ওষুধের কৃত্রিম সঙ্কট নেই মিলছে নির্ধারিত দামে!

অপরাধ আইন ও আদালত স্বাস্থ্য

নিজস্ব প্রতিবেদক : রাজধানীর শাহবাগ মার্কেট। সারি সারি ওষুধের দোকানে ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের মনিটরিং টিমের হানা। অভিযোগ- ‘করোনা সঙ্কটের মধ্যেই নাপা, প্যারাসিটামলসহ বিভিন্ন জাতীয় ওষুধের কৃত্রিম সঙ্কট। আবার করোনা প্রতিরোধে কার্যকর অ্যান্টিবায়োটিকসহ সাধারণ অন্যান্য ওষুধের দামও নেওয়া হচ্ছে দ্বিগুণ বা তিনগুণ।’


বিজ্ঞাপন

ছদ্মবেশেই ক্রেতাসেজে দোকান ঘুরতে শুরু করলেন অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা। কোন দোকানে ১০ মিনিট আবার কোথাও ১৫ মিনিট অপেক্ষা শেষে তারা দেখলেন ওষুধের কোন কৃত্রিম সঙ্কট নেই।

তবে কোথাও মুখে মুখে চলা কোম্পানির ওষুধের পরিবর্তে একই জাতীয় অন্য কোম্পানির ওষুধ মিলছে সহজেই।

লাগামহীন দামেরও অভিযোগেরও কোন অস্তিত্ব মেলেনি। প্যাকেটের গায়ে লেখা নির্ধারিত মূল্যেই দোকানগুলোতে মিলছে ডেল্টা, বেক্সিমকো ও এসিআই কোম্পানির আইভারম্যাকটিন-৬ এমজি।

হাত বাড়ালেই পাওয়া যাচ্ছে বেক্সিমকো ও স্কয়ারের অ্যাসিথ্রোসিন। জিংক ট্যাবলেট বা ফেক্সোফেনাডিলের দাম নিয়েও কোনরকম কারসাজি চোখে পড়েনি।

নানা রকম কৌশল গ্রহণ করে নির্বিঘ্নে ওষুধের বাজার মনিটরিং করেই এদিন বিকেলে এমন তথ্য জানাচ্ছিলেন ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক (ডিডি) আশরাফ হোসেন।

সূত্র মতে, হঠাৎ বাজারে ওষুধের কৃত্রিম সঙ্কট তৈরি হয়েছে এবং দোকানিরা ইচ্ছামতো দরদাম বাড়িয়ে বাড়তি অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছেন এমন অভিযোগের বিষয়ে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তর।

অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মো.মাহবুবুর রহমান রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় মনিটরিং টিম পাঠিয়ে বাজার তদারকি করছেন।

কোথাও কোন অভিযোগের সত্যতা মিললেই তাৎক্ষণিক অ্যাকশনেরও নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে ওষুধের মূল্যের বিষয়েও নিজেদের অবস্থান পরিস্কার করেছেন।

একই সূত্র জানিয়েছে, বিভিন্ন দৈনিকে মঙ্গলবার (০৯ জুন) দেওয়া গণবিজ্ঞপ্তিতে ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি) মেজর জেনারেল মো.মাহবুবুর রহমান বলেছেন, ‘দেশব্যাপী করোনাভাইরাসজনিত রোগ (কোভিড-১৯) চিকিৎসায় ব্যবহারের লক্ষ্যে রেজিস্টার্ড চিকিৎসকের পরামর্শ/প্রেসক্রিপশন ব্যতীত বিভিন্ন ধরণের ওষুধ ফার্মেসী থেকে বিক্রয় করা হচ্ছে মর্মে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

তিনি বলেছেন, ‘আরও অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে, বিভিন্ন ধরণের ঔষধ সরকার নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে অধিক মূল্যে ফার্মেসী হতে বিক্রিয় করা হচ্ছে এবং ঔষধ বিক্রয়ের ক্যাশ মেমো প্রদান করা হচ্ছে না।

এরূপ কার্যক্রম কোনক্রমেই গ্রহণযোগ্য নয়। এতে জনসাধারণ প্রতারিত হচ্ছে এবং আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। ওভার দ্যা কাউন্টার (ওটিসি) তালিকাভুক্ত ঔষধ ব্যতীত অন্য কোন ঔষধ রেজিস্টার্ড চিকিৎসকের প্রেসক্রিপশন ব্যতীত বিক্রয় করা যাবে না।

মোড়কের গায়ে মুদ্রিত সরকার কর্তৃক নির্ধারিত মূল্যের অধিক মূল্যে ঔষধ বিক্রয় করা আইনত দন্ডনীয় অপরাধ। এরূপ অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেলে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’

শাহবাগ মার্কেটের বিভিন্ন ফার্মেসী ঘুরে আসা ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক (ডিডি) আশরাফ হোসেন বলেন, ‘শাহবাগ মার্কেটে প্রায় ৫০ থেকে ৬০ টি ফার্মেসীতে আমরা নজরদারি করেছি।

এ সময় দেখা যায় হয়তো স্কয়ারের ভিটামিন সি সিভিট ট্যাবলেট নেই। কিন্তু অন্যান্য কোম্পানির ভিটামিন সি জাতীয় ট্যাবলেট রয়েছে ঠিকই।

তিনি বলেন, আমরা দেখেছি হয়তো কোন ফার্মেসীতে নাপা নেই অথচ বিভিন্ন কোম্পানির প্যারাসিটামল রয়েছে। রেনেটা কোম্পানির ডক্সিসাইক্লিন নেই কিন্তু অন্যান্য কোম্পানির ডক্সিসাইক্লিন আছে।’

ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের মনিটরিং টিমের অপর সদস্য সহকারী পরিচালক সৈকত কুমার কর বলেন, ‘ওষুধের লাগামহীন দামেরও কোন নজির নেই।

ফার্মেসীতে দাম বেশি এমন অভিযোগ কেউ করেনি। আর দোকানিরাও কোন কোম্পানি থেকে বেশি দামে ওষুধ কিনেননি। তাই তারা বেশি দামেও বিক্রিও করছেন না।’

একই রকম তথ্য নিশ্চিত করেছেন রাজধানীর মীরপুরের বিভিন্ন ফার্মেসীতে নজরদারি চালানো ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো.মোজাম্মেল হক।

তিনি বলেন, ‘কোথাও আমরা ওষুধের সঙ্কট বা বাড়তি দামের কোন ঘটনা পাইনি। তবে নিয়মিতই আমাদের মনিটরিং টিমের তৎপরতা চালানো হবে। এ বিষয়ে ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের ডিজি মহোদয়ের কড়া নির্দেশনা রয়েছে।’