জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে বাকীরাও

এইমাত্র জাতীয়

দগ্ধদের সর্বোচ্চ চিকিৎসা নিশ্চিতের নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর

 

বিশেষ প্রতিবেদক : তল্লা মাঠে এখন লাশের সারি, এলাকাজুড়ে কালো পতাকা। মসজিদে পড়ে আছে জায়নামাজ, টুপি, তছবি, চশমা। তবে নেই মানুষগুলো। গ্যাস লাইনে লিকেজ ও সংশ্লিষ্টদের গাফিলতির কারণে নিভে গেলো অনেক তাজা প্রাণ। সেইসঙ্গে ধ্বংস হয়েছে পরিবার-স্বজনদের স্বপ্ন। স্থানীয়রা নারায়ণগঞ্জের বায়তুস সালাত জামে মসজিদে গ্যাস লিকেজের বিষয়ে বারবার অভিযোগ করার দাবি করলেও, বিষয়টি অস্বীকার করেছেন তিতাস গ্যাসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক। তবে তদন্তে কারো গাফিলতি বা অবহেলার প্রমাণ পেলে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার কথা জানান তিনি। নারায়ণগঞ্জের বায়তুস সালাত মসজিদের কোণায় কোণায় এখনো ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে আগুনের তা-বের চিহ্ন। কতটা ভয়ঙ্কর বিস্ফোরণের সম্মুখীন হয়েছিলেন নামাজে থাকা মুসল্লিরা, বলে দিচ্ছে পুড়ে যাওয়া জায়নামাজ, ভাঙ্গা কাঁচ, মসজিদের ছিন্ন বিচ্ছিন্ন আসবাব। তবে ধ্বংসযজ্ঞের মাঝেও পবিত্র কোরান আছে অক্ষত।
নারায়ণগঞ্জে মসজিদে ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনায় ক্ষণে ক্ষণে বাড়ছে মৃতদের সংখ্যা। বিস্ফোরণে দগ্ধ, শেখ হাসিনা বার্ন ইন্সটিটিউটে চিকিৎসাধীন ৩৭ জনের মধ্যে শিশু ও মসজিদের মুয়াজ্জিনসহ এ পর্যন্ত ১৬ জন মারা গেছেন। দগ্ধ বাকি ২১ জনের অবস্থাও আশংকাজনক। শনিবার হাসপাতালের প্রধান সমন্বয়ক ডা. সামন্তলাল সেন আরও জানান, বাকিরাও রয়েছেন জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে। তিনি বলেন, আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দগ্ধদের সর্বোচ্চ চিকিৎসা দেয়ার নির্দেশনা দিয়েছেন। তিনি গভীর শোকও প্রকাশ করেছেন। ডাক্তাররা জানিয়েছেন, সবারই অবস্থা সংকটাপন্ন, কমবেশি সবারই পুড়েছে শ্বাসনালী।
নারায়ণগঞ্জ শহরের তল্লা এলাকার মসজিদে বিস্ফোরণ ও অগ্নিকা-ে হতাহতের ঘটনায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শনিবার গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন। তিনি নিহতদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করেছেন ও তাদের শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানিয়েছেন এবং আহতদের দ্রুত সুস্থতা কামনা করেছেন। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে জানানো হয়েছে, শেখ হাসিনা এ ব্যাপারে সর্বদা খোঁজ-খবর রাখছেন এবং সর্বোচ্চ চিকিৎসা নিশ্চিত করার নির্দেশ দিয়েছেন। খবর ইউএনবির। প্রসঙ্গত, নারায়ণগঞ্জে মসজিদে বিস্ফোরণে মৃতের সংখ্যা বেড়ে শনিবার সকালে ১১ জনে পৌঁছেছে। শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের প্রধান সন্বয়ক ডা. সামন্ত লাল সেন এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। ডা. সামন্ত লাল জানান, মসজিদে সাতটি এয়ার কন্ডিশনার বিস্ফোরণের পরে আহত ৩৭ জনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। আহতদের মধ্যে পর্যন্ত ১৬ জন মারা গেছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে আহতদের সর্বোত্তম চিকিৎসা নিশ্চিত করার নির্দেশ দিয়েছেন।
