গণপরিবহন ‘বিরতিহীন’ সার্ভিস ১০ টাকার ভাড়া ৩০

চট্টগ্রাম সারাদেশ

চট্টগ্রাম প্রতিনিধি : চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় এলাকার বাসিন্দা জহির হোসেন চাকরি করেন নগরের অক্সিজেন মোড়ের একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে। ৩ নম্বর রোডের গণপরিবহনে অফিসে যাতায়াত করেন তিনি।
চবি ১ নম্বর গেইট থেকে অক্সিজেন মোড়ের ভাড়া ১০ টাকা হলেও সোমবার (৭ সেপ্টেম্বর) সকালে বাসের হেলপার তার কাছ থেকে দাবি করেন ৩০ টাকা। কারণ জানতে চাইলে জহিরকে জানান, ‘আমরা চবি ১ নম্বর গেইট থেকে নিউ মার্কেট বিরতিহীন সার্ভিস পরিচালনা করছি। যেখানেই নামেন ভাড়া ৩০ টাকা।’
গণপরিবহনে বিরতিহীন সার্ভিস পরিচালনার নিয়ম না থাকায় ভাড়া নিয়ে বেসরকারি কর্মকর্তা জহিরের সঙ্গে ওই বাসের হেলপারের শুরু হয় বাগবিত-া। এক পর্যায়ে জহিরকে নামিয়ে দেওয়া হয় বাস থেকে। শুধু জহিরের সঙ্গে নয়, গণপরিবহনে বিরতিহীন সার্ভিসের নামে বাড়তি ভাড়া আদায়ের নতুন এই কৌশলে একাধিক যাত্রীর সঙ্গেই ঘটছে এমন ঘটনা।
জহির হোসেন জানান, হাটহাজারী থেকে নিউ মার্কেট রুটে হাটহাজারী স্পেশাল সার্ভিস চালু আছে। চবি ১ নম্বর গেইট থেকে নিউ মার্কেট রুটে গণপরিবহন চালু করা হয়েছে আমাদের মতো যাত্রীদের জন্য।
‘করোনাকে পুঁজি করে ৩ নম্বর রুটের কিছু কিছু বাস চালক-হেলপার নানা অযুহাতে যাত্রীদের কাছ থেকে বেশি ভাড়া আদায় করছেন। আমার গন্তব্যের ভাড়া ১০ টাকা। তাহলে আমি ৩০ টাকা কেনো ভাড়া দেবো?’
সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, করোনার কারণে দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর গত ১ জুন ৬০ শতাংশ বেশি ভাড়া নিয়ে এবং দুই সিটে একজন যাত্রী বহন করে গণপরিবহন চলাচলের অনুমতি দেয় সরকার। তবে ১ সেপ্টেম্বর থেকে সেই নিয়ম প্রত্যাহার করা হয়। সিটপ্রতি যাত্রী নিয়ে আগের ভাড়ায় ফিরে যেতে নির্দেশনা দেওয়া হয় গণপরিবহন সংশ্লিষ্টদের।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) এবং ট্রাফিক পুলিশের অভিযানের মধ্যেও চট্টগ্রাম নগরে চলাচল করা গণপরিবহনে বন্ধ হয়নি অতিরিক্ত যাত্রী এবং বেশি ভাড়া নেওয়া।
করোনা ভাইরাসের কারণে সরকার প্রতিটি গণপরিবহনে আসনের অতিরিক্ত যাত্রী নেওয়া নিষিদ্ধ করলেও অধিকাংশ গণপরিবহনে দাঁড়িয়ে যাত্রী নিতে দেখা গেছে।
একাধিক যাত্রী জানান, অফিস ও পোশাক কারখানাসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কর্মরত ব্যক্তিদের যাতায়াত থাকায় সকালে এবং সন্ধ্যায় গণপরিবহনে যাত্রীর প্রচুর চাপ থাকে।
সকালের দিকে জেলা প্রশাসন এবং বিআরটিএ অভিযান পরিচালনা করার কারণে গণপরিহনের চালক-হেলপাররা অতিরিক্ত যাত্রী নেওয়ায় কিছুটা ‘শিথিলতা’ দেখালেও সন্ধ্যার দিকে গণপরিবহনগুলোতে স্বাস্থ্যবিধি মানার কোনো বালাই থাকে না। এই সময় অনেকে ‘বিরতিহীন’ সার্ভিসের নাম দিয়ে যাত্রীদের কাছ থেকে দ্বিগুণ ভাড়াও আদায় করেন। গাড়িতে অতিরিক্ত যাত্রী নেওয়া এবং বেশি ভাড়া নেওয়া নিয়ে যাত্রীরা প্রতিবাদ করলেই শুরু হয় বাগবিত-া। কখনও কখনও গাড়ি থেকে নামিয়ে দেওয়া হয় যাত্রীদের।
জানতে চাইলে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পরিবহন মালিক গ্রুপের সভাপতি মো. বেলায়েত হোসেন জানান, নগরে যত রুট আছে সেখানে আমাদের বাস-মিনিবাস চলছে। বিভিন্ন রুটে চলাচলকারী বাস-মিনিবাস মালিকদের নিয়ে আমরা সভা করেছি।
‘তাদের স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছি, চালক বা স্টাফদের খামখেয়ালিপনার কারণে প্রশাসন বা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী মামলা দিলে বা জরিমানা করলে সমিতি তার দায় নেবে না। ’
এ বিষয়ে চট্টগ্রামের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ড. বদিউল আলম জানান, সন্ধ্যায় গণপরিবহনে স্বাস্থ্যবিধি না মানা এবং অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের বিষয়টি আমাদের নজরে এসেছে।
‘এখন থেকে সন্ধ্যায়ও নগরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে অভিযান পরিচালনা করা হবে। আমাদের পক্ষে যতটুকু সম্ভব নগরবাসীর গণপরিবহনে চলাচল স্বাচ্ছন্দ্যময় করতে, ততটুকু করতে চাই আমরা।’


বিজ্ঞাপন