মোশতাক-জিয়ার চক্রান্তে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা হয়

এইমাত্র জাতীয় রাজধানী রাজনীতি

নিজস্ব প্রতিবেদক : আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে দলটির দীর্ঘ সংগ্রামের বর্ণনা দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আওয়ামী লীগের এই ত্যাগ-তিতিক্ষার মধ্য দিয়ে যে অর্জন সেটা হচ্ছে-বাংলাদেশের স্বাধীনতা। জাতি স্বাধীন হিসেবে মর্যাদা পেয়েছে। এটাই হচ্ছে সবচেয়ে বড় পাওয়া।
তিনি বলেন, আমাদের দুর্ভাগ্য জাতির পিতা রাষ্ট্র পরিচালনার যখন দায়িত্ব পেলেন, যুদ্ধ-বিধ্বস্ত দেশটিকে যখন এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলেন ঠিক সে সময় সেই আরেক মীরজাফর মোশতাক এবং জিয়ার চক্রান্তে তাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। এর মাধ্যমে বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা ব্যাহত হয়ে গেল।
মঙ্গলবার জাতীয় সংসদে দেয়া এক বক্তব্যে এ কথা বলেন তিনি। এ সময় সংসদের সভাপতিত্বে ছিলেন স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে বলেন, আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠার পরই ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে সব ধরনের আন্দোলনে কাজ করে গেছে। ১৭৫৭ সালের ২৩ জুন পলাশীর আম্রকাননে সিরাজউদ্দৌলা ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির কাছে যুদ্ধে হেরে যান। সেখানে মীরজাফর আলী খান বেঈমানি করেছিল। তার ফলে কিন্তু এই পতন ঘটে। অর্থাৎ তখন সিরাজউদ্দৌলা ছিলেন বাংলা উড়িষ্যাসহ এই অঞ্চলের শাসক। সেই স্বাধীনতার সূর্য অস্তমিত হয়েছিল পলাশীর যুদ্ধে আম্রকাননে।
তিনি বলেন, আর ২৩ জুন প্রতিষ্ঠা লাভ করে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। সেই আওয়ামী লীগ আবার সেই সূর্য উদয় করে। আওয়ামী লীগের সংগঠন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে বিজয় অর্জন করে।
তিনি বলেন, আমি জাতির পিতার প্রতি সম্মান জানিয়ে এটুকু বলব- তিনি আজীবন মানুষের জন্য সংগ্রাম করে গেছেন। জনগণের জন্য সংগ্রাম করে গেছেন। তিনি তার সংগ্রামের পথে অনেক বাধা-বিঘœ অতিক্রম করেছেন। কিন্তু তিনি ১৯৭১ সালের ১৫ মার্চ যে বক্তব্য দিয়েছিলেন তা হলো- ‘জীবনের বিনিময়ে আমরা আমাদের ভবিষ্যৎ বংশধরদের স্বাধীন-মুক্ত মানুষ হিসেবে স্বাধীনভাবে আর আত্মমর্যাদা সম্পন্নভাবে বাস করার নিশ্চয়তা দিয়ে যেতে চাই।’ তিনি ভাষা আন্দোলন শুরু করেছিলেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে আমরা ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর স্বাধীনতা পাই।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠার জন্মলগ্ন থেকেই মানবতার সেবা করে যাচ্ছে। এদেশের জনগণের সেবা করে যাচ্ছে। এদেশের শোষিত-বঞ্চিত মানুষ, এদেশের কৃষক, শ্রমিক, তাঁতী, কামার-কুমারসহ অগণিত মানুষের কথা বলেছে এবং তাদের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য আন্দোলন করেছে। এই সংগ্রামের পথ বেয়ে আওয়ামী লীগের কত নেতাকর্মী জীবন দিয়েছেন, কত মানুষ আক্রান্ত হয়েছে, সেই সব মানুষের ত্যাগ-তিতিক্ষার জন্যই আমরা স্বাধীনতা অর্জন করেছি। পাকিস্তানি শাসকরা আমাদের ভাষা অধিকার কাড়তে চেয়েছিল। রক্ত দিয়ে আমাদের অধিকার অর্জন করতে হয়েছে। এরপর একের পর এক আঘাত এসেছে। যখনই বাংলাদেশিরা ক্ষমতায় গেছে তখনই আঘাত এসেছে। বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণ ইউনেস্কো কর্তৃক প্রামাণ্য দলিল হিসেবে স্থান করে নিয়েছে।
