আক্রান্তদের ৮৭ ভাগ ঢাকার

এইমাত্র জাতীয় জীবন-যাপন ঢাকা রাজধানী সারাদেশ স্বাস্থ্য

রাজধানীর ৩৪ থানায় করোনার থাবা

 

মহসীন আহমেদ স্বপন : করোনায় আক্রান্ত ৪৮২ জন রোগীর মধ্যে ৮৭ ভাগই ঢাকা বিভাগের। অবশিষ্ট ১৩ শতাংশ দেশের অন্যান্য বিভাগের। এর মধ্যে ঢাকা মহানগরীতে আক্রান্ত ৫২ভাগ। গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন ৫৮ জন রোগী শনাক্ত হয়। এই সময়ে তিনজনের মৃত্যু হয়। সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন তিনজন। শনিবার দুপুরে স্বাস্থ্য অধিদফতরের করোনাভাইরাস সংক্রান্ত নিয়মিত হেলথ বুলেটিন উপস্থাপনকালে রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) পরিচালক অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা বলেন, আক্রান্ত ৪৮২ জন রোগীর মধ্যে ৫২ শতাংশ রাজধানী ঢাকা ও ৩৫ শতাংশ ঢাকা বিভাগের। অবশিষ্ট ১৩ শতাংশ দেশের অন্যান্য বিভাগের।
গত ৮ মার্চ দেশে প্রথম করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর সন্ধান পাওয়া যায়। এরপর প্রথম দিকে কয়েকজন করে নতুন আক্রান্ত রোগীর খবর মিললেও গত ক’দিনে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে এ সংখ্যা। সবশেষ হিসাবে দেশে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা ৪৮২। মারা গেছেন ৩০ জন। সুস্থ হয়ে উঠেছেন ৩৬ জন।
গত ডিসেম্বরের শেষ দিকে চীনের উহান থেকে ছড়িয়ে বৈশ্বিক মহামারিতে পরিণত করোনাভাইরাসে বিশ্বজুড়ে আক্রান্তের সংখ্যা এখন পর্যন্ত প্রায় সোয়া ১৭ লাখের বেশি। মারা গেছেন এক লাখেরও বেশি মানুষ। তবে পৌনে ৪ লাখের মতো রোগী ইতোমধ্যে সুস্থ হয়েছেন।
প্রাণঘাতী এই ভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে নানা পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে; যার মূলে রয়েছে মানুষে মানুষে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা। মানুষকে ঘরে রাখতে রাজপথের পাশাপাশি পাড়া-মহল্লায় টহল দিচ্ছে সশস্ত্র বাহিনী, র‌্যাব ও পুলিশ।
রাজধানীর ৩৪ থানায় করোনার থাবা : ঢাকা মহানগরের ৫০ থানা এলাকার মধ্যে ৩৪টিতেই ছড়িয়েছে করোনাভাইরাস। এসব এলাকায় শুক্রবার রাত পর্যন্ত ২৫৪ জন ব্যক্তি এই ভাইরাসে আক্রান্ত হিসেবে শনাক্ত হয়েছেন। তারা আক্রান্ত হওয়ার ঘটনায় এসব এলাকার ৩০৮টি বাড়ি ও একটি আবাসিক এলাকা পুরো লকডাউন করে রাখা হয়েছে।
ঢাকা মহানগর পুলিশের অন্তর্গত বিভিন্ন থানা থেকে পাওয়া উপাত্তের ভিত্তিতে এ তথ্য নিশ্চিত হওয়া গেছে।
এদিকে সূত্রগুলো জানায়, এসব এলাকায় আরও অনেকের নমুনা পরীক্ষার জন্য আইইডিসিআরসহ বিভিন্ন অনুমোদিত ল্যাবে পাঠানো হয়েছে।
ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) আটটি বিভাগ। এই আট বিভাগে মোট থানার সংখ্যা ৫০টি। আর করোনাভাইরাসের নমুনা পরীক্ষা ও শনাক্ত করার বিষয়টি দেখভাল করে থাকে জাতীয় রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর)। সে তথ্য ঘোষণা করে থাকে সরকারের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। তবে করোনা আক্রান্ত রোগী পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সেই রোগীর ব্যাকগ্রাউন্ড যাচাই করে তার বাড়ি বা এলাকা কোয়ারেন্টিন অথবা লকডাউনের সিদ্ধান্ত দেয় আইইডিসিআর। তাদের নির্দেশনা বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে রাজধানীসহ দেশের সব থানা পুলিশ। ওপরে বর্ণিত সংখ্যা ও বাড়ি বা এলাকা লকডাউনের এই নির্দেশনা আইইডিসিআর থেকে পেয়েই করা হয়েছে বলে প্রতিটি থানার দায়িত্বরত কর্মকর্তারা নির্শ্চিত করেছেন।
রাজধানীতে ডিএমপির কোন বিভাগে এবং কোন থানায় কতজন করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছে তা বিভাগওয়ারি বিশ্লেষণ করা হলো:
রমনার ছয়টি থানার মধ্যে পাঁচটি থানা এলাকায় করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছে। দশটি ভবন লকডাউন করা হয়েছে।
রমনা থানা : মগবাজারের রিজেন্ট টাওয়ার লকডাউন করে দিয়েছে পুলিশ। রমনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কাজী মাঈনুল ইসলাম বলেন, আমরা সবাইকে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিচ্ছি। বাড়িটি পুরোপুরি লকডাউন করা যায়নি। কারণ, সেখানে অনেক বাসিন্দা রয়েছে।
ধানমন্ডি : ধানমন্ডি থানা এলাকার তিনটি বাড়িতে তিনজন রোগী শনাক্ত হয়েছে। তারা বাড়িতেই আছেন। বাড়িতে তাদের চিকিৎসা চলছে। এজন্য তিনটি সড়কের তিনটি ভবন লকডাউন করা হয়েছে। সড়কগুলো হলো ৫, ৬এ এবং ২৮ নম্বর সড়ক।
শাহবাগ : রাজধানীর শাহবাগ থানা এলাকায় কোনও রোগী শনাক্ত হয়নি। তবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের একজন অধ্যাপক আক্রান্ত হওয়ায় এবং ওই হাসপাতালের পাশের একটি বাড়িতে প্রথম দিকে একজন রোগী ধরা পরায় লকডাউন করা হয়েছিল। তবে ১৪ দিন পার হওয়ার পর সেখানে আর কোনও রোগী পাওয়া যায়নি। তাই লকডাউন প্রত্যাহার করা হয়েছে।
নিউমার্কেট : ডিএমপির নিউমার্কেট থানায়ও এখন পর্যন্ত কোনও রোগী শনাক্ত হয়নি। পুলিশ জনসচেতনতায় কাজ করছে।
হাজারীবাগ : মহানগরীর হাজারীবাগ থানায় চারটি বাড়িতে রোগী শনাক্ত হয়েছে। এইজন্য চারটি বাড়িই লকডাউন করা হয়েছে। বাড়িগুলো হলো গণকটুলি ২০/২২ ও ১০/১, ঝিকাতলা ৪২/৮ এবং শঙ্কর বেকারি গলির একটি বাড়ি। এসব বাড়ি এড়িয়ে চলার জন্য এলাকাবাসীকে অনুরোধ করা হয়েছে।
কলাবাগান : ঢাকার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ থানা কলাবাগান। এই এলাকাতেও গাদাগাদি করে গড়ে তোলা বাসাবাড়ির পাশাপাশি রয়েছে বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও অফিস। এই থানা এলাকায় দুটি সড়কের দুটি বাড়িতে করোনাভাইরাস আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়েছে। সেগুলো হলো সেন্ট্রাল রোডের একটি বাড়ি এবং গ্রিনরোডের একটি বাড়ি।
ডিএমপির লালবাগ বিভাগের ছয়টি থানার মধ্যে পাঁচটিতেই রোগী শনাক্ত হয়েছে। এই এলাকায় লকডাউন করা হয়েছে ২০১টি বাড়ি।
