বাতাসের ছড়ানোর প্রমাণ

এইমাত্র জাতীয় জীবন-যাপন সারাদেশ স্বাস্থ্য

করোনায় প্রাণ গেলো আরও ৪৬ জনের

 

নিজস্ব প্রতিবেদক : বাতাসের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ছে করোনাভাইরাস। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা স্বীকার করেছে যে, বাতাসে ভেসে থাকা ক্ষুদ্র কণার মাধ্যমে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার প্রমাণ পাওয়া গেছে। খবর বিবিসি, রয়টার্স। লোকজনের মধ্যে কীভাবে এই ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ছে সে বিষয়ে সাম্প্রতিক সময়ে একদল বিজ্ঞানী বিশ্ব সংস্থাকে তাদের করোনার নির্দেশনা হালনাগাদ করার আহ্বান জানায়।
এরপরই বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা থেকে জানানো হয়েছে যে, বাতাসের মাধ্যমে এ ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ছে এমন প্রমাণ পাওয়া গেছে।
বাতাস চলাচলের যথেষ্ট ব্যবস্থা নেই এমন স্থানে বাতাসের মাধ্যমে করোনাভাইরাস সংক্রমণের বিষয়টি উড়িয়ে দেয়া যায় না বলে উল্লেখ করেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এক কর্মকর্তা।
বিষয়টি পুরোপুরি নিশ্চিত হওয়া গেলে আবদ্ধ জায়গায় স্বাস্থ্য সংক্রান্ত নিয়মে পরিবর্তন আনার প্রয়োজন হতে পারে।
বিশ্বের দুশর বেশি বিজ্ঞানী এক খোলা চিঠিতে অভিযোগ করেছেন যে, করোনাভাইরাস বাতাসের মাধ্যমে সংক্রমিত হওয়ার বিষয়টিকে ছোট করে দেখাচ্ছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।
এখন পর্যন্ত বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলে আসছে যে, হাঁচি এবং কাশির মাধ্যমে যেসব ক্ষুদ্র জলীয় কণা বের হয়, সেগুলোর মাধ্যমে করোনাভাইরাস ছড়ায়।
কিন্তু বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এই অবস্থানের সাথে একমত হতে পারছেন না ৩২টি দেশের ২৩৯ জন বিজ্ঞানী।
তারা বলছেন, মানুষের কথা বলা এবং শ্বাসপ্রশ্বাস নেয়ার পর ক্ষুদ্র কণা কয়েক ঘণ্টা বাতাসে ভেসে থাকে। এর মাধ্যমে করোনাভাইরাস সংক্রমিত হতে পারে বলে তারা উল্লেখ করেন।
যুক্তরাষ্ট্রের কলোরাডো বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়নবিদ জোসে জিমেনেজ বলেন, আমরা চাই করোনাভাইরাস বাতাসে ছড়ানোর বিষয়টিকে তারা (বিশ্ব সংস্থা) স্বীকার করে নেবে।
তিনি বলেন, বিজ্ঞানীরা যে খোলা চিঠি দিয়েছেন তা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ওপর কোনো আক্রমণ নয়। এটা একটা বৈজ্ঞানিক বিতর্ক। তথ্য-প্রমাণ নিয়ে তাদের সাথে অনেকবার আলোচনার পরও তারা এটা প্রত্যাখ্যান করেছে। সেজন্য আমরা মনে করেছি যে, বিষয়টি জনসম্মুখে প্রকাশ করা উচিত।
এদিকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার কর্মকর্তারা সতর্ক করে বলেছেন, বাতাসের মাধ্যমে করোনাভাইরাস ছড়ানোর তথ্য-প্রমাণ এখনো প্রাথমিক পর্যায়ে আছে এবং এজন্য আরো পর্যালোচনা দরকার।
এ দিকে দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় আরও ৪৬ জনের প্রাণ কেড়ে নিয়েছে করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯)। এ নিয়ে ভাইরাসটিতে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল ২ হাজার ১৯৭ জনে। গত ২৪ ঘণ্টায় আক্রান্ত হিসেবে শনাক্ত হয়েছেন আরও ৩ হাজার ৪৮৯ জন। এ নিয়ে মোট শনাক্ত রোগীর সংখ্যা দাঁড়াল এক লাখ ৭২ হাজার ১৩৪ জনে। করোনাভাইরাস বিষয়ে বুধবার দুপুরে স্বাস্থ্য অধিদফতরের নিয়মিত হেলথ বুলেটিনে এ তথ্য জানানো হয়। অনলাইনে বুলেটিন উপস্থাপন করেন অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা।
অধ্যাপক নাসিমা সুলতানা জানান, করোনাভাইরাস শনাক্তে গত ২৪ ঘণ্টায় আরও ১৫ হাজার ৮৮৩টি নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। ১৫ হাজার ৬৭২টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়। এ নিয়ে দেশে মোট নমুনা পরীক্ষা করা হলো আট লাখ ৮৯ হাজার ১৫২টি। নতুন নমুনা পরীক্ষায় করোনা শনাক্ত হয়েছে আরও তিন হাজার ৪৮৯ জনের মধ্যে। ফলে শনাক্ত করোনা রোগীর সংখ্যা দাঁড়াল এক লাখ ৭২ হাজার ১৩৪ জনে। আক্রান্তদের মধ্যে মারা গেছেন আরও ৪৬ জন। এ নিয়ে মোট মৃত্যু হয়েছে ২ হাজার ১৯৭ জনের। তাদের মধ্যে পুরুষ এক হাজার ৭৪১ ও নারী ৪৫৬ জন। শতাংশের হিসাবে পুরুষ ৭৯ দশমিক ২৪ এবং নারী ২০ দশমিক ৭৬ শতাংশ।
মৃত ৪৬ জনের মধ্যে ২০ বছরের বেশি বয়সী দুজন, ত্রিশোর্ধ্ব দুজন, চল্লিশোর্ধ্ব একজন, পঞ্চাশোর্ধ্ব ১৫ জন, ষাটোর্ধ্ব ১৬ জন, সত্তরোর্ধ্ব ছয়জন, ৮০ বছরের বেশি বয়সী তিনজন এবং ৯০ বছরের বেশি বয়সী একজন।
মৃতদের মধ্যে ঢাকা বিভাগের ১২ জন, চট্টগ্রাম বিভাগের ১৪, রাজশাহী বিভাগের তিন, খুলনা বিভাগের ৯, রংপুর বিভাগের এক, সিলেট বিভাগের চার এবং বরিশাল বিভাগের তিনজন। এর মধ্যে ৩৮ জন মারা গেছেন হাসপাতালে বাকি আটজন বাসায়।
করোনাভাইরাসে মৃত্যুবরণকারীদের মধ্যে- ঢাকা বিভাগে ৫০ দশমিক ৮০ শতাংশ, চট্টগ্রামে ২৫ দশমিক ৯৯ শতাংশ, রাজশাহীতে ৫ দশমিক এক শতাংশ, খুলনায় ৪ দশমিক ৮২ শতাংশ, বরিশালে ৩ দশমিক ৬৯ শতাংশ, সিলেটে ৪ দশমিক ৩২ শতাংশ, রংপুরে ৩ শতাংশ এবং ময়মনসিংহ বিভাগে ২ দশমিক ৩৭ শতাংশ রয়েছেন।
গত ২৪ ঘণ্টায় সুস্থ হয়েছেন আরও ২ হাজার ৭৩৬ জন। এতে মোট সুস্থ রোগীর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল ৮০ হাজার ৮৩৮ জনে। গত ২৪ ঘণ্টায় যে ৪৬ জন মারা গেছেন, তাদের মধ্যে পুরুষ ৩৮ জন এবং নারী ৮ জন।
বুলেটিনে বলা হয়, গত ২৪ ঘণ্টায় নমুনা পরীক্ষার তুলনায় রোগী শনাক্তের হার ২২ দশমিক ২৬ শতাংশ। সবমিলিয়ে, নমুনা পরীক্ষার তুলনায় শনাক্তের হার ১৯ দশমিক ৩৬ শতাংশ। এখন পর্যন্ত রোগী শনাক্ত বিবেচনায় সুস্থতার হার ৪৭ দশমিক ৯৬ এবং মৃত্যুর হার এক দশমিক ২৮ শতাংশ।
গত ২৪ ঘণ্টায় আইসোলেশনে নেয়া হয়েছে আরও ৭৯২ জনকে। এ পর্যন্ত মোট আইসোলেশনে নেয়া হয়েছে ৩৩ হাজার ১৪৩ জনকে। গত ২৪ ঘণ্টায় আইসোলেশন থেকে ছাড় পেয়েছেন ৮০৯ জন এবং এ পর্যন্ত ছাড় পেয়েছেন ১৬ হাজার ২৮৭ জন।বর্তমানে আইসোলেশনে রয়েছেন ১৬ হাজার ৮৫৬ জন।
গত ২৪ ঘণ্টায় হোম ও প্রাতিষ্ঠানিক মিলিয়ে কোয়ারেন্টাইনে নেয়া হয়েছে ২ হাজার ৬৯১ জনকে, এ পর্যন্ত কোয়ারেন্টাইনে নেয়া হয়েছে তিন লাখ ৮৪ হাজার ২৯৯ জনকে। গত ২৪ ঘণ্টায় কোয়ারেন্টাইন থেকে ছাড় পেয়েছেন ৩ হাজার ১৩৪ জন। এ পর্যন্ত কোয়ারেন্টাইন থেকে মোট ছাড় পেয়েছেন ৩ লাখ ২১ হাজার ৩০১ জন। বর্তমানে হোম ও প্রাতিষ্ঠানিক মিলিয়ে কোয়ারেন্টাইনে রয়েছেন ৬২ হাজার ৯৯৮ জন।
মঙ্গলবার ৫৫ জনের প্রাণ কেড়ে নিয়েছিল করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯)। হিসেব অনুযায়ী মঙ্গলবার পর্যন্ত মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছিল দুই হাজার ১৫১ জনে। একইদিন আক্রান্ত হিসেবে শনাক্ত হয়েছিলেন আরও তিন হাজার ২৭ জন। মঙ্গলবার পর্যন্ত মোট শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ছিল এক লাখ ৬৮ হাজার ৬৪৫ জন।
বাংলাদেশে গত ৮ মার্চ প্রথম করোনা ভাইরাসের রোগী শনাক্ত হলেও প্রথম মৃত্যুর খবর আসে ১৮ মার্চ। দিন দিন করোনা রোগী শনাক্ত ও মৃতের সংখ্যা বাড়ায় নড়েচড়ে বসে সরকার। ভাইরাসটি যেন ছড়িয়ে পড়তে না পারে সেজন্য ২৬ মার্চ থেকে বন্ধ ঘোষণা করা হয় সব সরকারি-বেসরকারি অফিস। কয়েক দফা বাড়িয়ে এ ছুটি ৩০ মে পর্যন্ত করা হয়।
ছুটি শেষে করোনার বর্তমান পরিস্থিতির মধ্যেই ৩১ মে থেকে দেশের সরকারি-বেসরকারি অফিস খুলে দেয়া হয়। তবে বন্ধ রাখা হয়েছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান।
অন্যদিকে করোনা ভাইরাসে আক্রান্তদের সংখ্যা ও প্রাণহানির পরিসংখ্যান রাখা ওয়েবসাইট ওয়ার্ল্ডোমিটারে বুধবার (৭ জুলাই) প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত দেয়া তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাসে (কোভিড-১৯) আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ কোটি ১৯ লাখ ৬৫ হাজার ৬৬১ জন। এ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃতের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ৫ লাখ ৪৬ হাজার ৯৮৮ জন।


বিজ্ঞাপন