গাজীপুরে অসচেতনতা বাড়াচ্ছে করোনা ঝুঁকি

এইমাত্র জীবন-যাপন ঢাকা সারাদেশ স্বাস্থ্য

তথ্য দিতে সিভিল সার্জনের গড়িমসি

 

গাজীপুর প্রতিনিধি : গাজীপুরে অসচেতনতা ও সামাজিক দূরত্বের নিয়ম নীতি না মানার কারণে করোনা ভাইরাস সংক্রমণের হার বেড়ে যাচ্ছে। বিশেষ করে হাট বাজার ও অলিগলিতে মানুষের উপচেপড়া ভিড় এই আশঙ্কাকে বহুগুণ বাড়িয়েছে বলে মনে করছেন সাধারণ মানুষ।
এ জন্য হাট বাজার খোলা মাঠে স্থানান্তর এবং সপ্তাহে দুই/তিনদিন সময় সূচি দিয়ে হাট বাজার বসানোর ব্যবস্থা নেয়ার জন্য প্রশাসনের প্রতি দাবি করছেন তারা।
গাজীপুরের চান্দনা চৌরাস্তা, মালেকের বাড়ি, চেরাগআলী, টঙ্গী বাজার, সালনা, মাস্টারবাড়ি, কোনাবাড়িসহ শ্রমিক অধ্যূষিত এলাকায় সাধারণ মানুষ মানছেন না লকডাউন। এসব এলাকার হাট, বাজার ও অলিগলিতে মানুষের ভিড় দেখে উপায় নেই জেলায় লকডাউন চলছে। লকডাউন অমান্য করেই চলছে নির্মাণ কাজ, চায়ের দোকানে বসছে আড্ডা। লোকসমাগমের এসব স্পটে মানা হচ্ছে না স্বাস্থ্যবিধি ও সামাজিক নিরাপদ দূরত্ব। ইতোমধ্যে এই জেলাটি করনো ভাইরাস সংক্রমণে হটস্পট হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। আর এভাবে অসচেতনতা ও সামাজিক দূরত্বের নিয়মনীতি না মানার কারণে করোনা ভাইরাস সংক্রমণের হার বেড়ে যাচ্ছে বলে মনে করছেন সাধারণ মানুষ।
গাজীপুর একটি শিল্প এলাকা এখানে দেশের বিভিন্ন জেলার প্রায় ৪০ থেকে ৪২ লাখ মানুষ বসবাস করেন। এদের মধ্যে শ্রমিকদের সংখ্যাই বেশী। যারা বিভিন্ন কারখানায় কাজ করে। বর্তমানে দেশের এই করোনা পরিস্থিতিতে অনেক পোশাক কারখানা শ্রমিকদের গত মার্চ মাসের বেতন পরিশোধ করেনি। এই কারণে করোনার ভয়াবহতার মধ্যেও হাজার হাজার শ্রমিক পাওনা বেতনের দাবিতে বিভিন্ন কারখানার সামনে জরো হয়ে বিক্ষোভ ও সড়ক অবরোধ করেছেন। যা আরোও ভয়াবহ পরিস্থিতির দিকেই যাচ্ছে।
গত ১১ তারিখে গাজীপুর জেলাকে লকডাউন (অবরুদ্ধ) ঘোষণা করেন জেলা প্রশাসক এস এম তরিকুল ইসলাম। কিন্তু লকডাউন ঘোষণা করার পরও সাধারণ জনগণ তা মেনে চলছে না । শারীরিক দুরত্ব বজায় রেখে চলাচল করতে বলা হলেও অনেকেই তা মানছেন না। জয়দেবপুর বাজারসহ আরোও বিভিন্ন বাজার ঘুরে প্রতিদিনের লোক সমাগমের চিত্র দেখে মনে হচ্ছে মানুষ যেন ঈদের কেনাকাটা করছে। এতে করে প্রতিদিনই গাজীপুরে আশঙ্কাজনক হারে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেড়েই চলছে।
আক্রান্ত রোগীদের গাজীপুরে চিকিৎসা সেবা দেওয়ার জন্য গত বৃহস্পতিবার শহীদ তাজউদ্দি আহমেদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালকে কভিড-১৯ ডেডিকেটেড হাসপাতাল হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। তবে এখনো করোনাভাইরাসে শনাক্ত হওয়া বেশিরভাগ রোগীদেরকে বাড়িতে থেকে চিকিৎসা নিতে বলা হচ্ছে। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত গাজীপুরে করোনাভাইরাসে আক্রান্তদের মধ্যে ১৭ জন চিকিৎসকসহ ৮০ জন স্বাস্থ্যকর্মী, ২৪ জন পুলিশ, ২জন সাংবাদিক সহ জেলা প্রশাসনের একজন সহকারী কমিশনার।
গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মো. আনোয়ার হোসেন সকালের সময়কে জানান, করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ২৪ পুলিশ সদস্যের মধ্যে ১৫ জন রাজারবাগ পুলিশ লাইন হাসপাতালে ভর্তি আছেন। বাকিরা নিজ নিজ বাসায় থেকেই চিকিৎসা নিচ্ছেন।
এ দিকে শহীদ তাজউদ্দিন আহমেদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে করোনা আক্রান্ত রোগীর চিকিৎসা প্রস্তুতি সম্পর্কে জানতে চাইলে, হাসপাতালে পরিচালক ডা. খলিলুর রহমান সকালের সময়কে জানান, হাসপাতালটি ৫০০ শয্যাবিশিষ্ট হলেও, আমাদের যে লোকবল আছে এতে আমরা সর্বোচ্চ ১০০ রোগীর চিকিৎসা সেবা দিতে পারব। এর বেশি চিকিৎসা সেবা দিতে হলে লোকবল বাড়াতে হবে। আমরা আগামীকাল (আজ) থেকে হাসপাতালে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা সেবা দিতে পারব।
গাজীপুরে সিভিল সার্জন অফিস সূত্রে গত ১৯ তারিখের ২৪ঘণ্টায় করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের রিপোর্ট ২০তারিখ সকাল ১০টায় ২৬৯জন রোগীর তথ্য তাদের নিজস্ব ফেসবুক গ্রুপে প্রকাশ করে। এরপর গত ২০,২১ এবং ২২ এপ্রিলের গাজীপুর জেলায় করোনাভাইরাসে আক্রান্ত কোন রোগীর তথ্য এই রিপোর্ট (গতকাল সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত) লেখা পর্যন্ত পাওয়া যায়নি।
এ ব্যাপারে গাজীপুর জেলা সিভিল সার্জন ডা. খায়রুজ্জামান এর সাথে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, আমরা ঢাকা থেকে গত ৩দিনের রিপোর্ট এখনও পাইনি। ঢাকায় আমরা যোগাযোগ করছি। রিপোর্ট আমাদের কাছে পৌঁছা মাত্রই তা জানিয়ে দেওয়া হবে।


বিজ্ঞাপন