রেকর্ড সংখ্যক আক্রান্ত

এইমাত্র জাতীয় জীবন-যাপন রাজধানী সারাদেশ স্বাস্থ্য

*মোট নমুনা পরীক্ষা প্রায় এক লাখ
*করোনা এখন দেশের ৬৪ জেলায়

 

মহসীন আহমেদ স্বপন : বিশ্বব্যাপী মহামারি রূপ নেয়া করোনাভাইরাসে প্রতিদিনই লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা। বাংলাদেশেও আক্রান্তের সংখ্যা লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে আরও ৭৯০ জন করোনা আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়েছেন। এ নিয়ে দেশে মোট আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়াল ১১ হাজার ৭১৯ জন। এছাড়া গত ২৪ ঘণ্টায় আরও তিন জনের মৃত্যুর মধ্য দিয়ে মোট মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল ১৮৬ জনে।
বুধবার দুপুরে করোনা ভাইরাস নিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নিয়মিত অনলাইন বুলেটিনে এ তথ্য জানান সংস্থাটির অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা। তিনি জানান, করোনাভাইরাস শনাক্তে গত ২৪ ঘণ্টায় আরও ৬ হাজার ৭৭১টি নমুনা সংগ্রহ করা হয়। এরমধ্যে পরীক্ষা করা হয় ৬ হাজার ২৪১টি নমুনা। এ নিয়ে দেশে মোট নমুনা পরীক্ষা করা হলো ৯৯ হাজার ৬৪৬টি। নতুন নমুনা পরীক্ষায় আরও ৭৯০ জনের দেহে করোনা শনাক্ত হয়েছে। এটি গতকালের সংখ্যাকে ছাড়িয়ে ২৪ ঘণ্টায় সর্বোচ্চ শনাক্তের রেকর্ড। এ নিয়ে মোট আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়াল ১১ হাজার ৭১৯ জন।
নাসিমা সুলতারা আরও বলেন, গত ২৪ ঘণ্টায় আরও তিন জনের মৃত্যুর মধ্য দিয়ে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল ১৮৬ জনে। নতুন করে মারা যাওয়াদের মধ্যে দুজন পুরুষ ও একজন নারী, দুজন ঢাকার এবং একজন ঢাকার বাইরের, দুজন ষাটোর্ধ্ব এবং একজন চল্লিশোর্ধ্ব।
করোনাভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকি এড়াতে সবাইকে ঘরে থাকার এবং স্বাস্থ্য অধিদফতর ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরামর্শ-নির্দেশনা মেনে চলার অনুরোধ জানান তিনি।
এর আগে গত মঙ্গলবার (৫ মে) দেশে রেকর্ড সংখ্যক ৭৮৬ জন করোনা রোগী শনাক্তের কথা জানানো হয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অনলাইন বুলেটিনে। এছাড়া আরও একজনের মৃত্যুর খবরও জানানো হয়। সেই সঙ্গে জানানো হয়, আরও ১৯৩ জন সুস্থ হয়েছেন।
ডিসেম্বরে প্রাদুর্ভাব শুরুর পর থেকে বেশিরভাগ দেশই ভাইরাসটিতে তেমন পাত্তা দেয়নি। অনেক দেশই ধারণা করেছিল, এটি চীনা ভাইরাস এবং এর সংক্রমণ হয়তো ইউরোপ-আমেরিকায় ছড়িয়ে পড়বে না। এজন্য সেখানকার দেশগুলো তেমন কোনো পদক্ষেপও নেয়নি। ফলও দিতে হচ্ছে তাদের। কারণ সংক্রমণ সংখ্যার দিক থেকে প্রথম দেশগুলোর তালিকার মাঝেই নেই চীন।
বাংলাদেশে গত ৮ মার্চ প্রথম করোনা ভাইরাসের রোগী শনাক্ত হলেও প্রথম মৃত্যুর খবর আসে ১৮ মার্চ। দিন দিন করোনা রোগী শনাক্ত ও মৃতের সংখ্যা বাড়ায় নড়েচড়ে বসে সরকার। ভাইরাসটি যেন ছড়িয়ে পড়তে না পারে সেজন্য ২৬ মার্চ থেকে বন্ধ ঘোষণা করা হয় সব সরকারি-বেসরকারি অফিস। কয়েক দফা বাড়ানো হয় সেই ছুটি, যা এখনও অব্যাহত আছে। পঞ্চম দফায় সেই ছুটি বাড়ানো হয়েছে আগামী ৫ মে পর্যন্ত। তার আগেই আরেক দফা ছুটি বাড়ানোর ঘোষণা এসেছে। যার প্রজ্ঞাপন এখনও জারি করা হয়নি। বলা হচ্ছে, এ দফায় ছুটি বাড়িয়ে ১৫ কিংবা ১৬ মে পর্যন্ত করা হবে।
