আক্রান্ত ৩০ সহস্রাধিক

এইমাত্র জাতীয় জীবন-যাপন সারাদেশ স্বাস্থ্য

মৃত্যুর রেকর্ড

 

মহসীন আহমেদ স্বপন : প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস মহামারিতে বিপর্যস্ত গোটা বিশ্ব। এর মধ্যে কয়েকটি দেশে এর প্রকোপ ভয়ঙ্কর রূপ নিয়েছে। বাংলাদেশে প্রথম করোনাভাইরাস শনাক্ত হয় গত ৮ মার্চ। তারপর দিন গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা। লম্বা হচ্ছে মৃত্যুর মিছিলও। দেশে নতুন করে আরও ১ হাজার ৬৯৪ জনের শরীরে করোনা ভাইরাসের উপস্থিতি শনাক্ত হয়েছে। এছাড়া গেল ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে মৃত্যু হয়েছে ২৪ জনের। করোনা ভাইরাস নিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নিয়মিত অনলাইন সংবাদ বুলেটিনে শুক্রবার দুপুরে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
বুলেটিনে স্বাস্থ্য অধিদফতরের ভারপ্রাপ্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা বলেন, গেল ২৪ ঘণ্টায় মোট ৯ হাজার ৯৯৩টি নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। এর মধ্যে পরীক্ষা করা হয়েছে ৯ হাজার ৭২৭টি। এই পরীক্ষায় করোনা শনাক্ত হয়েছে ১ হাজার ৬৯৪ জনের শরীরে। এ নিয়ে মোট শনাক্তকৃত রোগীর সংখ্যা দাঁড়াল ৩০ হাজার ২০৫ জনে।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের ভারপ্রাপ্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা জানান, করোনাভাইরাস শনাক্তে গত ২৪ ঘণ্টায় আরও নয় হাজার ৯৯৩টি নমুনা সংগ্রহ করা হয়। পরীক্ষা করা হয় নয় হাজার ৭২৭টি নমুনা। এ নিয়ে দেশে মোট নমুনা পরীক্ষা করা হলো দুই লাখ ২৩ হাজার ৮৪১টি। নতুন নমুনা পরীক্ষায় আরও এক হাজার ৬৯৪ জনের দেহে করোনা শনাক্ত হয়েছে। এ নিয়ে দেশে মোট আক্রান্ত হয়েছেন ৩০ হাজার ২০৫ জন। আক্রান্তদের মধ্যে মারা গেছেন আরও ২৪ জন, যা একদিনে সর্বোচ্চ মৃত্যুর রেকর্ড। ফলে মৃতের সংখ্যা দাঁড়াল ৪৩২ জনে। গত ২৪ ঘণ্টায় সুস্থ হয়েছেন আরও ৫৮৮ জন। এ নিয়ে সুস্থ হয়ে ওঠা রোগীর সংখ্যা দাঁড়াল ছয় হাজার ১৯০ জনে।
গত বৃহস্পতিবারের বুলেটিনে জানানো হয়, করোনায় আক্রান্ত হয়ে গত ২৪ ঘণ্টায় ২২ জন মারা গেছেন, যা একদিনে সর্বোচ্চ মৃত্যুর রেকর্ড। ১০ হাজার ২৬২টি নমুনা পরীক্ষায় করোনা শনাক্ত হয়েছে এক হাজার ৭৭৩ জনের দেহে, যা একদিনে সর্বোচ্চ শনাক্তের রেকর্ড। সে হিসাবে আগের ২৪ ঘণ্টার তুলনায় গত ২৪ ঘণ্টায় শনাক্ত রোগী কমলেও হয়েছে সর্বোচ্চ মৃত্যুর রেকর্ড।
বুলেটিনে সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করতে সাধারণের প্রতি অনুরোধ জানান তিনি। এছাড়া সবাইকে নিজ নিজ অবস্থানেই থাকার আহ্বান জানান তিনি।
করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ শুরুর পর থেকেই সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করতে একের পর এক পদক্ষেপ নিচ্ছে সরকার। তবে সাধারণ মানুষের মধ্যে তা মানার চাইতে উপেক্ষা করতেই বেশি দেখা গেছে। বিশেষ করে এই দূরত্ব নিশ্চিতে সরকার সাধারণ ছুটি ঘোষণা করলেও মানুষের মধ্যে ঘরে অবস্থানের চাইতে বাইরে বেরুনোর চেষ্টাই বেশি দেখা গেছে।
এ কারণে শাস্তিমূলক ব্যবস্থাও নিতে হয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে। তবে ঈদের আগে মার্কেট খুলে দেয়ার সিদ্ধান্তের পর মানুষের বাইরে উপস্থিতি তুলনামূলকভাবে বেড়েছে। সাধারণ মানুষ মার্কেটে গেলেও সেখানে যাতে সামাজিক দূরত্ব এবং প্রতিরক্ষামূলক ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হয় সেজন্য নির্দেশনাও দেয়া হয়েছে। তবে তাও উপেক্ষা করতে দেখা গেছে।
এছাড়া ঈদকে কেন্দ্র করে সাধারণ মানুষের মাঝে বাড়ি ফেরার তীব্র চেষ্টা লক্ষ্য করা গেছে। এজন্য রাস্তায় রাস্তায় চেক পোস্ট বসিয়ে নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা করছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। তবে তাতেও হিমশিম খেতে হচ্ছে তাদের।
বিশেষজ্ঞরা বারবার বলছেন, সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করা না গেলে এই ভাইরাসের সংক্রমণ বাড়বেই এবং বাস্তবেও সেটাই দেখা গেছে। করোনা ভাইরাসের পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, বৃহস্পতিবার সকাল থেকে পূর্ববর্তী ২৪ ঘণ্টায় বিশ্বে সবচেয়ে বেশি মানুষ ভাইরাসটিতে সংক্রমিত হয়েছেন।
এখন পর্যন্ত ভাইরাসটিতে বিশ্বে মোট সংক্রমিত হয়েছেন ৫১ লাখ ৯৯ হাজার ১৬ জন এবং মারা গেছেন ৩ লাখ ৩৪ হাজার ৬৯৮ জন।
এছাড়া সংক্রমিতদের ২০ লাখ ৮৫ হাজার ২৪ জন সুস্থ হয়ে ঘরে ফিরেছেন।
এখন পর্যন্ত বিশ্বের ১২টি দেশে লক্ষাধিক মানুষ ভাইরাসটিতে সংক্রমিত হয়েছেন। এর মাঝে দুই লাখের বেশি সংক্রমণ রয়েছে ছয়টি দেশে। এছাড়া ১০ লাখের বেশি সংক্রমণ রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রে।


বিজ্ঞাপন