দেশে আক্রান্ত প্রায় ৫ হাজার

এইমাত্র জাতীয় জীবন-যাপন সারাদেশ স্বাস্থ্য

করোনামুক্ত ৪ জেলা
বিশ্বে মৃত্যুর চলছে

 

নিজস্ব প্রতিবেদক : বিশ্বের ২১০টি দেশ ও অঞ্চলের ২৮ লাখের বেশি মানুষ করোনাভাইরাসে সংক্রমিত হয়েছে। এদের মধ্যে শুক্রবার মাত্র একদিনেই আক্রান্ত হয়েছে ১ লাখের বেশি মানুষ। ওয়ার্ডোমিটারের সর্বশেষ পরিসংখ্যান বলছে, বর্তমানে বিশ্বের ২৮ লাখ ৩০ হাজার ৮২ জন মানুষ করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। এদের মধ্যে শুক্রবার গত ২৪ ঘণ্টায় আক্রান্ত হয়েছে ১ লাখ ৫ হাজার ৬১৬ জন। এ পর্যন্ত মারা গেছে সবমিলিয়ে ১ লাখ ৯৭ হাজার ২৪৬ জন। এদের মধ্যে গত ২৪ ঘণ্টায় মারা গেছে ৬ হাজার ১৭৪ জন। ইতিমধ্যে করোনা থেকে সেরে উঠেছেন বিশ্বের প্রায় ৮ লাখ মানুষ। অর্থাৎ ৭ লাখ ৯৮ হাজার ৩৭১ জন।
এদিকে মহামারি করোনাভাইরাস দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় আরও নয় জনের প্রাণ কেড়ে নিয়েছে। এ নিয়ে ভাইরাসটিতে ১৪০ জনের মৃত্যু হলো। আক্রান্ত হিসেবে নতুন করে শনাক্ত হয়েছেন আরও ৩০৯ জন। এতে দেশে করোনায় মোট আক্রান্তের সংখ্যা হয়েছে চার হাজার ৯৯৮।
শনিবার দুপুরে স্বাস্থ্য অধিদফতরের করোনাভাইরাস সংক্রান্ত নিয়মিত হেলথ বুলেটিনে এ তথ্য জানানো হয়। অনলাইনে বুলেটিন উপস্থাপন করেন স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা।
বুলেটিনে জানানো হয়, করোনাভাইরাস শনাক্তে গত ২৪ ঘণ্টায় তিন হাজার ৪২২টি নমুনা সংগ্রহ করা হয়। এর মধ্যে তিন হাজার ৩৩৭টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়। সব মিলিয়ে নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে ৪৩ হাজার ১১৩টি। নতুন যে নমুনা পরীক্ষা হয়েছে তার মধ্যে আরও ৩০৯ জনের দেহে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। ফলে করোনায় মোট আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে চার হাজার ৯৯৮ জনে। আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে মারা গেছেন আরও নয়জন, এদের মধ্যে পাঁচজন নারী ও চারজন পুরুষ, তিনজন ঢাকার এবং ছয়জন ঢাকার বাইরের বাসিন্দা। এ নিয়ে মৃতের সংখ্যা দাঁড়াল ১৪০ জনে।
করোনাভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকি এড়াতে সবাইকে ঘরে থাকার এবং স্বাস্থ্য অধিদফতর ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরামর্শ-নির্দেশনা মেনে চলার অনুরোধ জানানো হয় বুলেটিনে।
মানসিক স্বাস্থ্য ঠিক রাখতে বই পড়া, বাগান করা এবং শারীরিক ব্যায়াম করার পরামর্শ দেয়া হয় বুলেটিনে। রোজার ইফতারে পানিসহ তরল খাবার বেশি করে গ্রহণেরও পরামর্শ দেয়া হয় এসময়।
