দুই এক দিনের মধ্যে দেশের বাজারে কমবে স্বর্ণের দাম

অর্থনীতি বানিজ্য

নিজস্ব প্রতিবেদক : বিশ্ববাজারে অস্বাভাবিক দরপতন হওয়ায় আজ অথবা আগামীকাল দেশের বাজারে স্বর্ণের দাম কমানো হবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
সূত্র জানিয়েছে, ভরিতে প্রায় পাঁচ হাজার টাকার মতো দাম কমতে পারে। দাম কমানোর লক্ষ্যে ইতোমধ্যে বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতি (বাজুস) সদস্যদের সঙ্গে আলোচনা করেছে।
বাংলাদেশের বাজারে কী দামে স্বর্ণ বিক্রি হবে তা নির্ধারণ করে বাজুস। বিশ্ববাজারে দাম বাড়া-কমার ওপর নির্ভর করে এই দাম নির্ধারণ করা হয়। সাধারণত বিশ্ববাজারের সাতদিনের দামের গড় ভিত্তিতে কী পরিমাণ দাম বাড়বে না কমবে সে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
বিশ্ববাজারে অস্বাভাবিক দাম বাড়ার প্রেক্ষিতে গত ৬ আগস্ট থেকে দেশের বাজারে স্বর্ণের দাম বাড়ানো হয়েছে। নতুন দাম অনুযায়ী, ভালো মানের অর্থাৎ ২২ ক্যারেটের প্রতি ভরিতে (১১ দশমিক ৬৬৪ গ্রাম) স্বর্ণের দাম চার হাজার ৪৩২ টাকা বাড়িয়ে নির্ধারণ করা হয় ৭৭ হাজার ২১৬ টাকা। ২১ ক্যারেট ৭৪ হাজার ৬৬, ১৮ ক্যারেট ৬৫ হাজার ৩১৮ ও সনাতন পদ্ধতির প্রতি ভরি স্বর্ণ ৫৪ হাজার ৯৯৬ টাকা নির্ধারণ করা হয়। এই দামেই এখন দেশের বাজারে স্বর্ণ বিক্রি হচ্ছে।
বাংলাদেশে যখন স্বর্ণের দাম বাড়ানোর ঘোষণা দেয়া হয় তখন বিশ্ববাজারে প্রতি আউন্স স্বর্ণের দাম ছিল ২ হাজার ৩৪ ডলার। এরপর তা আরও বেড়ে ২ হাজার ৭৫ ডলার পর্যন্ত ওঠে। গত শুক্রবার থেকে বিশ্ববাজারে স্বর্ণ পতনের মধ্যে পড়েছে।
দফায় দফায় দাম কমে প্রতি আউন্স স্বর্ণের দাম ১ হাজার ৯০০ ডলারের নিচে নেমে এসেছে। এর মধ্যে গত মঙ্গলবার একদিনে রেকর্ড ১১২ ডলার কমে প্রতি আউন্স স্বর্ণের দাম। বুধবারও দরপতনের ধারা অব্যাহত রয়েছে। এখন পর্যন্ত প্রতি আউন্স স্বর্ণের দাম ২১ ডলার কমে ১ হাজার ৮৯৫ ডলারে নেমে এসেছে। এর মাধ্যমে বাংলাদেশ স্বর্ণের দাম বাড়ানোর পর বিশ্ববাজারে প্রতি আউন্স স্বর্ণের দাম প্রায় দেড়শ ডলার কমে গেছে।
বাজুসের সাবেক সভাপতি দিলিপ রায় বলেন, স্বর্ণের দামে এমন অস্থিরতা আমি আগে কখনো দেখিনি। স্বর্ণের দাম যে হারে বেড়েছিল সেটা যেমন অস্বাভাবিক ছিল, এখন যে হারে কমছে তাও অস্বাভাবিক। আমার দীর্ঘ অভিজ্ঞতায় আগে কখনো একদিন বিশ্ববাজারে ১১২ ডলার স্বর্ণের দাম কমতে দেখিনি।
তিনি বলেন, বিশ্ববাজারে দাম কমার কারণে বাংলাদেশের বাজারেও স্বর্ণের দাম কমানো হবে। ইতোমধ্যে আমরা দাম কমানোর বিষয়ে আলোচনা করেছি। একেকজন একেক রকম দামের প্রস্তাব করেছেন। সাধারণত আমরা যখন স্বর্ণের দাম বাড়ানো বা কমানোর সিদ্ধান্ত নেই, তখন বিশ্ববাজারের সাতদিনের দাম গড় করি। তার ওপর ভিত্তি করেই স্বর্ণের দাম কমানোর রেশিও ঠিক করা হয়। এবারও তাই করা হবে। নতুন দাম নির্ধারণ করে আজ অথবা আগামীকাল বাজুস থেকে ঘোষণা দেয়া হবে।
বাজুসের আরেক সাবেক সভাপতি ওয়াদুদ ভূঁইয়া বলেন, আমাদের দেশে স্বর্ণের দাম বাড়া বা কমা নির্ভর করে বিশ্ববাজারের ওপর। এমনকি স্বর্ণের দামের ওপর সরকারেরও কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। বিশ্ববাজারে দাম কমলে দেশের বাজারেও স্বর্ণের দাম কমাতে হবে। দাম না কমালে ক্রেতা পাওয়া যাবে না। এমনিতেই এখন আমাদের জুয়েলারি বিক্রি হচ্ছে না।
বিশ্ববাজারের দাম কমার চিত্র তুলে ধরা হলে তিনি বলেন, বিশ্ববাজারে যে হারে স্বর্ণের দাম কমেছে তাতে এবার আমাদের বাজারে ভরিতে স্বর্ণের দাম ৫-৬ হাজার টাকা কমতে পারে। বিশ্ববাজারে দাম কমতে থাকলে পর্যায়ক্রমে আমাদের বাজারেও স্বর্ণের দাম কমবে। তবে আমার অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি দাম যতই কমুক বাংলাদেশে স্বর্ণের ভরি ৫০ হাজার টাকার নিচে নামবে না।
বিশ্ববাজারে স্বর্ণের দামের উত্থান-পতনের বিষয়ে ওয়াদুদ ভূঁইয়া বলেন, বিশ্ববাজারে স্বর্ণের দামে এমন অস্থিরতা আগে দেখা যায়নি। মহামারি করোনাভাইরাসের কারণে শেয়ারবাজারের গেম্বলাররা স্বর্ণ কিনে মজুত করায় অস্বাভাবিক দাম বাড়ে। এখন আবার অস্বাভাবিক হারে দাম কমেছে। এই দাম বাড়া ও কমার কোনো চিত্রই স্বাভাবিক নয়।


বিজ্ঞাপন