শনাক্ত-মৃত্যুর রেকর্ড

এইমাত্র জাতীয় জীবন-যাপন জীবনী সারাদেশ স্বাস্থ্য

*পরিস্থিতি আরও খারাপের দিকে যাচ্ছে
*বিশ্বে মোট মৃতের সংখ্যা চার লক্ষাধিক

 

মহসীন আহমেদ স্বপন : বিশ্বের অন্যান্য দেশে যখন করোনা পরিস্থিতি উন্নতির দিকে ঠিক তখনই বাংলাদেশে আক্রান্তের সংখ্যা হু হু করে বাড়ছে। গত ২৪ ঘণ্টায় করোনায় আক্রান্ত হয়েছে সর্বোচ্চ ৩ হাজার ১৭১ জন। এ নিয়ে দেশে মোট আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়াল ৭১ হাজার ৬৭৫ জন। এছাড়া গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে সর্বাধিক ৪৫ জনের মৃত্যুর মধ্য দিয়ে মোট মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল ৯৭৫ জনে। মঙ্গলবার দুপুরে করোনা ভাইরাস নিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নিয়মিত অনলাইন বুলেটিনে এ তথ্য জানান সংস্থাটির অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা।
তিনি জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় করোনা ৫৫টি ল্যাবে নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে ১৪ হাজার ৬৬৪টি। এ নিয়ে দেশে মোট নমুনা পরীক্ষা করা হলো ৪ লাখ ২৫ হাজার ৫৯৫টি। নতুন নমুনা পরীক্ষায় আরও ৩ হাজার ১৭১ জনের দেহে করোনা শনাক্ত হয়েছে, যা একদিনে সর্বোচ্চ শনাক্তের রেকর্ড। এ নিয়ে দেশে মোট আক্রান্ত হয়েছেন ৭১ হাজার ৬৭৫ জন। আক্রান্তদের মধ্যে গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে সর্বাধিক ৪৫ জনের মৃত্যুর মধ্য দিয়ে মোট মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল ৯৭৫ জনে। নাসিমা সুলতানা আরও জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় আরও ৭৭৭ জন সুস্থ হয়েছেন। এ নিয়ে মোট সুস্থ হয়েছেন ১৫ হাজার ৩৩৬ জন।
এদিকে বিশ্বে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মোট মৃতের সংখ্যা চার লাখ অতিক্রম করেছে। ওয়ার্ল্ডোমিটারের সর্বশেষ তথ্য মতে, করোনায় আক্রান্ত হয়ে মোট ৪ লাখ ৮ হাজার ৯৬৬ জন মানুষ মারা গেছেন। আর এ মারণ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন ৭২ লাখ ১০ হাজার ১৯৬ জন। সুস্থ হয়েছেন ৩৫ লাখ ৫০ হাজার ৫০০ জন।
মহাদেশভিত্তিক বিভাজনে দেখা গেছে, করোনা মহামারিতে সারাবিশ্বে যত মানুষের মৃত্যু হয়েছে তাদের এক চতুর্থাংশ হয়েছে আমেরিকায়। তবে দক্ষিণ আমেরিকায়ও মৃতের সংখ্যা দ্রুত বাড়ছে। করোনাভাইরাস দেখা দেয়ার পর ৫ মাসে এই রোগে যত মানুষের মৃত্যু হয়েছে তা বিশ্বের সবচেয়ে প্রাণঘাতী সংক্রামক ব্যধির একটি ম্যালেরিয়ায় বছরে মোট মৃত্যুর সমান।
পরিস্থিতি আরও খারাপের দিকে যাচ্ছে : বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাস পরিস্থিতি দিন দিন আরও খারাপের দিকে যাচ্ছে বলে মনে করছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)। সোমবার জেনেভায় সংস্থাটির মহাপরিচালক টেড্রোস আডানম গেব্রিয়াসিস সতর্ক করেছেন, মহামারির ছয় মাস পার হলেও এখনই কড়াকড়ি শিথিলের সময় আসেনি।
গত ডিসেম্বরে চীনের উহান থেকে উৎপত্তির পর বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে কোভিড-১৯ নামের নভেল করোনাভাইরাস। ইতোমধ্যেই দুই শতাধিক দেশে ছড়িয়ে পড়েছে এই বৈশ্বিক মহামারি। ৭০ লাখেরও বেশি মানুষ আক্রান্ত হয়েছে ওই ভাইরাসে। প্রাণ হারিয়েছে চার লাখেরও বেশি।
শুরুতে করোনা মহামারির কেন্দ্রস্থল ছিল পূর্ব এশিয়া। পরে ইউরোপ থেকে এখন তা ছড়িয়েছে আমেরিকায়। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতেও দ্রুত বাড়ছে সংক্রমণ। সোমবার জেনেভায় এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে ডব্লিউএইচও প্রধান বলেন, ‘যদিও ইউরোপের অবস্থার উন্নতি হচ্ছে, তবে বিশ্বের পরিস্থিতি খারাপ হচ্ছে।’
টেড্রোস বলেন, ‘গত ১০ দিনের নয়দিনই দৈনিক এক লাখের বেশি রোগী শনাক্ত হয়েছে। গত রোববার শনাক্ত হয়েছে ১ লাখ ৩৬ হাজারেরও বেশি, যা এখন পর্যন্ত একদিনে সর্বোচ্চ।’ তিনি জানান, রবিবার শনাক্তকৃত রোগীদের ৭৫ শতাংশ আক্রান্ত হয়েছে মাত্র ১০টি দেশে। এরমধ্যে বেশিরভাগই লাতিন আমেরিকা ও দক্ষিণ এশিয়ার দেশ।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মহাপরিচালক বলেন, যেসব দেশের পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে সেখানে এখন সবচেয়ে বড় হুমকি ‘আত্মতুষ্টি’।’ তার মতে, বিশ্বের বেশিরভাগ মানুষ এখনও করোনায় আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রধান বলেন, ‘মহামারির ছয় মাসেরও বেশি সময় গেছে। তবে কোনও দেশের জন্য এখনও প্যাডেল থেকে পা তুলে নেয়ার সময় আসেনি।’
যুক্তরাষ্ট্রে জর্জ ফ্লয়েড হত্যার জেরে চলমান বিক্ষোভ থেকে সংক্রমণের ঝুঁকি আছে কিনা, সে প্রসঙ্গে জানতে চাইলে সব বিক্ষোভকারীকে স্বাস্থ্য সুরক্ষা নীতি মেনে কর্মসূচি পালনের আহ্বান জানান টেড্রোস।


বিজ্ঞাপন