পরিস্থিতির আরো অবনতি হবে

এইমাত্র জাতীয় জীবন-যাপন সারাদেশ স্বাস্থ্য

মৃত্যু আরও ৩৫ জনের
নতুন শনাক্ত ২৪২৩

 

মহসীন আহমেদ স্বপন : করোনা সংক্রমণে বিশ্বের ২১৫টি দেশ ও অঞ্চলের মধ্যে বাংলাদেশ ২১তম স্থানে চলে এসেছে জানিয়ে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘এ পরিস্থিতির আরো অবনতি হতে পারে। এ অবস্থায় স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে এবং সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে কোনোরূপ শৈথিল্য প্রদর্শন পরিস্থিতিকে আরো ভয়াবহ করে তুলতে পারে।’ বৃহস্পতিবার নিজের সরকারি বাসভবন থেকে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের সাথে ভিডিও কনফারেন্সে মন্ত্রী এসব কথা বলেন।
করোনাভাইরাসের কারণে দেশে চলমান দুঃসময়ে যেসব পরিবহন শ্রমিক ও মালিক অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করছেন এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলছেন না তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করছে বলে অনেক অভিযোগ পেয়েছি। এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে বিআরটিএ, ডিএমপি, হাইওয়ে পুলিশ, জেলা পুলিশসহ সংশ্লিষ্ট সবার প্রতি নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
কাদের বলেন, সঙ্কটের এ সময়ে পরিবহন মালিক ও শ্রমিকদের মানবিক সহযোগিতা দিয়ে দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে হবে। তিনি পরিবহন শ্রমিক ও মালিকদের সরকারের দেয়া নির্ধারিত ভাড়া মেনে চলার আহ্বান জানান।
তিনি সরকারের পাশাপাশি বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলোকে সচেতনতা তৈরিতে ভূমিকা রাখার আহ্বান জানান।
সরকার জাতির এ সঙ্কটে সবার নিকট দায়িত্বশীল ভূমিকা প্রত্যাশা করে জানিয়ে কাদের বলেন, দ্বিমত, বহুমত গণতান্ত্রিক সমাজের অলঙ্কার। কিন্তু অভিন্ন এ করোনা শত্রুর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ঐক্যবদ্ধতাই সঙ্কট সমাধানের শক্তি। এতে লড়াইয়ের ময়দানের যোদ্ধারা মনোবল পাবেন। তিনি বিএনপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলগুলোকে সরকারের সমালোচনাকে রুটিন ওয়ার্কে পরিণত না করার আহ্বান জানিয়ে বলেন, এ ধরনের অপপ্রচার ও বিভ্রান্তি করোনার সংক্রমণ বিস্তারে আরো প্রাণশক্তি যোগাবে।
