পাপিয়ার দুই সহযোগী ফের ৫ দিনের রিমান্ডে

অপরাধ আইন ও আদালত

নিজস্ব প্রতিবেদক : জাল টাকা সরবরাহ, মাদক ব্যবসা ও অনৈতিক কাজের অভিযোগে গ্রেফতার যুবলীগের বহিষ্কৃত নেত্রী শামীমা নূর পাপিয়ার দুই সহযোগীর ফের ৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। রিমান্ড মঞ্জুর হওয়া আসামিরা হলেন, সাব্বির খন্দকার (২৯) ও শেখ তায়্যিবা (২২)। রবিবার (১ মার্চ) ৫ দিনের রিমান্ড শেষে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ফের ১০ দিনের রিমান্ডের আবেদন করেন। শুনানি শেষে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট দিদার হোসাইন ৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।


বিজ্ঞাপন

এদিন শামীমা নূর পাপিয়া ও তার স্বামী মফিজুর রহমান ওরফে সুমন চৌধুরী ওরফে মতি সুমনকে এ মামলায় তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত কারাগারে আটক রাখার আবেদন করেন তদন্ত কর্মকর্তা। শুনানি শেষে বিচারক তাদের দুজনকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।

এর আগে গত ২৪ ফেব্রুয়ারি বিমানবন্দর থানার মামলায় পাপিয়াসহ চারজনের ৫ দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত। একইসঙ্গে ওই দিন শেরেবাংলা নগর থানার মাদক ও অস্ত্র আইনে পৃথক দুই মামলায় পাপিয়া ও তার স্ত্রীর মতি সুমনের ৫ দিন করে ১০ দিন রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত।

প্রসঙ্গত, গত ২২ ফেব্রুয়ারি হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে পাপিয়াসহ চারজনকে গ্রেফতার করে র‌্যাব ১-এর একটি দল। গ্রেফতারকৃত অন্যরা হলেন, পাপিয়ার স্বামী মফিজুর রহমান ওরফে সুমন চৌধুরী ওরফে মতি সুমন (৩৮), তাদের সহযোগী সাব্বির খন্দকার (২৯) ও শেখ তায়্যিবা (২২)। তারা অবৈধ অস্ত্র ও মাদক ব্যবসা, চাঁদাবাজি, নানা অনৈতিক কাজ, জালনোট সরবরাহ, রাজস্ব ফাঁকি ও অর্থপাচারসহ বিভিন্ন অপরাধে জড়িত বলে জানায় র‌্যাব।

গ্রেফতারের পর পাপিয়া ও তার স্বামী সুমন চৌধুরীর দেওয়া তথ্য অনুযায়ী ২৩ ফেব্রুয়ারি ভোরে হোটেল ওয়েস্টিনে পাপিয়ার নামে বুকিং করা বিলাসবহুল প্রেসিডেন্সিয়াল স্যুট এবং ফার্মগেট এলাকার দুটি বিলাসবহুল ফ্ল্যাটে অভিযান চালিয়ে আরও ১টি বিদেশি পিস্তল, ২টি ম্যাগাজিন, ২০ রাউন্ড গুলি, ৫ বোতল বিদেশি মদ ও নগদ ৫৮ লাখ ৪১ হাজার টাকা, ৫টি পাসপোর্ট, ৩টি ব্যাংক চেকবই, কিছু বিদেশি মুদ্রা, বিভিন্ন ব্যাংকের ১০টি এটিএম কার্ড উদ্ধার করে র‌্যাব।

র‌্যাবের তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, পাপিয়া-মতি সুমন দম্পতির সুনির্দিষ্ট কোনও পেশা নেই। ঢাকা ও নরসিংদীতে তাদের গাড়ির শোরুম ও কার ওয়াশ সলিউশন সেন্টার থেকে বাৎসরিক আয় ১৯ লাখ টাকা। প্রাথমিক অনুসন্ধানে পাপিয়া ও তার স্বামী মতি সুমনের অনেক অপকর্মের তথ্য পাওয়া গেছে। তারা ঢাকা ও নরসিংদী এলাকায় অবৈধ অস্ত্র ও মাদক ব্যবসা, চাঁদাবাজি, প্রতারণা করে অঢেল অর্থ আত্মসাৎ করেছেন। এছাড়া তাদের আয়ের অরেকটি উৎস হলো নারীদের দিয়ে জোরপূর্বক অনৈতিক কাজ করানো। ৭ নারীকে এ কাজে ব্যবহার করতো পাপিয়া। এছাড়া হোটেল ওয়েস্টিনে সবসময় পাপিয়ার নামে একটি প্রেসিডেন্সিয়াল স্যুট বুক থাকতো। সর্বশেষ গত বছরের ১২ অক্টোবর থেকে চলতি বছরের ১৩ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বিভিন্ন মেয়াদে মোট ৫৯ দিন ঢাকা ওয়েস্টিনের প্রেসিডেন্সিয়াল স্যুটে অবস্থান করে পাপিয়া ও তার সহযোগীরা। সেখানে আনুষঙ্গিক খরচসহ সর্বমোট ৮১ লাখ ৪২ হাজার ৮৮৮ টাকা নগদ পরিশোধ করে পাপিয়া।

রাজধানীর ফার্মগেটের ২৮নং ইন্দিরা রোডের ‘রওশনস ডমিনো রিলিভো’ ভবনে দুটি বিলাসবহুল ফ্ল্যাট রয়েছে পাপিয়া-মতি সুমনের। এছাড়া নরসিংদী শহরে দুটি বিলাসবহুল ফ্ল্যাট, নরসিংদীর বাগদী এলাকায় কোটি টাকার দুটি প্লট রয়েছে। তাদের নিজস্ব ব্যবহারের জন্য রয়েছে কয়েকটি বিলাসবহুল গাড়ি। এছাড়া তেজগাঁও বিএফডিসি গেটের পাশে অংশীদারিত্বে পাপিয়ার ‘কার একচেঞ্জ’ নামে একটি গাড়ির শোরুম রয়েছে। নরসিংদী জেলায় ‘কেএমসি কার ওয়াশ অ্যান্ড অটো সলিউশন’ নামে একটি প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এছাড়া পাপিয়া-মতি সুমন দম্পতির দেশের বিভিন্ন ব্যাংকে নামে-বেনামে বিপুল পরিমাণ অর্থ গচ্ছিত থাকার তথ্যও রয়েছে।


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *