হাইব্রিড পৃষ্ঠপোষকরা শনাক্ত

এইমাত্র রাজনীতি

নিজস্ব প্রতিবেদক : সরকার ও ক্ষমতাসীন দলের বিভিন্ন পর্যায়ে ঘাপটি মেরে থেকে একের পর এক অপকর্ম আর জনস্বার্থ বিরোধী কীর্তিকলাপে সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণœকারী হাইব্রিড নেতাকর্মীদের দলীয় পর্যায় থেকে পৃষ্ঠপোষকতা প্রদানকারীদের শনাক্ত করার নির্দেশ দিয়েছেন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দলের একটি বিশেষ সূত্র এ তথ্য জানিয়েছে।
সম্প্রতি রিজেন্ট কেলেঙ্কারির অন্যতম হোতা প্রতারক সাহেদকে গ্রেপ্তার করেছে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা। প্রতারক সাহেদ আওয়ামী লীগের পরিচয় ব্যবহার করে বিভিন্ন দুষ্কর্ম করতো। শুধু প্রতারক সাহেদ একা না সাম্প্রতিক সময়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে এ ধরনের দুর্বৃত্ত দুর্নীতিবাজ ও প্রতারক, যারা আওয়ামী লীগের নাম ভাঙ্গিয়ে বিভিন্ন রকম অপকর্ম করছে তাদেরকে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। ফরিদপুরে এ ধরনের বেশ কিছু অপরাধীকে আইনের আওতায় আনা হয়েছে। দেশের অন্যান্য স্থানেও এই অভিযান শুরু হয়েছে। এরআগে যুবলীগের ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি ঈসমাইল হোসেন চৌধুরী স¤্রাট, সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদ মাহমুদ, জিকে শামিমসহ বেশ কয়েকজন নেতাকে গ্রেফতার করা হয়।
এছাড়া দীর্ঘদিন ধরে যারা আওয়ামী লীগে অনুপ্রবেশ করেছে এবং আওয়ামী লীগের পরিচয় ব্যবহার করে টেন্ডারবাজী, দুর্নীতি, ক্যসিনো বাণিজ্যসহ নানা রকম অপকর্ম করছে তাদেরকে চিহ্নিত করা হয়েছে এবং তাদের বিরুদ্ধে আইনের যথাযথ প্রয়োগ ঘটানো হচ্ছে।
এ ব্যপারে আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা রয়েছে, আছে শূন্য সহিষ্ণুতার নীতি। যারাই অপরাধ করবে তাদের পরিচয় দেখা হবে না। অপরাধীকে অপরাধী হিসেবেই চিহ্নিত করা হবে এবং আইনের আওতায় আনা হবে। আর এই নির্দেশনা অনুযায়ী আইন প্রয়োগকারী সংস্থা এখন অপরাধীদের ব্যপারে অভিযান পরিচালনা করছে।
প্রসঙ্গত, আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য মোহাম্মদ নাসিম ও অ্যাডভোকেট সাহারা খাতুনের মৃত্যুতে ক্ষমতাসীন দলটির দলীয় রাজনীতিতে কিছুটা স্থবিরতা বিরাজ করছে। করোনার কারণে দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ দলের কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠক। অপরদিকে ১৪ দলের সমন্বয়কের মৃত্যুর পর জোটগত রাজনীতিতেও চলছে ভাটা। যদিও সে পদে নিয়োগ পেয়েছে দলের সিনিয়র সদস্য আমির হোসেন আমু। তবে পরিস্থিতি কিছুটা অনুকূলে আসায় আগামী মাসেই দলের তিনজন প্রেসিডিয়াম সদস্য, সম্পাদকম-লীর তিনজন ও কেন্দ্রীয় তিন সদস্যের শূন্যতা পুরণের আভাস পাওয়া গেছে। দলের সর্বোচ্চ প্রেসিডিয়ামের ফাঁকা পদ নিয়েই দলটির ভেতর-বাইরে আগ্রহ সবচেয়ে বেশি। আওয়ামী লীগের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী দলের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ সভাপতিম-লীর সদস্য সংখ্যা ১৯ জন। গত বছরের ২১ ডিসেম্বর দলের ২১তম জাতীয় সম্মেলনে একটি পদ ফাঁকা রেখে সভাপতিম-লীর ১৮ জন সদস্যের নাম ঘোষণা করা হয়। এতে নতুন মুখ হিসেবে আসেন শাজাহান খান, জাহাঙ্গীর কবির নানক ও আব্দুর রহমান। আর এই পদগুলো পূরন হলেই আওয়ামী লীগ হাইব্রিড দমনে মাঠে নামবে জুরেসুরে। দলীয় একাধিক সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। তবে এসব পদে যেনো বিতর্কিত কোনো নেতার নাম প্রস্তাব না করা হয় তার নির্দেশনা প্রধানমন্ত্রী আগেই দিয়ে রেখেছেন।
এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, করোনা পরিস্থিতির কারণে আমরা দীর্ঘদিন কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠক করতে পারিনি।
এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনগুলোর পূর্ণাঙ্গ কমিটি প্রায় চূড়ান্ত। এখন নেত্রীর (শেখ হাসিনা) অনুমোদনের অপেক্ষা। শুধু দেখা হবে যে, কোনো অনুপ্রবেশকারী, দুষ্কৃতকারী, সুবিধাবাদী কেউ তালিকায় আছে কি না। তারা যাতে সংগঠনগুলোর কমিটিতে ঢুকতে না পারে, সে বিষয়টি একটু যাচাই-বাছাই করে দেখা হবে।
এদিকে, পাঁচটি শূন্য আসনে উপনির্বাচনে একটি গুজব উত্তেজনা ছড়িয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুল এই উপনির্বাচনে অংশগ্রহণ করবেন বলে কে বা কারা গুজব ছড়িয়েছে এবং এটার ফলে বিপুল প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। অনেক মানুষ সায়মা ওয়াজেদ পুতুল নির্বাচনে যাবেন, এমনটি ভেবে আগাম অভিনন্দন জানিয়েছেন। এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন। কিন্তু সায়মা ওয়াজেদ পুতুল উপনির্বাচন করছেন না। উপনির্বাচনে মনোনয়নের জন্য যে ফরম রয়েছে, সে ফরম তার পক্ষ থেকে কেউ কেনেনি।
আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা একাধিকবার বলেছেন যে, তার পরিবার হলেন তিনি, শেখ রেহানা, সজীব ওয়াজেদ জয়, সায়মা ওয়াজেদ পুতুল, রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ববি, টিউলিপ সিদ্দিক এবং আজমিনা সিদ্দিক রুপন্তী। এদের বাইরে কেউ তার পরিবারের সদস্য নন। এই বিবেচনা থেকে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা সবসময় মনে করেন যে, শেখ হাসিনার পর রাজনীতিতে কে আসবেন তা নিয়ে আওয়ামী লীগের মধ্যে নানা রকম আলাপ আলোচনা হয়। সকলেই প্রত্যাশা করেন আওয়ামী লীগকে এগিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে এবং আওয়ামী লীগের অগ্রযাত্রাকে অব্যাহত রাখার ক্ষেত্রে বঙ্গবন্ধু পরিবারের কাউকেই হয়তো শেখ হাসিনার পরে দায়িত্ব নিতে হবে। তবে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা এই ধরণের কোন ইঙ্গিত দেননি। কাজেই এখনি বঙ্গবন্ধুর দৌহিত্ররা রাজনীতিতে আসছেন না বলেই প্রতীয়মান হচ্ছে। তাঁরা আসলে ভবিষ্যতে রাজনীতিতে আসবেন কিনা সেটা সময়ই বলে দেবে। তবে রাজনীতির মাঠে তাদের নাম ব্যবহার করে যারা রাজনৈতিক ফায়দা নেওয়ার পায়তারা করে তাদের বিরুদ্ধেও সোচ্চার থাকার তাগিদ রয়েছে উচ্চ পর্যায় থেকে।
অর্থ্যাৎ আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে আগাছা-পরগাছা স্বমূলে উচ্ছেদ করে দলকে একটি পূর্ণাঙ্গ সাংগঠনিক রূপ দেওয়ার নির্দেশ রয়েছে দলীয় সভাপতির। এরই ধারাবাহিকতায় দলের সকলস্তরে ঘাপটি মেরে থাকা অনুপ্রবেশকারী হাইব্রিডদের দমন করাই এখন আওয়ামী লীগের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ।


বিজ্ঞাপন