নিরাপত্তায় বাড়তি ফি!

অর্থনীতি এইমাত্র জাতীয় জীবন-যাপন বানিজ্য

নিজস্ব প্রতিবেদক : দেশের যে কোনো বিমানবন্দর ব্যবহার করে কোথাও গেলেই বাড়তি ফি গুনতে হচ্ছে যাত্রীদের। বিমানবন্দরের উন্নয়ন ও নিরাপত্তা শক্তিশালী করার লক্ষ্যে নতুন ফি নেওয়া হচ্ছে বলে জানা গেছে। গত জুলাইয়ে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক) এ সংক্রান্ত নোটিশ জারি করেছিল। এ বাড়তি ফি বিমান ভ্রমণে যাত্রীদের কিছুটা হলেও নিরুৎসাহিত করবে বলে মনে করছেন এয়ারলাইন্স সংশ্লিষ্টরা।
যে কোন দেশের বিমানবন্দর একটি স্পর্শকাতর এলাকা। বিমানবন্দর দেশের একটি অহঙ্কার। কাজেই বিমানবন্দরের নিরাপত্তাকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেয়া হয়। হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নিরাপত্তা নিয়ে এর আগেও নানা প্রশ্ন উঠেছিল। সেই প্রশ্ন যে অমূলক ছিল না, তার প্রমাণ পাওয়া গেছে একাধিকবার। চার ধাপের নিরাপত্তার মধ্যেও পাসপোর্ট- বোর্ডিং পাস না থাকা অস্ত্রধারী যুবক কিভাবে বিমানে উঠে- এমন প্রশ্নও ছিল দেশজুড়ে। বিমানবন্দরে প্রবেশ করার পর প্রথমে স্ক্যানিং, বোডিং পাস, ইমিগ্রেশন এবং সর্বশেষ বিমানে ওঠার সময় চেকআপ করা হয়। প্রতিটি জায়গায় বডি ও লাগেজ চেকআপ করা হয়। বিশেষ করে সর্বশেষ চেকআপে জুতা, বেল্ট, ঘড়ি, মানিব্যাগ, বডি- এগুলো অন্তর্ভুক্ত হয়। বিমানে প্রবেশ করার গেটে বোর্ডিং দেখিয়ে সিটে বসতে হয়। অথচ একটি যুবক খেলনা পিস্তল নিয়ে বিমানে উঠে বিমান চিন্তাইয়ের চেষ্টা করে। বিমানবন্দরে নিয়োজিত ১৯টি সংস্থার যারা কর্তব্যে নিয়োজিত, তারা কী জবাব দেবেন? এর আগে প্রধানমন্ত্রীর বিমানের নাটবল্টু ঢিলা রাখা নিয়ে ভিভিআইপি নিরাপত্তার বিষয়টি দেশ-বিদেশে আলোচনায় উঠে আসে। এছাড়া পরিচ্ছন্নতা কর্মীর পোশাক পরে এক যুবক বিমানবন্দরে ঢুকে এক যাত্রীকে ছুরিকাঘাত করে।
যদিও আকাশপথে নিরাপত্তায় প্রতিবেশী দেশ ভারতের চেয়ে এগিয়ে আছে বাংলাদেশ ও ইন্দোনেশিয়া। ইন্টারন্যাশনাল সিভিল এভিয়েশন অর্গ্যানাইজেশনের (আইসিএও) বিশ্বব্যাপী ইউনিভার্সেল ওভারসাইট সেফটি অডিট প্রোগ্রাম এক প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে। আইসএও-এর ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আটটি পরিমিতির পাঁচটিতেই কার্যকর পদক্ষেপ বাস্তবায়নে বৈশ্বিক গড় স্কোর পেতে ব্যর্থ হয়েছে ভারত। যে আটটি বিষয়ের ওপর বিমান নিরাপত্তার বিষয়টি বিবেচনা করা হয় তা হলো- লাইসেন্স, অপারেশন, ব্যবস্থাপনা, প্রতিষ্ঠান, বিমান পরিচালনার যোগ্যতা, বিমান পরিভ্রমণ সেবা, বিমানবন্দর ও দুর্ঘটনার তদন্ত।
এ বিষয়গুলো কতটা নিরাপদ এবং বিমান পরিচালনার ক্ষেত্রে এই বিষয়গুলো কার্যকর কিনা সে বিষয়ের ওপর ভিত্তি করেই ওই নিরীক্ষা পরিচালনা করা হয়। আইসিএওর মানদ-ে ওই আটটি গুরুত্বপূর্ণ মাপকাঠির কার্যকর বাস্তবায়নে ভারতের থেকে এগিয়ে রয়েছে বাংলাদেশ। আটটি প্যারামিটারের মধ্যে সাতটিতেই ভারতের চেয়ে ভালো স্থান অর্জন করেছে বাংলাদেশ। এছাড়া ইন্দোনেশিয়া সবগুলো ক্ষেত্রেই ভারতের চেয়ে ভালো অবস্থান অর্জন করেছে। অপরদিকে পাঁচটি প্যারামিটারে ভারতকে পেছনে ফেলে এগিয়ে আছে মালয়েশিয়া।
এরেইমধ্যে করোনাকালে খরচ বাড়ল আকাশপথে ভ্রমণেও। গতকাল রবিবার থেকে দেশের যে কোনো বিমানবন্দর ব্যবহার করে কোথাও গেলেই বাড়তি ফি গুনতে হয় যাত্রীদের। বিমানবন্দরের উন্নয়ন ও নিরাপত্তা শক্তিশালী করার লক্ষ্যে নতুন ফি আরোপ করা হয়েছে। উড়োজাহাজের টিকিটের সঙ্গে ভ্যাট বাবদ এ ফি কেটে নেওয়া হচ্ছে। গত জুলাইয়ে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক) এ সংক্রান্ত নোটিশ জারি করে। এ বাড়তি ফি বিমান ভ্রমণে যাত্রীদের কিছুটা হলেও নিরুৎসাহিত করবে বলে মনে করছেন এয়ারলাইন্স সংশ্লিষ্টরা।
জানা গেছে, যারা ১৬ আগস্টের টিকিট ইতোমধ্যে কেটেছেন, তাদের বর্ধিত ফি পরিশোধ করতে হয়েছে। বেবিচক বলছে, সার্কভুক্ত দেশগুলোতে যাওয়া যাত্রীদের প্রতি টিকিটের জন্য উন্নয়ন ফি হিসেবে ৫ ডলার ও নিরাপত্তা ফি হিসেবে ৬ ডলার করে দিতে হয়। আন্তর্জাতিক গন্তব্যে প্রতি টিকিটে ১০ ডলার করে বাড়তি ফি দিতে হয়। অন্যদিকে অভ্যন্তরীণ রুটে চলাচলকারীদের প্রতি টিকিটের জন্য উন্নয়ন ফি দিতে হয় ১০০ টাকা ও নিরাপত্তা ফি ৭০ টাকা। অর্থাৎ অভ্যন্তরীণ রুটে যাত্রীদের খরচ বাড়ল ১৭০ টাকা। বেবিচকের এক নোটিশে বলা হয়, যাত্রীদের ১৫ শতাংশ ভ্যাট দিতে হবে। এটিই নতুন আরোপিত সর্বাধিক ফি।
বেবিচকের পরিচালক (অর্থ) মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, এখন থেকে দেশের যে কোনো বিমানবন্দর ব্যবহার করলে নিরাপত্তা ও উন্নয়ন চার্জ পরিশোধ করতে হবে। যা টিকিট কেনার সময় পরিশোধ করতে হবে। বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন মন্ত্রণালয় বলছে, দেশের যেকোনো বিমানবন্দর দিয়ে সার্কভুক্ত দেশগুলোতে যাওয়ার ক্ষেত্রে বিমানবন্দর উন্নয়ন ফি পাঁচ ডলার এবং নিরাপত্তা ফি ছয় ডলার দিতে হবে। আবার দেশে ফিরে আসার ক্ষেত্রেও সমপরিমাণ অর্থ দিতে হবে। অন্যদিকে সার্কভুক্ত দেশের বাইরে ভিন্ন কোনো দেশে গেলে যাওয়া এবং আসার ক্ষেত্রে একজন যাত্রীকে ৪০ ডলার দিতে হবে।
বিমান ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মহিবুল হক বলেন, বাংলাদেশের বিমান বন্দরগুলো পরিচালনার ক্ষেত্রে প্রতি বছর প্রায় ৪০০০ কোটি টাকা খরচ হয়। দেশের বিভিন্ন বিমানবন্দরে উন্নয়নমূলক কাজ চলছে- একথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, পরিচালনা ব্যয় মেটানোর জন্যই এ ফি ধার্য করা হয়েছে। ধার্যকৃত ফি থেকে সরকার প্রতিবছর ৬০০ কোটি টাকার মতো পাবে বলে আশা করা হচ্ছে।
এক প্রশ্নের উত্তরে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে এ ধরনের ফি নেবার প্রচলন আছে বলে দাবি করেন সিনিয়র সচিব মহিবুল হক। তিনি বলেন, এই রিজিওনের ভেতরে আমরা সবচেয়ে বিলম্বে এটা কার্যকর করতে যাচ্ছি এবং সবচেয়ে কম অর্থ আমরা নিতে যাচ্ছি।
অপরদিকে এটমোস্ফিয়ার রিসার্চ গ্রুপের মতে ২০২৩ সালের আগে বিমান ভ্রমণ স্বাভাবিক নাও হতে পারে। কারণ সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছে করোনাভাইরাস। এই মারণ ভাইরাস ঠেকাতে শহরের পর শহরে লকডাউন চলছে। যোগাযোগ ব্যবস্থা প্রায় অচল। বিমান চলাচল প্রায় স্থবির হয়ে পড়েছে। কখন থেকে আবার চালু হবে স্বাভাবিক যোগাযোগ ব্যবস্থা সেই ব্যাপারে এখনো কোনো তথ্য পাওয়া যাচ্ছে না। তবে বলা হচ্ছে, ২০২৩ সালের আগে বিমান ভ্রমণ বা বিমান যোগাযোগ ব্যবস্থা স্বাভাবিক নাও হতে পারে।
বৈশ্বিক ভ্রমণবিষয়ক বিশেষজ্ঞ গ্রুপ এটমোস্ফিয়ার রিসার্চ গ্রুপের তথ্য মতে, করোনাভাইরাস নিয়ন্ত্রণে; এরকম ঘোষণা করার পরও বিমান যোগাযোগ ব্যবস্থা স্বাভাবিক হতে আরো টানা দুই বছর সময় লাগতে পারে। অর্থাৎ ২০২৩ সাল নাগাদ বিমান যোগাযোগ ব্যবস্থা স্বাভাবিক হবে। তাদের মতে, যোগাযোগ ব্যবস্থা দ্রুত ফিরে আসার পরিবর্তে ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হবে। অভ্যন্তরীণ ভ্রমণ ব্যবস্থা চালু হবে সবার আগে।


বিজ্ঞাপন