প্রয়োজন কঠোর লকডাউন

এইমাত্র জাতীয় জীবন-যাপন সারাদেশ স্বাস্থ্য

*আক্রান্তের সংখ্যা কমেছে, মৃত্যু ৪৪
*রেড জোনে থাকবে সাধারণ ছুটি
*লকডাউন হচ্ছে ঢাকার ৪৯ এলাকা
*সংক্রমণ রোধ করতে না পারলে বিপর্যয়!

 

 

মহসীন আহমেদ স্বপন : বিশ্বব্যাপী মহামারি রূপ নেয়া করোনাভাইরাসে প্রতিদিনই লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা। বাংলাদেশেও প্রতিদিনই আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যায় রেকর্ড ভাঙছে। গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে ২ হাজার ৮৫৬ জন করোনা আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়েছেন। এ নিয়ে দেশে মোট আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়াল ৮৪ হাজার ৩৮৯ জনে। এছাড়া গত ২৪ ঘণ্টায় ৪৪ জনের মৃত্যুর মধ্য দিয়ে মোট মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল ১ হাজার ১৩৯ জনে। এদিকে গত ২৪ ঘণ্টায় করোনা জয় করে সুস্থ হয়ে ফিরেছেন ৫৭৮ জন। সব মিলিয়ে এ পর্যন্ত সুস্থ হয়েছেন ১৭ হাজার ৮২৭ জন।
শনিবার দুপুরে করোনা ভাইরাস নিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নিয়মিত অনলাইন বুলেটিনে এ তথ্য জানান সংস্থাটির অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা।
মোট ৫৯টি ল্যাবে নমুনা পরীক্ষার তথ্য তুলে ধরে জানান, করোনাভাইরাস শনাক্তে গত ২৪ ঘণ্টায় আরও ১৪ হাজার ৩৫টি নমুনা সংগ্রহ করা হয়। পরীক্ষা করা হয় আগের কিছু মিলিয়ে ১৬ হাজার ৬৩৮টি নমুনা। এ নিয়ে দেশে মোট নমুনা পরীক্ষা করা হলো চার লাখ ৮৯ হাজার ৯৬০টি। নতুন নমুনা পরীক্ষায় করোনা সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে আরও দুই হাজার ৮৫৬ জনের মধ্যে। ফলে ভাইরাসটিতে আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়াল ৮৪ হাজার ৩৭৯ জনে। আক্রান্তদের মধ্যে মারা গেছেন আরও ৪৪ জন। এ নিয়ে মোট মৃত্যু হলো এক হাজার ১৩৯ জনের। ২৪ ঘণ্টায় সুস্থ হয়েছেন ৫৭৮ জন। ফলে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরলেন মোট ১৭ হাজার ৮২৮ জন।
গত শুক্রবারের বুলেটিনে জানানো হয়, করোনায় আক্রান্ত হয়ে গত ২৪ ঘণ্টায় ৪৬ জন মারা গেছেন, যা একদিনে সর্বোচ্চ মৃত্যুর রেকর্ড। ১৫ হাজার ৯৯০টি নমুনা পরীক্ষায় করোনার সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে আরও তিন হাজার ৪৭১ জনের মধ্যে, যা একদিনে সর্বোচ্চ শনাক্তের রেকর্ড। সে হিসাবে আগের ২৪ ঘণ্টার তুলনায় গত ২৪ ঘণ্টায় মৃত্যু ও রোগী শনাক্ত- উভয় সংখ্যাই কমেছে।
বুলেটিনে বরাবরের মতো করোনাভাইরাস থেকে সুরক্ষিত থাকতে সবাইকে সাবান দিয়ে হাত ধোয়া, মুখে মাস্ক পরা এবং অন্যান্য স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার আহ্বান জানানো হয়।