লালবাগ : রাজধানীর লালবাগ থানা এলাকার আটটি বাড়ি লকডাউন। লালবাগ সড়কে দুটি বাড়ি, বড়বাট মসজিদ এলাকায় একটি ভবন এবং চায়নাগলিতে ছয়টিবাড়ি লকডাউন করেছে পুলিশ।
কোতোয়ালি : রাজধানীর কোতোয়ালি থানা এলাকায় একটি ভবন লকডাউন করা হয়েছে।
বংশাল : বংশাল থানা এলাকার মেরিনার্স টাওয়ার লকডাউন করা হয়েছে। এছাড়াও সিদ্দিকবাজারের ১৩৩ নম্বর ভবন, আলী নেকীর দেউরী রোডের মসজিদ সংলগ্ন দশটি ভবন, একই সড়কের ৪৩/১১ নম্বর বাড়ি, ২৩১ বংশাল বাড়ি এবং ১/৩২ টেকেরহেড লেনের বাড়ি লকডাউন করা হয়েছে। এই এলাকায় পাওয়া যাওয়া সাত রোগীর মধ্যে পাঁচজনের হাসপাতালে, বাকি দুজনের বাড়িতেই চিকিৎসা চলছে।
বংশাল থানার ওসি শাহীন ফকির জানান, সবাইকে নিরাপদে রাখতে আপ্রাণ চেষ্টার পাশাপাশি তাদের বাসাতেই থাকার জন্য অনুরোধ করছে পুলিশ।
কামরাঙ্গীরচর : কামরাঙ্গীরচর থানা এলাকা এখনও ঝামেলামুক্ত আছে। এই এলাকায় এখনও কোনও রোগী শনাক্ত হয়নি।
চকবাজার : বুয়েটে শিক্ষকদের একটি কোয়ার্টার, খাজে দেওয়ান প্রথম লেন ও দ্বিতীয় লেনের দেড়শ’ বাড়ি, উর্দুগলির চারটি বাড়ি এবং ওয়াটার ওয়ার্কস রোডের তিনটি বাড়ি লকডাউন করে রাখা হয়েছে।
সূত্রাপুর : সূত্রাপুর থানা এলাকায় পাঁচটি ভবন লকডাউন করা হয়েছে। এই এলাকায় করোনাভাইরাস আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন এক ব্যক্তি। যেসব বাড়ি লকডাউন করা হয়েছে সেগুলো হলো- ৩৯ নন্দলাল রোড, ২৪ নন্দলাল রোড, ২৫ নন্দলাল রোড, রিশিকেশ দাস লেনের একটি করে বাড়ি, ২১/১/২৩ জাস্টিস লাল রোড, ২৩/২৩ জয়চন্দ্র ঘোষ রোড এবং পিসি ব্যানার্জি রোডের একটি বাড়ি।
ওয়ারী বিভাগের ছয়টি থানার মধ্যে পাঁচটি থানা এলাকায় করোনাভাইরাস আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়েছে। নয়টি বাড়ি লকডাউন করা হয়েছে।
ওয়ারী : ওয়ারী থানা এলাকার বনগ্রাম রোডের একটি ভবন এবং র‌্যাংকিং স্ট্রিট রোডে একটি ভবন লকডাউন করেছে পুলিশ। ওই ভবন দুটিতে কাউকে প্রবেশ করতে এবং বের হতে নিষেধ করা হয়েছে।
ডেমরা : ডেমরা থানা এলাকার ধার্মিকপাড়া কোনাপাড়া এলাকার একটি বাড়িতে একজন রোগী শনাক্ত হয়েছে। এজন্য ওই বাড়িটি লকডাউন করা হয়েছে।
শ্যামপুর : শ্যামপুর থানা এলাকায় কোনও রোগী শনাক্ত হয়নি। ওই এলাকার মানুষকে নিরাপদে রাখতে কাজ করছে স্থানীয় প্রশাসন।
যাত্রাবাড়ী : যাত্রাবাড়ী থানার মীরহাজীরবাগ এলাকার নবীনগর গলির একটি বাড়ি লকডাউন করা হয়েছে। ওই বাড়িতে বেসরকারি একটি টেলিভিশনের একজন ক্যামেরাপারসন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
যাত্রাবাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাজহারুল ইসলাম বলেন, আমরা একটা বাড়ি লকডাউন করে রেখেছি। পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত বাড়িটি লকডাউন থাকবে।
গেন্ডারিয়া : গুরুদাস লেনে একটি বাড়ি, ডিসটিলারি রোডের ১৩১ নম্বর বাড়ি, নাওয়াপাড়া ৭৯/এ এবং লালখান এলাকার ৮৪/১৬ নম্বর বাড়িতে রোগী শনাক্ত হয়েছে। এই বাড়ি চারটি লকডাউন করা হয়েছে।
কদমতলী : কদমতলী থানার পাটেরবাগ এলাকার একটি বাড়িতে একজন রোগী শনাক্ত হওয়ার পর ওই বাড়ি লকডাউন করা হয়েছে।
ডিএমপির মতিঝিল বিভাগের সাতটি থানার মধ্যে চারটি থানা এলাকায় করোনাভাইরাস আক্রান্তরোগী শনাক্ত হয়েছে। তিনটি থানা এলাকায় এখনও কোনও রোগী শনাক্ত হয়নি। এই বিভাগে বা আক্রান্ত চারটি থানার ছয়টি বাড়ি লকডাউন করে রাখা হয়েছে।
মতিঝিল : মতিঝিলের অগ্রণী ব্যাংকের প্রধান শাখার একজন কর্মকর্তা করোনাভাইরাস আক্রান্ত হয়েছে বলে যে আশঙ্কায় ব্যাংকটির শাখা লকডাউন করা হয়েছিল, তা সঠিক নয় বলে আজ আবার জানানো হয়েছে। ওই ব্যাংকার আক্রান্ত নন বলে নিশ্চিত হয়েছে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ। তাই ব্যাংকটি খুলতে চান তারা।
সবুজবাগ : রাজধানীর সবুজবাগের নন্দিপাড়ায় জিরো গলির একটি বাসায় একসঙ্গে ছয় ব্যক্তি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। তাদের সবাইকে কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। ওই বাড়িটি লকডাউন করেছে পুলিশ।
খিলগাঁও : খিলগাও থানা এলাকায় করোনাভাইরাস আক্রান্ত কোনও রোগী পাওয়া যায়নি।
পল্টন : পল্টন মডেল থানা এলাকায় তিনজন করোনাভাইরাস আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়েছে। এজন্য তিনটি বাড়ি লকডাউন করা হয়েছে। সেগুলো হলো কালভার্ট রোডে দুটি বাড়ি এবং শান্তিনগর হোয়াইট হাউজ ভবনের উল্টোদিকের একটি বাড়ি।
রামপুরা : রামপুরা এলাকায় আইইডিসিআরের তালিকায় একজন রোগী আছেন। তবে রোগী হিসেবে যার নাম আছে তার দাবি তিনি অসুস্থ নন। করোনাভাইরাস পরীক্ষায় তিনি নেগেটিভ প্রমাণিত হয়েছেন। তারপরও তালিকায় তার নাম থাকায় তিনি অবাক হয়েছেন। তবে এ বিষয়ে আইইডিসিআর এর বক্তব্য তাৎক্ষণিকভাবে পাওয়া যায়নি।
মুগদা : মুগদা থানার উত্তর মানিকনগরে আনন্দধারা এলাকার একটি বাসায় একজন রোগী শনাক্ত হয়েছেন। তাই ওই বাড়িটি লকডাউন করা হয়েছে।
শাহজাহানপুর : রাজধানীর শাহজাহানপুর থানার উত্তর শাহজাহানপুরের দীপশিখা রোডের চারতলা একটি বাড়িতে একজন রোগী শনাক্ত হওয়ার পর ওই বাড়িটি লকডাউন করে দিয়েছে পুলিশ।
শাহজাহানপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শহিদুল হক বলেন, আমরা আইইডিসিআর-এর তালিকা অনুযায়ী চারতলা একটি বাড়ি লকডাউন করেছি। পাশাপাশি দীপশিখা সড়ক দিয়ে মানুষকে চলাচল করতে নিষেধ করা হয়েছে।
ডিএমপির উত্তরা বিভাগের ছয়টি থানার মধ্যে দুইটি থানায় আক্রান্ত রোগী পাওয়া গেছে। তবে চারটি থানায় কোনও রোগী এখনও শনাক্ত হয়নি। আক্রান্ত দুটি থানার চারটি বাড়ি লকডাউন করা হয়েছে।
উত্তরা মডেল (পূর্ব) : উত্তরা মডেল থানা এলাকায় কোনও রোগী শনাক্ত হয়নি। এলাকায় পুলিশ কড়া টহল রয়েছে। নাগরিকদের বারবার সতর্ক করা হচ্ছে।
উত্তরা পশ্চিম : উত্তরা পশ্চিম থানার ১১ নম্বর, ১৪ নম্বর ও ৭ নম্বর সেক্টরে তিনটি সড়ক লকডাউন করেছে পুলিশ। তিনজন রোগী শনাক্ত হয়েছে।
