আটকে আছে আট লাখের বেশি ড্রাইভিং লাইসেন্স

জাতীয়

নিজস্ব প্রতিবেদক : স্মার্টকার্ড ছাপানো বন্ধ থাকা এবং করোনা পরিস্থিতির কারণে বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটির (বিআরটিএ) সেবা প্রায় পাঁচ মাস বন্ধ থাকায় আটকে আছে আট লাখের বেশি গ্রাহকের ড্রাইভিং লাইসেন্স। এতে ভোগান্তিতের পড়েছেন গ্রাহকরা। লাইসেন্সের পরিবর্তে বিআরটিএ থেকে দেওয়া হচ্ছে অস্থায়ী অনুমতিপত্র। এই অনুমতিপত্রের মেয়াদ শেষ হলে আবার বাড়ানো হচ্ছে মেয়াদ, কিন্তু মিলছে না ড্রাইভিং লাইসেন্স।
এ বিষয়ে খোঁজ নিলে বিআরটিএ কর্তৃপক্ষ জানায়, দীর্ঘদিনে জট লেগে থাকায় এই সমস্যার সহসাই সমাধান হচ্ছে না। তবে স্মার্টকার্ড প্রিন্ট করার জন্য নতুন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে গত জুলাই মাসের শেষ দিকে চুক্তি হয়েছে। আগামী ১৮ সপ্তাহের মধ্যে তাদের কাজ শুরু করার কথা রয়েছে।
গত বছর ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য আবেদন করেছিলেন শ্যামলীর বাসিন্দা আরিফ হোসেন। লাইসেন্স পেতে লিখিত, মৌখিক ও ব্যবহারিক পরীক্ষা দিলেও লাইসেন্স পাননি বলে জানিয়েছেন তিনি। বিআরটিএ থেকে একটি অস্থায়ী অনুমোদনপত্র দেওয়া হয়েছে। এর মেয়াদও শেষ হয়ে গেছে।
তিনি বলেন, ‘অস্থায়ী অনুমোদনপত্রের মেয়াদ শেষ হওয়ায় আবার বিআরটিএ গিয়েছিলাম। এবার তারা লাইসেন্স দিতে পারেনি। উল্টো এই অনুমোদনপত্রে মেয়াদ বাড়িয়ে দিয়েছে।’
এই অস্থায়ী অনুমোদনপত্র দিয়েই রাস্তায় গাড়ি চালানো যাবে বলে জানিয়েছেন ডিএমপির ট্রাফিক দক্ষিণ বিভাগের সহকারী কমিশনার (ধানমন্ডি) আকরাম হাসান। তিনি বলেন, ‘এখন এই অস্থায়ী অনুমোদনপত্রই লাইসেন্স। এটা নিয়ে রাস্তায় গাড়ি চালাতে পারবে। আইনি কোনও জটিলতা নেই।’
বিআরটিএ সূত্রে জানা গেছে, দেশের সব সার্কেল মিলিয়ে আট লাখের বেশি লাইসেন্স আটকে আছে। বিশ্ব ব্যাংকের কালো তালিকাভুক্ত হওয়ার আগের ভেন্ডর প্রতিষ্ঠান টাইগার আইটির সঙ্গে নতুন করে চুক্তি করেনি বিআরটিএ। নতুন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তির জন্য টেন্ডার আহ্বান করা হয়। গত ২৯ জুলাই নতুন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি হয়েছে।
নতুন কাজ পাওয়া প্রতিষ্ঠানের প্রতিদিন আট হাজার ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রস্তুত করার সক্ষমতা রয়েছে বলে জানিয়েছেন বিআরটিএ’র সহকারী পরিচালক (ইঞ্জিনিয়ারিং) মো. ইব্রাহীম খলিল। তিনি বলেন, ‘প্রতিদিন তারা আট হাজার স্মার্টকার্ড প্রস্তুত করে দেওয়ার কথা রয়েছে। দ্রুত সময়ের মধ্যেই তাদের কার্যক্রম চালু হবে।’
গত ২৬ মার্চ থেকে সেবা বন্ধ থাকার পর আবার ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য পরীক্ষাসহ অন্যান্য সেবা চালু হয়েছে। প্রায় পাঁচ মাস বন্ধ থাকায় এখন অনেক চাপ পড়ছে বলে জানিয়েছেন মিরপুর বিআরটিএ এর (ঢাকা মেট্রো সার্কেল-১) সহকারী পরিচালক (ড্রাইভিং লাইসেন্স) মো. শামসুল কবির। তিনি বলেন, ‘এখন অনেক চাপ থাকলেও একসঙ্গে অনেকের পরীক্ষা নেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। আমরা করোনা পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে প্রতিদিন ১৫০ জনের পরীক্ষা নিচ্ছি।’
মিরপুর বিআরটিএ-তে ৬৫ হাজার লাইসেন্স আটকে আছে বলে জানান এই কর্মকর্তা। এই জট নিরসনে পরীক্ষার্থীর সংখ্যা বাড়ানোসহ আরও বেশ কিছু উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন তিনি।
পাঁচ মাস পর গত ২৩ আগস্ট থেকে ড্রাইভিং টেস্ট চালু হলেও ড্রাইভিং লাইসেন্স দিতে আরও কয়েকমাস লাগবে বলে জানিয়েছেন বিআরটিএ চেয়ারম্যান নুর মোহাম্মদ মজুমদার। তিনি বলেন, ‘২৩ আগস্ট থেকে আমাদের ড্রাইভিং টেস্ট শুরু হয়েছে। আমি নিজে জোয়ারসাহারায় পরিদর্শন করে এসেছি। আমাদের সব সেবাই এখন চালু হয়েছে। প্রিন্টিং জটিলতা ও করোনা পরিস্থিতির কারণে কয়েক লাখ লাইসেন্স জমে আছে। নতুন ভেন্ডরের সঙ্গে চুক্তি হয়েছে। কাজ শুরুর প্রক্রিয়া চলছে। দুই-তিন মাসের মধ্যে লাইসেন্স দেওয়া শুরু করতে পারবো।’


বিজ্ঞাপন