করোনার হটস্পট সীতাকুন্ড

সারাদেশ

শিল্পপ্রতিষ্ঠান থেকে সংক্রমণ বৃদ্ধির আশঙ্কা!

 

সীতাকুন্ড প্রতিনিধি : ৪৩ কিলোমিটার দীর্ঘ সীতাকুন্ড উপজেলার বুকের উপর দিয়ে চলে গেছে ঢাকা চট্টগ্রাম মহাসড়ক। আর এই মহাসড়কটির পাশে গডে উঠেছে ছোট বড় অসংখ্য শিল্পপ্রতিষ্ঠান। প্রতিনিয়ত চলছে সকল প্রতিষ্ঠানের স্বাভাবিক কার্যক্রম। কিছু প্রতিষ্ঠান সামাজিক দূরত্ব এবং শ্রমিকদের সুরক্ষা ব্যবস্থা করলেও কিছু প্রতিষ্ঠান সামাজিক দূরত্ব না মেনে চালাচ্ছে তাদের কার্যক্রম। এই উপজেলার সাগর উপকূলে রয়েছে বাংলাদেশের একমাত্র জাহাজ ভাঙ্গা শিল্প। করোনা পরিস্থিতিতে এই উপজেলায় প্রায় দুই শতাধিক প্রতিষ্ঠান তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করছে যার মধ্যে রয়েছে প্রায় অর্ধশত শিপ ব্রেকিং ইয়ার্ড। এসব প্রতিষ্ঠানে কাজ করছে প্রায় ১০ হাজারের অধিক শ্রমিক।
সীতাকুন্ড শিপ ব্রেকিং ইয়ার্ড অ্যাসোসিয়েশনের নির্বাহী সদস্য মাস্টার কাশেম জানান, স্বাস্থ্যবিধি মেনে আমারা সীমিত পরিসরে আমাদের কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে, প্রত্যেকটা শ্রমিককে পর্যাপ্ত পরিমাণে ত্রাণ সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। প্রতিনিয়ত শ্রমিকদের খোঁজ খবর নিচ্ছে মালিকপক্ষ।
জুট মিল শ্রমিকদের সুরক্ষার কথা চিন্তা করে বার আউলিয়া অবস্থিত হাফিজ জুট মিলস কতৃপক্ষ জীবাণুনাশক টানেল স্থাপন করেন। এই জীবাণুনাশক টানেলের মাধ্যমে কারখানায় প্রশেব ও বাহিরের সময় প্রতিটা শ্রমিককে জীবাণুনাশক স্প্রে করা হচ্ছে। উপজেলায় অবস্থিত কেএসআরএম, রয়েল সিমেন্ট, পিএইচপি, বিএসআরএম, মুসকান, কনফিডেন্স সিমেন্টসহ প্রায় সকল প্রতিষ্ঠান কম বেশি সামাজিক দুরত্ব এবং স্বাস্থ্য সুরক্ষার বিষয়টি মাথায় রেখে কাজ করছে। এসব কিছুর মঝে শ্রমিক ও উপজেলা বাসীর আতঙ্কের বিষয় হয়ে দাড়িয়েছে ছয়টি প্রতিষ্ঠানকে ঘিরে যার মধ্যে রয়েছে দুটি সিমেন্ট কারখানা ও চারটি লজিস্টিক ডিপো। এই সকল প্রতিষ্ঠানে প্রতিনিয়ত দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে গাড়ি আসছে আবার পন্য নিয়ে চলে যাচ্ছে। লজিস্টিক ডিপোতে আসা গাড়ির চালক ও হেলপার গুলো সর্বত্র ঘোরাফেরা করছে সকল এলাকার মানুষের সাথে চলাফেরা করাতে আতঙ্ক বেড়ে গেছে কয়েকগুণ। সিমেন্ট কারখানায় কাজ করা চালক ও হেলপাররা দেশের বিভিন্ন স্থানে পণ্য পরিবহনের কাজে নিয়োজিত রয়েছে। উক্ত প্রতিষ্ঠানগুলো শ্রমিকের সুরক্ষায় প্রতিষ্ঠানের মধ্যে হোম কোয়ারেন্টাইন এর কোন ব্যবস্থা না রাখায় শ্রমিকরা প্রতিনিয়ত তাদের বাসায় আসা-যাওয়া করছে। এতে করে উক্ত ব্যক্তি এবং তার পরিবারের ও এলাকার মানুষ গুলো করোনা ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মিল্টন রায়ের সাথে কথা বললে তিনি জানান, প্রতিটি শিল্প প্রতিষ্ঠানকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করার জন্য আমরা নির্দেশনা প্রদান করেছি। যদি কোন প্রতিষ্ঠান স্বাস্থ্য বিধি না মেনে তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করে এবং আমাদের কাছে যদি সুনির্দিষ্ট অভিযোগ আসে তবে আমরা আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করব।
গত ৬ মে কুমিরা অবস্থিত পিএইচপি কারখানায় এক শ্রমিক করোনায় আক্রান্ত হলে ঐ প্রতিষ্ঠানের ৩০০ শ্রমিককে প্রাতিষ্ঠানিক হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকার নির্দেশনা দেয় উপজেলা প্রশাসন একই সাথে উক্ত প্রতিষ্ঠানকে ১০ দিনের জন্য লগডাউন করা হয়। এছাড়া গত ১০ মে বানুবাজারে অবস্থিত সীমা অটো রি রোলিং মিলস এর এক কর্মচারী করোনায় আক্রান্ত হন।এতে উক্ত প্রতিষ্ঠানের ১৫০ কর্মচারীকে হোম কোয়ারেন্টাইন এ রেখেছে প্রশাসন। এছাড়া গত মঙ্গলবার আক্রান্ত ব্যক্তি বিএন গ্যাস ফ্যাক্টরির গাড়ি চালক হওয়ায় উক্ত প্রতিষ্ঠানটি লগডাউন করা হয়, প্রতিষ্ঠানে কাজ করা ৪০ জন শ্রমিককে হোম কোয়ারান্টাইনে রাখা হয়েছে। এতে করে উপজেলায় শিল্প প্রতিষ্ঠান গুলোতে কাজ করা শ্রমিকদের মধ্যে আতংক কয়েকগুন বৃদ্ধি পেয়েছে।
এছাড়াও প্রতিদিন উপজেলায় নতুন নতুন করোনা রোগী সনাক্ত হলেও জনগণের মধ্যে সচেতনতার বালাই নেই এবং সামাজিক দূরত্বকে উপেক্ষা করে হাট-বাজারে ভিড় করছে সাধারণ লোক জন।


বিজ্ঞাপন