এ দিকে মহামারি করোনাভাইরাসে (কোভিড-১৯) আক্রান্ত হয়ে দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় আরও ৩৫ জন মারা গেছেন। ফলে করোনায় মোট মারা গেলেন ৭৮১ জন। একই সময়ে আক্রান্ত হিসেবে শনাক্ত হয়েছেন দুই হাজার ৪২৩ জন। ফলে করোনায় মোট আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়াল ৫৭ হাজার ৫৬৩ জনে। বৃহস্পতিবার দুপুরে স্বাস্থ্য অধিদফতরের করোনাভাইরাস বিষয়ক নিয়মিত হেলথ বুলেটিনে এ তথ্য জানানো হয়। অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা অনলাইনে বুলেটিন উপস্থাপন করেন।
তিনি ৫০টি ল্যাবরেটরিতে নমুনা পরীক্ষার তথ্য তুলে ধরে জানান, করোনাভাইরাস শনাক্তে গত ২৪ ঘণ্টায় আরও ১৩ হাজার ৭৮৮টি নমুনা সংগ্রহ করা হয়। পরীক্ষা করা হয় ১২ হাজার ৬৯৪টি। এ নিয়ে দেশে মোট নমুনা পরীক্ষা করা হলো তিন লাখ ৫৮ হাজার ২৭৭টি। নতুন নমুনা পরীক্ষায় করোনার উপস্থিতি পাওয়া গেছে আরও দুই হাজার ৪২৩ জনের দেহে। ফলে দেশে মোট আক্রান্ত হয়েছেন ৫৭ হাজার ৫৬৩ জন। আক্রান্তদের মধ্যে মৃত্যু হয়েছে আরও ৩৫ জনের। এদের মধ্যে ২৯ জন পুরুষ এবং ছয়জন নারী। ফলে মৃতের সংখ্যা দাঁড়াল ৭৮১ জনে। গত ২৪ ঘণ্টায় সুস্থ হয়েছেন আরও ৫৭১ জন। এ নিয়ে সুস্থ হয়ে ওঠা রোগীর সংখ্যা দাঁড়াল ১২ হাজার ১৬১ জনে।
নতুন করে যারা মারা গেছেন তাদের ২৯ জন পুরুষ এবং ছয়জন নারী। এদের মধ্যে ঢাকা বিভাগে ২১ জন, চট্টগ্রাম বিভাগে নয়জন, সিলেট বিভাগে দুজন এবং রাজশাহী, বরিশাল ও খুলনা বিভাগে একজন করে রোগীর মৃত্যু হয়েছে। ২২ জন মারা গেছেন হাসপাতালে, ১২ জন বাড়িতে এবং একজনকে হাসপাতালে আনার পর মৃত ঘোষণা করা হয়। বয়সের দিক থেকে ২১ থেকে ৩০ বছরের তিনজন, ত্রিশোর্ধ্ব একজন, চল্লিশোর্ধ্ব তিনজন, পঞ্চাশোর্ধ্ব ১৪ জন, ষাটোর্ধ্ব ১১ জন, সত্তরোর্ধ্ব দুজন এবং ৮১ থেকে ৯০ বছর বয়সী একজনের মৃত্যু হয়েছে।
গত বুধবারের (৩ জুন) বুলেটিনে জানানো হয়, করোনায় আক্রান্ত হয়ে গত ২৪ ঘণ্টায় ৩৭ জন মারা গেছেন। ১২ হাজার ৫১০টি নমুনা পরীক্ষায় করোনার উপস্থিতি পাওয়া গেছে আরও দুই হাজার ৬৯৫ জনের দেহে। সে হিসাবে আগের ২৪ ঘণ্টার তুলনায় গত ২৪ ঘণ্টায় মৃত্যুও কমেছে, শনাক্ত রোগীর সংখ্যাও কমেছে। দেশে একদিনে সর্বোচ্চ ৪০ জনের মৃত্যুর রেকর্ড আছে। এ তথ্য জানানো হয় ৩১ মে’র বুলেটিনে। সর্বোচ্চ শনাক্তের রেকর্ড আছে দুই হাজার ৯১১ জনের, যা গত ২ জুনের বুলেটিনে জানানো হয়।
বৃহস্পতিবারের বুলেটিনে জানানো হয়, গত ২৪ ঘণ্টায় আইসোলেশনে নেয়া হয়েছে আরও ৩৮৬ জনকে এবং বর্তমানে আইসোলেশনে রয়েছেন ছয় হাজার ৭৫৪ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় আইসোলেশন থেকে ছাড় পেয়েছেন ১৩০ জন এবং এ পর্যন্ত ছাড় পেয়েছেন তিন হাজার ৬৭৪ জন।
দেশে মোট আইসোলেশন শয্যা রয়েছে ১৩ হাজার ২৮৪টি। এর মধ্যে রাজধানী ঢাকায় সাত হাজার ২৫০টি এবং ঢাকার বাইরে বিভিন্ন হাসপাতালে ছয় হাজার ৩৪টি শয্যা রয়েছে। সারাদেশে আইসিইউ শয্যার সংখ্যা ৩৯৯টি এবং ডায়ালাইসিস ইউনিট রয়েছে ১১২।