গত ডিসেম্বরের শেষ দিকে চীনের উহান থেকে ছড়িয়ে পড়া করোনাভাইরাস এখন গোটা বিশ্বে তা-ব চালাচ্ছে। চীন পরিস্থিতি কিছুটা সামাল দিয়ে উঠলেও এখন মারাত্মকভাবে ভুগছে ইউরোপ-আমেরিকা-এশিয়াসহ বিশ্বের অন্যান্য অঞ্চল। এ ভাইরাসে বিশ্বজুড়ে আক্রান্তের সোয়া ২৮ লাখ ছাড়িয়ে গেছে। মৃতের সংখ্যা প্রায় দুই লাখ ছুঁই ছুঁই। তবে আট লাখ রোগী ইতোমধ্যে সুস্থ হয়েছেন।
গত ৮ মার্চ বাংলাদেশে প্রথম করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়। এরপর প্রথম দিকে কয়েকজন করে নতুন আক্রান্ত রোগীর খবর মিললেও এখন লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে এ সংখ্যা। বাড়ছে মৃত্যুও। সবশেষ হিসাবে দেশে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা চার হাজার ৯৯৮, মৃতের সংখ্যা ১৪০ এবং সুস্থ রোগীর সংখ্যা ১১২।
প্রাণঘাতী এই ভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে সরকার সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেছে। নিয়েছে আরও নানা পদক্ষেপ। এসব পদক্ষেপের মূলে রয়েছে মানুষে মানুষে সামাজিক দূরত্ব বজায়, বিশেষত ঘরে রাখা। কিন্তু সশস্ত্র বাহিনী, র্যাব ও পুলিশের টহল জোরদার করেও মানুষকে ঘরে রাখা যাচ্ছে না বিধায় করোনাভাইরাসের বিস্তার উদ্বেগজনক পর্যায়ে পৌঁছাতে পারে বলে আশঙ্কা বিশেষজ্ঞদের।
করোনায় আক্রান্ত ও মৃত্যুর তালিকায় শীর্ষে অবস্থান করছে যুক্তরাষ্ট্র। দেশটিতে করোনা সংক্রমণ কমার কোনও লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না।
দেশটিতে শুক্রবার ২৪ ঘণ্টায় মারা গেছে করোনায় আক্রান্ত আরও ২ হাজারের মতো মানুষ। অর্থাৎ ১ হাজার ৯শ ৫১ জন। ফলে সেখানে মোট মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫২ হাজার ১৮৫ জন।
এদিকে যুক্তরাষ্ট্রে শুক্রবার নতুন করে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন আরও প্রায় ৪০ হাজার মানুষ। অর্থাৎ ৩৮ হাজার ৭৬৪ জন। ফলে দেশটিতে মোট আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯ লাখ ২৫ হাজার ৩৮ জন। দেশটিতে সুস্থ হয়েছেন ১ লাখ ১০ হাজার ৪৩২ জন।
এখনও সেখানে চিকিৎসাধীন রয়েছে আরও প্রায় সাড়ে ৭ লাখের বেশি মানুষ। অর্থাৎ ৭ লাখ ৬২ হাজার ৪২১ জন। এদের মধ্যে ১৫ হাজার মানুষের অবস্থা আশঙ্কাজনক। ফলে যুক্তরাষ্ট্রে মৃতের সংখ্যা যে আরও বাড়বে তাতে কোনও সন্দেহ নেই।
যুক্তরাষ্ট্রের পর সবচেয়ে বেশি করোনা আক্রান্ত হয়েছে স্পেনের মানুষ। শুক্রবার গত ২৪ ঘণ্টায় সেখানে আক্রান্ত হয়েছে আরও ৬ হাজার ৭৪০ জন। অর্থাৎ ওইদিন তারা আক্রান্তের সংখ্যায় যুক্তরাষ্ট্রকেও ছাড়িয়ে গেছে। ফলে দেশটিতে মোট আক্রান্ত বেড়ে হয়েছে ২ লাখ ১৯ হাজার ৭৬৪ জন।
তবে স্পেনে করোনায় মৃত্যুর হার বেশ কমেছে। শুক্রবার দেশটিতে মারা গেছে আরও ৩৬৭ জন। ফলে সেখানে মোট মৃত্যু বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২২ হাজার ৫২৪ জনে।
