মানছে না স্বাস্থ্যবিধি

এইমাত্র জাতীয় জীবন-যাপন সারাদেশ স্বাস্থ্য

আক্রান্ত হবে ১৩ কোটি মানুষ!

দেশে মারা গেছেন ৪০ জন

 

নিজস্ব প্রতিবেদক : করোনাভাইরাস বা কোভিড-১৯ নিয়ে দেশের মানুষের মধ্যে ব্যাপক অসচেতনতা দেখা যাচ্ছে। মানুষ স্বাস্থ্যবিধি মানছে না। মাস্ক পকেটে নিয়ে ঘুরছে। এমন পরিস্থিতি চলতে থাকলে ভ্যাকসিন আসার আগেই দেশের ৮০ ভাগ বা প্রায় ১৩ কোটি মানুষ করোনায় আক্রান্ত হয়ে যাবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন বিশিষ্ট ভাইরোলজিস্ট অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম। তিনি বলেন, মানুষ যেভাবে চলাফেরা করছে, তাতে ভ্যাকসিন আসার আগেই হয়তো ৮০ ভাগ মানুষ করোনায় আক্রান্ত হয়ে যাবে। এখন তো দৈনিক নমুনা পরীক্ষায় ২২-২৩ শতাংশ মানুষের করোনা পজিটিভ পাওয়া যাচ্ছে। এর অর্থ হলো পরীক্ষা না হওয়া অনেক সংক্রমিত মানুষ সমাজে ঘুরে বেড়াচ্ছে। নিজের অজান্তেই রোগ ছড়াচ্ছে। এ ছাড়া এখন তো অনেক আক্রান্তেরই উপসর্গ প্রকাশ পাচ্ছে না।
স্বাস্থ্যবিধি মানায় মানুষের অসচেতনতা বিষয়টি উল্লেখ করে ডা. নজরুল ইসলাম বলেন, আমাদের যত টেস্ট হওয়ার দরকার, সেটা হচ্ছে না। সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে স্বাস্থ্যবিধি মানার বিষয়টিও নিশ্চিত করতে পারছি না। দুই মাস আগেও যত মানুষ মাস্ক পরে বের হতেন, এখন সেটাও দেখছি না। অনেকে মাস্ক নিয়ে ঘুরলেও তা থুঁতনিতে লাগিয়ে রাখছেন। এ নিয়ে বলতে গেলে উল্টো প্রশ্ন করছেন।
স্বাস্থ্যবিধি মানার বিষয়টি আউনশৃঙ্খলা বাহিনীকে নিয়ে নিশ্চিত করার পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, সচেতনতামূলক প্রচারণার পাশাপাশি স্বাস্থ্যবিধি মানার বিষয়টা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে দিয়ে নিশ্চিত করতে হবে। কিছু এলাকায় লকডাউন দেওয়া হয়েছে, বেশিরভাগ এলাকাতেই নেই। লকডাউনের উদ্দেশ্য মানুষের গতিবিধি নিয়ন্ত্রণ করা, মাস্ক পরাসহ সব স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করা।
এদিকে দেশে নতুন করে ৩ হাজার ৮৬৮ জন করোনাভাইরাস আক্রান্ত ব্যক্তি শনাক্ত হয়েছেন। আর গত ২৪ ঘণ্টায় কোভিড-১৯ আক্রান্ত হয়ে বাংলাদেশে মারা গেছেন ৪০ জন। প্রতিদিনের মতো শুক্রবার স্বাস্থ্য বুলেটিনে এ তথ্য জানান স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক নাসিমা সুলতানা।
এ নিয়ে বাংলাদেশে কোভিড-১৯ আক্রান্ত হয়ে মারা গেলেন ১ হাজার ৬৬১ জন।
আর বাংলাদেশে মোট শনাক্ত হওয়া করোনাভাইরাস আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা দাঁড়ালো ১ লাখ ৩০ হাজার ৪৭৪ জনে।
নাসিমা সুলতানা জানান গত ২৪ ঘণ্টায় ১৮ হাজার ৪৯৮টি নমুনা পরীক্ষা করে এসব তথ্য জানা গেছে।
এখন পর্যন্ত বাংলাদেশে মোট পরীক্ষা হয়েছে ৬ লাখ ৯৬ হাজার ৯৪১টি নমুনা।
তিনি ৬৬টি ল্যাবে নমুনা পরীক্ষার তথ্য তুলে ধরে বলেন, করোনাভাইরাস শনাক্তে গত ২৪ ঘণ্টায় আরও ১৮ হাজার ২৭৫টি নমুনা সংগ্রহ করা হয়। পরীক্ষা করা হয় ১৮ হাজার ৪৯৮টি। এ নিয়ে দেশে মোট নমুনা পরীক্ষা করা হলো ছয় লাখ ৯৬হাজার ৯৪১টি। নতুন নমুনা পরীক্ষায় করোনার সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে আরও ৩ হাজার ৮৬৮ জনের মধ্যে। শনাক্তের হার ২০ দশমিক ৯১ শতাংশ। ফলে শনাক্ত রোগীর সংখ্যা দাঁড়াল এক লাখ ৩০ হাজার ৪৭৪ জনে।
