জাল সনদে অধ্যক্ষের চাকরি সরকারি সুবিধা বন্ধের দাবি

অপরাধ আইন ও আদালত শিক্ষাঙ্গন সারাদেশ

নিজস্ব প্রতিবেদক: বরিশালের বানারীপাড়া উপজেলার চাউলাকাঠী ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মাওলানা মো: আব্দুল হাইয়ানের বিরুদ্ধে জাল সার্টিফিকেট দিয়ে চাকরি করার অভিনব প্রতারণার অভিযোগ পাওয়া গেছে। আলিম, ফাজিল, কামিলের জাল সনদ দিয়ে দীর্ঘদিন চাকরি করে ৩১ ডিসেম্বর- ২০১৯ তারিখে অবসরে গেছেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানাগেছে, মাওলানা মো: আব্দুল হাইয়ান ১/৬/৭৬ সালে চাউলাকাঠী ইসলামীয়া ফাজিল মাদ্রাসায় যোগদান করেন। শিক্ষা সনদে জন্ম তারিখ দেখানো হয়েছে ১/১/১৯৬০। সনদের জন্ম তারিখ অনুযায়ী তিনি মাত্র ১৬ বছর বয়সে ফাজিল পাস করেছেন। যা বাংলাদেশের বিদ্যমান শিক্ষা কাঠামোতে সম্ভব নয়। কিন্ত জাল জালিয়াতি করে এই অসম্ভবকে সম্ভব করেছেন অধ্যক্ষ আব্দুল হাইয়ান। জাল সনদ দিয়ে চাকরি করে ইতিমধ্যে গত ৩১ ডিসেম্বর অবসরে গেছেন। স্থানীয় সূত্রে জানাগেছে, চাখার ফজলুল হক ইন্সটিটিউট থেকে ১৯৭৩ সালে আব্দুল হাইয়ান মেট্রিক পাস করেন। মেট্রিকের সনদে তার জন্ম তারিখ ৩০/১২/১৯৫৮ সাল। তাহলে ৭৬ সালের মধ্যে তিনি কিভাবে আলিম ফাজিল পাস করলেন এটাই সংশ্লিষ্টদের প্রশ্ন।
এলাকাবাসী’র সূত্রে জানাগেছে, চাউলাকাঠী ইসলামীয়া ফাজিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মাওলানা আব্দুল হাইয়েন প্রায় ৪৬ বছর যাবৎ মাদ্রাসাটিতে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে রেখে ছিল। ব্যবস্থাপনা কমিটির সহায়তায় তিনি ও তার পরিবার মিলে মাদ্রাসাকে দুর্নীতির আখড়ায় পরিনতি করেছিল। মহান মুক্তিযুেদ্ধ স্বাধীনতা বিরোধী সংগঠন শান্তি কমিটির ইউনিয়ন সেক্রেটারী মৌলভী নাজিমদ্দীদের বড় ছেলে মাওলানা আব্দুল হাইয়েন ছোটবেলা হতে খুবই চতুর-ধূর্ত প্রকৃতির। কর্মজীবনের শুরুতেই রাজনৈতিক ফায়দা লুটতে যে দল ক্ষমতায় তিনি তখন সে দলের লোক বনে যান। রাজনৈতিকভাবে প্রথমে জাতীয় পার্টি পরে বিএনপি ও জামায়াত হয়ে এখন হাইব্রিড আওয়ামী লীগার। আর সেই দাপটে যা ইচ্ছে তাই করেছিলেন মাদ্রাসাটিতে। তার ভয়ে মাদ্রাসার শিক্ষকেরা তটস্থ হয়ে থাকতেন সর্বক্ষন। মাদ্রাসায় দাখিলকৃত দাখিল, আলিম, ফাজিল ও কামিল পাশের সার্টিফিকেট সম্পূর্ন জাল। সে ক্রয়কৃত সার্টিফিকেটের মাধ্যমে অধ্যক্ষপদে চাকুরী করেছেন বলে সংশ্লিষ্টগণ মনে করেন। তার আসল বয়সের সাথে সার্টিফিকেটের বয়স সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। তার জন্ম ০১ জানুয়ারী ১৯৬০ ইংরেজী সালে এবং অধ্যক্ষ হিসেবে চাকুরীতে যোগদান ০১/০১/১৯৭৬ সনে। ১৬ বছরে কামিল পাস! তার ৩য় ভ্রাতা রেজোয়ান তার জন্ম সাল ০১ জানুয়ারী ১৯৫৯ যিনি অধ্যক্ষ হাইয়েনের ছোট হয়ে ০১ বছর পূর্বে অত্র মাদ্রাসা থেকে চাকুরী হতে অবসরে যায়। যা সম্পূর্ন অলৌকিক ব্যাপার। মাদ্রাসায় “মৌলভী নাজিম উদ্দিন কিন্ডার গার্টেন ও ক্যাডেট মাদ্রাসা”র নামে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে একই ছাত্র-ছাত্রী মাদ্রাসায় ও কিন্ডার গার্টেনে ভর্তি দেখিয়ে অর্থনৈতিক ফয়দা লুটছে হাইয়ান।