বিস্ফোরণের ঘটনায় নিহতরা হলেন- রিফাত (১৮), মোস্তফা কামাল (৩৪), জুবায়ের (১৮), সাব্বির (২১), কুদ্দুস ব্যাপরী (৭২), হুমায়ুন কবির (৭০), ইব্রাহিম (৪৩), মোয়াজ্জিন দেলোয়ার হোসেন (৪৮), জুনায়েদ (১৭), জামাল (৪০), জুবায়ের (৭) ও রাসেল (৩৪)। এদের মধ্যে ৪ জনের পরিচয় এখনও পাওয়া যায়নি। এদিকে হাসপাতালে দগদ্ধদের দেখতে এসে স্থানীয় প্রশাসনিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, সব কিছুই তদন্ত করে দেখা হবে। এ ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটিকে ১০ দিনের মধ্যে রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার ফতুল্লা থানার পশ্চিম তল্লার বাইতুছ সালাত জামে মসজিদে শুক্রবার এশার নামাজের সময় হঠাৎ বিকট শব্দে মসজিদের কাছের বৈদ্যুতিক ট্রান্সফর্মারে বিস্ফোরণ ঘটে। সঙ্গে সঙ্গে মসজিদের ভেতরে এসির বিস্ফোরণও ঘটে। মুহূর্তে মসজিদের ভেতরে আগুন ধরে যায়। আগুনের ফুলকি ছড়িয়ে পড়লে মুসল্লিরা দগ্ধ হতে থাকেন। দগ্ধ হন মসজিদের ইমাম মালেক আনসারী (৬৫) ও মুয়াজ্জিন দেলোয়ার হোসেন (৪৫), ফটো সাংবাদিক নাদিম হোসেনসহ (৪২) ৩৭ জন। আহতদের প্রথমে নারায়ণগঞ্জ ১০০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে নেয়া হয়। পরে তাদের ঢাকা মেডিকেলের শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ভর্তি করানো হয়।
তিতাসের গ্যাস কর্তৃপক্ষের গাফিলতি বিস্ফোরণের ঘটেছে বলে দাবি করছে স্থানীয়রা। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, অনেকদিন ধরেই এই মসজিদের নিচে তিতাসের লাইনের লিকেজ থেকে গ্যাস বের হবার গন্ধ পাওয়া যাচ্ছিল। এ নিয়ে বারবার অভিযোগ করেও কোন পদক্ষেপ না নেয়ার অভিযোগ করেন স্থানীয়রা।
এদিকে, শহরের পশ্চিম তল্লা এলাকার বাইতুস সালাত জামে মসজিদে বিস্ফোরণ এসি নয় গ্যাস লাইন থেকে ঘটেছে বলে জানিয়েছেন ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সাজ্জাদ হোসাইন। শবিবার দুপুরে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে এ কথা জানান তিনি। জেনারেল সাজ্জাদ হোসাইন বলেন, মসজিদের নিচ দিয়ে (মেঝেতে) একটি গ্যাস পাইপ রয়েছে। আর এ পাইপের লিকেজ দিয়ে মসজিদের ভেতর গ্যাস জমা হয়। মসজিদে এসি চলার কারণে দরজা জানালা সব বন্ধ রাখা হয়। আলো বাতাস বের হতে পারে না। ফলে নির্গত গ্যাস বের হতে পারেনি। আর সেই স্পার্কিং থেকে বিস্ফোরণ ঘটতে পারে।
