তুঘলকী কান্ডের বরপূত্র

অপরাধ শিক্ষাঙ্গন

কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরের এডি জহুরুল

 

বিশেষ প্রতিবেদক : একের পর এক সীমাহীন দুর্নীতি আর স্বেচ্ছাচারিতা গোটা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ভাবমূর্তিকে ধ্বংসের মুখে নিয়ে গেছেন মর্মে কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরের বহুল আলোচিত সহকারী পরিচালক জহুরুল ইসলামের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ পাওয়া গেছে।
একদিকে করোনা মহামারীতে যেখানে সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও অধিদপ্তরে এক ধরনের স্থবিরতা নেমে এসেছে সেখানে ৭২ ঘন্টার নোটিশে নীরিক্ষা সম্বলিত ৩১ প্রকার কাগজপত্র জমাদানের নোটিশ দিয়ে রাত ১১টার মতো অস্বাভাবিক সময়ে সংশোধিত এমপিও’ ভূক্ত কারিগরি এবং মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠানের তালিকা প্রকাশ করা হয়। যা আলোচ্য জহুরুল ইসলামের জন্য সর্বকালের সেরা তুঘলকিকান্ডের রেকর্ড বলেও অনেকে বলছেন।
উল্লেখ্য, ৩০এপ্রিল বৃহস্পতিবার রাত প্রায় ১১টায় সংশোধিত এমপিও’ ভূক্ত কারিগরি এবং মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠানের তালিকা প্রকাশ করা হয়। এবং কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক জহুরুল ইসলাম স্বাক্ষরিত পত্রে ৩১ প্রকারের কাগজসহ জেলা শিক্ষা অফিসারের মাধ্যমে কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরে হার্ড কপি এবং পেনড্রাইভে সফট কপি রোববারে (৩ মে) জমা দিতে বলা হয়। বৃহস্পতিবার রাতে তালিকা প্রকাশ, শুক্রবার- শনিবার ছুটি তারপর লকডাউনের মধ্যে ৩১ প্রকার কাগজ দিয়ে কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরে কাগজ জমা দেওয়ার নির্দেশ দিয়ে একটি অকল্পনীয় এবং অবাস্তবপত্র ইস্যু করা হয়, যা আদৌ বাস্তবায়ন সম্ভব হয়নি। এতে শিক্ষা মন্ত্রালয়ের ভাবমূর্তী নষ্ট হয়েছে। ৩১ প্রকার কাগজের তালিকার মধ্যে এক প্রকার হচ্ছে শিক্ষাগত যোগ্যতার সকল সনদ সংশ্লিষ্ট বোর্ড বা বিশ্ববিদ্যালয়ের মাধ্যমে যাচাইকৃত প্রমানসহ জমা দেওয়া লাগবে। বোর্ড সমূহ দেড় মাসে সম্ভব হলেও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় অদ্যবধি খোলেনি বা যাচাই করা সম্ভব হচ্ছে না। প্রশ্ন উঠেছে একটা মানুষ কতোটা দূর্নীতিবাজ হলে পরে এমনটি করতে পারে যা দাপুটে জহুরুল ইসলাম তার অদৃশ্য খুঁটির জোরে করতে সক্ষম হয়েছেন? কী সেই রহস্য?
অন্যদিকে কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরের এমপিও’ সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ন যে কোন সিদ্ধান্ত গ্রহনে ভারপ্রাপ্ত মহাপরিচালক সহকারী পরিচালক- ৮ মো. জহুরুল ইসলাম কে সর্বোচ্চ অগ্রাধীকার দেন। ডিডি বা ডাইরেক্টরের কোন মূল্যায়ন করা হয় না। সহকারী পরিচালক-৮ মো. জহুরুল ইসলামের বিরুদ্ধে দূর্নীতি, সেচ্ছাচারিতা, সরকার বিরোধী কথাবার্তা তথ্য প্রমানসহ অভিযোগ ও পত্রিকায় নিউজ প্রকাশ করা হলেও ৩ মাসে ও এর কোন সমাধান হয়নি। তবে অনেক বিলম্ব হলেও তদন্ত প্রতিবেদন চেয়ে ৮জুন ২০২০ খ্রিস্টাব্দে সিনিয়র সহকারী সচিব মোহাম্মদ কাজী ফয়সাল স্বক্ষরিত একটি পত্র মহাপরিচালক বরাবর ইস্যু করা হয়। যার নথি নং ৫৭.০০.০০০০.০৫৩.১৯.০০৪.১৮.১১০। সংশ্লিষ্ট কোনঠাঁসা হয়ে পড়া অনেকেই মুখ টিপে বলছেন কাজের কাজ এ পর্যন্তই। জহুরুল সব বন্ধ করে দিয়েছে। এমনটাই জানিয়েছে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক সূত্র।
কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তর প্রযুক্তির ব্যবহার সবার উপরে থাকবে এমনটি দেশবাসীর প্রত্যাশা। কিন্তু মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর, মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তর এগুলোর ধারে কাছেও যেতে পারেনি এই অধিদপ্তর। কিন্তু কেনো? গোটা অধিদপ্তরকে ডুবাতে এক জহুরুলের সাথে আর কারা রয়েছেন? এমনি প্রশ্নঘুরছে সর্বত্র।
একধিক সূত্র জানিয়েছে, বিভিন্ন বোর্ডে ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সনদ যাঁচায় করতে গিয়ে কয়েকজন শিক্ষক করোনা পজেটিভ হয়েছেন। এই মর্মে মাগুরার একটি কারিগরি এমপিও ভূক্ত প্রতিষ্ঠান সাংবাদিক সম্মেলন করে বিষয়টি নজরে নিয়ে এসেছেন। একই সাথে উঠে এসেছে বহুল আলোচিত জহিরুলের নাম। একের পর এক দূর্নীতি আর সীমাহীন স্বেচ্ছাচারিতার বিষয়টি এখন ওপেন সিক্রেট।
জানা গেছে, গেলো মার্চ মাসের শেষের দিকে মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী মহোদয়ে দূর্নীতি ও সেচ্ছাচারি, সরকারের ভাবমূর্তী নষ্টকারী কারিগরি শিক্ষা প্রসারের প্রতিবন্ধক সহকারী পরিচালক মো.জহুরুল ইসলাম এর স্থলে একটি টিএসসি এর ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষকে মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী মহোদয় পদায়নের জন্য ব্যবস্থা নিতে বললে এই প্রস্তাবটি নথিতে দিয়ে উঠানো হয়, কিন্তু এটি জহুরুলের এলাকার ভাই সচিব মহোদয়ের দপ্তরের একজন কর্মকর্তা নথিটি দীর্ঘ সাড়ে তিন মাস গোপনে লুকিয়ে রাখেন।
এদিকে তার সহযোগী হিসেবে বেশ কয়েকজনের নাম উঠে এসেছে। তন্মধ্যে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে ফোনে যোগাযোগ করলে সংযুক্ত কর্মকর্তা (এমপিও) কামরুজ্জামান বিনয়ের সাথে জানান তিনি এসব বিষয়ে কিছুই জানেন না। তিনি বলেন, আল্লাহর দয়ায় এসব থেকে দূরে রয়েছি। অন্যদিকে রহস্যজনকভাবে সংযুক্ত কর্মকর্তা (এমপিও) বিশ্বজিৎ দে এর ০১৯৯২০০৬১৯৫ নম্বরে, সংযুক্ত কর্মকর্তা (এমপিও) মুহাম্মদ সাইফুল হক খানকে ০১৯৯২০০৬১৯৬ নম্বরে এবং সংযুক্ত কর্মকর্তা (ভোকেশনাল) শিশির কুমার ধর এর ০২৮১৮১২৩০ নম্বরে বারবার ফোন করেও তাদের সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
উল্লেখ্য যে বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ড হতে কয়েকজন প্রেষণে থাকা কর্মকর্তাকে দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগে প্রত্যাহারের জন্য কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের সচিব মহোদয়ের নিকট পত্র প্রেরণ করা হলেও এমন ভাবে নথি গোপন রেখে বিলম্ব করার অভিযোগ রয়েছে। মন্ত্রী মহোদয়ের দপ্তর থেকে সহকারী পরিচালক-৮ মো.জহুরুল ইসলাম এর বদলির বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে তড়িঘড়ি করে নথিটি আলোতে বেরিয়ে আসে। এরপর বিষয়টি বুঝতে পেরে ই-নথিতে বিষয়টি উপস্থাপন করা হয়। অভিজ্ঞ মহলের প্রশ্ন মন্ত্রী মহোদয়ের আদেশ বা সুপারিশ বাস্তবায়নে একজন এডি বা সিনিয়র ইন্সট্রাকটরকে বদলি করতে তিন মাস সময় ক্ষেপন করলে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে কাজের গতি বা সরকারী সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে অনিহার বিষয়টি প্রশ্নবিদ্ধ থেকে যায়।
প্রশ্ন উঠেছে কে এই জহিরুল? খোদ শিক্ষামন্ত্রীও তার কিছু করতে পারবেন না এমন দম্ভোক্তি করার আস্পর্ধা তিনি পেলেন কোথায়? কী তার খুঁটির জোর? ক্ষমতাসীন স্বাধীনতার স্বপক্ষের শক্তি সরকার তথা শিক্ষামন্ত্রণালয় নিয়ে যাচ্ছে তাই করে বেড়ানোর লাইসেন্স তিনি পেলেন কোথায় কে তাকে দিয়েছে এ লাইসেন্স? তিনি কি আইনের উর্ধ্বে? সংশ্লিষ্ট উর্দ্ধতন মহল কর্তৃক সামান্য অনুুসন্ধানেই থলের বেড়াল বেড়িয়ে আসবে। শিক্ষামন্ত্রণালয়ের ভাবমূর্তি পূনরোদ্ধার ও ভবিষ্যতের একটি ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণে জহিরুলের সামগ্রিক অপরাধের দৃষ্টান্ত মূলক বিচার সময়ের দাবী এমনটাই বলছেন সংশ্লিষ্ট ওয়াকিবহাল মহল।


বিজ্ঞাপন