পঞ্চতথ্যে খুলবে ভাগ্য

এইমাত্র জাতীয়

দুই আসনে উপনির্বাচন
ইসির সিদ্ধান্ত আজ
মনোনয়ন সংগ্রহে হিড়িক

 

নিজস্ব প্রতিবেদক : ঢাকা-১৮ ও পাবনা-৪ শূন্য আসনের উপনির্বাচনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে রোববার বৈঠকে বসবে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। শনিবার ইসি সূত্রে জানা গেছে, রোববার বিকেল ৩টায় রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নূরুল হুদার সভাপতিত্বে কমিশনের ৬৮তম সভা অনুষ্ঠিত হবে।
ইসি সূত্রে আরও জানা যায়, বৈঠকে উপনির্বাচন ছাড়াও স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের স্থগিত, মেয়াদ উত্তীর্ণ ও শূন্য পদের নির্বাচন অনুষ্ঠান সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা হবে। এতে নির্বাচন কমিশনার মাহাবুব তালুকদার, কবিতা খানম, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শাহাদাত হোসেন চৌধুরী (অব.), রফিকুল ইসলাম ও নির্বাচন কমিশনের সিনিয়র সচিব মো. আলমগীর উপস্থিত থাকবেন।
এদিকে, সংসদের পাঁচটি শূন্য আসনের উপনির্বাচনে দলীয় প্রার্থী চূড়ান্ত করতে ১৭ আগস্ট থেকে মনোনয়ন ফরম বিতরণ করছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। তবে ঢাকা-১৮ আসন থেকে মনোনয়নপ্রত্যাশীদের ফরম তোলার হিড়িক পড়েছে। গত পাঁচ দিনে এ আসন থেকে নির্বাচনে লড়তে ৪৩ জন মনোনয়ন ফরম কিনেছেন, যা এ পাঁচ আসনের মধ্যে সর্বোচ্চ। তবে মনোনয়ন বিক্রি হবে রোববার পর্যন্ত।
আওয়ামী লীগ সভাপতির ধানমন্ডি কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, এ আসন থেকে আরও অনেকে ফরম কিনবেন বলে সম্ভাবনা রয়েছে। পাঁচটি শূন্য আসনের বিপরীতে গত পাঁচ দিনে ১১৭টি ফরম বিক্রি হয়েছে। গত পাঁচ দিনে ঢাকা-১৮ আসনের উপনির্বাচনে লড়তে ৪৩ জন দলীয় মনোনয়নের জন্য আবেদন করেছেন। এছাড়া নওগাঁ-৬ আসনের জন্য ৩০ জন, পাবনা-৪ আসনের জন্য ২৭ জন, ঢাকা-৫ আসনের জন্য ১৪ জন এবং সিরাজগঞ্জ-১ আসনের জন্য ৩ জন দলীয় মনোনয়ন পেতে আবেদন করেছেন।
এদিকে সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম (সিরাজগঞ্জ-১), সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যাডভোকেট সাহারা খাতুন (ঢাকা-১৮), সাবেক ভূমিমন্ত্রী শামসুর রহমান শরিফ ডিলু (পাবনা-৪), প্রখ্যাত শ্রমিক নেতা ইসরাফিল আলম (নওগাঁ-৬) ও হাবিবুর রহমান মোল্লার (ঢাকা-৫) মৃত্যুতে আসনগুলো শূন্য হয়। ঢাকা-১৮ আসনে গত ১২ বছর ধরে সংসদ সদস্য হিসেবে ছিলেন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যাডভোকেট সাহারা খাতুন।
প্রসঙ্গত, জাতীয় সংসদের ৫টি শূন্য আসনে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে উপনির্বাচন। আর এই উপনির্বাচনে দলীয় প্রার্থী বাছাই প্রক্রিয়ায় আওয়ামী লীগ মূলত অনুসরন করবে হাইকমান্ডের ‘পঞ্চতত্ত্ব’। দলটির কেন্দ্রীয় পর্যায় থেকে এমনটাই আভাস পাওয়া গেছে।
দলীয় সূত্রের তথ্য মতে, মূলত ৫টি বিষয়ে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়া হবে উপনির্বাচনে দলীয় প্রার্থী বাছাইয়ের ক্ষেত্রে। মূলত সাংগঠনিক পর্যায়ে অভিজ্ঞ, নিবেদিত এবং সৎ রাজনীতিকদের জনপ্রতিনিধিত্বে নিয়ে আসার কথা ভাবছে দলটির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব।
জানা গেছে, এরমাধ্যমে দলে অপ্রত্যাশিত অনুপ্রবেশ রোধ ও স্থানীয় পর্যায়ে সাংগঠনিক শক্তি বৃদ্ধির পাশাপাশি দুর্নীতি অপসারনে নিষ্ঠাবন ও সৎ নেতাদের কার্যকর ভূমিকা নিশ্চিত করতেই এমন পরিকল্পনা অনুসরন করতে যাচ্ছে ক্ষমতাসীন দলটি।
উপনির্বাচনকে সামনে রেখে ইতিমধ্যে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ফরম বিক্রয় শুরু হয়েছে। আগামী ২৩ আগস্ট পর্যন্ত মনোনয়ন ফরম বিক্রয় করা হবে। ২৪ আগস্ট আওয়ামী লীগের সংসদীয় ও মনোনয়ন সংক্রান্ত বোর্ডের বৈঠক আহ্বান করা হয়েছে। বোর্ডের সভাপতি হিসেবে থাকছেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে সাম্প্রতিক সময়ে আওয়ামী লীগের নাম ব্যবহার করে বিভিন্ন অনুপ্রবেশকারীর আচরন, তাদের দুর্নীতি এবং অপকর্মের কারণে মনোনয়ন সংক্রান্ত সংসদীয় বোর্ড মনোনয়নের ক্ষেত্রে কঠোর অবস্থান নেবে। অনেক যাচাই বাছাই এর মাধ্যমে এই মনোনয়ন দেওয়া হবে বলে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে।
জানা গেছে আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারক মহল ৫টি মূল বিষয় মনোনয়ন দেওয়ার ক্ষেত্রে বিবেচনা করবেন। এর মধ্যে রয়েছে :
ক. ১০ বছর বা বেশি সময় আওয়ামী লীগ করতে হবে : হুট করে দলে আসা কেউ এবার মনোনয়ন পাবেন না এটা মোটামুটি নিশ্চিত। আওয়ামী লীগের মনোনয়ন সংক্রান্ত বোর্ডের একাধিক সদস্যের সাথে কথা বলে জানা গেছে যে দলের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মনোভাব খুব সুস্পষ্ট। প্রধানমন্ত্রী জানিয়ে দিয়েছেন যে, যারা দীর্ঘদিন ধরে আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে জড়িত কেবল তারাই মনোনয়নের জন্য বিবেচিত হবে। আওয়ামী লীগ ২০০৮ সাল থেকে টানা ক্ষমতায় রয়েছে অর্থাৎ সাড়ে এগারো বছরে বেশি সময় ধরে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় রয়েছে। এই সময়ে অনেকেই নানা রকম সুবিধা পাওয়ার আশায় এবং অপকর্ম করার জন্য দুরভিসন্ধিমূলকভাবে আওয়ামী লীগে যোগ দিয়েছেন। এদেরই সব চাইতে বেশি টার্গেট থাকে মনোনয়ন প্রাপ্তির। আর এই কারণেই এবার মনোনয়ন দেওয়ার ব্যাপারে একটি নির্দিষ্ট সময়সীমা বেধে দেয়া হচ্ছে। যারা ১০ বছর বা তার বেশি সময় ধরে আওয়ামী লীগ করেনি তাদেরকে মনোনয়ন বঞ্চিত করা হবে।
খ. অতীত ভুমিকা : ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট, ২০০১ সালের অক্টোবরের নির্বাচনের পর ২০০৪ সালের গ্রেনেড হামলা এবং ২০০৭ সালের ওয়ান ইলেভেনের সময়ের ভূমিকা ছাড়াও অতীতে মনোনয়ন প্রত্যাশী ব্যক্তির ভূমিকা কি তা মনোনয়ন দেওয়ার ক্ষেত্রে বিবেচনা করা হবে। এই সময়কালগুলোই আসলে একজন ত্যাগী পরীক্ষিত কর্মীকে চিহ্নিত করার সব চাইতে ভালো সময় বলে মনে করছেন আওয়ামী লীগের নীতি নির্ধারকরা। কাজেই এই সময়গুলোতে তাদের ভুমিকা পর্যালোচনা করা হবে মনোনয়ন প্রদানের ক্ষেত্রে। এই সময়গুলোতে যাদের অবদান বেশি তারা মনোনয়নের ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার পাবে।
গ. দলের জন্য অবদান : মনোনয়ন প্রত্যাশী ব্যক্তিটি দলের জন্য কি অবদান রেখেছেন? দলকে সংগঠিত করার ক্ষেত্রে, দলকে এগিয়ে নেয়ার ক্ষেত্রে তার সুনির্দিষ্ট ভূমিকা মনোনয়ন বোর্ড বিবেচনা করবে মনোনয়ন দেয়ার ক্ষেত্রে।
ঘ. ফৌজদারি অপরাধ : এবার যে বিষয়টি মনোনয়ন দেওয়ার ক্ষেত্রে বিশেষ ভাবে দেখা হবে তা হলো, মনোনয়ন প্রত্যাশী ব্যক্তিটির বিরুদ্ধে কোন ফৌজদারি মামলা আছে কিনা। মামলা থাকলে কোন আমলে হয়েছে, কখন ও কি ধরণের অভিযোগ রয়েছে? ২০০৮ এর পর তার বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজী, হত্যা বা কোন রকম ফৌজদারি অপরাধ থাকলে তিনি মনোনয়ন দৌড়ে অনিবার্যভাবে পিছিয়ে পড়বেন। আওয়ামী লীগের একজন দায়িত্বশীল নেতা বলেছেন, ক্লিন ইমেজের প্রার্থী, যার বিরুদ্ধে কোনরকম ফৌজদারি অপরাধের অভিযোগ নেই, তাকে মনোনয়নের ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার দেয়া হবে।
ঙ. দুর্নীতির অভিযোগ : সাম্প্রতিক সময় আওয়ামী লীগের কিছু ব্যক্তির বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। বিশেষ করে ত্রানের অর্থ আত্মসাৎ, টেন্ডারে অনিয়ম, নিয়োগ বাণিজ্যের মতো অভিযোগ যাদের বিরুদ্ধে উঠেছে তারা মনোনয়ন দৌড়ে পিছিয়ে পড়বেন। দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে এই ধরনের ব্যক্তিদেরকেও এবার মনোনয়ন দেয়া হবে না বলে আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল সূত্র গুলো নিশ্চিত করেছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে এই পাঁচটি বিষয় বিবেচনা করেই সংসদীয় পাঁচটি আসনের প্রার্থী চূড়ান্ত করা হবে।


বিজ্ঞাপন