তিনি আরো বলেন, মসজিদের মেঝেতে থাকা পানিতে গ্যাসের বুদবুদ ওঠায় সন্দেহ হয়। পরে খোঁজ নিয়ে দেখা যায় মসজিদের নিচ দিয়ে তিতাস গ্যাসের অনেকগুলো লাইন গেছে। আর পাইপগুলোর প্রতিটিতে একাধিক লিকেজ রয়েছে। সেই লিকেজের গ্যাস সব সময় মসজিদে ওঠতো। আর নামাজের আগে থেকে মসজিদের দরজা জানালা বন্ধ করে এসি চালু করার ফলে পুরো রুমে এসি ও গ্যাস মিশে যায়। আর তাতে করে ভয়াবহ এ বিস্ফোরণ ঘটে। এসি বিস্ফোরণ হওয়ার কারণ হলো এসিতে গ্যাস ছিল। ফায়ার সার্ভিসের ওই কর্মকর্তা বলেন, তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষকে অবহিত করলে তারাও দ্রুত এখানে এসে আমাদের ধারণাকে নিশ্চিত করে। তারাও জানান- গ্যাসের লাইন থেকেই এই বিস্ফোরণ হয়েছে।
নিহতদের লাশ ময়নাতদন্ত ছাড়াই পরিবার ও স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হবে বলে জানিয়েছে পুলিশ। তবে এক্ষেত্রে আবেদন করতে হবে। যদি নিহতদের পরিবারের কারও আপত্তি থাকে সেক্ষেত্রে মৃতদেহের ময়নাতদন্ত করা হবে। এসি বিস্ফোরণের ঘটনার পর শনিবার দুপুর ১২টার দিকে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ভর্তিকৃত দগ্ধ ও নিহতদের ব্যক্তিদের দেখতে এসে এসব কথা বলেন নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) মো. জায়েদুল আলম। তিনি বলেন, এসি বিস্ফোরণে দগ্ধ হয়ে নিহতদের মৃতদেহ তাদের বাড়িতে পৌঁছে দেওয়া হবে। নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসন ও পুলিশ মিলে এ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করবে।
ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার যেভাবে চাইবে আমরা সেভাবেই মৃতদেহ হস্তান্তর করা হবে । নিহতদের মৃতদেহ গুলো শাহবাগ থানা পুলিশের মাধ্যমে হস্তান্তর করা হবে। এসপি জায়েদুল আলম আরও বলেন, আমরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। প্রাথমিকভাবে পরীলক্ষিত হয়েছে এসি বিস্ফোরণে কারণে এ দুর্ঘটনাটি ঘটেছে। মসজিদের ভেতরে ছয়টি এসি ছিল। সবগুলো এসিই বিস্ফোরণ ঘটে। মসজিদের সবগুলো জানালার কাঁচ ভেঙে যায়। আগুনে মসজিদের সিলিং ফ্যানগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ঘটনাস্থলে মানুষের রক্ত মাংস ও চামড়া লেগে থাকতে দেখা গেছে।
দগ্ধ হয়ে আহত ও নিহত স্বজনদের সহায়তার জন্য নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে হাসপাতালে একটি হেল্প ডেস্ক খোলা হয়েছে। আমরা গত শুক্রবার রাত থেকেই তাদের সহায়তা দিচ্ছি। এ ঘটনায় শনিবার দুপুর পর্যন্ত ১৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। যারা আহত হয়েছেন, তাদের অবস্থাও আশঙ্কাজনক বলেও জানান তিনি। এসি বিস্ফোরণের ঘটনায় পাঁচ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। ওই কমিটিতে জেলা প্রশাসনের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট, জেলা প্রশাসনের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ), তিতাস গ্যাস, বিদ্যুৎ বিভাগের ইঞ্জিনিয়ার, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের এক জন স্টেশন অফিসার রয়েছেন। মসজিদের কী কারণে এসি বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটলো সেটি বের করার চেষ্টা চলছে। এদিকে মসজিদের নিচে তিতাস গ্যাসের লাইন রয়েছে। যা টাইলস দিয়ে ঢাকা ছিল। এ মুহূর্তে বিস্ফোরণের সঠিক কারণ বলা যাচ্ছে না। এসি বিস্ফোরণের ঘটনায় ৩০৪ ধারায় একটি মামলা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলেও জানান এসপি জায়েদুল।
