ঈদের আগে চলছে না লঞ্চ অনুমতি পেলে চলবে বাস

জাতীয় জীবন-যাপন

নিজস্ব প্রতিবেদক : করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে আপাতত ঈদের আগে লঞ্চ চলছে না। লঞ্চ না চালানোর চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়েছেন লঞ্চ মালিক ও নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়। তবে বাস মালিক সমিতি জানিয়েছে অনুমতি পেলে তারা বাস চালাতে রাজি আছেন। সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয় বলেছে, বাস চলাচলের অনুমতি দেওয়া হবে কিনা সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে আগামী ১৫ মে’র পরে। এদিকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে গণপরিবহন চালুর দাবি জানিয়েছেন ‘যাত্রী অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ’ নামের একটি সংগঠন।
সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আসন্ন ঈদের আগে ছোট, বড় বা মাঝারি কোনও লঞ্চই না চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে লঞ্চ মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-চলাচল (যাত্রী পরিবহন) সংস্থা। ঈদের পর পরিস্থিতি বুঝে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া যাবে বলে জানিয়েছেন সংগঠনের নেতারা। তারা বলেছেন, দেশে করোনা সংক্রমণ বাড়ছে, লঞ্চ চলাচল শুরু হলে তা আরও বাড়তে পারে। এ অবস্থায় লঞ্চ চালানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া ঠিক হবে না। অপরদিকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে লঞ্চ চালানো কঠিন। এই সময় লঞ্চ চালানোর সিদ্ধান্ত নিলে মালিকরা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। কারণ গার্মেন্টস, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও বিভিন্ন শিল্পে কর্মরত শ্রমিকরা ইতোমধ্যেই বিভিন্ন উপায়ে রাজধানীতে চলে এসেছেন। তারা ঈদের সময় আর বাড়ি যাবেন না। অন্যদিকে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও আসন্ন ঈদের আগে বাড়ি থেকে রাজধানীতে আসবেন না। এদের মধ্যে যারা বর্তমানে রাজধানীতে আছেন তারাও এসময় এতো ঝুঁকি নিয়ে বাড়ি যাবেন না। তাই বর্তমান প্রেক্ষাপটে এ বছর ঈদের সময় লঞ্চ চালানোর সিদ্ধান্ত নেওয়াটা সময় উপযোগী হবে না।
এ প্রসঙ্গে লঞ্চ মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-চলাচল সংস্থার সভাপতি মাহবুব উদ্দিন আহমদ বলেন, ঈদের আগে লঞ্চ চলছে না, এটি এক প্রকার চূড়ান্ত। কারণ স্বাস্থ্যবিধি মেনে লঞ্চ চালাতে গেলে তেল খরচও উঠবে না। অপরদিকে এ বছর ঈদের সময় যাত্রী থাকবে না। অনেকেই বিভিন্নভাবে রাজধানীতে এসে পড়েছে, তারা আর ঈদের সময় গ্রামে যাবে না। অপরদিকে যারা রাজধানীতে আছেন, তারাও বর্তমান পরিস্থিতিতে রাজধানী ছেড়ে কোথাও যাবেন না। এ অবস্থায় কাঙ্ক্ষিত যাত্রী পাওয়া যাবে না। এমনিতেই বিভিন্নভাবে লোকসান বা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি বা প্রতিনিয়ত হচ্ছি। ক্ষতির পরিমাণ আর বাড়াতে চাই না। তাই ঈদের আগে কোনওভাবেই লঞ্চ চালানোর সিদ্ধান্ত আমরা নেবো না।
তিনি আরও বলেন, মানবিকতার কথা ভেবে এ পর্যন্ত এতকিছুর পরেও আমরা আমাদের স্টাফদের বেতন-ভাতা পরিশোধ করে এসেছি। আগামী ঈদ পর্যন্ত হয়তো আমরা তাদের বেতনও পরিশোধ করতে পারবো। কিন্তু ঈদের বোনাস দিতে পারবো না। ঈদের পরে এ অবস্থা চলতে থাকলে হয়তো আমরা তাদের বেতনও দিতে পারবো না। এ জন্য আমরা আমাদের সেক্টরের ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ উল্লেখ করে সরকারের কাছে আর্থিক প্রণোদনা চেয়ে আবেদন করেছি। এখনও পর্যন্ত কোনও প্রতিশ্রুতি পাওয়া যায়নি বলেও জানান তিনি।
নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ের সচিব মোহম্মদ মেজবাহ উদ্দিন চৌধুরী জানিয়েছেন, ঈদের আগে আপাতত কোনও প্রকার নৌযান চালানোর অনুমতি দেওয়া হচ্ছে না।
অপরদিকে বাস মালিকরা জানিয়েছেন, তারা গাড়ি চালাতে চান। এ জন্য অনুমতি চেয়ে আবেদনও করেছেন। সরকারের অনুমতি পেলেই গাড়ি চালাবেন তারা। এ জন্য তাদের প্রস্তুতিও রয়েছে।
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্লাহ বলেন, আমরা সরকারের অনুমতি পেলে স্বাস্থ্যবিধি মেনে এখন থেকেই গাড়ি চালাতে রাজি। এ বিষয়ে আমাদের প্রস্তুতিও রয়েছে। এজন্য আমরা সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ে আলাপ আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছি। এ ছাড়া আমাদের আগ্রহ ও শ্রমিকদের অসহায়ত্বের কথা জানিয়ে আবেদনও করেছি।
তিনি বলেন, এই সময়ে আমাদের শ্রমিকদের বেতন ভাতা দেওয়ার কোনও বাধ্যবাধকতা নাই। কারণ পরিবহন সেক্টরে তারা ‘নো ওয়ার্ক, নো পে’ সিস্টেমে কাজ করে। তবে আমরা তাদের জন্য বিভিন্ন উপায়ে রিলিফের ব্যবস্থা করেছি তবে তা যথেষ্ট নয় বলেই আমরা গাড়ি চালাতে চাচ্ছি। যাতে শ্রমিকরা ভালো থাকেন।
সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব মো. নজরুল ইসলাম জানিয়েছেন, ১৫ মে পর্যন্ত সারাদেশে যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। তাই আপাতত ১৫ মে’র আগে এ বিষয়ে কোনও সিদ্ধান্ত হবে না। যা হওয়ার তারপরে হবে। তাই এ বিষয়ে যে কোনও প্রশ্ন ১৫ মে’র পরে করারও অনুরোধ করেন তিনি।


বিজ্ঞাপন