পরিস্থিতি আরও কঠিন হবে

আন্তর্জাতিক এইমাত্র জাতীয় জীবন-যাপন সারাদেশ স্বাস্থ্য

রূপ পাল্টাচ্ছে করোনা

 

মহসীন আহমেদ স্বপন : বিশ্বব্যাপী মহামারি রূপ নেয়া কোভিড-১৯ শত শতবার নিজের রূপ পাল্টেছে বলে জানিয়েছেন ব্রিটেন ও যুক্তরাষ্ট্রের বিজ্ঞানীরা। কিন্তু মানুষের মধ্যে এ ভাইরাস ছড়ানো বা এর টিকা আবিষ্কারের ওপর এ রূপান্তরের কী প্রভাব পড়বে তা এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
এদিকে করোনা পরিস্থিতি আগামীতে আরও কঠিন হতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। পাশাপাশি এই পরিস্থিতি মোকাবিলায় দলের সব নেতাকর্মীদের মানসিকভাবে প্রস্তুত থাকার আহ্বান জানান তিনি। বৃহস্পতিবার সকালে তার সরকারি বাসভবন থেকে এক ব্রিফিংয়ে সেতুমন্ত্রী এ আহ্বান জানান। কাদের বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে জনগণের পাশে আছে আওয়ামী লীগ। এই দুর্যোগে প্রধানমন্ত্রী দেশ ও জনগণের জন্য নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন, যা দেশে-বিদেশে প্রশংসিত হচ্ছে। তিনি বলেন, দলের সহযোগী সংগঠনসমূহের নেতাকর্মী ও সংসদ সদস্যগণ আওয়ামী লীগের পক্ষে সারাদেশে ৯০ লাখ ২৫ হাজার পরিবারের মাঝে খাদ্য সহায়তা এবং নগদ ৮ কোটি ৬২ লাখ অর্থ সহায়তা প্রদান করেছে। এসব কর্মসূচি তৃণমূল পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে।
অন্যদিকে মহামারি করোনাভাইরাসে দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় আক্রান্ত হিসেবে শনাক্ত হয়েছেন আরও ৭০৬ জন। ফলে দেশে করোনায় মোট আক্রান্তের সংখ্যা হয়েছে ১২ হাজার ৪২৫। এছাড়া ২৪ ঘণ্টায় সুস্থ হয়েছেন আরও ১৩০ জন। সবমিলিয়ে সুস্থ হয়েছেন এক হাজার ৯১০ জন। বৃহস্পতিবার দুপুরে স্বাস্থ্য অধিদফতরের করোনাভাইরাস বিষয়ক নিয়মিত হেলথ বুলেটিনে এ তথ্য জানান অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা।
তিনি জানান, করোনাভাইরাস শনাক্তে গত ২৪ ঘণ্টায় আরও পাঁচ হাজার ৮৬৭টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়। এ নিয়ে দেশে মোট নমুনা পরীক্ষা করা হলো এক লাখ পাঁচ হাজার ৫১৩টি। নতুন নমুনা পরীক্ষায় আরও ৭০৬ জনের দেহে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। এ নিয়ে দেশে মোট আক্রান্ত হয়েছেন ১২ হাজার ৪২৫ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় সুস্থ হয়েছেন আরও ১৩০ জন, তার আগের ২৪ ঘণ্টায় সুস্থ হয়েছেন ৩৭৭ জন। সব মিলিয়ে সুস্থ হয়েছেন এক হাজার ৯১০ জন। তবে বুলেটিনে মৃত্যুর তথ্য উল্লেখ না করে ডা. নাসিমা জানান, এ তথ্য প্রেস রিলিজে জানানো হবে।
বুলেটিনে করোনাভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকি এড়াতে সবাইকে স্বাস্থ্য অধিদফতর ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরামর্শ-নির্দেশনা মেনে চলার অনুরোধ জানানো হয়।
গত ডিসেম্বরে চীনের উহান শহরে প্রথম শনাক্ত হলেও করোনাভাইরাস এখন গোটা বিশ্বেই তা-ব চালাচ্ছে। মারাত্মকভাবে ভুগছে ইউরোপ-আমেরিকা-এশিয়াসহ বিশ্বের অন্যান্য অঞ্চল। এ ভাইরাসে বিশ্বজুড়ে আক্রান্তের সংখ্যা ৩৮ লাখ ৩৪ হাজার প্রায়। মৃতের সংখ্যা ছাড়িয়েছে দুই লাখ ৬৫ হাজার। তবে ১৩ লাখ রোগী ইতোমধ্যে সুস্থ হয়েছেন।
গত ৮ মার্চ বাংলাদেশে প্রথম করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়। দিন গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে এখন লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে এ সংখ্যা। লম্বা হচ্ছে মৃত্যুর মিছিলও।
