সুশীতল ছায়াতলে চিরনিদ্রার ৬ দিন তিনি আছেন তাঁর না থাকাজুড়ে

সারাদেশ

 

সিলেট থেকে নিজস্বপ্রতিনিধি : ১৫ থেকে ২০ জুন, তাঁর না থাকার আজ ষষ্ঠতম দিন। তবে দৃশ্যত চলে গেলেও তিনি আছেন তাঁর না থাকাজুড়ে। বিরাজ করছেন শোকাহত সিলেটবাসীর অন্তরে। দলীয় নেতাকর্মী থেকে শুরু করে সিলেটের আবাল-বৃদ্ধ-বণিতার চোখে বেসামাল অশ্রুধারা উপহার দিয়ে গত ৫ দিন ধরে তিনি চিরঘুমে আছেন সিলেট নগরের মানিকপীর টিলায়, বৃক্ষরাজির সুশীতল ছায়াতলে- মা-বাবার পাশে।


বিজ্ঞাপন

সিলেট সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র, মহানগর আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ও মৃত্যুবধি আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য পদে থাকা বদর উদ্দিন আহমদ কামরান গত ১৫ জুন ভোররাত ৩টার দিকে ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করে।

তিনি করোনাক্রান্ত অবস্থায় সেখানে চিকিৎসাধীন ছিলেন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স ছিলো ৬৯ বছর। তিনি স্ত্রী, দুই ছেলে ও এক মেয়েসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে যান। ‘জনতার মেয়র’ হিসেবে খ্যাতি পাওয়া কামরানকে মৃত্যুর দিনই সিলেটের মানিকপীর টিলায় দাফন করা হয়।

মৃত্যুর ৫ দিন চলে গেলেও এ শোক এখনও কাটিয়ে উঠতে পারেননি সিলেটবাসী। তাঁর মৃত্যুতে প্রতিদিনই বার্তার মাধ্যমে শোক প্রকাশ করছেন অনকে ব্যক্তি, বিবৃতি দিচ্ছে অনেক সংগঠন।

এ যেন সিলেটের প্রত্যেকজন মানুষ হারিয়েছেন তাদের রক্ত সম্পর্কীয় এক আত্মার আত্মীয়কে।

বদর উদ্দিন আহমদ কামরানের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করে বিবৃতি দিয়েছিলেন রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, পররাষ্ট্রমন্ত্রী, প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী, বন ও পরিবেশমন্ত্রী, সিলেটের জেলা প্রশাসক, সিসিক মেয়র, আওয়ামী লীগসহ রাজনীতিবিদ ও জনপ্রতিনিধি এবং বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ। এখনও অব্যাহত রয়েছেন এমন শোক প্রকাশ। যার দ্বারা প্রমাণিত হয়- তিনি কতোটা আপন ছিলেন সিলেটবাসীর।

গত ৫ জুন সিলেটের ওসমানী মেডিকেল কলেজের আরটি-পিসিআর ল্যাবে নমুনা পরীক্ষায় করোনাক্রান্ত হিসেবে শনাক্ত হন বদর উদ্দিন আহমদ কামরান। পরদিন তাকে স্থানীয় শহীদ শামসুদ্দিন আহমদ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

অবস্থার অবনতি ঘটায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে কামরানকে ঢাকায় নেওয়ার ব্যবস্থা করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন।

গত ৭ জুন সন্ধ্যায় বিমানবাহিনীর এয়ার অ্যাম্বুলেন্সযোগে তাঁকে ঢাকায় নিয়ে সিএমএইচে ভর্তি করা হয়। সেখানে তাঁর শরীরে প্লাজমা থেরাপি প্রয়োগ করা হয়। এতে শারীরিক অবস্থার কিছুটা উন্নতি হয়েছিল। কিন্তু ১৫ জুন ভোররাত ৩টার দিকে সিলেটের রাজনৈতিক অঙ্গনকে শোকে ভাসিয়ে না ফেরার দেশে পাড়ি জমান কামরান।

সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি বদর উদ্দিন আহমদ কামরান সিসিকের ইতিহাসে প্রথম দুই মেয়াদে মেয়র নির্বাচিত হন। তবে পরের দুই দফায় তিনি হেরে যান।

আওয়ামী লীগের সর্বশেষ সম্মেলনে তিনি কেন্দ্রীয় নির্বাহী সদস্য পদ পান। আগের দফায়ও একই পদে ছিলেন কামরান।

এদিকে, প্রিয় নেতা না থাকলেও প্রতিদিনই ছড়ারপারস্থ তাঁর রেখে যাওয়া সুগন্ধা-৬৫-তে ভীড় জমান অনেক নেতাকর্মী। তার রেখে যাওয়া স্মৃতিবস্তুগুলোতে বুলান একটু শ্রদ্ধাষ্পদ ভালোবাসার পরশ। হাতড়ে ফেরেন প্রিয় নেতার সঙ্গে লেপ্টে থাকা কত-শত স্মৃতি। ভেঙে পড়েন কান্নায়। পরিবারের সদস্যসের সঙ্গে রোমন্থন করেন ফেলে আসা দিনগুলোর টুকরো টুকরো স্মৃতি।

এছাড়াও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে অনেকেই নিজের প্রোফাইলে রেখেছেন ‘জনতার কামরান’র ছবি। অনেকেই বারে বারে লিখছেন আবেগঘন স্ট্যাটাস। অন্যকে জানাচ্ছেন কর্মীবান্ধব নেতার সঙ্গে কাটানো স্মরণীয় মুহুর্তগুলো।

এতে সহজেই প্রমাণ হয়- চলে গেলেও সুকর্মের দ্বারা অর্জিত আকাশচুম্বি জনপ্রিয়তার জন্য তিনি বিরাজ করছেন তাঁর না থাকাজুড়ে।