আওয়ামী লীগের এই ত্যাগ-তিতিক্ষার মধ্য দিয়ে যে অর্জন সেটা হচ্ছে বাংলাদেশের স্বাধীনতা। জাতি স্বাধীন হিসেবে মর্যাদা পেয়েছে। এটাই হচ্ছে সবচেয়ে বড় পাওয়া। কিন্তু আমাদের দুর্ভাগ্য জাতির পিতা রাষ্ট্র পরিচালনার যখন দায়িত্ব পেলেন, যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশটিকে যখন এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলেন ঠিক সেসময় সেই আরেক মীরজাফর মোশতাক এবং জিয়ার চক্রান্তে তাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। এর মাধ্যমে বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা ব্যাহত হয়ে গেল।
শেখ হাসিনা বলেন, কিন্তু আমরা যদি একটু পর্যালোচনা করি তাহলে দেখব- একমাত্র আওয়ামী লীগ যখন ক্ষমতায় এসেছে তখনই বাঙালি কিছু পেয়েছে। তখনই বাংলাদেশ এগিয়ে গেছে। কিন্তু তারপরও আমরা দেখেছি সবসময় এই বাঙালিকে কীভাবে পেছনে টেনে রাখবে সেই প্রচেষ্টাই করা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী পালন করার জন্য দীর্ঘ পরিকল্পনা করেছিলাম। কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয় আমরা সেটা করতে পারিনি। আজ আমাদের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী সীমিতভাবে উদযাপন করছি। কারণ লোক সমাগম হোক এ ধরনের কর্মসূচি আমরা বাতিল করেছি জনগণের কথা চিন্তা করে। জনগণের কল্যাণের কথা চিন্তা করে। কারণ আমাদের কাছে জনগণের কল্যাণই হচ্ছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।
তিনি বলেন, এই করোনাভাইরাস শুধু বাংলাদেশে নয়, সারাবিশ্বেই একটা সমস্যা। কাজেই এটা থেকে রক্ষার জন্য, মানুষের চিকিৎসার ব্যবস্থা করা বা যাতে এই ভাইরাসে আক্রান্ত না হয় সেদিকে দৃষ্টি রেখেই আমরা মুজিববর্ষ উদযাপনের সব কর্মসূচি স্থগিত করেছি। আজও আমাদের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী বিশেষভাবে পালন করার কথা ছিল কিন্তু দুর্ভাগ্য আমরা এটা পালন করতে পারলাম না।
তিনি বলেন, ২৩ জুন বাংলার যে স্বাধীনতার সূর্য অস্তমিত হয়েছিল সেই আম্রকাননে কিন্তু প্রথম স্বাধীন রাষ্ট্রের সরকার গঠিত হয়। জাতির পিতা ছয়-দাফা দিলেন। তাকে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় জড়ানো হলো। বাংলাদেশের মানুষ আন্দোলন করল। সত্তরের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেল। কিন্তু পাকিস্তানিরা বাংলাদেশিরা ক্ষমতায় আসুক এটা চায়নি। কিন্তু বঙ্গবন্ধু জানতেন তিনি নির্বাচনের মাধ্যমে চেয়েছিলেন এদেশের মানুষের কথা বলার অধিকার। ভোটের মাধ্যমে সেটি নির্ধারণ করতে চেয়েছিলেন। আমরা তার স্বপ্নকে বাস্তবায়নের লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছি।


বিজ্ঞাপন