নীরব ঘাতকের অপর নাম ভেজাল যৌন উত্তেজক সিরাপ জিনসিন

অপরাধ জাতীয় জীবন-যাপন বানিজ্য সারাদেশ স্বাস্থ্য

বিশেষ প্রতিবেদক : রাজধানী সহ সারাদেশে নকল-ভেজাল ইউনানি ঔষধের প্রভাব বিস্তার অপ্রতিরোধ্য হয়ে পড়েছে বলে এক অভিযোগ থাকলেও ব্যবস্থা নিতে হিমশিম খাচ্ছে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর। সম্প্রতি বিশ^কাপানো মরণঘাতি করোনা সংক্রামনের ভেতরেও থেমে নেই নকল ভেজাল যৌন উত্তেজক জিনসিন সিরাপের অগ্রাসন। এই ইউনানি সিরাপ তৈরি কালে মিশ্রন করা হচ্ছে ভায়াগ্রার উপাদান সিলডেনাফিন সাইট্রেট ও ট্রডালাফিন সাইট্রেড নামক মানব দেহের ভয়ংকর পাশর্^প্রতিক্রিয়াযুক্ত একধরণের কেমিকেল। এসব পাশর্^প্রতিক্রিয়াযুক্ত যৌন উত্তেজক ক্যেমিকেল মিশ্রিত সিরাপ জিনসিন সেবনে মানব দেহে প্রধান অঙ্গসমুহ কার্যকারীতা হারিয়ে নিশ্চিত মৃত্যুর দিকে ধাবিত হচ্ছে দেশের জন সাধারণ। এ খবর ঔষধ ব্যবসার সাথে সম্পৃক্ত সচেতন একটি মহলের। সম্প্রতি পাবনার ইন্ট্রা ফার্মাসিউটিক্যালস (ইউনানি), সোলার ফার্মাসিউটিক্যালস (ইউনানি), ইমপেল ফার্মাসিউটিক্যালস (ইউনানি), সাফিয়া ফার্মাসিউটিক্যালস (ইউনানি), জয় ফার্মাসিউটিক্যালস (ইউনানি), গ্রেন প্লাস ফার্মাসিউটিক্যালস ( ইউনানি), ইউনিফিল ফার্মাসিউটিক্যালস (ইউনানি), এস.এম ল্যাবরেটারিজ (ইউনানি), নিয়ম ফার্মাসিউটিক্যালস (ইউনানি), এপেক্স ড্রাগস ল্যাবরেটারিজ (ইউনানি), সিনা ল্যাবরেটারিজ (ইউনানি) এবং পাওয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস (আয়ুরবেদিক) এই সকল কোম্পানীর মালিক পক্ষের বিরুদ্ধে ক্ষতিকর ক্যেমিকেল যুক্ত ভেজাল যৌন উত্তেজক সিরাপ জিনসিন এর উৎপাদন ও বাজারজাতের অভিযোগ পাওয়া গেছে। অভিযুক্ত বিতর্কিত এসব কোম্পানীর মধ্যে ইন্ট্রা ফার্মাসিউটিক্যালস (ইউনানি), গ্রেইন প্লাস ফার্মাসিউটিক্যালস (ইউনানি), ইমপেল ফার্মাসিউটিক্যালস (ইউনানি) এবং সোলার ফার্মাসিউটিক্যালস (ইউনানি) এর বিরুদ্ধে আজ প্রতিবেদন প্রকাশিত হলো। ইমপেল ফার্মাসিউটিক্যালস (ইউনানি) এর ম্যানুফেক্সার লাইসেন্স নাম্বার ইউ-২৯৯, উক্ত কোম্পানী সিরাপ হরমোপেল জিনসিন, হরমোফিল ও হরমোপেল নামে (শরবত জিনসিন) একই জিনসিন সিরাপের লেবেলে একই ডি.এ.আর. নাম্বার ব্যবহার করছে যার নাম্বার- ডিএআর- ইউ-২৬৮-এ-০১০। ১০০ এমএল ও ৬০ এমএল জিনসিন সিরাপের লেবেল কার্টুন ও ভিন্ন গেটাপ, ভিন্ন ভিন্ন ব্যাচ নাম্বার, উৎপাদন তারিখ এবং মূল্যের ও পার্থক্য রয়েছে। ইমোফিল (শরবত জিনসিন) এর মূল্য- ৮০/= টাকা, হরমোপেল (শরবত জিনসিন) এর মূল্য ১০০/= টাকা এবং সিরাপ হরমোপেল জিনসিন (শরবত জিনসিন) এর মূল্য- ৭০/= টাকা লেখা আছে। একই জিনসিন ১০০ এমএল সিরাপের মূল্য তিন প্রকার হওয়াটা রহস্যজনক। ৬০ এমএল হরমোপেল সিরাপ যা ওয়ানটাইম সিরাপ হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে যার মূল্য- ৬০/= টাকা ধরা হয়েছে। এছাড়া উক্ত কোম্পানীর আই-কফ (শরবত এজায) নামে ১০০ এমএল