গৃহহীন থাকবে না কোন মানুষ

এইমাত্র চট্টগ্রাম জাতীয় জীবন-যাপন সারাদেশ

কক্সবাজার প্রতিনিধি : বিশ্বের সর্ববৃহৎ জলবায়ু উদ্বাস্তুর আশ্রয়ণ প্রকল্প উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বৃহস্পতিবার সকাল ১০ টায় গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে কক্সবাজার সদরের খুরুশকুলে জলবায়ু উদ্বাস্তুদের জন্য নবনির্মিত বিশেষ আশ্রয়ণ প্রকল্পের উদ্বোধন করেন তিনি। কক্সবাজার সদরের খুরুশকুলে ২৫৩ একর জমির প্রকল্পে প্রাথমিকভাবে ২০টি ভবনে ১ হাজার ১ টাকা নামমাত্র মূল্যে ৬০০ পরিবারকে ফ্ল্যাট হস্তান্তর করা হবে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, জাতির পিতার স্বপ্ন ছিলো ক্ষুধা ও দারিদ্র মুক্ত বাংলাদেশ। আমরা সেই লক্ষ নিয়ে কাজ করে যাচ্ছি। কক্সবাজারকে উন্নত পর্যটন নগরী হিসেবে গড়ে তোলা হবে। বিশ্বের মানুষ যাতে এর সৌন্দর্য্য উপভোগ করতে পারেন সে লক্ষে কাজ করছে সরকার। দেশের কোন মানুষ গৃহহীন থাকবে না।
জানা যায়, খুরুশকুল বিশেষ আশ্রয়ণ প্রকল্প’ এর মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২৫৩.৫৯ একর জমিতে ১৮০০.৩৯ কোটি টাকা ব্যয়ে ৫তলা বিশিষ্ট ১৩৯টি ভবন নির্মাণ করার মাধ্যমে জলবায়ু উদ্বাস্তুদের পুনর্বাসনে বিশ্বে এক অনন্য নজির স্থাপন করছেন।
বিমানবন্দর সম্প্রসারণের লক্ষ্যে এর মধ্যে সংলগ্ন ৬৮২ একর খাস জমি বিমানবন্দরের জন্য বরাদ্দ সহকারে খতিয়ান চূড়ান্ত করা হয়েছে। চিহ্নিত এই পরিমাণ জমিতে বর্তমানে অবৈধভাবে বসবাসরত ৪ হাজার ৪ শত ৯পরিবারের লোকজনকে পুনর্বাসন করার জন্য বাঁকখালী নদীতীরের খুরুশকুলের ২৫৩ দশমিক ৩৫ একর জমিতে তৈরি করা হচ্ছে আশ্রয়ণ প্রকল্প। এর মধ্যে প্রথমধাপে শেষ হয়েছে ২০টি বহুতল ভবনের নির্মাণ কাজসহ সার্বিক সুযোগ সুবিধা।
সূত্রমতে, ২০১৫ সালে শুরু হয় প্রকল্পের বাস্কবায়নের কাজ। প্রকল্পে চারতলাবিশিষ্ট ২শত ৪৫টি ভবন নির্মাণ করার কথা রয়েছে। এর মধ্যে সেনাবাহিনী ২০টি ভবন নির্মাণ কাজ শেষ করেছে। প্রতিটি ভবনে রয়েছে ৩২টি করে ইউনিট। নির্মিত এসব ভবনে আশ্রয় পাবে ৬শ’ টি পরিবার। এই বৃহৎ আশ্রয় প্রকল্পে রয়েছে স্কুল, মসজিদ-মাদরাসাসহ সার্বিক সুযোগ সুবিধা।
পাশাপাশি পর্যায়ক্রমে কলেজসহ আরো প্রয়োজনীয় নানা প্রতিষ্ঠান। প্রধানমন্ত্রীর অগ্রাধিকার ভিত্তিক আশ্রয়ন-২ প্রকল্পের আওতায় এই প্রকল্পে নির্মিত ২০টি অত্যাধুনিক ভবনের নামকরণ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজেই। কক্সবাজারের প্রতি প্রধানমন্ত্রীর দুর্বলতা অন্য রকম। এটিও এর একটি প্রমাণ। প্রধানমন্ত্রী নিজে ভবনের নামগুলো রেখেছেন।
এখানে সবচেয়ে আকর্ষণের বিষয়টি হচ্ছে, নির্মিত ২০টি অত্যাধুনিক ভবনের নামকরণ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজেই করেছেন। নামগুলো হচ্ছে,সাম্পান, কেওড়া, রজনীগন্ধা,গন্ধরাজ, হাসনাহেনা, কামিনী, গুলমোহর, গোলাপ, সোনালী, নীলাম্বরী,ঝিনুক, কোরাল, মুক্তা, প্রবাল, সোপান, মনখালী, শনখালী, দোলনচাঁপা, ইনানী ও বাঁকখালী।
প্রকল্প এলাকায় ১৪টি খেলার মাঠ, সবুজ জায়গা, মসজিদ, মন্দির, প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়, পুলিশ ও ফায়ার স্টেশন, তিনটি পুকুর, নদীতে দু’টি জেটি, দুটি বিদ্যুতের সাবস্টেশন থাকবে।
এছাড়াও থাকবে ২০ কিলোমিটার অভ্যন্তরীণ রাস্তা, ৩৬ কিলোমিটার ড্রেনেজ ব্যবস্থা, বর্জ্য পরিশোধন ও নিষ্কাশন ব্যবস্থাপনা, তীর রক্ষা বাঁধ, ছোট সেতু, পুকুর-খাল থাকবে পুরো প্রকল্প এলাকায়।
শুরুতে শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ। অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের মূখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস।
এছাড়াও উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন, চকরিয়া-পেকুয়া আসনের সংসদ সদস্য জাফর আলম, মহেশখালী-কুতুবদিয়া আসনের আশেক উল্লাহ রফিক, সদর-রামু আসনের সংসদ সদস্য সাইমুম সরওয়ার কমল, উখিয়া-টেকনাফ আসনের সংসদ সদস্য শাহীন আকতার, মহিলা সংসদ সদস্য কানিজ ফাতেমা আহমদ।
খুরুশকুল আশ্রয়ণ প্রকল্পের প্রকল্প পরচিালক (অতিরিক্ত সচিব) মাহবুব হোসেন, চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমশিনার এ বি এম আজাদ এনডিসি, সেনাবাহিনীর দশম পদাতিক ডিভিশনের জিওসি এবং এরিয়া কমান্ডার মো. মাঈন উল্লাহ চৌধুরী, কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মো. কামাল হোসেন, পুলিশ সুপার এবিএম মাসুদ হোসেন বিপিএম (বার), জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোস্তাক আহমদ চৌধুরী, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এডভোকটে সিরাজুল মোস্তফা, সাধারণ সম্পাদক ও পৌর মেয়র মুজিবুর রহমান।


বিজ্ঞাপন