বিমানবন্দর : বিমানবন্দর থানা এলাকায় কোনও রোগী শনাক্ত হয়নি। এই থানা এলাকার হাজি ক্যাম্পে প্রতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিন রয়েছে। তবে কোনও লকডাউনের ঘটনা নেই।
তুরাগ : তুরাগ থানা এলাকায় এখনও কোনও রোগী শনাক্ত হয়নি। সবাইকে নিরাপদে রাখার জন্য স্থানীয় ও পুলিশ প্রশাসন কাজ করছে।
উত্তরখান : উত্তরখান থানা এলাকায় কোনও রোগী শনাক্ত হয়নি।
দক্ষিণখান : দক্ষিণখানে একজন করোনারোগী শনাক্ত হয়েছে। একটি বাড়ি লকডাউন করা হয়েছে।
ডিএমপির গুলশান বিভাগের ছয়টি থানার মধ্যে চারটি থানা এলাকায় করোনাভাইরাস প্রবেশ করেছে। বাকি দুইটি থানা এলাকায় এখনও রোগী শনাক্ত হয়নি। আক্রান্ত থানা এলাকায় আটটি বাড়ি লকডাউন করা হয়েছে।
গুলশান : গুলশানে তিনটি বাড়ি লকডাউন করা হয়েছে। গুলশান ১-এর ১৫ নম্বর সড়কের একটি বাড়ি, গুলশান ২ এর একটি বাড়ি এবং শাহজাদপুরের একটি বাড়িতে রোগী শনাক্ত হয়েছে। তাই বাড়িগুলো লকডাউন করা হয়েছে।
ক্যান্টনমেন্ট : ক্যান্টনমেন্ট থানা এলাকায় কোনও করোনাভাইরাস আক্রান্ত রোগী ও লকডাউন নেই।
বাড্ডা : মহানগরীর বাড্ডা থানার উত্তর বাড্ডা এলাকার তিন বাড়িতে করোনাভাইরাস আক্রান্ত রোগী মিলছে। এজন্য খানবাগ রোডের একটি বাড়ি, স্বাধীনতা সরণির একটি বাড়ি ও হাজীপাড়ার একটি বাড়ি লকডাউন করেছে পুলিশ।
খিলক্ষেত : খিলক্ষেত থানার নিকুঞ্জ- ২ এর ১১ নম্বর রোড লকডাউন করা হয়েছে। মঙ্গলবার (৭ এপ্রিল) একজন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়ার পর রোডটি লকডাউন করে দেয় পুলিশ।
বনানী : বনানী থানা এলাকায় কোনও রোগী শনাক্ত হয়নি।
ভাটারা : ভাটারা থানার বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার অ্যাপোলো হাসপাতাল সংলগ্ন পাঁচতলা একটি ভবন লকডাউন করেছে পুলিশ। বাড়িটিতে বাইরে থেকে কাউকে প্রবেশ না করার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে। রোগী একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
ডিএমপির তেজগাঁও এলাকার ছয়টির থানার চারটিতেই করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছে। একটি থানা করোনাভাইরাস আক্রান্ত রোগী এখনও পাওয়া যায়নি। আক্রান্ত চার থানা এলাকার ৯ টি বাড়ি পুরোপুরি লকডাউন করে রাখা হয়েছে।
তেজগাঁও : তেজগাঁও মডেল থানা এলাকার শাহীনবাগের একটি বাড়িতে একজন রোগী শনাক্ত হয়েছে। তাই ওই বাড়িটি লকডাউন করা হয়েছে।
তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল : তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানা এলাকায় কোনও রোগী নেই।
হাতিরঝিল : হাতিরঝিল থানা এলাকার ইস্কাটনে একজন রোগী রয়েছে বলে আইইডিসিআর থেকে বলা হলেও তিনি করোনা আক্রান্ত নন বলে দাবি করেছেন।
মোহাম্মদপুর : মোহাম্মদপুরের রাজিয়া সুলতানা রোডের একটি বাড়ি, তাজমহল রোডের একটি বাড়ি, কৃষি মার্কেট রোডের মুখে একটি বাড়ি লকডাউন, বাবর রোডের একটি বাড়ি এবং বসিলার উত্তরমোড়া এলাকার একটি বাড়ি লকডাউন করা হয়েছে। এসব এলাকার সড়ক প্রথমে লকডাউন করা হলেও পরবর্তী সময়ে শুধু বাড়িগুলো লকডাউন করা হয়েছে।
আদাবর : আদাবরের ১৭ নম্বর সড়ক লকডাউন করেছে আদাবর থানা পুলিশ। ওই সড়কের একটি বাড়িতে একজন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার পর আদাবরের সব সড়কেই চলাচলে কড়াকড়ি আরোপ করেছে পুলিশ। ঘিঞ্জি এলাকাটিতে পুলিশের তল্লাশি চৌকিও বসানো হয়েছে। অপ্রয়োজনে কেউ বের হলেই তাকে পুলিশের জেরার মুখে পড়তে হচ্ছে।
আদাবর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কাজী সাহিদুজ্জামান বলেন, আমরা মানুষকে নিরুৎসাহিত করছি যাতে বাসা থেকে কেউ বের না হয়।
শেরেবাংলা নগর : রাজধানীর শেরেবাংলা নগর এলাকায় মোতাহার বস্তি লকডাউন করেছে পুলিশ। আইইডিসিআর-এর নির্দেশে বস্তিটি লকডাউন করা হয়েছে। এই বস্তির এক যুবক করোনাভাইরাস আক্রান্ত।
মিরপুরের সাতটি থানার মধ্যে পাঁচটি থানা এলাকাতেই করোনাভাইরাস আক্রন্ত রোগী শনাক্ত হয়েছে। লকডাউন নয়টি ভবন ও একটি আবাসিক এলাকা।
মিরপুর মডেল : মিরপুর মডেল থানা এলাকায় তিনজন রোগী শনাক্ত হয়েছে। এরপর তিনটি বাড়ি লকডাউন করেছে পুলিশ। পীরেরবাগে একটি বাড়ি, শাহ আলীবাগে একটি এবং মিরপুর ১০ নম্বর সেকশরের ৭ নম্বর সড়কের একটি বাসা।
মিরপুর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোস্তাজিজুর রহমান বলেন, ‘রোগী শনাক্ত হওয়ার পর আইইডিসিআর-এর আদেশে আমরা বাড়ি তিনটি লকডাউন করে দিয়েছি।
পল্লবী : পল্লবী থানার (মিরপুর ১১) সেকশন ১১ বি-এর ১ নম্বর সড়কের তিনটি বাড়ি লকডাউন করেছে পুলিশ। ৪৬, ৪৮ ও ৫০ নম্বর বাড়ি লকডাউন করা হয়েছে। ৪৮ নম্বর ছয়তলা বাড়িটিতে একজন করোনাভাইরাস আক্রান্ত রোগী ছিলেন। রোগী শনাক্ত হওয়ার পর বাড়িটির দুই পাশের বাড়িসহ লকডাউন করে পুলিশ।
কাফরুল : কাফরুল থানার মিরপুর ১৩ সেকশনের ১/১ রোডের ৪২ ও ৪৩ নম্বর বাসা লকডাউন করেছে পুলিশ। বর্তমানে ওই সড়ক পুলিশ পাহারায় রাখা হয়েছে।
শাহ আলী : ডিএমপির শাহ আলী থানা এলাকার সি-ব্লকের ১১ নম্বর সড়কের একটি ছয়তলা বাড়ি লকডাউন করেছে পুলিশ। শাহ আলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সালাউদ্দিন মিয়া বলেন, বাড়িটিতে একজন রোগী করোনাভাইরাস পজিটিভ হয়েছে। তাই আমরা বাড়িটি লকডাউন করেছি। সড়কে মানুষ চলাচল সীমিত করার অনুরোধ করা হয়েছে।
দারুসসালাম : দারুসসালাম থানার উত্তর টোলার বাগ একটি আবাসিক এলাকা এখনও লকডাউন রয়েছে। এই এলাকায় দুজন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন।
রূপনগর : রূপনগর থানা এলাকায় এখনও কোনও রোগী পাওয়া যায়নি।
ভাষানটেক : ভাষানটেক এলাকা অপরিচ্ছন্ন হলেও সেখানেও এখনও কোনও রোগী শনাক্ত হয়নি।
উল্লেখ্য, গত ৮ মার্চ করোনাভাইরাস আক্রান্ত হওয়ার পর ১১ এপ্রিল দুপুর পর্যন্ত সারাদেশে মোট ৪৮২ জন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে বলে জানিয়েছে আইইডিসিআর।


বিজ্ঞাপন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *