শ্রমিক ছাঁটাই ফন্দি!

অর্থনীতি

বাজেটে সুবিধা নিতে পোশাক মালিকদের

 

বিশেষ প্রতিবেদক: শিল্প মালিকরা শ্রমিক ছাঁটাই করতে বাধ্য হবেন-বিজিএমইএর এমন বক্তব্যের পর চাকরি হারানোর আতঙ্কে আছেন পোশাক শ্রমিকরা। শ্রমিক নেতাদের দাবি, আসছে বাজেটে বিশেষ সুবিধা আদায়ের জন্যই এ পথে হাঁটছে মালিকপক্ষ।
করোনা সংকটের মধ্যে দেশের প্রধান রফতানি খাতের এমন অবস্থান নিয়ে প্রশ্ন তুলে অর্থনীতিবিদরা বলছেন, এভাবে শ্রমিক ছাঁটাই হলে বিশ্ববাজারে আবারও ভাবমূর্তি সংকটে পড়বে পোশাক খাত। মালিকপক্ষ বলছে, শ্রমিক ছাঁটাই হলে অবশ্যই শ্রম আইন মেনেই হবে।
গেল মার্চ মাসেও উৎপাদনে ছিল বিজিএমইএ সদস্যভুক্ত ২ হাজার ২৭৪টি পোশাক কারখানা। কর্মরত ছিলেন ২৪ লাখ ৭২ হাজার শ্রমিক। বিশ্বব্যাপী করোনার সংক্রমণ বাড়তে থাকায় কমতে থাকে পোশাকের কার্যাদেশ। এমন অবস্থায় কর্মরত শ্রমিকদের বেতন ও অন্যান্য ভাতা পরিশোধের জন্য ২ শতাংশ সুদ ও সহজ শর্তে ৫ হাজার কোটি টাকার তহবিল দেয় সরকার।
এরপরও তিন মাস যেতে না যেতেই বাজেটের আগে আগে কার্যাদেশ বাতিলের কথা বলে আবারো শ্রমিক ছাঁটাইয়ের ঘোষণা আসে খোদ বিজিএমইএর সভাপতির বক্তব্যে। এরপর থেকেই চাকরি হারানোর শঙ্কায় পোশাক শ্রমিকরা।
এক গার্মেন্টসকর্মী বলেন, এখন যদি চাকরি চলে যায় তাহলে আমি কী করব, কী খাব?
অপর এক বয়স্ক নারী গার্মেন্টসকর্মী বলেন, ১০ বছর চাকরি করছি। এখন আমাকে বলে দিছে তোমার চাকরি নেই, তুমি চলে যাও। এখন এই বয়সে আমি কী করব?
মালিকপক্ষ বলছে, বাস্তবতা মেনে কোনো কোনো কারখানা এমন কঠিন সিদ্ধান্ত নিলেও অবশ্যই মানা হবে শ্রম আইন।
বিজিএমইএর জনসংযোগ কমিটির চেয়ারম্যান খান মনিরুল আলম শুভ বলেন, রিপোর্ট বলছে ৫৫ শাতংশ কাজ হাতে থাকবে। তাহলে কারখানাগুলো ছাঁটাই করতে পারে। এটা সারা বিশ্বের বাস্তবতা। তবে কেউ ছাঁটাই করতে চাইলে সেটা অবশ্যই শ্রমিক আইন মেনে করতে হবে।
শ্রমিক নেতাদের দাবি, শ্রমিক ছাঁটাইয়ে কোনো আইন মানছে না মালিকপক্ষ। বরং কারখানা কর্তৃপক্ষ নিজেদের সুবিধা মতো চাকরিচ্যুত করছে বলে অভিযোগ তাদের।
তারা বলছেন, বিভিন্ন কারখানায় অর্ডার কম দেখিয়ে ছাঁটাই করতেছে। কিন্তু লকডাউনে সরকার যখন বন্ধ রেখেছিল তখন তারা অর্ডার বাতিল হওয়ার ভয় দেখিয়ে গার্মেন্টস চালু করে। তাহলে অর্ডার নেই বলছে কেন।
সরকারের নীতি ও অর্থ সহায়তা পাওয়ার পরও বাজেটের আগে শ্রমিক ছাঁটাইয়ে শিল্প মালিকদের অবস্থানের কড়া সমালোচনা করে অর্থনীতিবিদরা বলছেন, এতে ভাবমূর্তি সংকটে পড়বে পোশাক শিল্প।
অর্থনীতিবিদ নাজনীন আহমেদ বলেন, এখন যদি এই অবস্থায় শ্রমিক ছাঁটাই হয় তাহলে দুনিয়ায় আমাদের ইমেজ ভালো হবে না।
মার্চ-এপ্রিল মিলে প্রায় সোয়া ৩ বিলিয়ন ডলারের কার্যাদেশ বাতিল ও স্থগিত হয়েছিল। এরপর আবার ফিরেছে এর ২৬ ভাগ কার্যাদেশ।


বিজ্ঞাপন