করোনায় আক্রান্ত র‍্যাব-৪ অধিনায়ক

জাতীয় জীবন-যাপন স্বাস্থ্য

নিজস্ব প্রতিবেদক : করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র‍্যাব-৪) অধিনায়ক (অতিরিক্ত ডিআইজি) মো. মোজাম্মেল হক। তিনি নিজ বাসায় আইসোলেশনে থেকেই চিকিৎসা নিচ্ছেন। করোনা আক্রান্ত হয়ে আইসোলেশনে থাকলেও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বেশ সক্রিয় তিনি। আজ শনিবার দুপুরে নিজের ফেসবুকে পোস্টে তিনি লিখেছেন করোনাকালের নানা অভিজ্ঞতা।


বিজ্ঞাপন

মো. মোজাম্মেল হক লিখেছেন, ‘গত ৩ দিন একাকি আইসোলেশনে আছি। একটি নির্দিষ্ট কক্ষের মধ্যে এখন আমার বিচরণ হলেও লাখ লাখ মানুষের শুভ কামনা এবং প্রার্থনার একটি অপার্থিব ভালোবাসা আমার তনুমন এবং হৃদয় জুড়ে আছে। করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াই ভালোভাবেই চলছে। আল্লাহর অপার করুণা এবং দয়ায় আমি শারীরিকভাবে এবং মানসিকভাবে সুস্থ আছি।’

করোনার কোনো উপসর্গ নেই উল্লেখ করে তিনি লিখেছেন, ‘এখন পর্যন্ত করোনার কোনো উপসর্গ অনুভব করছি না। স্বাস্থ্যবিধি মেনে Prescribed ওষুধ খাচ্ছি। মসলা চা, গরম পানির গার্গল আর steem inhalation ( নাক মুখে গরম পানির ভাপ) নিচ্ছি। আমি মানসিকভাবে শক্ত মানুষ। আমি করোনাকে খুব দ্রুত পরাজিত করতে চাই।’

র‍্যাব-৪ অধিনায়ক আরও লিখেছেন, ‘আমি করোনা পজিটিভ বন্ধুদের বলবো এটি অন্যান্য ভাইরাল ফ্লুর মতোই একটি অত্যন্ত ছোঁয়াচে রোগ। তবে আমি মনে করি করোনা আক্রান্ত হলে উচ্চ মনোবল রাখা জরুরি। শারীরিক বড় ধরনের অসুখ বিসুখ না থাকলে করোনা আপনাকে পরাস্ত করতে পারবে না। তবে ৭০ ঊর্ধ্ব বয়সের হৃদরোগ, উচ্চ রক্তচাপ এবং ডায়াবেটিক রোগে আক্রান্ত একজন করোনা থেকে সম্পূর্ণ সুস্থ হয়েছেন গতকাল এমন একজনের সঙ্গে আলাপ হলো। তিনি এক সপ্তাহের ঘরোয়া চিকিৎসায় সম্পূর্ণ সুস্থ হয়েছেন। কাজেই করোনা আক্রান্ত হলেই ভয় পাবেন না বা মনোবল হারাবেন না। ভয় পেলে বা মনোবল হারালে আপনি অন্যান্য শারীরিক ও মানসিক রোগে আক্রান্ত হতে পারেন। তবে করোনা রোগে অনেকেই দুঃখজনকভাবে মারা যাচ্ছেন।’

র‍্যাবের এই কর্মকর্তা লিখেছেন, ‘অধিকাংশ ক্ষেত্রে ঝুঁকিপূর্ণ অন্য রোগে আক্রান্ত এবং স্বল্প ইমিউনিটি সম্পন্নরা করোনা যুদ্ধে হেরে যাচ্ছেন। তবে ব্যতিক্রমও আছে। অনেক সময় মারত্মক করোনা আক্রান্ত হয়ে কিছু সম্পূর্ণ সুস্থ মানুষ মারা যাচ্ছেন। আমরা সৃষ্টিকর্তায় বিশ্বাসী মানুষ। কাজেই শ্রষ্টার ইচ্ছার বাস্তবায়ন প্রতিরোধ করার ক্ষমতা কারও নেই। তবে মহামারী সময় কিছু নিয়ম কানুন মেনে চলা বাধ্যতামূলেক।

‘বৈশ্বিক করোনা মহামারি প্রতিরোধে স্বাস্থ্যবিধি, সামাজিক ও শারীরিক দূরত্ব মেনে চলা অত্যন্ত জরুরি। জরুরি কাজে বাইরে বের হলে অবশ্যম্ভাবী যথাপোযুক্ত মাস্ক পরিধান করতে হবে। কিছুক্ষণ পর পর ২০ সেকেন্ড সময় নিয়ে সাবান দিয়ে হাত ধৌত করা এবং প্রযোজ্য ক্ষেত্রে হ্যান্ড স্যানিটাইজার বা হ্যান্ডরাব ব্যবহার করতে হবে। করোনা আক্রান্ত হলে তাকে অবহেলা করে দূরে ঠেলে না দিয়ে পরামর্শ দিন এবং সাহস ও মনোবল যোগানো জরুরি’ যোগ করেন মো. মোজাম্মেল হক।

তিনি আরও লিখেছেন, ‘করোনার বিরুদ্ধে যুদ্ধে ইমিউনিটি আমাদের বড় হাতিয়ার। কাজেই ইমিউনিটি বড়াতে হলে আমাদের যতদূর সম্ভব কার্বোহাইড্রেটের পাশাপাশি দুধ, ডিম, মাছ, মাংস, ডাল, শাকসবজি এবং দেশী ফলমূল খেতে হবে। শারীরিক সুস্থতার জন্য কায়িক পরিশ্রম বা দৈহিক ব্যায়াম অত্যন্ত জরুরি। আমি অনেকদিন পরা একাকি বদ্ধ ঘরে সময় কাটাচ্ছি। এটা ঠিক সময় কাটছে না। তবে বই পড়ে, ধর্মকর্ম করে আর আপনাদের সঙ্গে অনলাইনে আড্ডা দিয়ে সময় কেটে যাচ্ছে। সামাজিক যোগাযোগ আমার প্রতি লাখ লাখ মানুষের আবেগ এবং ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ দেখে সত্যই আমি বিস্মিত, অভিভূত এবং আবেগাপ্লুত। আমি একজন অতি নগণ্য প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী।’

সাধারণ মানুষের উদ্দেশে র‍্যাবের এই কর্মকর্তা লিখেছেন, ‘আমার কর্মকালে অসহায় সাধারণ মানুষের জন্য তেমন কিছুই করতে পারিনি। অথচ আমার পূর্বের কর্মস্থল জয়পুরহাট, বগুড়া, নওগাঁ এব জন্মস্থান এর জন্মভূমি পাবনার কয়েকশত মসজিদ আমার জন্য দোয়া হয়েছে। সহস্রাধিক মানুষ ফোন করায় একসময় আমার ফোন হ্যাং হয়ে যায়। আমার প্রতি আপনাদের এই আবেগ, স্নেহ, মায়া, ভালোবাসা সত্যই অবর্ণনীয়। আপনাদের এত মানুষের আমাকে নিয়ে আবেগ, উদ্বেগ, উৎকুণ্ঠা আপনাদের নিকট আমাকে চির ঋণী করে রাখলো। আমি সত্যিকার অর্থে চির ঋণী হয়ে গেলাম। দোয়া করবেন কয়েকদিনের মধ্যেই যেন করোনা নেগেটিভ হয়ে আবার করোনা প্রতিরোধ যুদ্ধে শামিল হতে পারি।’