এমন দিন থাকবে না

এইমাত্র জাতীয়

একনেকে ১০ প্রকল্প অনুমোদন


বিজ্ঞাপন

 

নিজস্ব প্রতিবেদক : অচিরেই খারাপ দিন কেটে গিয়ে সুদিন ফিরে আসার প্রত্যাশা ব্যক্ত করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘করোনার কারণে অর্থনৈতিক গতিশীলতা কিছুটা স্থবির হয়ে গেছে। তবে এমন দিন থাকবে না। আমরা যেকোনও প্রতিবন্ধকতা মোকাবিলা করে এগিয়ে যেতে পারবো।’
মঙ্গলবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদ (একনেক) বৈঠকে এসব কথা বলেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা চাই না, দেশের মানুষ কষ্ট পাক। সেদিকে লক্ষ্য রেখে কিছু কিছু ক্ষেত্রে পূর্বের নির্দেশনাগুলো অর্থাৎ যেগুলো বন্ধ ছিল, সেগুলো উন্মুক্ত করেছি। কারণ যে খেটে খাওয়া, দিন আনি দিন খাই মানুষ, সাধারণ মধ্যবিত্ত, নি¤œবিত্ত, প্রত্যেকে তাদের জীবন যাত্রা যেন অব্যাহত রাখতে পারে, সচল রাখতে পারে, সেদিকে লক্ষ্য রেখেই আমরা এ পদক্ষেপ নিয়েছি। কাজেই আমাদের সবাইকে স্ব স্ব স্বাস্থ্য সুরক্ষিত রেখেই কর্মস্থলে কাজ করে যেতে হবে।
তিনি বলেন, এ রকম দিন থাকবে না। আমরা যে কোনো প্রতিবন্ধকতা মোকাবিলা করে এগিয়ে যেতে পারব। সেভাবেই আমাদের সবাইকে নিজেদের স্বাস্থ্য সুরক্ষিত রেখে স্ব স্ব কর্মস্থলে কাজ করে যেতে হবে। আমরা দেশের অসহায় মানুষের কথা বেশি চিন্তা করি।
সরকার প্রধান বলেন, করোনায় শুধু বাংলাদেশ নয়, সারাবিশ্ব বলতে গেলে স্থবির। সব জায়গায় এ সমস্যাটা দেখা দিয়েছে। আমরাও তার বাইরে না। আমাদের অর্থনীতি যে গতিশীলতা পেয়েছিল, করোনা আসার পর তাতে স্থবিরতা এসে গেছে। এটা শুধু বাংলাদেশ নয়, বিশ্বব্যাপী চলছে।
‘দেশবাসীকে বলব, স্বাস্থ্যবিধি যেগুলো দেওয়া হয়েছে, সবাই সেটা মেনে চলবে, সেটাই আমরা চাই। আমরা চাই না, আমাদের দেশের মানুষ কষ্ট পাক। সেদিকে লক্ষ্য রেখেই আমরা যেসব বন্ধ ছিল, সেসব খুলে দিয়েছি। তবে এ ক্ষেত্রে সবাই চলাফেরাসহ সব কিছুতেই স্বাস্থ্যবিধিটা মেনে চলবেন।’
শেখ হাসিনা বলেন, যেটা আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃতি সেটা মেনেই আমাদের চলতে হবে। আমাদের দেশের মানুষ তারা যেন সুরক্ষিত থাকে। মনে রাখতে হবে নিজের সুরক্ষা মানে অপরকে সুরক্ষিত করা। আমরা সকলে নিজের পরিবার এবং নিজের সহকর্মী সকলের সুরক্ষা রাখতে আন্তরিকভাবে চেষ্টা করব এটা হবে আমাদের সিদ্ধান্ত।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ অর্থনীতিতে যেভাবে এগিয়ে যাচ্ছিল, তাতে আমাদের আশা ছিল ২০২০ সাল বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী বা ২০২১ সালে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী, বিশেষ করে লক্ষ্য ছিল এ মুজিব বর্ষেই আমরা আমাদের দারিদ্রের হার কমিয়ে এনে বাংলাদেশকে একটা উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে একটা উচ্চতর পর্যায়ে নিয়ে যাব। কিন্তু করোনার কারণে সেই গতিশীলতা কিছুটা স্থবির হয়ে গেছে। তবে আমি মনে করি, এ রকম দিন থাকবে না। আমরা যে কোনো প্রতিবন্ধকতা মোকাবিলা করে এগিয়ে যেতে পারব।
একনেকে ১০ প্রকল্প অনুমোদন : স্বাধীন বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো অনলাইন মাধ্যমে তথা ভার্চুয়ালি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। করোনার সংক্রমণ ঠেকাতে সামাজিক দূরত্বের শর্ত মানতেই এই পদ্ধতিতে সভা অনুষ্ঠিত হলো।
গত ২৬ মার্চ থেকে শুরু হওয়া সরকার ঘোষিত সাধারণ ছুটি ৩০ মে বাতিলের পর এই প্রথম মঙ্গলবার রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে একনেক সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। একনেক চেয়ারপারসন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এই সভায় যোগ দিয়েছেন।
মঙ্গলবার একনেক সভা শেষে এক ব্রিফিংয়ে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান জানান, দেশের ইতিহাসে প্রথম ভার্চুয়াল জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় ১৬ হাজার ২৭৬ কোটি ৩ লাখ টাকা খরচে ১০টি প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। অনুমোদিত টাকার মধ্যে বাংলাদেশ সরকার দেবে ১৪ হাজার ৪০১ কোটি ৫২ লাখ এবং বৈদেশিক ঋণ ১ হাজার ৮৮১ কোটি ৯৭ লাখ টাকা।
অনুমোদিত প্রকল্পগুলোর মধ্যে রয়েছে- পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের ‘সাতক্ষীরা জেলার পোল্ডার ১, ২, ৬-৮, এবং ৬-৮ (এক্সটেনশন) এর নিষ্কাশন ব্যবস্থার উন্নয়ন’ এবং স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের ‘দাশেরকান্দি পয়ঃশোধনাগার (প্রথম সংশোধিত)’ প্রকল্প। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ‘প্রাথমিক শিক্ষার জন্য উপবৃত্তি প্রকল্প (তৃতীয় পর্যায়)’ প্রকল্প। স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের দুটি প্রকল্প যথাক্রমে ‘কোভিড-১৯ এমার্জেন্সি রেসপন্স অ্যান্ড প্যান্ডামিক প্রিপেয়ার্ডনেস’ প্রকল্প ও ‘কোভিড-১৯ রেসপন্স এমার্জেন্সি অ্যাসিস্ট্যান্স’ প্রকল্প। ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ‘মসজিদভিত্তিক শিশু ও গণশিক্ষা কার্যক্রম (সপ্তম পর্যায়)’ প্রকল্প। বিদ্যুৎ, জ্বালানি খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের দুটি প্রকল্প যথাক্রমে ‘শতভাগ পল্লী বিদ্যুতায়নের জন্য বিতরণ নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণ (রাজশাহী, রংপুর, খুলনা ও বরিশাল বিভাগ) (প্রথম সংশোধিত)’ প্রকল্প ও ‘শতভাগ পল্লী বিদ্যুতায়নের জন্য বিতরণ নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণ (ঢাকা, ময়মনসিংহ, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগ) (প্রথম সংশোধিত)’ প্রকল্প; কৃষি মন্ত্রণালয়ের দুটি প্রকল্প যথাক্রমে ‘কৃষি যন্ত্রপাতি ও লাগসই প্রযুক্তি উদ্ভাবনের মাধ্যমে ফসল উৎপাদন ব্যবস্থাকে অধিকতর লাভজনক করা’ প্রকল্প ও ‘মানসম্পন্ন মশলা বীজ উৎপাদন, প্রক্রিয়াজাতকরণ ও বিতরণ’ প্রকল্প।
উল্লেখ্য, মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০টায় গণভবনের সঙ্গে সংযুক্ত হয়ে ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে এনইসি সম্মেলন কক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে একনেক সভা অনুষ্ঠিত হয়। এটি দেশের ইতিহাসে প্রথম ভার্চুয়াল এবং করোনাকালীন সাধারণ ছুটির পর প্রথম সভা।