প্রি-পেইডমিটার বসানোর কাজে গতি আনতে উদ্যোগ

অর্থনীতি এইমাত্র জাতীয়

নিজস্ব প্রতিবেদক : সারাদেশে প্রি-পেইড মিটার স্থাপন শেষে মিটার রিডারদের চাকরি বহাল থাকবে। বিদ্যুৎ বিভাগের এমন সিদ্ধান্তের ফলে এ-সংক্রান্ত জটিলতার অবসান হয়েছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে প্রি-পেইড মিটার বসানোর কাজে গতি আনতে উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।
বর্তমানে দেশে বিদ্যুৎ গ্রাহকের সংখ্যা ৩ কোটি ৬০ লাখ। এর মধ্যে প্রি-পেইড মিটারে বিদ্যুৎসেবা নিচ্ছেন ৩১ লাখ জন। এখনও ৩ কোটি ৩০ লাখ গ্রাহক প্রি-পেইড মিটারের বাইরে। সরকারের পরিকল্পনা, ২০২৫ সালের মধ্যে সব গ্রাহককে প্রি-পেইড মিটারের আওতায় আনা।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, প্রি-পেইড মিটার স্থাপনে বিদ্যুৎ বিভাগের মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তা বা কর্মচারীদের অসহযোগিতা পরিলক্ষিত হচ্ছে, সম্প্রতি বিদ্যুৎ বিভাগের অনুসন্ধানে এমন চিত্র উঠে আসে। অনুসন্ধানে দেখা যায়, তারা গ্রাহকদের ভুল বুঝিয়ে ক্ষেপিয়ে তুলছে। কারণ প্রি-পেইড মিটার স্থাপনের পর মিটার রিডারদের কাজ থাকবে না, এ আশঙ্কায় তারা অসহযোগিতা করছেন। অন্যদিকে, অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অবৈধ আয় বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। এ কারণে তারাও কোনও সহযোগিতা করছে না।
সূত্র জানায়, ঢাকাসহ বেশকিছু এলাকায় প্রি-পেইড মিটার বসানোর পর গ্রাহক পর্যায়ে অসন্তোষ তৈরি হয়। অনেক এলাকায় বিক্ষোভ সমাবেশ, মানববন্ধনও করা হয়। গ্রাহকদের প্রধান অভিযোগ, প্রি-পেইড মিটার ব্যবহার জটিল, রিচার্জ করতে হয়রানির শিকার হতে হয় এবং প্রি-পেইড মিটারে সাধারণ মিটারের চেয়ে বেশি বিল আসছে। তবে এর বিপরীতেও গ্রাহকদের একটি অংশের ভাষ্য, প্রি-পেইড মিটার ব্যবহার সুবিধাজনক এবং এটি ব্যবহারের ফলে তাদের বিদ্যুৎ বিল কম আসছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গ্রাহকদের এসব অভিযোগ খতিয়ে দেখতে বিদ্যুৎ বিভাগের পক্ষ থেকে উদ্যোগ নেওয়া হয়। বিতরণ কোম্পানিগুলো গ্রাহকদের অভিযোগগুলো এলাকাভিত্তিক গণশুনানি বা উঠান বৈঠক করার মাধ্যমে শুনতে শুরু করে এবং সমাধান দিতে থাকে। এমনকী বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির কাছেও এসব অভিযোগ যায়। ফলে সম্প্রতি অনুষ্ঠিত সংসদীয় কমিটির বৈঠকে এ বিষয়ে আলোচনা হয়।
এ বিষয়ে বিদ্যুৎ বিভাগের সিনিয়র সচিব ড. সুলতান আহমেদ বলেন, ‘প্রি-পেইড মিটার স্থাপনের একটি বড় বাধা ছিল মাঠ পর্যায়ে কর্মচারীদের প্রতিবন্ধকতা। এ প্রতিবন্ধকতা দূর করার জন্য লক্ষ্যমাত্রার ওপর বোনাস ও পারফরম্যান্স ইনডিকেটর নির্ধারণ করা হয়েছে। মিটার রিডারদের মধ্যে চাকরি থাকা না-থাকা নিয়ে এক ধরনের ভীতি কাজ করছিল। বিদ্যুৎ বিভাগ থেকে তাদের চাকরি না যাওয়ার নিশ্চয়তা দেওয়া হয়েছে। তবে পদ শূন্য হলে সেখানে নতুন করে আর কোনও নিয়োগ দেওয়া হবে না। ফলে সব প্রতিবন্ধকতা দূর করে বিষয়টি বাস্তবায়ন পর্যায়ে রয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘এখন শুধু উৎপাদন ও ক্ষমতার ওপর নির্ভর করছে কত দ্রুত সব গ্রাহককে প্রি-পেইড মিটারের আওতাভুক্ত করা যায়।’
প্রসঙ্গত, প্রি-পেইড মিটার বসানোর জন্য কারিগরি স্পেসিফিকেশন প্রণয়ন, বাংলাদেশ ট্যারিফ কাঠামোর উপযোগী সফটওয়্যার উন্নয়ন, প্রি-পেইড মিটারিং কার্যক্রম বাস্তবায়ন, পরিচালন ও ডাটা সংরক্ষণের জন্য সংস্থাভিত্তিক মাস্টার ইনফরমেশন সেন্টার এবং কেন্দ্রীয়ভাবে সেন্ট্রাল ডাটা সেন্টার স্থাপন করা হয়েছে। বর্তমানে বিদ্যুৎ বিভাগের আওতাধীন ৬টি বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানি এ পর্যন্ত ৩১ লাখ ৫ হাজার ৪১০টি প্রি-পেইড মিটার বসিয়েছে। এর মধ্যে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) ১১ লাখ ৪৫ হাজার, বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড (পবিবো) ১০ লাখ ১০ হাজার ৫১৮, ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড (ডিপিডিসি) ৪ লাখ ৪১ হাজার ৫১৯, ঢাকা ইলেকট্রিক সাপ্লাই কোম্পানি লিমিটেড (ডেসকো) ২ লাখ ৯৩ হাজার ৮৩৮টি, ওয়েস্টজোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড (ওজোপাডিকো) ১ লাখ ৯৫ হাজার ৫৯১টি এবং নর্দার্ন ইলেকট্রিসিটি সাপ্লাই কোম্পানি লিমিটেড (নেসকো) ১৮ হাজার ৮৯৪টি বসিয়েছে।


বিজ্ঞাপন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *