দায়িত্বে থাকলে সমালোচনা হবে: তথ্যমন্ত্রী

জাতীয় রাজধানী রাজনীতি

নিজস্ব প্রতিবেদক : সরকারের সমালোচনা করলেই অনলাইন নিউজ পোর্টাল নিবন্ধন পাবে না এমনটি নয় বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ।
রোববার দুপুরে তথ্য মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে চলচ্চিত্র নির্মাতা-গবেষক-প্রশিক্ষকদের সঙ্গে সভা শেষে ব্রিফিংকালে তিনি এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, ২০০৯ সাল থেকে অনেক অনলাইন সরকারের বিরুদ্ধে সমালোচনা করছে সেসব অনলাইন নিবন্ধন পাচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিবেন কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে হাছান মাহমুদ বলেন, সরকারের বিরুদ্ধে আলোচনা-সমালোচনা থাকবেই, সরকারের সমালোচনা করলে নিবন্ধন পাবে না, এটা নয়। দায়িত্বে থাকলে সমালোচনা হবে, সরকারের বিরুদ্ধে সমালোচনা করা অপরাধ নয়। অনলাইন নিবন্ধন দেওয়ার ক্ষেত্রে তিনটি সংস্থা যাচাই-বাছাই করছে। তিনটি সংস্থা থেকে যখন অনাপত্তি পাচ্ছি শুধুমাত্র নিবন্ধনের জন্য ছাড়পত্র দিচ্ছি।
বিএনপি অফিসের সামনে জিয়াউর রহমানের অপকর্ম ঢাকার জন্যই মানববন্ধন করা হচ্ছে বলে জানিয়ে তথ্যমন্ত্রী বলেন, জিয়াউর রহমান যে বঙ্গবন্ধু হত্যাকা-ের সাথে যুক্ত ছিল এবং বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীদের পুনর্বাসিত করেছেন, সেগুলো এখন দিবালোকের মত স্পষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এগুলো যখন পত্রপত্রিকায় ছাপানো হচ্ছে, যখন এগুলো জনগণের কাছে অত্যন্ত বিশ্বাসযোগ্য আকারে গণমাধ্যম উপস্থাপন করছে তখন তাদের গাত্রদাহ হচ্ছে।
তথ্যমন্ত্রী বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে ক্যাপ্টেন মাজেদ ফাঁসির রায় কার্যকর হওয়ার আগে জিয়াউর রহমানের সংশ্লিষ্টতা সম্পর্কে স্পষ্ট করে বলেছেন। আরও অনেক দলিল দস্তাবেত প্রমাণ করছে জিয়াউর রহমান কীভাবে বঙ্গবন্ধুর হত্যাকা-ে যুক্ত ছিল। জিয়াউর রহমান যে মুক্তিযোদ্ধার ছদ্মাবরণে প্রকৃতপক্ষে পাকিস্তানের সহযোগী হিসেবে কাজ করছিল সেগুলোর তথ্য-উপাত্ত বেরিয়ে আসছে। এগুলো যখন পত্রপত্রিকায় ছাপানো হচ্ছে, যখন এগুলো জনগণের কাছে অত্যন্ত বিশ্বাসযোগ্য আকারে গণমাধ্যম উপস্থাপন করছে তখন তাদের গাত্রদাহ হচ্ছে। এজন্য তারা বিএনপি অফিসের সামনে জিয়াউর রহমানের অপকর্ম ঢাকার জন্য মানববন্ধন করে অপচেষ্টা করে।
গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেছেন, আওয়ামী লীগ আগে গণতন্ত্রকে ধ্বংস করেছে এখন মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ধ্বংস করতে চায় এসব প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, গয়েশ্বর বাবু, বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের শক্তি হচ্ছে আওয়ামী লীগ ও আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দল। বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ধ্বংস করেছে বিএনপি। বিএনপি ক্ষমতায় আসার পর, জিয়াউর রহমান ক্ষমতা দখল করার পর মুক্তিযুদ্ধের সমস্ত চেতনাকে ধ্বংস করার চেষ্টা করেছে। তিনি বাংলাদেশের যে চেতনার ভিত্তিতে দেশ স্বাধীন হয়েছিল সেই চেতনাকে ধ্বংস করেছেন। মুক্তিযুদ্ধের স্বীকৃত যারা বিরুদ্ধাচারী তাদেরকে তিনি ক্ষমতায় বসিয়েছেন। শাহ আজিজুর রহমান, যাকে তিনি প্রধানমন্ত্রী বানিয়েছিলেন তিনি যখন দেশে মুক্তিযুদ্ধ ও গণহত্যা চলছিল তখন পাকিস্তান প্রতিনিধি দলের ডেপুটি লিডার হয়ে জাতিসংঘে গিয়ে শাহ আজিজুর বলেছিলেন দেশে কোনো মুক্তিযুদ্ধ হচ্ছে না, কোনো গণহত্যা হচ্ছে না।
তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধের পর ধর্মভিত্তিক রাজনীতি বন্ধ ছিল, সেটি চালু করেছেন জিয়াউর রহমান এবং খালেদা জিয়া আরও এক ধাপ এগিয়ে স্বাধীনতাকামীদের বিরুদ্ধে যারা অস্ত্র ধারণ করেছে তাদেরকে তিনি মন্ত্রিসভায় স্থান করে দিয়েছেন। গয়েশ্বর রায়ের বক্তব্য তিনি কোন অবস্থায় বলেছেন সেটি হচ্ছে একটি প্রশ্ন। তিনি কি স্বাভাবিক অবস্থায় বলেছেন নাকি অস্বাভাবিক অবস্থায় বলেছেন সেটি হচ্ছে একটি বড় প্রশ্ন।
আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সংসদের সভা বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে তথ্যমন্ত্রী বলেন, করোনার মধ্যে প্রথম আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সংসদের সভা শনিবার হয়েছে। সংগঠনকে গতিশীল করার জন্য এবং যেসব জায়গায় সম্মেলন হয়েছে সেই কমিটিগুলো পূর্ণাঙ্গ করার জন্য এবং যেসব জেলা-উপজেলায় সম্মেলন হয়নি সেখানে সম্মেলন করার জন্য সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সাংগঠনিক সম্পাদক এবং দলীয় সম্পাদকদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এছাড়া প্রেসিডিয়াম মেম্বারদেরকেও বিভাগীয় পর্যায়ে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, করোনার মধ্যে আওয়ামী লীগের সাড়ে পাঁচশ নেতাকর্মী মারা গেছেন এবং হাজার হাজার আক্রান্ত হয়েছেন। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির কয়েকজন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে মারা গেছেন, মন্ত্রিসভার সদস্য মারা গেছেন, অন্য কোনো দলের ক্ষেত্রে এটি হয়নি কারণ অন্য কোনো দল আওয়ামী লীগ যেভাবে এই দুর্যোগ মোকাবিলা করার জন্য শেখ হাসিনার নির্দেশনায় ঝাপিয়ে পড়েছিল অন্য কোনো দল সেভাবে ঝাপিয়ে পড়েনি। আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে সোয়া এক কোটি মানুষের কাছে ত্রাণ পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। কেন্দ্রীয় কমিটির পক্ষ থেকে উপজেলা পর্যায় পর্যন্ত স্বাস্থ্য সুরক্ষা সামগ্রী পৌঁছে দেওয়া হয়েছে।
হাছান মাহমুদ বলেন, আওয়ামী লীগ প্রায় ১২ বছর ধরে ক্ষমতায়, বাংলাদেশে বহু সুযোগ সন্ধানী থাকে, অনেক সুযোগ সন্ধানী পরিচয় গোপন করে আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ে ঢুকে পড়ার চেষ্টা করেছে, কেউ কেউ সফলও হয়েছে, সেগুলো বাছাই করে বিভিন্ন পর্যায়ে কমিটি থেকে তাদেরকে বের করে দেওয়া হবে, এই সিদ্ধান্ত অনেক আগেই হয়েছে, কালকেও এই বিষয়গুলো আলোচিত হয়েছে। সুতরাং এই করোনাকালে আওয়ামী লীগ জনগণের পাশে ছিল, করোনা দুর্যোগ যতদিন থাকবে ততদিন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা জনগণের পাশে থাকবেন। শেখ হাসিনা সেই নির্দেশনা দিয়েছেন। অনুপ্রবেশকারীদের আর কোনো জায়গা আওয়ামী লীগ বা অঙ্গ সহযোগী সংগঠনেও জায়গা হবে না।
মেয়াদ উত্তীর্ণ কত দিনের মধ্যে করার নির্দেশ দিয়েছেন এমন প্রশ্নের জবাবে তথ্যমন্ত্রী বলেন, কমিটি সহসা করতে হবে। দেশে ইউপি, পৌরসভা নির্বাচন হবে, তার আগে যতটুকু সম্ভব করতে হবে। নির্বাচনের সময় তো সেগুলো করা যাবে না। নির্বাচনের সিডিউল ঘোষণার আগে যতটুকু সম্ভব করতে হবে।


বিজ্ঞাপন