অনিয়মের আখড়া

অপরাধ আইন ও আদালত রাজধানী স্বাস্থ্য

রিজেন্টের দুই হাসপাতাল সিলগালা

 

নিজস্ব প্রতিবেদক : চিকিৎসা সেবা ও ব্যয় সম্পর্কে কোনো ধারণাই দেয়া হয় না রোগীর স্বজনদের। নমুনা পরীক্ষা ছাড়াই দেয়া হয় করোনার রিপোর্ট, চিকিৎসা দিতে করা হয় অবহেলা। অথচ আদায় করা হয় লাখ লাখ টাকার অযাচিত বিল। এ যেন অনিয়মের এক আখড়া মিরপুরের রিজেন্ট হাসপাতাল। এই হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়ে সাধারণ এক রোগীর মাত্র ১৪ দিনে বিল এসেছে প্রায় সাড়ে ৩ লাখ টাকা।
অনুসন্ধানে জানা যায়, অক্সিমিটারে রোগীর শরীরে অক্সিজেনের পরিমাণ চেক করেন স্বজনরাই। তারপরও এজন্য ৭২ হাজার টাকা বিল ধরে হাসপাতাল। ডাক্তারের ফি ধরা হয় ৪৫ হাজার টাকা। এভাবে মাত্র ১৪ দিনে ৩ লাখ ৪২ হাজার টাকার ভুতুড়ে বিল ধরিয়ে দেয়া হয় করোনা রোগীর স্বজনকে।
ভুক্তভোগী একজন জানান, কোন সার্ভিসে কত টাকা তা জিজ্ঞেস করার পরও তাকে জানানো হয়নি। শুধু বলা হয়েছে ভর্তি হোন, টাকা নিয়ে ভাবতে হবে না। আর এখন প্রায় সাড়ে ৩ লাখ টাকার বিল ধরিয়ে দেয়া হয়েছে তাকে।
চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের সঙ্গে প্রতারণার এমন প্রমাণ মিলেছে মিরপুরের রিজেন্ট হাসপাতালের বিরুদ্ধে। কম খরচে চিকিৎসা দেয়ার কথা বলা হলে পরে রোগীর স্বজনদের ধরিয়ে দেয়া হয় অস্বাভাবিক বিল।
ওই হাসপাতালে চিকিৎসা নেয়া আরেকজন বলেন, চিকিৎসা ব্যবস্থা সিন্ডিকেট হয়ে গেছে। আমার গলার চেইন, কানের গহনা বিক্রি করে এ পর্যন্ত এসেছি। এখান থেকে দেয়া নির্দেশনাপত্রে একেকটি ওষুধের দাম ১৩শ’ ১৪শ’ টাকা। প্রতিদিন শুধু ৭ হাজার টাকার ওষুধই লাগে। তারপর আমাকে বিল ধরিয়ে দিয়েছে ৪৮ হাজার টাকার বিল।
চিকিৎসা না পেয়ে ভুক্তভোগী রোগীর অনেক স্বজনকে ছুটতে হয় অন্য হাসপাতালে।
চিকিৎসা নিতে রোগীর স্বজনরা জানান, এই হাসপাতাল নিয়ে অনেক কথা শুনেছি। এই অবস্থায় আমাদের রোগীকে অন্য হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করছি। এখানে চিকিৎসার সুযোগ সুবিধা ভালো না, পরিবেশও ভালো না। এ কারণেই অন্য হাসপাতালে নিচ্ছি ভালো চিকিৎসার জন্য।
এছাড়া নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষা ছাড়াই করোনা টেস্টের রেজাল্ট দেয়ার প্রমাণও পাওয়া গেছে হাসপাতালটির বিরুদ্ধে। গত মে থেকে হাসপাতালটিতে শুরু হয় কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা।
রিজেন্টের দুই হাসপাতাল সিলগালা : রাজধানীর উত্তরায় রিজেন্টের প্রধান কার্যালয়সহ রোগীদের স্থানান্তরের পর সিলগালা করা হয়েছে উত্তরা ও মিরপুরের হাসপাতাল।
র‌্যাব সদর দফতরের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সারোয়ার আলম এ তথ্য নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, ‘করোনা উপসর্গ নিয়ে হাসপাতালে আসা এবং বাড়িতে থাকা রোগীদের করোনার নমুনা সংগ্রহ করে ভুয়া রিপোর্ট দিত রিজেন্ট হাসপাতাল। এছাড়া সরকার থেকে বিনামূল্যে কোভিড-১৯ টেস্ট করার অনুমতি নিয়ে রিপোর্টপ্রতি সাড়ে তিন থেকে চার হাজার টাকা করে আদায় করত তারা। এভাবে জনগণের সাথে প্রতারণা করে তিন কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে রিজেন্ট। এসব অপরাধ ও টাকার নিয়ন্ত্রণ চেয়ারম্যান সাহেব (রিজেন্ট গ্রুপের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শাহেদ) নিজে করতেন অফিসে বসে।’
সারোয়ার আলম বলেন, ‘রিজেন্টের প্রধান কার্যালয় থেকেই এই অপকর্মগুলো হতো বিধায় এটি সিলগালা করা হয়েছে। পাশাপাশি রোগীদের স্থানান্তর করে হাসপাতাল দুটিও সিলগালা করা হয়েছে।’
এর আগে সোমবার রাতেই মো. মোহাম্মদ সাহেদের মালিকানাধীন হাসপাতাল থেকে অননুমোদিত র‌্যাপিড টেস্টিং কিট ও একটি গাড়ি জব্দ করা হয়।
এ প্রসঙ্গে সারোয়ার আলম বলেন, ওই গাড়িতে ফ্ল্যাগস্ট্যান্ড ও স্বাস্থ্য অধিদফতরের স্টিকার লাগানো ছিল। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর লোকজনের চোখে ধুলো দিতেই ফ্ল্যাগস্ট্যান্ড ও স্বাস্থ্য অধিদফতরের স্টিকার ব্যবহার করা হতো।
এর আগে সোমবার (৬ জুলাই) বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগে উত্তরার রিজেন্ট হাসপাতালে অভিযান পরিচালনা করে র‌্যাব। এতে নেতৃত্ব দেন র‌্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সারোয়ার আলম। অভিযানে রিজেন্টের আট কর্মকর্তাকে আটক করা হয়।


বিজ্ঞাপন