অপরদিকে, নারায়ণগঞ্জে মসজিদে বিস্ফোরনের ঘটনায় নাশকতার আশংকা করছেন সংসদ সদস্য এ কে এম শামীম ওসমান। তিনি বলেন,ন্যাক্কারজনক এঘটনায় আমি নাশকতার আশংকা উড়িয়ে দিচ্ছি না। তবে এব্যাপারে অধিকতর তদন্ত প্রয়োজন। শনিবার দুপুরে ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে তিনি একথা বলেন। তবে তার বক্তব্য নিয়ে মিডিয়া যাতে পক্ষপাত না করে সে বিষয়ে অনুরোধ করেন।
শামীম ওসমান বলেন, আমি কোন তদন্তকারী কর্মকর্তা না, এখানে আমার বলার তেমন কিছুই নেই। ২০০১ সালে চুন খেয়ে মুখ পুড়েছে, সেই আলোকে কিছু বলতে পারি। এসি বিস্ফোরিত হলে বাহিরে হবে ভিতরে না, এসি’র চেম্বার হয়তো ছাদে আছে। দ্বিতীয়ত গ্যাসের লাইন দেখলাম বাহিরে গেটের সাথে আছে ওইটা ভিতরে ঢুকবে না। বাতাস ওপেন বেড়িয়ে যাবে, ভিতরে কিছু থাকলে সেটা তদন্তকারী কর্মকর্তারা বের করবে। আসলো কোথা থেকে ফায়ার টা? এখানে এসি ব্যতীত অন্য কোন ঘটনা আছে কিনা তা তদন্ত করা প্রয়োজন বলে আমি মনে করছি।
এসময় শামীম ওসমান আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রী নিজে এটার ব্যাপারে যোগাযোগ করছেন, চিকিৎসার ব্যবস্থা করছেন। যারা নিহত-আহত হয়েছেন কর্মক্ষম না, তাদের বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। আমরাও তাদের দিকে সুদৃষ্টি রাখবো। কিন্তু, মানুষের জীবন তো ফিরিয়ে দেয়া যাবে না। যারা মৃত্যুবরণ করেছেন, চলেই গেছেন উনারা শহীদের মর্যাদা পেয়েই গেছেন। যারা মৃত্যুবরণ করেন নি, তাদের পরিবারের যে কি ব্যাথা-শোক, যার গেছে সেই বুঝতে পারে, আমরা পারবো না।
এদিকে নারায়ণগঞ্জ শহরের পশ্চিম তল্লা এলাকায় বায়তুস সালাত জামে মসজিদে গ্যাসের লিকেজ থেকে বিস্ফোরণে হতাহতের ঘটনায় তিতাসের কোনো গাফিলতি থাকলে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানিয়েছেন কোম্পানিটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক আলী মো. আল মামুন। শনিবার সকালে বিস্ফোরণস্থল পরিদর্শনে গিয়ে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন তিনি।
দগ্ধ ব্যক্তিদের মধ্যে ৩৭ জনকে গুরুতর অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তাদের মধ্যে ১৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। বিস্ফোরণে মসজিদের ছয়টি এসি পুড়ে গেছে। জানালার কাচ উড়ে গেছে। ফায়ার সার্ভিসের ৫টি ইউনিট ঘটনাস্থলে এসে আধা ঘণ্টা চেষ্টা চালিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। গ্যাস থেকেই এ বিস্ফোরণ ঘটেছে বলে জানিয়েছেন ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স নারায়ণগঞ্জ অফিসের উপসহকারী পরিচালক আবদুল্লাহ আরেফিন।
দুর্ঘটনার পর রাতে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে তিনি জানান, মসজিদের সামনের গ্যাসের লাইনে লিকেজ ছিল। ধারণা করা হচ্ছে এসি চালানোর সময় জানালা বন্ধ থাকায় ওই গ্যাস ভেতরে জমা হয়ে যায়। হঠাৎ কেউ বৈদ্যুতিক সুইচ অফ-অন করতে গেলে স্পার্ক থেকে এই বিস্ফোরণ হয়ে থাকতে পারে। তিনি আরও বলেন, মসজিদের মেঝের নিচ দিয়ে গ্যাসের লাইন গেছে। পানি দেয়ার সময় বুদ বুদ করে গ্যাস বের হচ্ছিল।
