কর্মস্থলে ফিরতে রাস্তায় প্রবাসীরা

এইমাত্র জাতীয় জীবন-যাপন ঢাকা রাজধানী

নিজস্ব প্রতিবেদক : মহামারি করোনায় দেশে বেড়াতে এসে আটকা পড়েন অনেক সৌদি প্রবাসী। পুনরায় সৌদি আরব ফেরা নিয়ে শঙ্কা তৈরি হয়েছে তাদের মধ্যে। রিটার্ন টিকিট কেটে এসেও যাওয়া অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে অনেক প্রবাসীর। কারণ কোভিড-১৯ পরিস্থিতির কারণে সীমিত পরিসরে ফ্লাইট চালু করেছে সৌদি অ্যারাবিয়ান এয়ারলাইন্স ও বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স। ফলে খুব বেশি প্রবাসীর ফেরার সুযোগ এখনই হচ্ছে না। সৌদি এয়ারলাইন্স ২৭ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মাত্র ১ হাজার ৫০০ জন রিটার্ন টিকিটধারীকে টোকেন দিয়েছে। কিন্তু এখনও বাকি বহু সহস্রাধিক প্রবাসী।
জানা গেছে, কর্মস্থলে ফিরতে মরিয়া প্রবাসীরা। করোনা মহামারির জন্য দেশে ফিরে আটকা পড়ে যায় হাজার হাজার প্রবাসী। কর্মস্থলে ফিরতে গতকাল সৌদি আরবের বিমান টিকিট পেতে রাস্তায় নেমেছেন প্রবাসীরা। টিকিটের জন্য প্রবাসীরা ভিড় করেছেন রাজধানীর কারওয়ান বাজারে সৌদি অ্যারাবিয়ান এয়ারলাইন্স এবং মতিঝিলে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের অফিসের সামনে।
শনিবার সৌদি অ্যারাবিয়ান এয়ারলাইন্সের কাউন্টার থেকে ৮৫১ থেকে ১২০০ নম্বর টোকেনধারীদের ফেরার টিকিট দেওয়া হচ্ছে। আজ রোববার ১২০১ থেকে ১৫০০ নম্বর টোকেনধারীদের টিকিট দেওয়া হবে। যারা টোকেন পাননি, তাদের ২৯ সেপ্টেম্বর আসতে বলা হয়েছে। এই সময় পর্যন্ত সৌদি আরব যেতে নতুন টিকিট বিক্রি করা হবে না।
তবে টোকেন নেই এমন টিকিট প্রত্যাশীরাও কাউন্টারে ভিড় করে টোকেন দেওয়ার দাবি জানাচ্ছেন। এক পর্যায়ে টোকেনের দাবিতে সকাল ১১টার দিকে কারওয়ান বাজারে সার্ক ফোয়ারার দু’পাশে সড়ক অবরোধ করেন তারা। পরে পুলিশ এসে বুঝিয়ে তাদের সড়ক থেকে উঠিয়ে দেয়। তবে এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত সোনারগ্াঁও হোটেলের গেটের সামনে হাজার খানেক মানুষ অবস্থান করছিলেন।
এদিকে মতিঝিলে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের অফিসের সামনে কয়েক হাজার মানুষ ভিড় করেছেন টিকিটের জন্য। ১৬, ১৭, ১৮, ১৯ ও ২০ মার্চের ফিরতি টিকিট যাদের ছিল, শনিবার তাদের ২৯ ও ৩০ সেপ্টেম্বরের টিকিট দেওয়া হচ্ছে। তবে ওই পাঁচদিনের দিনের ফিরতি টিকিটধারীদের বাইরেও অনেকে টিকিটের জন্য ভিড় করেছেন। এতে সেখানে চরম বিশৃঙ্খলতা দেখা দিয়েছে।
করোনার কারণে স্বাভাবিক বিমান যোগাযোগ দীর্ঘদিন বন্ধ ছিল। ছুটিতে দেশে এসে আটকা পড়েছেন প্রায় দুই লাখ প্রবাসী কর্মী। তাদের মধ্যে প্রায় ৮০ হাজার সৌদিপ্রবাসী ফিরতি টিকিট নিয়ে দেশে এসেছেন। কিন্তু করোনায় আটকে যান। তিন দফায় সাত মাস তাদের ভিসা ও আকামার মেয়াদ বাড়ায় সৌদি সরকার। আগামী ৩০ সেপ্টেম্বর শেষ হবে এ মেয়াদ। তবে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, আকামার মেয়াদ ২৪ দিন বাড়িয়েছে সৌদি। ভিসা ও কাজে ফেরার সময়সীমা (এক্সিট রি-অ্যান্ট্রি) বাড়াতে সম্মত হয়েছে রিয়াদ।
তবে সৌদি কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে এখনও এ বিষয়ে লিখিত কোনো ঘোষণা আসেনি। পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন শুক্রবারও বলেছেন, দুশ্চিন্তার কারণ নেই। ছুটিতে এসে আটকেপড়া সবাই সৌদি আরব যেতে পারবেন। এ জন্য সৌদি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করা হচ্ছে। কারও ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে গেলেও আকামা থাকলে তাদের আবার ভিসা দেওয়া হবে।