মাওলানা আব্দুল হাইয়েন সকল প্রকার সুযোগ আদায়ের জন্য কোন প্রকার নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করে নিজস্ব লোক দ্বারা “পকেট কমিটি” তৈরী করে নিজের ইচ্ছা মত মাদ্রাসা পরিচালনা করতেন। মাদ্রাসার কল্যাণে স্থানীয় জনগন কোনরুপ কথা বলতে গেলে তার সন্ত্রাসী ভ্রাতাগন এবং পুত্র মাসুদ, মাছুম বিল্লাহ, বাবু ও ভাতিজা পুত্র নাঈম হামলা মামলার ভয় দেখান ।
এছাড়া , মোস্তাফা মোল্লা, রহিম বালী ও কালাম মোল্লা’র কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা গ্রহণ করে তিন বছর বিনা পারিশ্রমিকে কাজ করিয়ে পরবর্তীতে নিয়োগ না দিয়ে তাদেরকে মাদ্রাসা থেকে বের করে দেয়। পরবর্তীতে মো. কামালের কাছ থেকে নগদ তিন লক্ষ সত্তর হাজার টাকা নিয়ে নিয়োগ দেয়।
বিধি বহিভূর্তভাবে সালামকে সহকারী ক্লার্ক থেকে হেডক্লার্ক পদে পদোন্নতি দিয়ে সহকারী ক্লার্ক পদ শুণ্য দেখিয়ে সহকারী ক্লার্ক নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে।
চাখার ইউনিয়নের বাঘরা গ্রাম নিবাসী মো. হোসেন গোমস্তা নামে একজনকে জোরপূর্বক চাকুরী হতে অপসারন করে মাওলানা আব্দুল হাইয়েন’র ভাই মহিয়ানকে নিয়োগ দেয়। যিনি এখনও মাদ্রাসায় চাকুরীরত অবস্থায় আছে।
মাওলানা আব্দুল হাইয়েন তার অর্বতমানে তার ৫ম ভাই নানা অপকর্মের হোতা মাওলানা মিজানুর রহমানকে অত্র মাদ্রাসায় অধ্যক্ষ হিসেবে নিয়োগের পায়তারা করতেছে। যে মাওলানা মিজান বানারীপাড়া থানাধীন মলুহার মাদ্রাসায় চাকুরীরত অবস্থায় নারী কেলেংকারির কারনে চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত হয়। উক্ত মাওলানা মিজানুর রহমান চাউলাকাঠী ইসলামীয়া মাদ্রাসায় শিক্ষক হিসেবে চাকুরীরত অবস্থায় নিয়মিত ছাত্র হিসেবে চাখার সরকারী ফজলুল হক কলেজ থেকে ডিগ্রী পাশ করে যা, নিয়মনীতির পরিপন্থি। তিনি দাখিল, আলিম ও ফাজিল পরীক্ষায় ডিউটির নামে ছাত্র-ছাত্রীদের কাছ থেকে নগদ অর্থ গ্রহণ করে তাদেরকে অবৈধ সুযোগ করে দেন। তিনি ছাত্র থাকাকালীন অবস্থায় অবৈধভাবে কাছেমাবাদ কামিল মাদ্রাসায় পরীক্ষা ডিউটি করতে গিয়ে ধরা পড়ে জেল খাটেন। এতসব কুকর্মের হোতা মিজানকে মাদ্রাসায় অধ্যক্ষ হিসেবে নিয়োগ দেওয়ার পায়তারা চলছে।
মাদ্রাসাটিতে মাওলানা আব্দুল হাইয়েনের সকল প্রকার অনিয়ম,দুর্নীতি ও অপকর্মের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন ও তার অবসরোত্তর সরকারি সকল বেনিফিট বন্ধ করার দাবি সংশ্লিষ্ট মহলের।
এবিষয়ে অভিযুক্ত আব্দুল হাইয়ানের বক্তব্য নেয়ার জন্যে এই প্রতিবেদক অনেক চেষ্টা করেও তার মোবাইল ফোনে সংযোগ স্থাপন করতে সক্ষম হননি।


বিজ্ঞাপন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *