চরাঞ্চলে ত্রাণের জন্য হাহাকার

ঢাকা সারাদেশ

৩০ দিন পানিবন্দি মানুষ
টাঙ্গাইল প্রতিনিধি: ভোটের সময় আসলে মাথায় হাত বুলায়। বুকে টেনে নেয়। মাটিতে বসে একসাথে খাবার খায়। আশ্বাস দেয় আমি নির্বাচিত হলে ভাতার কার্ড করে দিব। বুক ভরা স্বপ্ন দেখায়। এসব শুধু অভিনয়। এখন বর্ষা মৌসুম। বন্যার শুরু থেকেই টানা ৩০ দিন পানিবন্দি আছি। ঘরে খাবার নাই। পরিবার নিয়ে খেয়ে না খেয়ে কোনরকম জীবনযাপন করছি। এদিকে, বড় মেয়ের শিশু সন্তানের শিশু খাদ্য সংকট। পানিবন্দি হয়ে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। এই অভাবের সময়ে স্থানীয় মেম্বার ও চেয়ারম্যানের কাছে একাধিকবার ত্রাণের জন্য গিয়ে ফিরে এসেছি।
এমনি অভিযোগ ও তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন টাঙ্গাইলের ভূঞাপুর উপজেলার গাবসারা ইউনিয়নের রাজাপুর গ্রামের পানিবন্দি অসহায়-হতদরিদ্র কৃষক মো. আকতার হোসেন। তিনি বলেন- ‘আমি দিনমজুর। কামলা দিয়ে দিনে যা পেতাম তাই দিয়ে সংসার চালানো হয়। করোনাভাইরাসের কারণে ঠিকমতো কামলাও দিতে পারিনি। এসময়ে কোন সাহায্য ও সহয়োগিতা পাইনি। আর এখন বন্যায় বউ-পোলাপান নিয়ে পানিতে ভাসছি। বাঁশের মাঁচার চৌকিতে থাকি। স্থানীয় মেম্বার ও চেয়ারম্যানের কাছে ত্রাণের জন্য গেলে তারা নানা ধরণের অজুহাত দেখায়।’
চরাঞ্চলের আকতারের মতো পানিবন্দি পরিবারগুলো স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের বিরুদ্ধে করেছেন নানা ধরণের অভিযোগ। রেহাইগাবসারা এলাকার আতাব আলী বলেন- ‘বন্যায় এ পর্যন্ত কেউ খোঁজ নেয়নি। কোন ত্রাণ সহায়তা পাইনি। এর উপর সাপ ও পোকা মাকড়ের ভয়তো আছেই। নারর্গিস বেগম বলেন- কয়েক সপ্তাহ ধরে পানিবন্দি রয়েছি। কোলের দুই শিশু সন্তান নিয়ে চরম বিপাকে আছি। শুনেছি সরকার থেকে শিশুদের জন্য শিশু খাদ্যের ব্যবস্থা করেছে। এ খবর শুনে স্থানীয় মেম্বারের কাছে গেলেও কোন সহযোগিতা করেনি। পানিবন্দিতে খাবার সংকটে পড়ে দু’বেলা দু’মুঠো ভাত জুটছে না। জানি না কবে পানি নেমে যাবে।
এসব অভিযোগকে অস্বীকার করে গাবসারা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মনিরুজ্জামান মুঠোফোনে বলেন- ‘আমার ইউনিয়নের পানিবন্দি সকল পরিবারের ঘরে ঘরে চাল দেয়া হয়েছে। বিষয়টা হলো যারা পেয়েছে তারা না করছে দ্বিতীয়বার নেয়ার জন্য। তিনি আরও বলেন- পানিবন্দি পরিবারদের জন্য এ পর্যন্ত ২৩ মে.টন চাল বরাদ্দ পেয়েছি। তার মধ্যে ১৩ মে.টন চাল বিতরণ করা হয়েছে। বাকি ১০ মে.টন চাল কাল-পরশুর মধ্যেও বিতরণ করা হবে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, উপজেলার যমুনা বিধৌত গাবসারা ইউনিয়নসহ গোবিন্দাসী, অজুর্না, অলোয়া ও নিকরাইল ইউনিয়নে শতাধিক গ্রাম যমুনা নদীর পানিতে প্লাবিত হয়েছে। তলিয়ে গেছে কয়েক হাজার হেক্টর জমির ফসল। বসতবাড়ি তলিয়ে যাওয়ায় গবাদি পশু নিয়ে বিপাকে পড়েছেন অনেকেই। উঁচুস্থানে আশ্রয় নেয়া জায়গায়তেও উঠেছে পানি। বিশুদ্ধ পানি সংকট ও শিশু খাদ্যের অভাব দেখা দিয়েছে। এতে মানবেতর জীবন-যাপন করছে বন্যার্তরা। অনেকেই আবার বঙ্গবন্ধু সেতু পূর্ব-ভূঞাপুর সড়কের সেতু রক্ষাগাইড বাঁধের ঢালে আশ্রয় নিয়েছেন।
এদিকে, উপজেলা প্রশাসন চলতি বর্ষা মৌসুমে বন্যা পরিস্থিতিতে খাদ্য সহায়তা ও বন্যার বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করার জন্য বিভিন্ন দপ্তরের ৭ জন কর্মকর্তাকে দায়িত্ব দিয়ে হটলাইন চালু করেছে। তবে এই হটলাইন সম্পর্কে কিছুই জানেন না বলে জানিয়েছেন চরাঞ্চলের পানিবন্দিরা।
এ বিষয়ে উপজেলা কন্ট্রোল রুমের দায়িত্ব¡প্রাপ্ত ও তথ্য সেবা কর্মকর্তা জলি রানী দাস বলেন-‘পুরো উপজেলার তথ্য নেই। কয়েকটি ইউনিয়নের তথ্য পাওয়া গেছে। তবে তথ্য সংগ্রহের কাজ চলছে।’ দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নাজমা সুলতানা বলেন, আমাকে দায়িত্বে রাখা হয়েছে কি না এ বিষয়ে আমি কিছু জানি না।


বিজ্ঞাপন