বাংলাদেশে গত ৮ মার্চ প্রথম করোনা ভাইরাসের রোগী শনাক্ত হলেও প্রথম মৃত্যুর খবর আসে ১৮ মার্চ। দিন দিন করোনা রোগী শনাক্ত ও মৃতের সংখ্যা বাড়ায় নড়েচড়ে বসে সরকার। ভাইরাসটি যেন ছড়িয়ে পড়তে না পারে সেজন্য ২৬ মার্চ থেকে বন্ধ ঘোষণা করা হয় সব সরকারি-বেসরকারি অফিস। কয়েক দফা বাড়িয়ে এ ছুটি ৩০ মে পর্যন্ত করা হয়। ছুটি শেষে করোনার বর্তমান পরিস্থিতির মধ্যেই ৩১ মে থেকে দেশের সরকারি-বেসরকারি অফিস খুলে দেয়া হয়। তবে বন্ধ রাখা হয়েছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান।
দেশে করোনা পজিটিভের সংখ্যা ক্রমাগত বাড়ছে। এরইমধ্যে মৃতের সংখ্যা হাজার ছাড়িয়েছে। করোনা উপসর্গ নিয়ে যাদের মৃত্যু হচ্ছে বা যারা উপসর্গ থাকার পরও পরীক্ষা করাচ্ছেন না, তাদের অনেকের হিসাবই এর বাইরে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এভাবে যদি রোগী সংখ্যা বাড়তে থাকে আর সংক্রমণ রোধ না করা যায়, তাহলে বড় ধরনের বিপর্যয় ঘটতে পারে।
করোনার বিস্তার বন্ধ করতে বড় এলাকাজুড়ে পূর্ণ ও কঠোর লকডাউন প্রয়োজন বলে মনে করে কোভিড-১৯ জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটি। আর তাই সারা দেশে আক্রান্ত ও ঝুঁকির মাত্রার ভিত্তিতে যতটা বড় এলাকায় সম্ভব জরুরি লকডাউনের সুপারিশ করেছেন কমিটির সদস্যরা। একইসঙ্গে রোগী বাড়তে থাকলে হাসপাতালগুলোতে সেবা দেওয়ার ক্ষেত্রেও অত্যন্ত কঠিন অবস্থার মুখোমুখি হতে হবে আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা।
এভাবে যদি রোগীর সংখ্যা বাড়তে থাকে তাহলে ভয়াবহ বিপর্যয় হবে মন্তব্য করে কোভিড-১৯ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ বিষয়ক জাতীয় সমন্বয় কমিটির উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা. এবিএম আব্দুল্লাহ বলেন, এভাবে রোগী সংখ্যা বাড়লে তো হাসপাতালে জায়গা পাওয়াই কঠিন হয়ে যাবে। অলরেডি যেসব হাসপাতালে কোভিডের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে সেগুলো ভর্তি হয়ে গেছে। জায়গাই তো খালি নাই। সরকারকে চেষ্টা করতে হবে। তারচেয়েও জরুরি, রোগের সংক্রমণ যাতে কমে সে ব্যবস্থা নেওয়া। যেকোনোভাবেই রোগী সংখ্যা কম হোক এই প্রার্থনা করি। যেন হাসপাতালে যাওয়া না লাগে, যেন আইসিইউ না লাগে। এজন্য প্রতিকার, প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থার প্রতি জোর দিতে হবে বেশি, যাতে সংক্রমণের হার কমে যায়।
মানুষ কোনও নির্দেশনা মানছে না মন্তব্য করে তিনি বলেন, তারা প্রতিকার, প্রতিরোধ কিছুই নিচ্ছে না। এজন্য বিপর্যয় রোধে সাধারণ মানুষকে স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে, সচেতন হতে হবে।
কোভিড-১৯ জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির সভাপতি অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ সহিদুল্লা বলেন, হাসপাতালগুলোতে সেবার পরিধি বাড়ানো দরকার। এখনি রোগী ভর্তি হতে পারছে না। এ সমস্যার সমাধান হওয়া অত্যন্ত প্রয়োজন।
