ফের ভয়ঙ্কর করোনা!

আন্তর্জাতিক এইমাত্র জাতীয় জীবন-যাপন সারাদেশ স্বাস্থ্য

পাল্টে যাচ্ছে মহামারি
মহসীন আহমেদ স্বপন : ২০ থেকে ৪০ বছরের কোটায় থাকা লোকজন নভেল করোনাভাইরাসের বিস্তার ঘটাচ্ছেন। যাদের অনেকেই জানেন না, তারা করোনায় আক্রান্ত এবং ঝুঁকিপূর্ণ গোষ্ঠীগুলোর জন্য হুমকি তৈরি করেছেন। করোনাভাইরাসের বিস্তার দিন দিন বাড়তে থাকায় মঙ্গলবার বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা উদ্বেগ প্রকাশ করে এসব তথ্য জানিয়েছে।
এ দিকে দেশে মহামারি করোনাভাইরাসে (কোভিড-১৯) আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর তালিকায় গত ২৪ ঘণ্টায় আরও ৪৬ জনের নাম যুক্ত হয়েছে। তাদের মধ্যে পুরুষ ৩৫ জন এবং নারী ১১ জন। এ নিয়ে ভাইরাসটিতে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল তিন হাজার ৭৪০ জনে। একই সময়ে করোনায় আক্রান্ত হিসেবে শনাক্ত হয়েছেন আরও তিন হাজার ২০০ জন। এতে মোট শনাক্ত রোগীর সংখ্যা দাঁড়াল দুই লাখ ৮২ হাজার ৩৪৪ জনে। মঙ্গলবার দুপুরে স্বাস্থ্য অধিদফতরের করোনাভাইরাস বিষয়ক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, করোনাভাইরাস শনাক্তে গত ২৪ ঘণ্টায় ৯১টি আরটি-পিসিআর ল্যাবরেটরিতে ১৫ হাজার ৪৩৫টি নমুনা সংগ্রহ করা হয়। পরীক্ষা করা হয় ১৪ হাজার ৬৩০টি নমুনা। এ নিয়ে মোট নমুনা পরীক্ষার সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৩ লাখ ৭৮ হাজার ৮১৯টি।
গত ২৪ ঘণ্টায় সুস্থ হয়েছেন আরও দুই হাজার ২৩৪ জন। এ নিয়ে মোট সুস্থ রোগীর সংখ্যা দাঁড়াল এক লাখ ৬২ হাজার ৮২৫ জনে।
শনাক্ত, সুস্থতা ও মৃত্যুর হার: বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গত ২৪ ঘণ্টায় নমুনা পরীক্ষার তুলনায় রোগী শনাক্তের হার ২১ দশমিক ৮৭ শতাংশ। এ পর্যন্ত নমুনা পরীক্ষার তুলনায় রোগী শনাক্তের হার ২০ দশমিক ৪৮ শতাংশ। আর রোগী শনাক্ত তুলনায় সুস্থতার হার ৫৭ দশমিক ৬৭ শতাংশ এবং মৃত্যুর হার ১ দশমিক ৩২ শতাংশ।
গত সোমবারের পরিস্থিতি: গত সোমবারের (১৭ আগস্ট) প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, করোনায় আক্রান্তদের মধ্যে গত ২৪ ঘণ্টায় আরও ৩৭ জন মারা গেছেন। ১২ হাজার ৫২৩টি নমুনা পরীক্ষায় করোনা শনাক্ত হয়েছে আরও দুই হাজার ৫৯৫ জনের মধ্যে। দেশে একদিনে সর্বোচ্চ মৃত্যুর রেকর্ড ৬৪ জনের। সে তথ্য জানানো হয় ৩০ জুনের বুলেটিনে। সর্বোচ্চ শনাক্তের রেকর্ড চার হাজার ১৯ জনের, যা জানানো হয় ২ জুলাইয়ের বুলেটিনে।
পাল্টে যাচ্ছে মহামারি : বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) বলেছে, ২০, ৩০ এবং ৪০ বছরের কোটায় থাকা লোকজন নভেল করোনাভাইরাসের বিস্তার ঘটাচ্ছেন। যাদের অনেকেই জানেন না, তারা করোনায় আক্রান্ত এবং ঝুঁকিপূর্ণ গোষ্ঠীগুলোর জন্য হুমকি তৈরি করেছেন। করোনাভাইরাসের বিস্তার দিন দিন বাড়তে থাকায় মঙ্গলবার বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা উদ্বেগ প্রকাশ করে এসব তথ্য জানিয়েছে।
