সেক্টর কমান্ডার আবু ওসমান চৌধুরী আর নেই

জাতীয়

রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর শোক
বিশেষ প্রতিবেদক : মহান মুক্তিযুদ্ধে ৮ নম্বর সেক্টরের কমান্ডার লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) আবু ওসমান চৌধুরীর মৃত্যুতে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন। শনিবার এক শোক বার্তায় রাষ্ট্রপতি বলেন, মহান মুক্তিযুদ্ধে আবু ওসমান চৌধুরীর অবদান জাতি চিরদিন শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করবে। অপর এক শোক বার্তায় মহান মুক্তিযুদ্ধে আবু ওসমান চৌধুরীর অসামান্য অবদানের কথা গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আবু ওসমান চৌধুরীর মৃত্যুতে দেশ একজন বীর মুক্তিযোদ্ধাকে হারালো। মুক্তিযুদ্ধে তার অবদানের কথা জাতি চিরদিন শ্রদ্ধাভরে স্মরণ রাখবে। পৃথক এ শোক বার্তায় মরহুমের রুহের মাগফিরাত কামনা করেন ও তার শোক-সন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী। এছাড়া আরও শোক প্রকাশ করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি ও সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ।
সেক্টর কমান্ডার লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) আবু ওসমান চৌধুরী শনিবার সকালে ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। তার বয়স হয়েছিল ৮৪ বছর। মহান মুক্তিযুদ্ধে ৮ নম্বর সেক্টরের কমান্ডার লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) আবু ওসমান চৌধুরী মারা গেছেন (ইন্নালিল্লাহি … রাজিউন)। ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় শনিবার সকালে তার মৃত্যু হয়। তার বয়স হয়েছিল ৮৪ বছর।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন তার ব্যক্তিগত সহকারী আবুল বাশার। তিনি জানান, আবু ওসমান চৌধুরী দীর্ঘদিন ধরেই বার্ধক্যজনিত নানা রোগে ভুগছিলেন। স্মৃতিশক্তিও ক্রমে লোপ পাচ্ছিল তার। গত ৩০ আগস্ট তাকে সিএমএইচে ভর্তির পর তার করোনা পজেটিভ আসে। এর তিন দিন পর আবার পরীক্ষা করা হলে করোনা রিপোর্ট নেগেটিভ আসে। এর মধ্যে তার ব্রেন টিউমারও ধরা পড়ে।
আবু ওসমান চৌধুরী ১৯৩৬ সালের ১ জানুয়ারি চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জ উপজেলার মদনেরগাঁও গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজ থেকে বিএ পাস করার পর ১৯৫৮ সালে পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে কমিশন পান তিনি। ১৯৬৮ সালের এপ্রিল মাসে পদোন্নতি পেয়ে মেজর হন।
১৯৬০ সালে তিনি কুমিল্লার মৌলভী পাড়ার মনসুর আহম্মেদের বড় মেয়ে নাজিয়া খানমকে বিয়ে করেন। তার দুই মেয়ে নাসিমা ওসমান ও ফাওজিয়া ওসমান।
একাত্তরের মার্চে ইস্ট পাকিস্তান রাইফেলসের চতুর্থ উইংয়ের কমান্ডার হিসেবে চুয়াডাঙ্গার দায়িত্বে ছিলেন আবু ওসমান। ২৫ মার্চ রাতে ঢাকায় পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর বর্বর হত্যাযজ্ঞের খবর পেয়ে ২৬ মার্চ সকালে তিনি বিদ্রোহ ঘোষণা করে একদল সৈনিককে নিয়ে মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেন। পরে তাকে মুক্তিযুদ্ধে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে ৮ নম্বর সেক্টরের কমান্ডারের দায়িত্ব দেওয়া হয়।
দেশ স্বাধীন হওয়ার পর আবু ওসমান চৌধুরীকে লেফটেনেন্ট কর্নেল হিসেবে পদোন্নতি দেওয়া হয়। পরে বঙ্গবন্ধু তাকে আর্মি সার্ভিস কোরের (এএসসি) পরিচালকের দায়িত্ব দেন। বঙ্গবন্ধু হত্যাক-ের পর ১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বর সেনা অভ্যুত্থানের সময় একদল সেনসদস্য আবু ওসমান চৌধুরীকে হত্যার জন্য তার গুলশানের বাড়িতে হামলা করে। বাড়িতে না থাকায় সেদিন তিনি প্রাণে বেঁচে গেলেও নিহত হন তার স্ত্রী নাজিয়া খানম।
১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে আবু ওসমান চৌধুরীকে বিজেএমসির চেয়ারম্যান করা হয়। পরে তাকে চাঁদপুর জেলা পরিষদের প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। স্বাধীনতা পদকপ্রাপ্ত আবু ওসমান চৌধুরী যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে একাত্তরের ঘাতক-দালাল নির্মূল কমিটি গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। তিনি সেক্টর কমান্ডারস ফোরামের জ্যেষ্ঠ ভাইস চেয়ারম্যান ছিলেন।
আমির হোসেন আমুর শোক : মহান মুক্তিযুদ্ধের ৮ নং সেক্টরের কমান্ডার লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব:) আবু ওসমান চৌধুরীর মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য, ১৪ দলের সমন্বয়ক ও মুখপাত্র আমির হোসেন আমু এমপি। এক শোকবার্তায় তিনি মরহুম আবু ওসমান চৌধুরীর আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন ও তার শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান। শোক বার্তায় আমির হোসেন আমু বলেন বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধে সেক্টর কমান্ডার হিসাবে আবু ওসমান চৌধুরী’র বীরত্বপূর্ণ অবদানের কথা জাতি চিরদিন শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করবে।


বিজ্ঞাপন