তিনি বলেন, দ্রুত হাসপাতালগুলোতে শয্যা বাড়ানোর কাজ বাস্তবায়ন করতে হবে। একইসঙ্গে অন্যান্য উপকরণও বাড়াতে হবে, বিশেষ করে অক্সিজেন সরবরাহ।
প্রথম কথা হচ্ছে রোগী বাড়তে দেওয়া যাবে না-এই মন্তব্য করে স্বাস্থ্য অধিদফতরের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ডা. বেনজির আহমেদ বলেন, রোগী যদি বাড়ে তাহলে যতই চেষ্টা করা হোক, সীমিত সম্পদ, সীমিত স্বাস্থ্য অবকাঠামো, সীমিত লোকবল দিয়ে সেটা ম্যানেজ করা যাবে না। তাই প্রথম কাজ রোগী যেন না বাড়ে সে ব্যবস্থা নেওয়া। পাশাপাশি ব্যবস্থাপনায় বড় পরিবর্তন আনতে হবে।
রোগ নিয়ন্ত্রণে প্রাথমিক পর্যায়ের চিকিৎসার ওপর জোর দিতে বলেন অধ্যাপক বেনজির আহমেদ। তিনি বলেন, রোগী যখন প্রাথমিক পর্যায়ে থাকবে তখনই ব্যবস্থা নিতে হবে তিনি যেন মারাত্মক পর্যায়ে না যান। এজন্য গুরুত্বপূর্ণ অক্সিজেনের ব্যবস্থা থাকা, পাশাপাশি দরকার চিকিৎসক, নার্সসহ সবার ভালো মানের প্রশিক্ষণ।
এখনই হাসপাতালে ভর্তি হতে পারছেন না স্বীকার করে স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত সচিব মো. হাবিবুর রহমান খান বলেন, বাস্তবতা সবারই স্বীকার করা উচিত। রোগী এভাবে বাড়লে বর্তমানে থাকা হাসপাতালগুলোর বেডে সংকুলান হবে না। এক্ষেত্রে সরকারের পরিকল্পনা কী জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘প্রত্যেকটি বিষয়ের একটি ক্যাপাসিটি, একটা লিমিট থাকে। যদি দিনের পর দিন রোগী বাড়তে থাকে, তাহলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, ডরমেটরি যেসব আছে সেসবকে অস্থায়ী হাসপাতাল বানাতে হবে। মানুষকে বাঁচানোর চেষ্টা করতে হবে আগে।
তিনি আরও বলেন, রেড-ইয়োলো গ্রিন জোন করা হচ্ছে, এটা যদি ঠিকভাবে পালন করা যায় তাহলে সংক্রমণের যে অব্যাহত ধারা এটা হয়তো কমে আসতে পারে।
রেড জোনে থাকবে সাধারণ ছুটি : করোনাভাইরাসে (কোভিড-১৯) অধিক সংক্রমিত এলাকাকে রেড জোন ঘোষণা করে লকডাউন করে দেয়া হবে। সেই এলাকায় সাধারণ ছুটি থাকবে। এছাড়া অন্যান্য স্থানে আগের মতোই স্বাস্থ্যবিধি মেনে অফিস খোলা থাকবে, চলবে গণপরিবহনও। জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন শনিবার দুপুরে এ তথ্য জানান।
করোনা মোকাবিলায় ৬৬ দিনের সাধারণ ছুটি শেষে গত ৩১ মে থেকে ১৫ জুন পর্যন্ত শর্ত সাপেক্ষে সীমিত পরিসরে অফিস খুলে দেয়া হয়। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চালু হয় গণপরিবহনও। এই পরিস্থিতিতে করোনা সংক্রমণের মাত্রা বেড়ে যেতে থাকলে সরকার ফের সাধারণ ছুটির ঘোষণার কথা বললেও এখন সেদিকে যাচ্ছে না। জোনভিত্তিক লকডাউনের মাধ্যমে করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে চাইছে সরকার।
বেশি আক্রান্ত এলাকাকে রেড, অপেক্ষাকৃত কম আক্রান্ত এলাকাকে ইয়েলো ও একেবারে কম আক্রান্ত বা করোনামুক্ত এলাকাকে গ্রিন জোন হিসেবে চিহ্নিত করা হবে। রেড জোনকে লকডাউন করা হবে, ইয়েলো জোনে যেন আর সংক্রমণ না বাড়ে সেই পদক্ষেপ নেয়া হবে। সতর্কতা থাকবে গ্রিন জোনেও। লকডাউনের মেয়াদ হবে ১৪ থেকে ২১ দিন পর্যন্ত।
গত ৯ জুন দিবাগত রাত ১২টা থেকে রাজধানীর পূর্ব রাজাবাজার এলাকাকে পরীক্ষামূলকভাবে ‘রেড জোন’ হিসেবে লকডাউন বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। প্রাথমিকভাবে ১৪ দিনের জন্য এই লকডাউন কার্যকর করা হবে সেখানে।
জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন বলেন, আমরা এখন জোনিংয়ে চলে যাচ্ছি। ঢাকাসহ যে জায়গাগুলো সিভিয়ারলি ইনফেক্টেড (মারাত্মক আক্রান্ত) হয়েছে সেই জায়গাগুলোতে রেড জোন ঘোষণা করে সেগুলোতে বিশেষ ট্রিটমেন্টে আমরা চলে যাব।
তিনি বলেন, বর্তমানে যে অবস্থায় চলছে সবকিছু সেভাবেই চলবে। নতুন করে ছুটি ঘোষণা করা হবে না। যে এলাকা রেড জোন থাকবে, সেখানে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হবে। পরীক্ষামূলকভাবে পূর্ব রাজাবাজারের লকডাউন বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। সেখানে কিছু ভুলত্রুটি বের হয়ে এসেছে। লোকজন এখানে টপকাচ্ছে ওখানে টপকাচ্ছে। যাবতীয় সবকিছু স্বয়ংসম্পূর্ণ করে আমরা কোনো স্থান লকডাউন করব।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘জোনিং করে লকডাউন, এটা খুবই একটা কার্যকর ব্যবস্থা বলে মনে করছি আমরা। একই সঙ্গে চার-পাঁচটি স্থান রেড জোন ঘোষণা করে লকডাউন বাস্তবায়ন করা হতে পারে।’
বেশি সংক্রমিত এলাকাগুলো সিলেকশন করা আছে জানিয়ে ফরহাদ হোসেন বলেন, ‘সেই স্থানগুলোকে আমরা রেড জোন ঘোষণা করতে পারি। আমরা নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে ঘোষণা দেব, কোন এলাকায় লকডাউন করা হবে। আগে থেকে বলা হলে তো লোকজন এক স্থান থেকে অন্য স্থানে চলে যাবে। রেড জোনে জনসাধারণের চলাচল নিষিদ্ধ থাকবে। যাদের খাবার প্রয়োজন পৌঁছে দেয়া হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘১৫ তারিখের (জুন) পর স্বাস্থ্যবিধি মেনে আগের মতো অফিস এবং গণপরিবহন খোলা থাকবে, সেজন্য একটি অর্ডার জারি করা হবে। সেটা হয়তো রোববারই (১৪ জুন) জারি করা হবে।’
এলাকাভিত্তিক লকডাউন বাস্তবায়নের অগ্রগতি পর্যালোচনায় গতক শুক্রবার (১২ জুন) অনলাইনে বৈঠক করেছেন সরকারের তিন মন্ত্রী, দুই প্রতিমন্ত্রী ও তিন মেয়র। স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী মোহাম্মদ জাহিদ মালেকের সভাপতিত্বে অনলাইন বৈঠকে স্থানীয় সরকারমন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, তথ্য ও যোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী মো. ফরহাদ হোসেন, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন, মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম এবং প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখ্য সচিব আহমদ কায়কাউসসহ সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
ঢাকার যে ৪৯ এলাকা লকডাউন হতে পারে : সংক্রমণ বিবেচনায় সারাদেশকে লাল, হলুদ ও সবুজ এ তিনটি জোনের আওতায় করোনা মহামারী নিয়ন্ত্রণে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা চূড়ান্ত করেছে সরকার।
বৃহস্পতিবার (১১ জুন) ‘বাংলাদেশ রিস্ক জোন বেজড কোভিড-১৯ কন্টিমিনেট ইমপ্লেমেন্টশন স্ট্রাটেজি/গাইড’ শীর্ষক এ নির্দেশনা চূড়ান্ত হয়েছে।
গাইডলাইনে বলা হয়েছে, ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের যে সকল এলাকায় গত ১৪ দিনের মধ্যে প্রতি লাখে ৬০ জন বা তার বেশি লোক সংক্রমণের শিকার হয়েছেন তাহলে ওই এলাকা রেড জোন হিসেবে চিহ্নিত করা হবে। তবে অন্য জেলার ক্ষেত্রে প্রতি লাখে ১০ জন নিশ্চিতভাবে শনাক্ত হলেই সেটি রেড জোন বলে বিবেচিত হবে।
রোগতত্ত্ব রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইন্সটিটিউটের (আইইডিসিআর) তথ্যমতে, রাজধানীর ৪৯টি এলাকায় ৬০ জনের বেশি নিশ্চিত করোনা রোগী রয়েছেন। সেই হিসাবে এসব এলাকা শিগগির লকডাউন হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
এলাকাগুলো হচ্ছে- আদাবর, আগারগাঁও, আজিমপুর, বাবুবাজার, বাড্ডা, বনশ্রী, বনানী, বংশাল, বাসাবো, বসুন্ধরা, চকবাজার, ডেমরা, ধানম-ি, ইস্কাটন, ফার্মগেট, গে-ারিয়া, গ্রিনরোড, গুলশান, হাজারীবাগ, যাত্রাবাড়ী, জুরাইন, কল্যাণপুর, কলাবাগান, কাকরাইল, কামরাঙ্গীরচর, খিলগাঁও, লালবাগ, লালমাটিয়া, মালিবাগ, মিরপুর, মিরপুর-১, মিরপুর-১২, মগবাজার, মহাখালী, মোহাম্মদপুর, মতিঝিল, মুগদা, পল্টন, রাজারবাগ, রামপুরা, রমনা, শাজাহানপুর, শাহবাগ, শ্যামলী, শান্তিনগর, শেরেবাংলা নগর, তেজগাঁও, উত্তরা, ওয়ারী।
ঢাকা সিটির ক্ষেত্রে বিগত ১৪ দিনে কোনো এলাকায় ৩ থেকে ৫৯ জন নিশ্চিত করোনা রোগী থাকলে সেটি হবে ইয়েলো জোন। তবে ঢাকার বাইরের জন্য প্রতি লাখে ৩ থেকে ৯ জন রোগী থাকলেই সেটি ইয়েলো জোন বলে বিবেচিত হবে। একইভাবে কোনো এলাকায় ১৪দিনের মধ্যে নিশ্চিত রোগী যদি ৩ জনের কম অথবা কোনো রোগী না থাকলে সেটি হবে গ্রিন জোন।
নির্দেশনায় বলা হয়েছে, শহরের কোনো এলাকায় রেড জোন ঘোষণা হলে সেখান থেকে কেউ বাইরে যেতে পারবেন না। সব কাজ (ফ্যাক্টরি, অফিস) ঘরে বসেই করতে হবে। তবে গ্রাম এলাকায় কৃষি কাজ করতে বাধা নেই। অসুস্থ হলেই শুধু হাসপাতালে যাওয়ার অনুমতি রয়েছে।
জরুরি প্রয়োজনীয় দ্রব্য কেনার ব্যবস্থা থাকবে তবে সাইকেলসহ কোনো ধরনের যানবাহন ব্যবহার করা সম্পূর্ণ নিষেধ। এমনকি নৌ, রেল বা সড়ক যোগাযোগও বন্ধ থাকবে। শহরাঞ্চলে মুদি ও ওষুধের হোম ডেলিভারি দেয়ার ব্যবস্থা থাকবে। গ্রামে নির্দিষ্ট সময় ধরে দোকান খোলা থাকবে। গ্রামে কাঁচাবাজার খোলা থাকলেও শহরে সেটি থাকবে না।
ইয়েলো জোনের ক্ষেত্রে ৫০ভাগ লোকবল নিয়ে অফিস বা ফ্যাক্টরি চালানো যাবে। তবে জনাকীর্ণ ফ্যাক্টরির ক্ষেত্রে ৩৩ শতাংশ শ্রমিক নিয়ে কাজ করতে হবে। জরুরি চলাচলের ক্ষেত্রে একজন যাত্রী নিয়ে রিকশা, ভ্যান বা সিএনজি, ট্যাক্সি চলবে। নিজে অথবা আবাসিক ড্রাইভার থাকলে ব্যক্তিগত গাড়ি চালানো যাবে।


বিজ্ঞাপন