বর্জ্য অপসারণে নতুন ব্যবস্থাপনায় ডিএসসিসি

রাজধানী

নিজস্ব প্রতিবেদক : রাজধানীতে প্রতিনিয়ত বাড়ছে সমস্যা। এখানে নিত্যদিনের বড় এক সমস্যার নাম বর্জ্য। বাসা বাড়ির ময়লাসহ রাজধানীতে প্রতিদিনই উৎপন্ন হয় ব্যাপক পরিমাণ বর্জ্য। এসব বর্জ্য অপসারণে প্রতিনিয়ত হিমশিম খেতে হয় ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনকে। এই অবস্থায় বর্জ্য অপসারণে নতুন ব্যবস্থাপনার উদ্যোগ গ্রহণ করেছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)।
জানা গেছে, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কার্যক্রমে আমূল পরিবর্তন আনছে ডিএসসিসি। গতানুগতিক কার্যক্রমের পরিবর্তে নতুন আঙ্গিকে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কার্যক্রম শুরু হয়েছে। এই কার্যক্রমের আওতায় প্রাথমিক বর্জ্য সেবা প্রদানকারীরা (প্রাইমারি কালেকশন সার্ভিস প্রোভাইডার-পিসিএসপি) সন্ধ্যা ৬টা থেকে রাত ১০টার মধ্যে বাসা-বাড়ি ও গৃহস্থালি থেকে ময়লা-আবর্জনা সংগ্রহ করে সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডের অন্তর্র্বতীকালীন বর্জ্য স্থানান্তর কেন্দ্রে নিয়ে যাবে। যে সকল ওয়ার্ডে অন্তর্র্বতীকালীন বর্জ্য স্থানান্তর কেন্দ্র নির্মিত হয়নি, সে সকল ওয়ার্ডে ডিএসসিসি নির্ধারিত স্থানে এসব ময়লা-আবর্জনা নিয়ে যাওয়া হবে। রাত ১০টা থেকে ভোর ৬টার মধ্যে সংশ্লিষ্ট বর্জ্য স্থানান্তর কেন্দ্র অথবা নির্ধারিত স্থান থেকে ময়লা-আবর্জনা মাতুয়াইলের ভাগাড়ে (ল্যান্ডফিল) নিয়ে যাওয়া হবে।
এছাড়াও, রাত ৯টা থেকে পরিচ্ছন্নকর্মীরা ঢাকা শহরের রাস্তাগুলোতে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম শুরু করবেন। রাস্তাগুলো পরিষ্কার করার পর প্রয়োজনীয়তা অনুসারে রাস্তায় পানি ছিটানো হবে এবং সকাল ৬টার মধ্যেই একটি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন নগরের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।
জানা গেছে, এতদিন পিসিএসপিরা সিটি করপোরেশনের কোষাগারে কোনো অর্থ জমা দিত না। নতুন ব্যবস্থাপনার আওতায় প্রত্যেকটি ওয়ার্ডে অনুমোদনপ্রাপ্ত পিসিএসপিগুলো সিটি করপোরেশনের কোষাগারে বাৎসরিক ১২ লাখ টাকা (প্রতি মাসে এক লাখ টাকা হিসেবে) জমা দিতে হবে। এতে করে সিটি করপোরেশনের রাজস্ব আয় বৃদ্ধির পাশাপাশি বর্জ্য ব্যবস্থাপনায়ও শৃঙ্খলা আসবে। কোনো পিসিএসপি বরাদ্দের শর্ত ভঙ্গ করলে, তার অনুমোদন বাতিল করা হবে।
এদিকে ডিএসসিসিতে ৭৫টি ওয়ার্ডের মধ্যে ২৪টি ওয়ার্ডে অন্তর্বর্তীকালীন বর্জ্য স্থানান্তর কেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে এবং বেশ কয়েকটি ওয়ার্ডে এসটিএসের জন্য জায়গা নির্ধারণ করা হলেও নানাবিধ জটিলতায় এতদিন সেসব স্থানে এসটিএস নির্মাণ ঝুলে ছিল। চলতি ডিসেম্বরের মধ্যেই ৩১টি ওয়ার্ডে এসটিএস নির্মাণে সফল করার আশা করছে সংস্থাটি। পাশাপাশি প্রতিটি ওয়ার্ডে একটি করে এসটিএস নির্মাণ করতে সংশ্লিষ্ট দফতরকে ইতোমধ্যে নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে। ২০২১ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে প্রতিটি ওয়ার্ডে একটি করে এসটিএস নির্মাণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।
এসব কার্যক্রম গ্রহণের মাধ্যমে নতুন আঙ্গিকে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মসূচি গ্রহণ করেছে ডিএসসিসি। গত ১৫ জুলাই থেকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এলাকায় ধানমন্ডি থেকে নতুন আঙ্গিকে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন ডিএসসিসি মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস।
এ বিষয়ে মেয়র বলেন, নির্বাচনী ইশতেহারে আমি বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কার্যক্রমকে ঢেলে সাজানোর ওয়াদা করেছিলাম। সেই আলোকে আমরা নতুন আঙ্গিকে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কার্যক্রম শুরু করছি। এই কার্যক্রমের আওতায় এখন থেকে ৭৫টি ওয়ার্ডে একসঙ্গে সন্ধ্যা ৬টা থেকে বর্জ্য সংগ্রহ কার্যক্রম শুরু হবে এবং সকাল ৬টার মধ্যে এই শহর পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন নগর হিসেবে আত্মপ্রকাশ করবে।
জানা গেছে, বর্জ্যের সঠিক ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে তা সম্পদে রূপান্তর করার লক্ষ্যে এর পুনর্ব্যবহার ও যথাযথ প্রক্রিয়াজাত করা লক্ষ্যে মাতুয়াইলে স্থাপিত বিদ্যমান ল্যান্ডফিলের পাশাপাশি ৩১ একর জায়গার উপর দ্রুততম সময়ে একটি ইনসিনারেশন প্লান্ট স্থাপনের উদ্যোগ নিয়েছে। সংগৃহীত বর্জ্যগুলোর মধ্যে পুনর্ব্যবহারযোগ্য বর্জ্যকে আলাদা করার পর অবশিষ্ট বর্জ্য এই প্লান্টে ভষ্মিভূত করে তা থেকে সার ও বিদ্যুৎ উৎপাদনের সুযোগও রয়েছে। এরই ফলে আধুনিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনার পাশাপাশি বর্জ্যকে সামগ্রিকভাবে সম্পদে রূপান্তর করাটা সহজতর ও টেকসই হবে বলে আশা করছে ঢাকা দক্ষিণ সিট করপোরেশন।


বিজ্ঞাপন