করোনা পরিস্থিতিতে শুধু বাংলাদেশেই নয়, বিশ্বের বেশিরভাগ দেশের পদক্ষেপ অনেকটা এ রকমই। তবে এর মাঝেও কিছু কিছু দেশ তাদের দেয়া লকডাউন কিছুটা শিথিল করছে। স্পেন, জার্মানি ও ভারত সেই পথে হেঁটেছে। যুক্তরাষ্ট্র ও ইতালিও তেমনটাই ভাবছে।
করোনা ভাইরাসে আক্রান্তদের সংখ্যা ও প্রাণহানির পরিসংখ্যান রাখা ওয়েবসাইট ওয়ার্ল্ডোমিটার তথ্যানুযায়ী বুধবার সকাল পৌনে ৯টা পর্যন্ত এখন পর্যন্ত বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ২ লাখ ৫৮ হাজার ৩৩৮ জন। এছাড়া এ ভাইরাস শনাক্ত হয়েছে ৩৭ লাখ ২৭ হাজার ৮০২ জনের শরীরে। এরইমধ্যে ২১০টি দেশ ও অঞ্চলে ছড়িয়েছে করোনা ভাইরাস।
আক্রান্তদের মধ্যে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ১২ লাখ ৪২ হাজার ৩৪৭ জন। বর্তমানে চিকিৎসাধীন ২২ লাখ ২৭ হাজার ১১৭ জন। এদের মধ্যে ২১ লাখ ৭৭ হাজার ৮৬৯ জনের শরীরে মৃদু সংক্রমণ থাকলেও ৪৯ হাজার ২৪৮ জনের অবস্থা গুরুতর।
করোনা এখন দেশের ৬৪ জেলায় : মহামারি করোনাভাইরাসে (কোভিড-১৯) আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা প্রতিদিন হু হু করে বাড়ছে দেশের বিভিন্ন জেলায়। বাকি ছিল শুধু পার্বত্য জেলা রাঙ্গামাটি।
কিন্তু বুধবার দুপুরে চট্টগ্রামের বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক জানিয়েছেন, রাঙ্গামাটিতে ৪ জনের শরীরে করোনা শনাক্ত হয়েছ। এর মাধ্যমে দেশের ৬৪ জেলাতেই করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হলো।
বুধবার দুপুরে বিষয়টি নিশ্চিত করেন চট্টগ্রাম বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিচালক ডা. হাসান শাহরিয়ার কবির।
তিনি বলেন, গত দুই দিনে চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি অ্যান্ড অ্যানিমেল সায়েন্সেস ইউনিভার্সিটির (সিভাসু) ল্যাবে ১২২টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়। ২২টি নমুনার পজেটিভ রিপোর্ট এসেছে। এর মধ্যে চট্টগ্রামের নতুন ১২ জন, পুরোনো ১ জন, রাঙামাটিতে শনাক্ত হয়েছেন ৪ জন, লক্ষ্মীপুরের ১ জন, ফেনী জেলায় একজন, নোয়াখালী জেলায় ২ জন করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছে।
ডা. হাসান শাহরিয়ার কবির জানান, রাঙামাটিতে আক্রান্তদের একজন শহরের রিজার্ভবাজার, দুইজন হাসপাতাল এলাকা ও একজন দেবাশিষ নগরের বাসিন্দা।
এ পর্যন্ত চট্টগ্রামে ১২৮ জন করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছে। এ ছাড়া ঢাকা, কুমিল্লা, কক্সবাজার ও রাজবাড়িতে করোনা শনাক্ত হয়ে চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতাল ও ফিল্ড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন পাঁচ ব্যক্তিও এই তালিকাও রয়েছেন।
এ নিয়ে চট্টগ্রামে এক শিশু, চার পুরুষ ও দুই নারীসহ মোট ৯জন করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। এ ছাড়া আইসোলেশনে এখন পর্যন্ত মারা গেছেন ৬ জন। মৃত্যুর পর তাদের মধ্যে ৫ জনের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষায় করোনা নেগেটিভ পাওয়া যায়।
এ ছাড়া সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন মোট ৩০ জন। বর্তমানে ১৪৯ জন রোগী আইসোলেশনে আছেন। হোম কোয়ারেন্টাইনে আছেন ১৪০৩ জন।


বিজ্ঞাপন