দেশটিতে সুস্থ হয়েছেন মোট ৯২ হাজার ৩৫৫ জন। এখনও সেখানে চিকিৎসাধীন রয়েছে আরও ১ লাখের বেশি মানুষ। এদের মধ্যে ৭ হাজার ৭০৫ জনের অবস্থা গুরুতর।
যুক্তরাষ্ট্রের পর মৃতের দিক থেকে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে ইতালি। দেশটিতে এ পর্যন্ত মারা গেছে ২৫ হাজার ৯৬৯ জন। আর আক্রান্ত হয়েছে ১ লাখ ৯২ হাজার ৯৯৪ জন।
ফ্রান্সে আক্রান্ত ১ লাখ ৫৯ হাজার ৮২৮ জন এবং মারা গেছে ২২ হাজার ২৪৫ জন। জার্মানিতে আক্রান্ত ১ লাখ ৫৪ হাজার ৯৯৯ জন। আক্রান্তের তুলনায় দেশটিতে মৃত্যু অনেক কম, মাত্র ৫ হাজার ৭৬০ জন।
যুক্তরাজ্যে আক্রান্তের সংখ্যা হচ্ছে ১ লাখ ৪৩ হাজার ৪৬৪ জন। মৃত্যু হয়েছে ১৯ হাজার ৫০৬ জনের।
তুরস্কে আক্রান্তের সংখ্যা ১ লাখ ৪ হাজার ৯১২ জন এবং দেশটিতে মারা গেছে ৩ হাজার ১২২ জন। ইরানে আক্রান্ত ৮৮ হাজার ১৯৪ জন এবং মৃত্যু ৫ হাজার ৫৭৪ জন।
করোনার উৎপত্তিস্থল হিসাবে পরিচিত চীনে আক্রান্ত হয়েছে মোট ৮২ হাজার ৮০৪ জন। সেখানে এ পর্যন্ত মারা গেছে ৪ হাজার ৬৩২ জন।
এছাড়া রাশিয়াতে আক্রান্ত ৬৮ হাজার ৬২২ জন ও মৃত্যু ৬১৫; ব্রাজিলে আক্রান্ত ৫২ হাজার ৯৯৫ জন, মৃত্যু ৩ হাজার ৫০৩ জন; বেলজিয়ামে আক্রান্ত ৪৪ হাজার ২৯৩ জন ও মৃত্যু ৬ হাজার ৬৭৯ জন।
করোনামুক্ত ৪ জেলা : বাংলাদেশের ৬০টি জেলাতেই করোনাভাইরাস ধরা পড়েছে। এ অবস্থায় করোনামুক্ত রয়েছে শুধু ৪টি জেলা। সেগুলো হলো- রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি, ঝিনাইদহ ও সাতক্ষীরা।
শনিবার দুপুরে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নিয়মিত অনলাইন বুলেটিনে এ তথ্য জানান স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা। বুলেটিনে জানানো হয়, করোনাভাইরাস শনাক্তে গত ২৪ ঘণ্টায় তিন হাজার ৪২২টি নমুনা সংগ্রহ করা হয়। এর মধ্যে তিন হাজার ৩৩৭টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়। সব মিলিয়ে নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে ৪৩ হাজার ১১৩টি। নতুন যে নমুনা পরীক্ষা হয়েছে তার মধ্যে আরও ৩০৯ জনের দেহে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। ফলে করোনায় মোট আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে চার হাজার ৯৯৮ জনে। আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে মারা গেছেন আরও নয়জন, এদের মধ্যে পাঁচজন নারী ও চারজন পুরুষ, তিনজন ঢাকার এবং ছয়জন ঢাকার বাইরের বাসিন্দা। এ নিয়ে মৃতের সংখ্যা দাঁড়াল ১৪০ জনে।
দেশে করোনাভাইরাসে সংক্রমিত (কোভিড-১৯) প্রথম রোগী শনাক্ত হয় গত ৮ মার্চ। ১৮ মার্চ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে প্রথম একজনের মৃত্যু হয়।


বিজ্ঞাপন