ সালে নতুন এ ইউনিয়নে নির্বাচন দিয়ে জনপ্রতিনিধিও ঠিক করা হয়েছে। সন্দ্বীপের পূর্ব পাশেও সম্প্রতি জেগে উঠেছে নতুন ভূমি। প্রায় পাঁচ কিলোমিটার দীর্ঘ এ চর উঠেছে সম্প্রতি। দ্বীপের চারপাশে জেগে ওঠা নতুন ভূখন্ডে এখন চলছে কৃষি কাজ। নতুন চরের বিস্তীর্ণ ঘাস ব্যবহার করে হাজার হাজার গরু-ছাগল ও মহিষ লালন-পালন করছেন নিম্নবিত্তের মানুষ।
নোয়াখালী জেলার হাতিয়া দ্বীপ-সংলগ্ন নতুন ভূমি নিঝুমদ্বীপেও শুরু হয়েছে মানুষের বসবাস। এ অঞ্চলের ঘন বনাঞ্চলে চরছে হরিণ, বানরসহ বিভিন্ন বন্যপ্রাণী। নিঝুমদ্বীপের পাশে এখন নতুন করে জেগেছে চরকবিরা। একটু অদূরে গেলে দেখা মিলছে চরকালাম, চরআলীম, সাগরিয়া, উচখালী, নিউ ডালচর নামের নতুন নতুন ভূখ-ের। হাতিয়া দ্বীপের দক্ষিণ এবং উত্তর প্রান্তেও জেগে উঠেছে নতুন ভূমি। একই অবস্থা দেখা গেছে কেরিংচরের দক্ষিণ প্রান্তেও। সুন্দরবনের সাতক্ষীরা রেঞ্জ এলাকা-সংলগ্ন সাগরেও জেগেছে নতুন ভূমি। পশ্চিম সুন্দরবনের মান্দারবাড়িয়া অভয়ারণ্যের কয়েক মাইল দক্ষিণে জেগেছে বিশাল চর। পটুয়াখালী, ভোলা ও বরগুনার মোহনায়ও দেখা মিলছে নতুন নতুন ভূখ-ের। মিরসরাইয়ের মুহুরী প্রজেক্ট সংলগ্ন এলাকায়ও প্রায় ১৫ হাজার হেক্টর নতুন ভূমি জেগেছে। এভাবে গত চার দশকে বঙ্গোপসাগরের বিভিন্ন পয়েন্টে ১০ লাখ হেক্টর নতুন ভূমি পেয়েছে বাংলাদেশ।
নতুন ভূমি উদ্ধারের পরিকল্পনা : প্রকৃতিগতভাবে উপকূলীয় এলাকায় নতুন ভূমি পাচ্ছে বাংলাদেশ। আবার নতুন ভূমির জন্য আছে দেশের পরিকল্পনাও। ক্রসড্যামের মাধ্যমে নতুন ভূমি উদ্ধার প্রসঙ্গে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের পরিচালিত একটি প্রকল্প প্রতিবেদনে উল্লেখ আছে, ১৯৫৭ সালে এ অঞ্চলে প্রথম ক্রসড্যাম দিয়ে ২১ হাজার হেক্টর নতুন ভূমি উদ্ধার করে বাংলাদেশ। এর মাধ্যমে নোয়াখালীতে রামগতি নামক এলাকাকে মূল ভূখন্ডের সঙ্গে সংযুক্ত করা হয়। আবার ১৯৬৫ সালে ৩০ কিলোমিটার দীর্ঘ আরও একটি ক্রসড্যাম তৈরি করে সোনাপুর রেলস্টেশনের সঙ্গে সংযুক্ত করা হয় চরজব্বারকে। এতে উদ্ধার হয় প্রায় ৭৯ হাজার হেক্টর নতুন ভূমি।
সিডিএসপি প্রকল্পের এক কর্মকর্তা জানান, মেঘনা নদী, হাতিয়া ও সন্দ্বীপ চ্যানেলে পরিচালিত পৃথক তিনটি প্রজেক্টে তারা ২৫ হাজার ৮৯৯ একর ভূমিতে ইতোমধ্যে ১৮ হাজার ৫১৬টি পরিবারকে পুনর্বাসন করেছেন। এদিকে ভোলার মনপুরা দ্বীপেও নতুন ভূখ- পেয়েছে বাংলাদেশ। সুন্দরবন ও সাতক্ষীরা রেঞ্জের আশপাশে যুক্ত হওয়া নতুন ভূখ-কে বিবেচনায় আনলে সব মিলিয়ে সীমানায় যুক্ত হওয়ার উপযোগী নতুন ভূখন্ডের পরিমাণ হবে অন্তত ১০ লাখ হেক্টর।


বিজ্ঞাপন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *