নতুন গুজবের আমদানি কাস্টমস কর্মকর্তার!

জাতীয় জীবন-যাপন সারাদেশ স্বাস্থ্য

নিজস্ব প্রতিবেদক : সময়ে সময়ে বাংলাদেশে বিভিন্ন গুজব ছড়িয়েছে। এ গুজবের খেসরতও দিতে হয়েছে। এবার চীনের প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস নিয়ে গুজব ছড়িয়েছেন বেনাপোল কাস্টমস কমিশনার বেলাল চৌধুরী। যা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চলছে সমালোচনার ঝড়।


বিজ্ঞাপন

বৃহস্পতিবার দুপুর বেলাল হোসেন চৌধুরী নিজের ফেসবুক পেজে এক তরুণের পাসপোর্ট ও ছবি প্রকাশ করে তিনি ফেসবুকে লিখেছেন, “বন্ধন এক্সপ্রেসে থেকে একজন করোনাভাইরাসের রোগী সন্দেহে আলাদা করা হয়েছে। কাস্টমস কর্মকর্তারা রেলের নিয়মিত দায়িত্ব পালনকালে একজন বিশ্বস্তসূত্রে গোপন সংবাদ পায় এবং রোগীকে শনাক্ত করেন। তাৎক্ষণিক এসি উত্তম চাকমা ও আকরাম হোসেন বিষয়টি যশোর সিভিল সার্জন অফিস ও উপজেলা স্বাস্থ্য অফিসকে জানায় এবং সংশ্লিষ্ট গোয়েন্দা সংস্থাগুলোরও নজরে আনে!

গত ২৯ জানুয়ারি বেনাপোল কাস্টম হাউস এ অঞ্চলে প্রথম করোনাভাইরাস সচেতনতা সভা করে। উপজেলা স্বাস্থ্য দফতর প্রধান ও সিভিল সার্জন সহায়তা দেন। বিস্ময়কর হলেও বেনাপোল-কাস্টম-হাউস কর্মকর্তাদের তৎপরতায় এ অঞ্চলে প্রথম করোনা-রোগী-দেশে-ঢোকার-আগেই ধরা পড়ে। যে কেউ এমন রোগী দেখলে চিকিৎসক টিমকে জানান!

রোগী যথাযথ পরিচর্যায় সুস্থ হয়ে উঠতে পারেন। অবহেলায় উল্টোটা ঘটে ভাইরাস ছড়িয়ে বিপজ্জনক হয়ে ওঠার আগেই। আল্লাহ মহামারী থেকে আমাদের হেফাজত করুন। সবাই সতর্ক থাকুন! সচেতন থাকুন। পোস্টটি কেবল সচেতনতার জন্য প্রদত্ত! স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা যথার্থ সিদ্ধান্ত নিবেন।”

কাস্টমস কমিশনারের গুজবের স্ট্যাটাসটি আপলোডের কয়েক মিনিটেই খবরটি ছড়িয়ে পরে সারাদেশে। শুরু হয় তোলপাড়। তার এমন গুজবে ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে পড়ে স্থানীয় সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ এলাকার লোকজন। করোনাভাইরাসে আক্রান্ত শুনে এলাকার কোনো সংবাদকর্মীও ভয়ে ঘটনাস্থলে যেতে সাহস পায়নি। পরবর্তীতে পরীক্ষা করে দেখা গেছে, খবরটি সম্পূর্ণ ভূয়া।

করোনাভাইরাসের গুজব ওঠা পাসপোর্টযাত্রী হলো কুমিল্লা জেলার জয়নাল আবেদিনের ছেলে জহিরুল ইসলাম। পরে তাকে বিশেষ ব্যবস্থায় বেনাপোল ও শার্শার মেডিক্যাল টিম ব্যাপক পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর তার শরীরে কোনো করোনাভাইরাসের লক্ষণ পাওয়া না যাওয়ায় তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়।

বিষয়টি নিশ্চিত করে যশোরের সিভিল সার্জন ডা. শেখ আবু শাহীন তার দফতরে সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে বলেন, বেনাপোলে করোনাভাইরাসের রোগী সনাক্তের খবরটি একেবারেই ভিত্তিহীন। এ ধরণের গুজবে আতঙ্কিত না হওয়ার অনুরোধ জানিয়ে তিনি বলেন, বেনাপোল কাস্টমস কমিশনারের এ সংক্রান্ত স্ট্যাটাসটি নিঃসন্দেহে বিব্রতকর পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে।

এদিকে বিষয়টি নিয়ে তোলপাড় শুরু হলে দুপুর ১টা ১৩ মিনিটে বেনাপোল কাস্টমস কমিশনার মোহাম্মদ বেলাল হোসেন চৌধুরী তার দেওয়া ফেসবুক স্ট্যাটাসটি সরিয়ে নেন।

বেনাপোল ইমিগ্রেশনের ওসি খোরশেদ আলম জানান, বন্ধন এক্সপ্রেস ট্রেনে একজন চীনফেরত যাত্রী রয়েছেন খবর পেয়ে ইমিগ্রেশন ও কাস্টমস সদস্যরা তাকে স্বাস্থ্যকর্মীদের কাছে হস্তান্তর করেন। তবে তারা চীন থেকে সরাসরি ভারতে আসেননি। চীন থেকে বাংলাদেশে ফিরে এক মাস অবস্থানের পর দর্শনা সীমান্ত দিয়ে ভারতে গিয়েছিলেন।

এ সম্পর্কে ঢাকায় রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের পরিচালক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা বলেছেন, একজন কাস্টমস কর্মকর্তার এ ধরনের আচরণ শুধু অপেশাদারই নয়, নৈতিকতা বিরোধী। সংবেদনশীল সরকারি তথ্যের গোপনীয়তা লঙ্ঘন সংক্রান্ত সরকারি চাকরি বিধির লঙ্ঘন।

বাংলাদেশ এখনো ঝুঁকিমুক্ত। আতঙ্কিত হওয়ার মতো কিছু নেই জানিয়ে তিনি বলেন, এক শ্রেণীর মানুষ অযথা আতঙ্ক ছড়াচ্ছেন। যাতে করে মানুষের মধ্যে ভীতির সঞ্চার হয়েছে। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মধ্যেও জোর-জবরদস্তির প্রবণতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। গুজব ও জবরদস্তি সম্ভাব্য রোগী শনাক্তে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করবে বলে তিনি মন্তব্য করেন।

এর আগে বাংলাদেশে পদ্মা সেতুতে লাগবে শিশুর মাথা, নিখোঁজ হয়ে গেছে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট, বেসিনে হারপিক ঢাললে মরবে এডিস মশা- এমন সব গুজব ছড়িয়েছে। গুজবে কান দিয়ে জামায়াত নেতা সাঈদীকে চাঁদেও দেখেছিলেন কেউ কেউ।


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *