জনসমাগম দেখে তো মনে হয় না দেশে মহামারী আছে

আইন ও আদালত

নিজস্ব প্রতিবেদক : করোনার সংক্রমণ রোধে ঢাকাকে লকডাউন করা হবে কিনা, তা সরকারের সিদ্ধান্ত। এখানে আদালতের কিছু করার নেই। এছাড়াও দেশের বিভিন্ন স্থানের হাট-বাজারে লোক সমাগমের দৃশ্য দেখে তো মনে হয় না মহামারি আছে বলে জানিয়েছে হাইকোর্ট।
করোনার সংক্রমণ ঠেকাতে ঢাকা মহানগীতে লকডাউনের দাবিতে করা রিটের শুনানিতে এমন মন্তব্য উঠে আসে দেশের উচ্চ আদালত হাইকোর্ট থেকে। গণমাধ্যমকে এ তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেন রিটকারী আইনজীবী মনজিল মোরসেদ।
এ সংক্রান্ত রিটের শুনানি নিয়ে রোববার হাইকোর্টের বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিমের ভার্চুয়াল বেঞ্চ এমন মন্তব্য করেন। একই সঙ্গে, এ রিটের ওপর আদেশের জন্য সোমবার আদেশের দিন ধার্য করেন।
আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন রিটকারী আইনজীবী অ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদ। অন্যদিকে, রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মো. মুরাদ রেজা ও ডেপুর্টি অ্যাটর্নি জেনারেল অ্যাডভোকেট অমিত তালুকদার।
শুনানিতে বাদীপক্ষের কৌঁসুলি মনজিল মোরসেদ বলেন, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে কোভিড-১৯ প্রতিরোধে বিশেষজ্ঞদের মতামত অনুসারে ব্যবস্থা নেয়া হয় এবং আমাদের দেশের ‘সংক্রামক প্রতিরোধ আইন, ২০১৮’-তে এ ধরনের মহামারির সময় সিদ্বান্ত নেয়ার জন্য স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে যথেষ্ট ক্ষমতা দেয়া হয়েছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় আদালতের নির্দেশে একটি উপদেষ্টা কমিটি গঠন করেছে এবং ১৭ সদস্যবিশিষ্ট একটি জাতীয় টেকনিক্যাল কমিটি গঠন করেছে। জাতীয় টেকনিক্যাল বিশেষজ্ঞ কমিটি বর্তমান করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ঢাকা শহর লকডাউন ঘোষণার সুপারিশ করেছে। কিন্তু সে ব্যাপারে পদক্ষেপ না নেয়ায় অনেক মানুষের মধ্যে ভাইরাস সংক্রমণ হতে পারে। যার পরিপ্রেক্ষিতে মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে যেতে পারে।
তিনি আরো বলেন, বেঁচে থাকার অধিকার সংবিধানের আর্টিকেল ৩২ অনুসারে মৌলিক অধিকার হিসেবে স্বীকৃত এবং আদালতকে উক্ত অধিকার প্রতিষ্ঠায় প্রয়োজনে যেকোনো আদেশ নির্দেশ দেয়ার ক্ষমতা সংবিধানের আর্টিকেল ১০২-এ দেয়া হয়েছে। উক্ত ক্ষমতা প্রয়োগ করে ঢাকা শহর লকডাউন ঘোষণার জন্য আদেশের প্রার্থনা করছি।
এছাড়া তিনি মুমূর্ষু রোগীদের জন্য ‘হাই-ফ্লো নেজাল অক্সিজেন ক্যানোলা’ পর্যাপ্ত সরবরাহ নিশ্চিতকরণ এবং নির্দিষ্ট হাসপাতালে স্বাস্থ্যকর্মীদের চিকিৎসার জন্য দ্রুত ব্যবস্থার নেয়ার জন্য নির্দেশনা প্রার্থনা করেন।
অন্যদিকে রাষ্ট্রপক্ষের অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল অ্যাডভোকেট মুরাদ রেজা বলেন, সরকার (এ বিষয়ে) কাজ করছে এবং বুঝে বুঝে প্রয়োজন অনুযায়ী এলাকাভিত্তিক লকডাউন করছে। তিনি এ বিষয় চীনের উদাহরণ দেন। তিনি আরও বলেন যে, এ পর্যায়ে রিট পিটিশন চলে না।
এ পর্যায়ে আদালত বলেন যে, হাট-বাজারে লোক সমাগমের দৃশ্য দেখে তো মনে হয় না যে দেশে মহামারি আছে। আদালত দেশের সকল জনগণকে মাঠে ময়দানে সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য কাজ করার অনুরোধ জানান।
এর আগে গত বৃহস্পতিবার (১১ জুন) রাজধানী ঢাকা মহানগরীর পুরো এলাকাকে লকডাউন ঘোষণার দাবিতে রিট আবেদনটি করেন মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশের (এইচআরপিবির) চেয়ারম্যান ও সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদ। তিনি আইনজীবী মো. মাহবুবুল ইসলামের পক্ষে রিট আবেদনটি করেন।
রিট আবেদনে ঢাকা শহরকে লকডাউন ঘোষণা এবং চিকিৎসার জন্য পর্যাপ্ত হাই-ফ্লো নেজাল অক্সিজেন ক্যানোলা সংগ্রহের দাবি জানানো হয়েছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দুই সচিব (হাসপাতাল ও প্রশাসন), অর্থ মন্ত্রণালয়ের সচিব, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি), র‌্যাবের মহাপরিচালক (ডিজি), পুলিশ কমিশনার এবং ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন মেয়রসহ সংশ্লিষ্ট ১২ জনকে বিবাদী করা হয়েছে রিটে।
রিটে বলা হয়েছে, পুরো ঢাকা শহর লকডাউনের পর উক্ত সময়ে সিটি করপোরেশনের মেয়ররা কমিশনারদের মাধ্যমে প্রতি এলাকায় প্রয়োজনে গরিবদের খাদ্য ও ওষুধ সরবরাহ করবেন। এ কাজে সরকার সার্বিক সহযোগিতা করবে। স্বাস্থ্যকর্মীদের উন্নত চিকিৎসার জন্য করোনাকালে গঠিত টেকনিক্যাল কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।


বিজ্ঞাপন