শুক্রবার সৌদি অ্যারাবিয়ান এয়ারলাইন্সের কাউন্টার থেকে ৫০১ থেকে ৮৫০ নম্বর টোকেনধারী ৩৫০ জনের সৌদি ফেরার টিকিট নিশ্চিত করা হয়। এদিন যারাই টিকিট পেয়েছেন, তাদের গন্তব্য ছিল মহাখালী ডিএনসিসি মার্কেটের করোনা পরীক্ষাকেন্দ্রে। শনিবারও যারাই টিকিট পাচ্ছেন তারাই ছুটে যাচ্ছেন করোনা পরীক্ষা করাতে।
কুমিল্লার বাসিন্দা আকুল মিয়া। তার রিটার্ন টিকিটের মেয়াদ ছিল ১১মে। কিন্তু এখন চলছে মাত্র মার্চ মাসের রিটার্ন টিকিটধারীদের টোকেন। আকুল মিয়া সৌদি ফেরা নিয়ে অনিশ্চয়তার মধ্যে রয়েছেন। ঘোর শঙ্কা তৈরি হয়েছে তার মনের মধ্যে। আদৌ কি ফিরতে পারবেন প্রবাসে? এমন প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে তার মাথায়।
আকুল মিয়ার মতো অনেক সৌদি প্রবাসী বিগত কয়েক দিন যাবত হোটেল সোনারগাঁওয়ের সামনেই অবস্থান করছেন। কিন্তু কোনো সুখবর পাচ্ছেন না তারা। প্রবাসীরা বাধ্য হয়ে শনিবার সকালে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে হোটেল সোনারগাঁওয়ের সামনে সড়ক অবরোধ করেন বলে জানান। আন্দোলনে দাবি আদায় হবে, এমন আশা নিয়েই বিক্ষোভ চালিয়ে যাচ্ছেন তারা।
নারায়নগঞ্জের রফিক মিয়াও এমন শঙ্কার কথা জানালেন। তিনি বলেন, আমার রিটার্ন টিকিটের তারিখ ৩ এপ্রিল। ভিসার মেয়াদ ৫ এপ্রিল। এরমধ্যে যদি যেতে না পারি, তাহলে আর যেতে পারবো না। আমার সামনে কী যে অন্ধকার দেখতে পাচ্ছি, মাথায় কোনো কিছু কাজ করছে না’।
এ বিষয়ে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম জানিয়েছেন, সৌদি আরবে যেতে টিকিটের কোন সমস্যা হবে না। সবাই যেতে পারবেন, সফর মাস শেষ হবার আগেই। শনিবার নিজের ফেসবুকে এ তথ্য জানিয়েছেন প্রতিমন্ত্রী।
শাহরিয়ার আলম বলেন, ‘নিজের টিকিটটা আগে সংগ্রহের উদ্দেশ্যে সবাই একসাথে টিকিট কাটার চেষ্টা করছেন বলে ভিড় হচ্ছে বা মনে হচ্ছে টিকিটের সংকট হচ্ছে, যা সত্য নয়। প্রয়োজনে ফ্লাইট সংখ্যাও বাড়ানো হবে। অযথা হৈ-হুল্লোড় বা তাড়াহুড়োর কোন প্রয়োজন নেই। দাম্মামেও ফ্লাইট পরিচালনার জন্য আমরা বলেছি এবং তা করা হবে। তারিখ পরে জানিয়ে দেওয়া হবে। কেউ বাদ যাবেন না। ’ ঢাকার সৌদি দূতাবাসের নির্দেশনা অনুযায়ী ভিসার মেয়াদ বৃদ্ধির জন্য নিয়ম মেনে আবেদনের অনুরোধ জানান প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম।
প্রসঙ্গত, দীর্ঘদিন থেকেই দেশের বিরাট একটা জনগোষ্ঠী সৌদি আরবে আছেন। রেমিট্যান্স আসার অন্যতম একটা দেশ হলো সৌদি আরব। এখানের নানা সেক্টরে কাজ করেন প্রবাসীরা। করোনার এই ভয়াল থাবায় ছিন্নভিন্ন হয়ে গেছে অনেকের স্বপ্ন। বিশেষ মহামারির এসময়ে যাদের ছুটি দিয়ে বাধ্যতামূলক দেশে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে তারা এখন টিকিট জটিলতায় ফিরতে পারছে না কর্মস্থলে। এদিকে দীর্ঘদিন ঘরে বসে সবারই হাত এখন খালি। তাই যেমূল্যেই হোক তারা এখন কর্মস্থলে ফিরে যেতে সদাতৎপর।
বিশেষ করে সৌদি আরবে পাশাপাশি কাতার, মালয়েশিয়া, ফ্রান্স, পর্তুগাল, ডেনমার্ক, জার্মানি, আমেরিকা, চীন, সিংগাপুর, কানাডা ও ইংল্যান্ড থেকে ছুটি ফেরা প্রায় সব প্রবাসীরাই এখন অস্থির হয়ে উঠছে কর্মস্থলে ফিরে যাওয়ার জন্য। প্রতিদিন তারা ফিরে যাওয়ার প্রক্রিয়া করণে ব্যস্থ সময় পার করছেন।
উল্লেখ্য, করোনার এই ভয়াল থাবায় বিশ^ হারিয়েছে তাদের বিশাল একটা জনগোষ্ঠীকে যা প্রতিটি জাতির জন্য অপূরনীয় ক্ষতি হয়ে থাকবে আগামী শতাব্দীর জন্য। সৌদি আরব বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় বাজার। সরকারি হিসেবেই দেশটিতে প্রায় ২২ লাখ শ্রমিক কাজ করেন। করোনার আগে দেশে এসে অন্তত অর্ধ লাখ মানুষ আটকা পড়েছেন। এসব প্রবাসী যদি ফেরত যেতে না পারেন, তাহলে রেমিট্যান্স আয়ে বড় প্রভাব পড়বে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। একই সঙ্গে বহু পরিবারের আয় সংকুচিত হবে।


বিজ্ঞাপন