কাশির সিরাপ সেবন করলে সেবনকারীর নেশা হয়। যে কারণে আই-কফ নামের ঐ সিরাপটি বর্তমানে মুড়িমরকির মতো বিক্রি হচ্ছে। সোলার ফার্মাসিউটিক্যালস (ইউনানি) এর ম্যানুফেক্সার লাইসেন্স নাম্বার- ইউ-২২০, উক্ত কোম্পানী সোলার জিনসিন (শরবত জিনসিন) ১০০ এমএল সিরাপ যার ডিএআর নাম্বার-ইউ-১০-এ-০১৬ এবং ফাইটন (আরক লাহসুন) নামে ১০০ এমএল এবং ৬০ এমএল সিরাপ যার ডিএআর নাম্বার ইউ-১০-এ-০৩০ এই দুই প্রকার যৌন উত্তেজক সিরাপ উৎপাদন ও বাজারজাত করছে। ইন্ট্রা ফার্মাসিউটিক্যালস (ইউনানি) এর ম্যানুফেক্সার লাইসেন্স নাম্বার ইউ-২৯৫, উক্ত কোম্পানী জিনসিন প্লাস (শরবত জিনসিন) নামে ১০০ এমএল সিরাপ অদ্যবধি উৎপাদন ও বাজারজাত করছে যার ডিএআর নাম্বার ইউ-৫-এ-০০৬। (আরক লাহমিনা) নামক ১০০ এমএল সিরাপ যার ডিএআর নাম্বার- ইউ-৫-এ-০১৯ এবং রুবিকর্ড নামক ১০০ এমএল সিরাপ যার ডিএআর নাম্বার ইউ-০৫-এ-০২০। এই তিন প্রকার যৌন উৎপাদন ও বাজারজাত অব্যহত থাকলেও ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তের কাছে কোম্পানীটি বন্ধ আছে। গ্রেন প্লাস ফার্মাসিউটিক্যালস (ইউনানি) ম্যানুফেক্সার লাইসেন্স নাম্বার ইউ-২৪৪, উক্ত কোম্পানী একই ডিএআর নাম্বার ব্যবহার করে তিন নামে একই (শরবত জিনসিন) উৎপাদন ও বাজারজাত করছে যা ঔষধ নিয়ন্ত্রন অধ্যদেশ পরিপন্থী। উক্ত কোম্পানী ইকলিপ (শরবত জিনসিন), গ্রেন প্লাস জিনসিন (শরবত জিনসিন) এবং গ্রেন+ জিনসিন নামে ১০০ এমএল যৌন উত্তেজক সিরাপ এর লেবেল এ একই ডিএআর নাম্বার ব্যবহার করছে (ইউ-২৪৪-এ-০০৩) গ্রেন প্লাস ফার্মাসিউটিক্যালস (ইউনানি) ২০১৬ সাল থেকে অদ্যবধি ভিন্নভিন্ন ব্যাচ নাম্বার, ভিন্নভিন্ন উৎপাদন তারিখ, মেয়াদ উত্তির্ণের তারিখ ও ভিন্নভিন্ন দামে একই ডিএআর নাম্বার ব্যবহার করে একই (শরবত জিনসিন) তিন নামে ভিন্নভিন্ন গেটাপে উৎপাদন ও বাজারজাত করছে। অভিযোগ মতে ইমপেল ল্যাবরেটারিজ (ইউনানি) এর হরমোপেল জিনসিন, হরমোপেলও ইমোফিল। সোলার ফার্মাসিউটিক্যালস (ইউনানি) এর সোর জিনসিন ও ফাইটন। ইন্ট্রা ফার্মাসিউটিক্যালস (ইউনানি) এর জিনসিন প্লাস, আরক লাহমিনা ও রুবিকর্ড এবং গ্রেন প্লাস ফার্মাসিউটিক্যালস (ইউনানি) এর ইকলিপ, গ্রেন প্লাস জিনসিন ও গ্রেন+ জিনসিন নামক ১০০ এমএল সিরাপ সেবন করলে সেবনকারী, তাৎক্ষনিক উপকার পেলেও সেবনকারীর শরীরে জ¦র, মাথা ব্যথা, শরীর ব্যথা ও ক্ষুধামদ্ধা অনুভুত হয়। এসব যৌন উত্তেজক সিরাপ স্কুল-কলেজ পড়–য়া কোমল মতি ছেলে মেয়েরা অবাধে সেবন করার ফলে সামাজিক অবক্ষয় আশংকাজনক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। এর ফলে সারা দেশে ধর্ষণ ও গণধর্ষণের মতো ঘটনাও ঘটছে বলে বিশেষজ্ঞারা আশংকা করছেন। এসব জিনসিন নামক ১০০ এমএল সিরাপে ভায়াগ্রার উৎপাদান সিলড্রেনাফিন সাইট্রেড ও ট্রাডালাফিন সাইট্রেড নামক ক্যেমিকেল এর সংমিশ্রনের কারণে সেবনকারী লিভার কিডনি ও হার্ট বিকল হয়ে মৃত্যুবরণ করছে বলে বিশেষজ্ঞ মহলের ধারনা। অপর দিকে ১০০ এমএল এসব যৌন উত্তেজক সিরাপ মাত্র ১৩ থেকে ১৪ টাকায় বিক্রি হওয়ায় ফেনসিডিল ও ইয়াবার বিকল্প হিসেবে ও ব্যবহার হচ্ছে। ফলে দেশের আনাচে-কানাচে গ্রাম গঞ্জের পাড়া মহল্লার পান+বিড়ি, চায়ের দোকান ও মুদি দোকানে এসব সিরাপ মুড়িমুরকির মতো বিক্রি হচ্ছে। সচেতন মহলের মতে উল্লিখিত কোম্পানীর বর্তমান অবস্থা পরিদর্শন, লে-আউট প্লান, পরিবেশ অধিদপ্তের ছাড়পত্র, ফায়ার সার্ভিস সনদ, কল-কারখানার পরিদর্শন বিভাগের সনদ, আয়কর সনদ, ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর কতৃক লেভেল কার্টুনের চুড়ান্ত অনুমোদন কপি, বাণিজ্যিক নামের অনুমোদন কপি, কোম্পানীর উৎপাদন লাইসেন্স নবায়ন কপি সহ উক্ত কোম্পানী সমূহে যথাযথ কাঁচা মাল (হার্বস বা গাছ গাছড়া) ব্যবহারের এক বছরের পরিসংক্ষান যাচাই বাচাই করে ঐ সকল কোম্পানীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য দেশের স্বাস্থ্য সচেনত মহল মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মো. মাহাবুবর রহমানের দৃষ্টি আকর্ষণ করছেন। এই ব্যাপারে গ্রেন প্লাস ফার্মাসিউটিক্যালস (ইউনানি) এর মালিক সাইফুল ইসলাম এর বক্তব্য জানতে তার সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি আজকের দেশকে জানান তিনি আগে হেরইন ও ইয়াবার ব্যবসা করতেন এবং আগ্নেয়াস্ত্রের ব্যবসা ও তিনি করেছেন বর্তমানে আগ্নেয়াস্ত্র হাতে তুলে নেওয়া বাকি আছে। ইমপেল ল্যাবরেটারিজ ( ইউনানি) এর মালিক রফিকুল ইসলাম এর বক্তব্য জানতে চাইলে তিনি জানান দেশে বৈধ ভাবে সিলড্রেনাফিন সাইট্রেড ও ট্রেডালাফিন সাইট্রেড এর আমদানি হওয়ায় এর প্রতিযোগিতা বাড়ছে। ফলে আমরা উল্লেখিত কেমিকেল ব্যবহার না করলে আমাদের ঔষধ বাজারে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে পাড়ছে না। সব ইউনানি-আয়ুর্বেদিক কোম্পানীরা যদি সিলড্রেনাফিন সাইট্রেড ও ট্রেডালাফিন সাইট্রেড ব্যবহার না করে তাহলে আমরাও আমাদের ঔষধে এইসব কেমিকেল ব্যবহার করবো না। সোলার ফার্মাসিউটিক্যালস (ইউনানি) এর মালিক রবিউল ইসলাম রবি জানান সবাই এইসব ক্যেমিকেল ব্যবহার করে তাই আমরাও করি সবাই যদি এসব কেমিকেল ব্যবহার বন্ধ করলে আমরাও করবো। ইন্ট্রা ফার্মাসিউটিক্যালস (ইউনানি) এর মালিক আজাদ এর বক্তব্য জানতে চাইলে তিনি জানান তার কোম্পানীর বর্তমানে বন্ধ আছে কে বা কারা তার কোম্পানীর নামে নকল জিনসিন প্লাস সিরাপ উৎপাদন ও বাজারজাত করছে। তবে রুবিকর্ড ও আরক লাহমিনা ব্যাপারে তিনি কোনো মন্তব্য করেননি। এ ব্যাপারে বাংলাদেশ ইউনানি ঔষধ শিল্প মালিক সমিতির সভাপতি হেকিম সাঈদ আহমেদ সিদ্দিকী এবং সাধারণ সম্পাদক মো. ফারুক হোসন এর বক্তব্য জানতে চাইলে উভয়ই জানান ইউনানি বা আয়ুর্বেদিক ঔষধে সিলড্রেনাফিন সাইট্রেড ও ট্রেডালাফিন সাইট্রেড এর ব্যবহার খুবই দুঃখজনক এটা সকল কোম্পানীর কর্তৃপক্ষের পরিহার করে জাতীয় ও জনকল্যাণে ঔষধ উৎপাদন ও বাজারজাত করা উচিত বলে তারা মনে করেন।


বিজ্ঞাপন