ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিচ্ছে আম্ফান

জাতীয় জীবন-যাপন

আছড়ে পড়বে ঈদের আগেই!

 

চট্টগ্রাম প্রতিনিধি : প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) সংক্রমণের মাঝেই দেশবাসীর কপালে চিন্তার ভাঁজ ফেলেছে বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট গভীর নিম্নচাপ। আবহাওয়াবিদরা বলছেন, নিম্নচাপটি রূপ নিচ্ছে ঘূর্ণিঝড়ে, উপকূলে আছড়ে পড়বে ঈদের আগেই।
শনিবার দুপুরে বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদফতরের সর্বশেষ (৫ নম্বর) বুলেটিনে বলা হয়েছে, দক্ষিণ-পূর্ব বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন আন্দামান সাগর এলাকায় অবস্থানরত নিম্নচাপটি সামান্য পশ্চিম-উত্তরপশ্চিম দিকে সরে গিয়ে বর্তমানে দক্ষিণ-পূর্ব বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থান করছে। এটি আরও ঘণীভূত হয়ে উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর হতে পারে।
নিম্নচাপ কেন্দ্রের ৪৮ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ৫০ কিলোমিটার, যা দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ৬০ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। নিম্নচাপ কেন্দ্রের নিকটে সাগর উত্তাল রয়েছে।
পতেঙ্গা আবহাওয়া অফিসের আবহাওয়াবিদ মাহমুদুল আলম বলেন, দক্ষিণ-পূর্ব বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট সুস্পষ্ট লঘুচাপটি ইতোমধ্যেই গভীর নিম্নচাপে পরিণত হয়েছে। নিম্নচাপটি শুক্রবার বিকেল পর্যন্ত সুস্পষ্ট নিম্নচাপ হিসেবে ছিল। রাতে সেটি গভীর নিম্নচাপের পরিণত হয়। গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করে দেখা গেছে, আজ রাতেই নিম্নচাপটি ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিতে পারে, নিম্নচাপটি ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিলে এর নাম হবে ‘আম্ফান’।
তিনি বলেন, নিম্নচাপটি বর্তমানে চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ১ হাজার ৩৪৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণপশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ১ হাজার ২৭০ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণপশ্চিমে, মোংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ১ হাজার ৩০৫ কিলোমিটার দক্ষিণে এবং পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ১ হাজার ২৭০ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থান করছে।
আবহাওয়াবিদ মাহমুদুল আলম বলেন, ‘নিম্নচাপটি ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিলেই এর গতিবিধি সম্পর্কে বিস্তারিত বলা যাবে, এটি আরও ঘনীভূত হয়ে উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর হতে পারে। তবে আপাতত মনে হচ্ছে, আগামী ২০ থেকে ২২ তারিখের মধ্যে, অর্থাৎ ঈদের আগেই উপকূলে আঘাত হানতে পারে।’
এদিকে ভারতের আলিপুর আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, বঙ্গোপসাগরে নিম্নচাপের শক্তি বেড়েছে। শনিবার রাতে সেটি ঘূর্ণিঝড়ের রূপ নিতে পারে। রোববার পর্যন্ত ঘূর্ণিঝড়টি উত্তর-পশ্চিম বঙ্গোপসাগরের দিকে এগোবে। তারপরে উত্তর-পূর্ব দিকে বাঁক নিয়ে উত্তর বঙ্গোপসাগরের দিকে এগোতে পারে।
ভারতের আবহাওয়াবিদরা বলছেন, সোমবার নাগাদ ঘূর্ণিঝড় দিক পরিবর্তন করতে পারে। মূলত কতটা গতিতে ঘূর্ণিঝড় বাঁক নিচ্ছে, তার ওপরেই নির্ভর করবে ঘূর্ণিঝড়টি কোথায় আছড়ে পড়বে।
বেসরকারি আবহাওয়া সংস্থা বোট ওয়েদার জানিয়েছে, দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে অবস্থিত নিম্নচাপটি আরও কিছুটা উত্তর দিকে অগ্রসর হয়ে এখন দক্ষিণ বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থান করছে। ইতোমধ্যেই এটি আরও শক্তি বৃদ্ধি করে গভীর নিম্নচাপে পরিণত হয়েছে। শনিবার সাড়ে ১১টা নাগাদ ঘূর্ণিঝড়টি মোংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ১ হাজার ৩০৫ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থান করছিল। এটি আরও জোরদার হয়ে উত্তর দিকে অগ্রসর হতেপারে।
সংস্থটি আরও জানিয়েছে, নিম্নচাপটি আজ রাতেই ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নেবে। সিস্টেমটি এখন ধীরে ধীরে বাংলাদেশ উপকূলীয় এলাকার দিকে অগ্রসর হওয়ার ফলে বঙ্গোপসাগরেও এর প্রভাব পড়তে শুরু করেছে।
এখন পর্যন্ত পাওয়া তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, গভীর নিম্নচাপটি ঘূর্ণিঝড় রূপে আগামী ২০ থেকে ২১ মে তারিখের ভেতরে ভারতের উড়িষ্যা থেকে বাংলাদেশের বরিশাল উপকূলের ভেতরে যেকোনো স্থানে আঘাত হানতে পারে।
প্রসঙ্গত, প্রতিবছর রমজানকে ইবাদত আর উৎসবের রূপে দেখে আসছিল দেশবাসী। কিন্তু এ বছর করোনাভাইরাসের থাবায় থমকে গেছে সেই চিরচেনা রূপ। তবুও আগামী ২৪ অথবা ২৫ মে মুসলমানরা তাদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব ঈদ পালনে প্রস্তুতি নিচ্ছে। এর মাঝেই ঘূর্ণিঝড়ের খবর শঙ্কা জাগাচ্ছে সবার মনে।


বিজ্ঞাপন