সংস্থাটির কর্মকর্তারা বলেছেন, চলতি মাসে বিশ্বজুড়ে সংক্রমিতদের মধ্যে তরুণ জনগোষ্ঠীর সংখ্যা বেড়েছে। এটি দুর্বল স্বাস্থ্যসেবার ঘনবসতিপূর্ণ অঞ্চলে বৃদ্ধ এবং অসুস্থ লোকজনসহ বিশ্বজুড়ে জনগোষ্ঠীর ঝুঁকিপূর্ণ অংশকে বিপদাপন্ন করে তুলেছে।
সংস্থাটির পশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের পরিচালক তাকেশি কাসাই অনলাইন ব্রিফিংয়ে অংশ নিয়ে বলেন, মহামারি পাল্টে যাচ্ছে। ২০, ৩০ এবং ৪০ বছরের কোটায় থাকা লোকজন ক্রমবর্ধমান হারে বিস্তার ছড়িয়ে দিচ্ছেন। অনেকেই জানেন না যে, তারা করোনায় আক্রান্ত। এটি করোনা বিস্তারের ঝুঁকি আরও বাড়িয়ে তোলে।
ব্রিটিশ বার্তাসংস্থা রয়টার্সের পরিসংখ্যান বলছে, গত বছরের ডিসেম্বরে চীনের হুবেই প্রদেশের উহানে এই ভাইরাসের উৎপত্তি হওয়ার পর বিশ্বজুড়ে আক্রান্ত হয়েছেন ২ কোটি ২ লাখের বেশি মানুষ এবং মারা গেছেন ৭ লাখ ৭০ হাজারের বেশি।
করোনাভাইরাস সংক্রমণের নতুন উত্থান দেখা দেয়ায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ফের বিধি-নিষেধ আরোপ করা হয়েছে। বিশ্ব অর্থনীতিকে তছনছ করে দেয়া এই ভাইরাসের ভ্যাকসিন আবিষ্কারে বিভিন্ন কোম্পানি চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
করোনার নতুন করে উত্থানের খবর ভিয়েতনাম, নিউজিল্যান্ডসহ এমন কিছু দেশ থেকে এসেছে, যারা প্রথম দফায় ভাইরাসটি নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয়েছিল বলে মনে করা হয়। আগ্রাসী পরীক্ষা এবং আইসোলেশন ব্যবস্থার কারণে তিন মাস পর ভিয়েতনামে করোনা সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে। ১০২ দিন পর নিউজিল্যান্ডেও স্থানীয়ভাবে করোনার সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়েছে।
তাকেশি কাসাই বলেন, আমরা যা পর্যবেক্ষণ করছি তা শুধু পুনরুত্থানই নয়। বরং আমরা বিশ্বাস করি- এটি এক ধরনের সংকেত যে, এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে মহামারি নতুন ধাপে প্রবেশ করছে।
তিনি বলেন, সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে প্রাথমিক শনাক্তকরণ এবং মোকাবিলা কার্যক্রমে সমন্বয়ের মাধ্যমে দেশগুলো জীবন ও অর্থনীতির ওপর এর আঘাত হ্রাস করতে সক্ষম। বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাসের জিনগত রূপান্তর ঘটলেও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ভাইরাসটিকে ‘অপেক্ষাকৃত স্থিতিশীল’ হিসেবে দেখছে।
ভ্যাকসিন আবিষ্কার ও গবেষণার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ওষুধ প্রস্তুতকারকদের প্রয়োজনীয় সব গবেষণা এবং বৈজ্ঞানিক নীতি-নৈতিকতা মেনে কাজ এগিয়ে নেয়ার কথা স্মরণ করে দিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। ডব্লিউএইচও’র মেডিকেল পলিসি অ্যাডভাইজার সকোরো এসকাল্যান্তে বলেন, রাশিয়ার সঙ্গে সমন্বয় করছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। চলতি মাসে বিশ্বের প্রথম দেশ হিসেবে করোনাভাইরাসের একটি ভ্যাকসিনের অনুমোদন দিয়েছে রাশিয়া।


বিজ্ঞাপন