নতুন করে যে ৪০ জন মারা গেছেন তাদের মধ্যে পুরুষ ৩১ জন ও নারী ৯জন। এ নিয়ে কোভিড-১৯-এ আক্রান্ত হয়ে দেশে মোট মারা গেলেন ১ হাজার ৬৬১ জন। শনাক্ত বিবেচনায় মৃত্যু হার ১ দশমিক ২৭ শতাংশ।
গত ২৪ ঘণ্টায় সুস্থ হয়েছেন আরও ১ হাজার ৬৩৮ জন। সব মিলিয়ে মোট সুস্থ রোগীর সংখ্যা এখন ৫৩ হাজার ১৩৩জন। সুস্থতার হার ৪০ দশমিক ৭২শতাংশ।
গত ২৪ ঘণ্টায় মৃত্যুবরণকারী ৪০ জনের বয়স বিশ্লেষণে দেখা যায়- ১ থেকে ১০ বছরের ১ জন, ত্রিশোর্ধ্ব ৩ জন, চল্লিশোর্ধ্ব ৬ জন, পঞ্চাশোর্ধ্ব ১২ জন, ষাটোর্ধ্ব ১৪ জন, সত্তরোর্ধ্ব ৩ জন, আশি বছরের বেশি বয়সী ১ জন রয়েছেন।
তাদের মধ্যে ১৪ জন ঢাকা বিভাগের, ১২ জন চট্টগ্রাম বিভাগের, ৩ জন সিলেট বিভাগের, ৪ জন খুলনা বিভাগের, বরিশাল বিভাগের ৪ জন ও রংপুরে বিভাগের ৩ জন রয়েছেন।
যে ৪০ জন মারা গেছেন তাদের মধ্যে ৩১ জন হাসপাতালে এবং ৯ জনের মৃত্যু হয়েছে বাসায়।
গত বৃহস্পতিবার ব্রিফিংয়ে নতুন করে ৩৯ জনের মৃত্যুর কথা জানানো হয়েছিল। এছাড়া ৬৬টি ল্যাবে নমুনা পরীক্ষার তথ্য তুলে ধরে বলা হয়, করোনাভাইরাস শনাক্তে গত ২৪ ঘণ্টায় আরও ১৭ হাজার ৫৮৬টি নমুনা সংগ্রহ করা হয়। পরীক্ষা করা হয় ১৭ হাজার ৯৯৯টি। নতুন নমুনা পরীক্ষায় করোনার সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে আরও তিন হাজার ৯৪৬ জনের মধ্যে। শনাক্তের হার ২১ দশমিক ৯২ শতাংশ।
বাংলাদেশে গত ৮ মার্চ প্রথম করোনা ভাইরাসের রোগী শনাক্ত হলেও প্রথম মৃত্যুর খবর আসে ১৮ মার্চ। দিন দিন করোনা রোগী শনাক্ত ও মৃতের সংখ্যা বাড়ায় নড়েচড়ে বসে সরকার। ভাইরাসটি যেন ছড়িয়ে পড়তে না পারে সেজন্য ২৬ মার্চ থেকে বন্ধ ঘোষণা করা হয় সব সরকারি-বেসরকারি অফিস। কয়েক দফা বাড়িয়ে এ ছুটি ৩০ মে পর্যন্ত করা হয়। ছুটি শেষে করোনার বর্তমান পরিস্থিতির মধ্যেই ৩১ মে থেকে দেশের সরকারি-বেসরকারি অফিস খুলে দেয়া হয়। তবে বন্ধ রাখা হয়েছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান।
এদিকে করোনাভাইরাস বা কোভিড-১৯ এ যুক্তরাষ্ট্রে একদিনে আক্রান্তের সব রেকর্ড ভেঙে গেছে। সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় দেশটিতে আক্রান্ত হয়েছেন ৪০ হাজার ৫০০ জন। করোনা মহামারি শুরু হওয়ার পর থেকে দেশটিতে এটি এক দিনে সর্বোচ্চ শনাক্তের সংখ্যা। এদিন মৃত্যু হয়েছে ২ হাজার ৪৩০ জনের।
যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদমাধ্যম সিএনএন এর খবরে বলা হয়েছে, চলতি সপ্তাহে দেশটির গুরুত্বপূর্ণ শহর টেক্সাস, আলাবামা, অ্যারিজোনা, ক্যালিফোর্নিয়া, ফ্লোরিডা, আইডাহো, মিসিসিপি, মিসৌরি, নেভাডা, ওকলাহোমা, দক্ষিণ ক্যালিফোর্নিয়া ও ওয়াইমিং অঙ্গরাজ্যে আবারও ভয়াবহভাবে করোনা শনাক্ত শুরু হয়েছে।
প্রকাশিত তথ্যে দেখা যাচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্রে এখন পর্যন্ত ২৫ লাখেরও বেশি মানুষের করোনা শনাক্ত হয়েছে। সরকারি হিসেবে এর মধ্যে মৃত্যু হয়েছে প্রায় ১ লাখ ২৬ হাজার মানুষের। সেরে উঠেছেন সাড়ে ১০ লাখ ৫২ হাজার। করোনায় মৃত্যু ও শনাক্তের দিক থেকে যুক্তরাষ্ট্র সারা বিশ্বের মধ্যে শীর্ষে রয়েছে।


বিজ্ঞাপন