ভয়ংকর রূপ নিচ্ছে করোনা

আন্তর্জাতিক এইমাত্র জাতীয় জীবন-যাপন সারাদেশ স্বাস্থ্য

দেশে কমেছে আক্রান্ত-মৃত্যু

নিজস্ব প্রতিবেদক : করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বিশ্বজুড়েই আশঙ্কাজনক হারে বাড়তে শুরু করেছে। চলতি মাসের প্রথম ৮ দিনের মধ্যে ৪ দিনই শনাক্ত হয়েছেন ২ লাখের বেশি মানুষ। বাকি চার দিন ছিল ২ লাখের কিছু কম। এর আগের মাসে এই হার ছিলে দেড় লাখের কম।
তবে, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এই সময়টাতে আক্রান্তের হার আশঙ্কাজনক হারে বাড়বে বলে আগেই সতর্ক করেছিলো। বর্তমান সময়ে আক্রান্তের হার সবচেয়ে বেশি যুক্তরাষ্ট্রে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, পরিস্থিতির অবনতি ঘটছে দিনে দিনে। ছয় সপ্তাহে রোগী দ্বিগুণ হয়েছে।
করোনা মহামারির বৈশ্বিক তথ্য বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, ১ থেকে ৮ জুলাই পর্যন্ত সময়ে বিশ্বজুড়ে শনাক্ত হয়েছে প্রায় ১৬ লাখ রোগী। মারা গেছেন প্রায় ৩৮ হাজার। অর্থাৎ গড়ে দিনে প্রায় ২ লাখ রোগী শনাক্ত হয়েছেন, মৃত্যু হয়েছে ৪ হাজার ৭০০ জনের বেশি মানুষের। অথচ গত জুনেও দৈনিক গড়ে দেড় লাখের কম রোগী শনাক্ত হয়েছে, মারা গেছেন সাড়ে ৪ হাজারের কিছু বেশি। ওই মাসে বিশ্বজুড়ে মোট শনাক্ত হয়েছে ৪৩ লাখ ২৬ হাজারের বেশি রোগী, মৃত্যু হয়েছে ১ লাখ ৩৫ হাজারের বেশি মানুষের।
করোনা মহামারির সার্বক্ষণিক হিসাব প্রকাশ করছে ওয়ার্ল্ডোমিটারস ডট ইনফো। এ ওয়েবসাইটের তথ্যমতে, শুক্রবার বাংলাদেশ সময় দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত বিশ্বজুড়ে শনাক্ত রোগীর সংখ্যা প্রায় ১ কোটি ২৪ লাখ। এর মধ্যে সুস্থ হয়ে উঠেছেন প্রায় ৭২ লাখ ২৫ হাজার মানুষ। মৃত্যু হয়েছে প্রায় ৫ লাখ ৫৮ হাজার মানুষের।
সংক্রমণ ও মৃত্যুতে যুক্তরাষ্ট্র এখনো শীর্ষ দেশ। গত জানুয়ারিতে যুক্তরাষ্ট্রে প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হয়। দেশটিতে তারপর থেকে যে মহামারি পরিস্থিতির অবনতি ঘটেছে, তার আর উন্নতির কোনো লক্ষণ নেই, বরং দিনে দিনে আরও অবনতি ঘটছে পরিস্থিতির। যুক্তরাষ্ট্রে শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ৩২ লাখ ছুঁই ছুঁই। মৃত্যু ১ লাখ ৩৫ হাজারের বেশি। গত বুধবার যুক্তরাষ্ট্রে ৬১ হাজারের বেশি রোগী শনাক্ত হয়েছে, যা দেশটিতে এক দিনে সর্বোচ্চ সংখ্যক রোগী শনাক্তের রেকর্ড। এ দিন যুক্তরাষ্ট্রে মারা গেছেন আরও ৮৯০ জন রোগী।
করোনার সংক্রমণে প্রথমে কেবল যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক অঙ্গরাজ্য হিমশিম খেয়েছে। সেই নিউইয়র্ক সামলে উঠলেও এখন যুক্তরাষ্ট্রজুড়েই সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়েছে। দেশটির অঙ্গরাজ্যগুলোর মধ্যে টেক্সাস, ক্যালিফোর্নিয়া আর ফ্লোরিডায় যেন সংক্রমণের বিস্ফোরণ ঘটেছে। পরিস্থিতি বেগতিক দেখে টেক্সাস কর্তৃপক্ষ আবারও লকডাউন করেছে। অন্য অঙ্গরাজ্যগুলোয়ও বিভিন্ন শহর কর্তৃপক্ষ আবারও লকডাউনের পথে হাঁটছে।
যুক্তরাষ্ট্রের যে অঙ্গরাজ্যগুলোয় করোনার সংক্রমণ দ্রুত ছড়াচ্ছে, সেগুলোর তালিকা করলে লুইজিয়ানা থাকবে নিচের দিকেই। তারপরও এখানকার গভর্নর জন বেল এডওয়ার্ডস বুধবার বলেছেন, ‘আমাদের অঙ্গরাজ্যজুড়ে মহামারি ছড়িয়ে পড়েছে। এখন আর এ রোগ এক বা দুই এলাকায় সীমাবদ্ধ নেই।’
সিএএন জানায়, ফ্লোরিডার অবস্থা এতটাই নাজুক যে সেখানকার হাসপাতালগুলোর নিবিড় পরিচর্যাকেন্দ্রগুলোর (আইসিইউ) ধারণক্ষমতা শূন্যের কোঠায় নেমে আসছে। বুধবার এখানকার ৪২টি হাসপাতাল জানিয়েছে, তাদের সব আইসিইউ শয্যা রোগীতে ভরা। নতুন করে আর আইসিইউতে রোগী রাখা সম্ভব নয়।
এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের মতো ভয়াবহ পরিস্থিতি লাতিন আমেরিকার দেশ ব্রাজিলেও। দেশটিতে ১৭ লাখের বেশি রোগী শনাক্ত হয়েছে। করোনায় মারা গেছেন ৬৮ হাজারের বেশি মানুষ। পেরু, চিলিসহ দক্ষিণ আমেরিকার অন্য দেশগুলোর পরিস্থিতিও দিনে দিনে আরও ভয়াবহ হয়ে উঠছে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিবেশী মেক্সিকোর অবস্থাও ততটা ভালো নয়।
সংক্রমণ ও মৃত্যুতে তৃতীয় শীর্ষ দেশ দক্ষিণ এশিয়ার ভারত। এ দেশেও সংক্রমণের বিস্ফোরণ ঘটেছে যেন। কয়েক দিন ধরে প্রতিদিনই ২০ হাজারের বেশি রোগী শনাক্ত হচ্ছে। দৈনিক মৃত্যুও ৫০০ জনের আশপাশে থাকছে। এর মধ্যে ৪ জুলাই মারা যান ৬১০ জন, যা এ পর্যন্ত দেশটিতে করোনায় এক দিনে সর্বোচ্চ মৃত্যুর ঘটনা। ভারতে ৭ লাখ ৮০ হাজারের বেশি রোগী শনাক্ত হয়েছে। মারা গেছেন ২১ হাজারের বেশি।
এ দিকে দেশে করোনাভাইরাসে (কোভিড-১৯) আক্রান্ত হয়ে গত ২৪ ঘণ্টায় আরও ৩৭ জন মারা গেছেন। এ নিয়ে ভাইরাসটিতে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল দুই হাজার ২৭৫ জনে। একই সময়ে আক্রান্ত হিসেবে শনাক্ত হয়েছেন আরও দুই হাজার ৯৪৯ জন। ফলে মোট শনাক্ত রোগীর সংখ্যা দাঁড়াল এক লাখ ৭৮ হাজার ৪৪৩ জনে।
করোনাভাইরাস বিষয়ে শুক্রবার দুপুরে স্বাস্থ্য অধিদফতরের নিয়মিত হেলথ বুলেটিনে এ তথ্য জানানো হয়। অনলাইনে বুলেটিন উপস্থাপন করেন অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা।
তিনি নতুন যুক্ত একটিসহ মোট ৭৭টি ল্যাবরেটরিতে নমুনা পরীক্ষার তথ্য তুলে ধরে জানান, করোনাভাইরাস শনাক্তে গত ২৪ ঘণ্টায় আরও ১৪ হাজার ৩৭৭টি নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। পরীক্ষা করা হয় ১৩ হাজার ৪৮৮টি নমুনা। এ নিয়ে দেশে মোট নমুনা পরীক্ষা করা হলো নয় লাখ ১৮ হাজার ২৭২টি। নতুন নমুনা পরীক্ষায় করোনা শনাক্ত হয়েছে আরও দুই হাজার ৯৪৯ জনের মধ্যে। ফলে শনাক্ত করোনা রোগীর সংখ্যা দাঁড়াল এক লাখ ৭৮ হাজার ৪৪৩ জনে। আক্রান্তদের মধ্যে মারা গেছেন আরও ৩৭ জন। এ নিয়ে মোট মৃত্যু হয়েছে দুই হাজার ২৭৫ জনের। গত ২৪ ঘণ্টায় সুস্থ হয়েছেন আরও এক হাজার ৮৬২ জন। এ নিয়ে মোট সুস্থ রোগীর সংখ্যা দাঁড়াল ৮৬ হাজার ৪০৬ জনে।
গত ২৪ ঘণ্টায় যে ৩৭ জন মারা গেছেন তাদের মধ্যে পুরুষ ২৯ এবং নারী আটজন। এদের মধ্যে ২০ বছরের বেশি বয়সী একজন, ত্রিশোর্ধ্ব একজন, চল্লিশোর্ধ্ব সাতজন, পঞ্চাশোর্ধ্ব নয়জন, ষাটোর্ধ্ব ১৫ জন ও সত্তরোর্ধ্ব চারজন রয়েছেন। ১২ জন ঢাকা বিভাগের, ১৭ জন চট্টগ্রাম বিভাগের, দুজন রাজশাহী বিভাগের, দুজন সিলেট বিভাগের, দুজন রংপুর বিভাগের, একজন বরিশাল বিভাগের এবং একজন ময়মনসিংহ বিভাগের।
গত বৃহস্পতিবারের (৯ জুলাই) বুলেটিনে জানানো হয়, গত ২৪ ঘণ্টায় করোনায় মারা গেছেন ৪১ জন। ১৫ হাজার ৬৩২টি নমুনা পরীক্ষায় করোনা শনাক্ত হয়েছে আরও তিন হাজার ৩৬০ জনের মধ্যে। সে হিসাবে আগের ২৪ ঘণ্টার তুলনায় গত ২৪ ঘণ্টায় সংক্রমণ ও মৃত্যু- উভয়ই কমেছে। দেশে একদিনে সর্বোচ্চ মৃত্যুর রেকর্ড ৬৪ জনের। সে তথ্য জানানো হয়, ৩০ জুনের বুলেটিনে। সর্বোচ্চ শনাক্তের রেকর্ড চার হাজার ১৯ জনের, যা জানানো হয় ২ জুলাইয়ের বুলেটিনে।
শুক্রবারের বুলেটিনে জানানো হয়, গত ২৪ ঘণ্টায় নমুনা পরীক্ষার তুলনায় রোগী শনাক্তের হার ২১ দশমিক ৮৬ শতাংশ। এ পর্যন্ত নমুনা পরীক্ষার তুলনায় রোগী শনাক্তের হার ১৯ দশমিক ৪৩ শতাংশ। আর রোগী শনাক্ত তুলনায় সুস্থতার হার ৪৮ দশমিক ৪২ শতাংশ এবং মৃত্যুর হার ১ দশমিক ২৭ শতাংশ।
বুলেটিনে জানানো হয়, গত ২৪ ঘণ্টায় আইসোলেশনে নেয়া হয়েছে আরও ৮৯৩ জনকে এবং এ পর্যন্ত আইসোলেশনে নেয়া হয়েছে ৩৪ হাজার ৯১৫ জনকে। গত ২৪ ঘণ্টায় আইসোলেশন থেকে ছাড় পেয়েছেন ৭৬৮ জন এবং এ পর্যন্ত ছাড় পেয়েছেন ১৭ হাজার ৭২৩ জন। বর্তমানে আইসোলেশনে রয়েছেন ১৭ হাজার ১৯২ জন।
গত ২৪ ঘণ্টায় হোম ও প্রাতিষ্ঠানিক মিলিয়ে কোয়ারেন্টাইনে নেয়া হয়েছে দুই হাজার ৬০০ জনকে, এ পর্যন্ত কোয়ারেন্টাইনে নেয়া হয়েছে তিন লাখ ৮৯ হাজার ১৮১ জনকে। গত ২৪ ঘণ্টায় কোয়ারেন্টাইন থেকে ছাড় পেয়েছেন দুই হাজার ১৬৯ জন, এ পর্যন্ত কোয়ারেন্টাইন থেকে মোট ছাড় পেয়েছেন তিন লাখ ২৫ হাজার ৬৪৪ জন। বর্তমানে হোম ও প্রাতিষ্ঠানিক মিলিয়ে কোয়ারেন্টাইনে রয়েছেন ৬৩ হাজার ৫৩৭ জন।
করোনাভাইরাস থেকে নিজেকে ও পরিবারের সদস্যদের সুরক্ষিত রাখতে সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি পালনের আহ্বান জানানো হয় বুলেটিনে।
বাংলাদেশে গত ৮ মার্চ প্রথম করোনা ভাইরাসের রোগী শনাক্ত হলেও প্রথম মৃত্যুর খবর আসে ১৮ মার্চ। দিন দিন করোনা রোগী শনাক্ত ও মৃতের সংখ্যা বাড়ায় নড়েচড়ে বসে সরকার। ভাইরাসটি যেন ছড়িয়ে পড়তে না পারে সেজন্য ২৬ মার্চ থেকে বন্ধ ঘোষণা করা হয় সব সরকারি-বেসরকারি অফিস। কয়েক দফা বাড়িয়ে এ ছুটি ৩০ মে পর্যন্ত করা হয়।
ছুটি শেষে করোনার বর্তমান পরিস্থিতির মধ্যেই ৩১ মে থেকে দেশের সরকারি-বেসরকারি অফিস খুলে দেয়া হয়। তবে বন্ধ রাখা হয়েছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান।


বিজ্ঞাপন