ফায়ার সার্ভিসের ওই কর্মকর্তা বলেন, আমরা ধারণা করে তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষকে অবহিত করলে তারা দ্রুত এখানে এসে আমাদের ধারণাকে নিশ্চিত করে। তারা জানান- গ্যাসের লাইন থেকেই এই বিস্ফোরণ হয়েছে। এদিকে স্থানীয় মুসল্লিরা অভিযোগ করেছেন, মসজিদে নামাজ পড়তে গেলে গ্যাসের গন্ধ পেতেন। এবিষয়ে মসজিদ কমিটির মাধ্যমে একাধিকবার জানানো হয়েছিল তিতাস কর্তৃপক্ষকে। তবে তারা এ বিষয়টি আমলে নেয়নি।আবার অনেকেই অভিযোগ করেছেন, টাকা না দেয়ায় পাইপ মেরামত করেনি তিতাস কর্তৃপক্ষ।
এ প্রসঙ্গে তিতাস এমডি বলেন, মুসল্লিদের অভিযোগ তদন্ত করা হচ্ছে। অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেলে দোষী কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। বিস্ফোরণের ঘটনায় ৫ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে বলেও জানান তিনি।
স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সচিব আবদুল মান্নান বলেছেন, ‘বার্ন ইউনিটের চিকিৎসক, পরিচালক ও উপদেষ্টাদের সঙ্গে আমি বৈঠক করেছি। তাদেরকে বলেছি সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাওয়ার জন্য। আমাদের চিকিৎসার মধ্যে সর্বোচ্চ দেওয়ার ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি। এখন পর্যন্ত ১৬ জন মারা গেছে।’ শনিবার দুপুরে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে নারায়ণগঞ্জে মসজিদে বিস্ফোরণের ঘটনায় দগ্ধদের দেখতে এসে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, ‘আমি নিজে ব্যক্তিগতভাবে প্রত্যেক রোগীকে দেখেছি। তাদের যে অবস্থা আমরা এমনটা বলতে পারবো না যে তারা প্রত্যেকে সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে যাবে। তবে এইটুকু আমরা বলতে পারি আমাদের বাংলাদেশে যতটুকু চিকিৎসা ব্যবস্থা আছে এই উন্নত হাসপাতালে তার সর্বোচ্চ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।’ আবদুল মান্নান আরো বলেন, ‘আপনারা শুনলে খুশি হবেন- প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শুক্রবার রাত থেকে একাধিকবার খোঁজ নিয়েছেন। জানতে চেয়েছেন চিকিৎসায় আর কী কী করা যেতে পারে। সর্বোচ্চ কী চিকিৎসা নেওয়া যেতে পারে, দগ্ধদের জন্য কী করা যায়। তিনি সার্বক্ষণিক খোঁজখবর রাখছেন।’
তদন্ত কমিটির বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘নারায়ণগঞ্জে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে এবং তারা কাজ করছে। আমরা যতটুকু শুনেছি তারা ঘটনার সূত্রপাত আইডেন্টিফাই করেছে এবং গ্যাস পাইপের লিক কোনো জায়গা থেকে বের হয়েছে তাও জানা গেছে। তদন্ত শেষ হওয়ার পর জানা যাবে কেন এ ঘটনা ঘটেছে। জেলা প্রশাসকের কাছ থেকে শুনেছি তদন্ত অব্যাহত আছে, আশা করি দ্রুতই আপনারা জানতে পারবেন।’


বিজ্ঞাপন