গত ২৪ ঘণ্টায় হোম ও প্রাতিষ্ঠানিক মিলিয়ে কোয়ারেন্টাইনে নেয়া হয়েছে দুই হাজার ৩৭৫ জনকে। এ পর্যন্ত কোয়ারেন্টাইনে নেয়া হয়েছে দুই লাখ ৯৫ হাজার ১৮৮ জনকে। গত ২৪ ঘণ্টায় কোয়ারেন্টাইন থেকে ছাড় পেয়েছেন দুই হাজার ৬৩৪ জন। এ পর্যন্ত মোট ছাড় পেয়েছেন দুই লাখ ৩৭ হাজার ৬১৯ জন। বর্তমানে হোম ও প্রাতিষ্ঠানিক মিলিয়ে কোয়ারেন্টাইনে রয়েছেন ৫৭ হাজার ৫৬৯ জন।
দেশের ৬৪ জেলা-উপজেলা পর্যায়ে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনের জন্য ৬২৯টি প্রতিষ্ঠান প্রস্তুত রয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে তাৎক্ষণিকভাবে সেবা দেয়া যাবে ৩১ হাজার ৯৯১ জনকে।
বরাবরের মতোই করোনাভাইরাস থেকে সুরক্ষিত থাকতে সবাইকে সাবান দিয়ে হাত ধোয়া, মুখে মাস্ক পরাসহ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার অনুরোধ জানিয়ে ডা. নাসিমা বলেন, মনে রাখবেন নিজের সুরক্ষা নিজের হাতে, নিজের পরিবারের সুরক্ষাও আপনার হাতে।
তার আগে মার্চ থেকে দেশে শুরু হওয়া সাধারণ ছুটি শেষ হয় গেল শনিবার। রোববার (৩১ মে) থেকে শুরু হয় কর্মদিবস। সাধারণ ছুটি চলাকালীনই দেশে স্বাস্থ্যবিধি না মানার বিষয়টি বারবার আলোচনায় আসছিল। আর কর্মদিবস শুরুর পর থেকে সেই নির্দেশনা চরমভাবে লঙ্ঘনের বিষয়টি সামনে আসছে।
আর এই সময়ের মধ্যে করোনা শনাক্তও হচ্ছে আগের চাইতে তুলনামূলক বেশি মানুষের শরীরে। সাধারণ মানুষ যদি সরকারের নির্দেশনা অমান্য করেন তবে তা ভয়াবহ আকার ধারণ করতে পারে বলেও বারবার হুঁশিয়ার করে দিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
তবে শুধু বাংলাদেশেই নয়, বিশ্বের অন্যান্য দেশেও আক্রান্তের সংখ্যা ক্রমেই বেড়ে চলছে। সারা বিশ্বে এখন পর্যন্ত প্রায় ৬৬ লাখ মানুষের শরীরে ভাইরাসটির উপস্থিতি শনাক্ত হয়েছে। এছাড়া এতে মারা গেছেন ৩ লাখ ৮৮ হাজারেরও বেশি মানুষ।
আশার কথা হচ্ছে, ভাইরাসটিতে আক্রান্ত হওয়ার পর এখন পর্যন্ত ৩১ লাখ ৮১ হাজার ১৮০ জন মানুষ সুস্থ হয়ে ঘরে ফিরেছেন। প্রতিবেশী ভারতে এখন পর্যন্ত ভাইরাসটিতে ছয় সহস্রাধিক মানুষের মৃত্যু হয়েছে।
তবে তুলানামূলকভাবে বর্তমানে ভালো অবস্থানে রয়েছে চীন। ভাইরাসের উৎপত্তিস্থল উহানে সম্প্রতি এক কোটির বেশি মানুষের করোনা পরীক্ষা করা হয়েছে। তবে এর মধ্যে মাত্র ৩০০ জনের শরীরে ভাইরাসটির উপস্থিতি পাওয়া গেছে। তাই উহানকে এখন অনেকটাই করোনামুক্ত বলছেন সেখানকার স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।


বিজ্ঞাপন