প্রাণঘাতী এই ভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে সারাদেশে চলছে ছুটি। বন্ধ বাস, ট্রেন, লঞ্চসহ সব ধরনের গণপরিবহন। কিন্তু সম্প্রতি ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ-গাজীপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় পোশাক কারখানা খুলে দেয়া হয়েছে। এছাড়া ঈদের আগে শর্তসাপেক্ষে শপিংমল খোলা রাখার সিদ্ধান্তও হয়েছে। গত বুধবারই দেয়া হয়েছে শর্তসাপেক্ষে মসজিদে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ার অনুমতি।
রূপ পাল্টাচ্ছে করোনা : বিশ্বব্যাপী মহামারি রূপ নেয়া কোভিড-১৯ শত শতবার নিজের রূপ পাল্টেছে বলে জানিয়েছেন ব্রিটেন ও যুক্তরাষ্ট্রের বিজ্ঞানীরা। কিন্তু মানুষের মধ্যে এ ভাইরাস ছড়ানো বা এর টিকা আবিষ্কারের ওপর এ রূপান্তরের কী প্রভাব পড়বে তা এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
ভাইরাসের একটি বৈশিষ্ট্য হচ্ছে যে সে এক দেহ থেকে আরেক দেহে ছড়াতে থাকার মধ্যেই নিয়মিত নিজে নিজে তার জেনোমের প্রকৃতি পরিবর্তন করতে থাকে- যাকে বলে মিউটেশন বা রূপান্তর। সব ভাইরাসেরই রূপান্তর হয়। খবর বিবিসির।
এসব মিউটেশনের ফলে কি এই নতুন করোনাভাইরাস আরো বেশি সংক্রামক বা শক্তিশালী হয়ে উঠছে? যুক্তরাষ্ট্রের একটি গবেষণায় আভাস দেয়া হয়েছে যে একটি বিশেষ মিউটেশন- যার নাম হলো ডি সিক্স ওয়ান ফোর জি- প্রভাবশালী হয়ে উঠছে এবং তা এই রোগটিকে ‘আরো বেশি সংক্রামক’ করে তুলতে পারে। এই মিউটেশনটি অধিকতর দ্রুতগতিতে সংখ্যাবৃদ্ধি পারে কিন্তু তার ফল কী হয় তা অস্পষ্ট।
যুক্তরাজ্যের ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডনের আরেকটি জরিপে গবেষকরা ১৯৮টি মিউটেশন চিহ্নিত করেছেন। এ গবেষণার অন্যতম নেতা অধ্যাপক ফ্রাঁসোয়া ব্যালো বলছেন, ‘মিউটেশন মানেই যে খারাপ কিছু তা নয় এবং সার্স-কোভ-টু যে আরো মারাত্মক বা আরো বেশি সংক্রামক হয়ে উঠছে – তা আমরা বলতে পারছি না। ‘
টিকা আবিষ্কারের ক্ষেত্রে ভাইরাসের গঠনে সামান্য পরিবর্তনগুলোর ওপরও নজর রাখা দরকার। যেমন ফ্লু ভাইরাসে এত দ্রুত মিউটেশন হয় যে প্রতি বছরই ভাইরাসের নতুন প্রকৃতি অনুযায়ী টিকায় কিছু পরিবর্তন করা হয়।
বর্তমানে কোভিড-১৯ এর যে টিকাগুলো তৈরি হচ্ছে তাতে ভাইরাসের গায়ের কাঁটাগুলোকে টার্গেট করা হচ্ছে। এই ভ্যাকসিনটি মানুষের দেহকে এই কাঁটাগুলোর একটা অংশ চিনিয়ে দেবে যাতে রোগপ্রতিরোধ ব্যবস্থা তাকে আক্রমণ করে ধ্বংস করতে পারে। কিন্তু এই কাঁটাগুলো যদি বদলে যায়, তাহলে টিকার কার্যকারিতাও কমে যেতে পারে।
তবে বিজ্ঞানীরা বলছেন, এখন পর্যন্ত এগুলো হচ্ছে তাত্ত্বিক কথা। আসলে ভাইরাসের জেনোমের পরিবর্তনগুলোর মানে কী- তা বলার মতো যথেষ্ট তথ্য এখনো তাদের হাতে নেই।
গবেষকরা আরো দেখেছেন যে, যুক্তরাজ্যের শেফিল্ডে যারা এই বিশেষ মিউটেশনে আক্রান্ত হয়েছেন– তাদের নমুনায় বেশি পরিমাণে ভাইরাস দেখা যাচ্ছে কিন্তু তাতে যে তারা বেশি অসুস্থ হয়েছেন বা হাসপাতালে বেশি দিন ছিলেন এমন কোনো প্রমাণ নেই।
যুক্তরাষ্ট্রের নিউ মেক্সিকো অঙ্গরাজ্যের লস আলামোস ল্যাবরেটরির গবেষক দলটি ভাইরাসের গায়ে যে কাঁটার মতো জিনিসগুলো থাকে তাতে কিছু পরিবর্তন পর্যবেক্ষণ করছেন। এ জন্য তারা ব্যবহার করছেন একটি ডাটাবেজ যার নাম জি আই এস এ আই ডি এটি সব ধরনের ইনফ্লুয়েঞ্জার উপাত্ত বিনিময়ের একটি বৈশ্বিক উদ্যোগ।
গ্লাসগো বিশ্ববিদ্যালয়েও একটি জরিপে মিউটেশনগুলোর বিশ্লেষণ করা হচ্ছে। এই গবেষকরা বলছেন, এসব পরিবর্তনের ফলে এটা বলা যায় না যে এতে একটা নতুন ধরনের ভাইরাস সৃষ্টি হচ্ছে। তারা বলছেন, এখন পৃথিবী জুড়ে যা ছড়াচ্ছে তা একই ভাইরাস।
মনে রাখতে হবে এই গবেষণাটি এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশিত হয় নি এবং অন্য বিজ্ঞানীরা এর পর্যালোচনা করেননি।


বিজ্ঞাপন