জাবিতে প্রধান নিরাপত্তা কর্তার ত্রাসের রাজত্ব

অপরাধ শিক্ষাঙ্গন

* মারধর ও অসৌজন্যমূলক আচরণের এক ডোজনে বেশি অভিযোগ সত্বেও নিরব প্রশাসন।
* সাম্প্রতি মেরে পা ভেঙ্গে দিয়েছেন এক রিকশা চালকের।
* চাকুরিচ্যুত করা ও বিচারের দাবিতে অনলাইনে নয়শত শিক্ষক – শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারীর গণস্বাক্ষর, হেনস্তার শিকার ১২১ জনের স্বাক্ষ্য।


বিজ্ঞাপন

 

 

জাবি প্রতিনিধিঃ জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ঘুরতে আসা ভ্রমণ পিয়াসী, কর্মকর্তা – কর্মচারী,রিকশা চালক, দোকানী, সাবেক কিংবা বর্তমান শিক্ষার্থী সবার জন্য মূর্তিমান আতংকের নাম হয়ে দাঁড়িয়েছেন প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তা সুদীপ্ত শাহীন।

গত শুক্রবার বন্ধ ক্যাম্পাসে নতুন করে তার মারধরের শিকার হয়েছেন নাহিদ নামের একজন রিকশা চালক। প্রধান নিরাপত্তা কর্তা পিটিয়ে তার পা ভেঙ্গে দিয়েছেন।
তার অসৌজন্যমূলক আচরণ থেকে রেহাই পাননা,শিক্ষক,শিক্ষার্থী, কর্মচারী দোকনী কেউই।
তার বিরুদ্ধে এ ধরনের অভিযোগ নতুন নয়।

ক্যাম্পাসের সাবেক শিক্ষার্থী আকবর হোসেন (২৫তম আবর্তন) এর সাথে অসৌজন্যমূলক আচরণ , ৪৯ তম আবর্তনের নারী শিক্ষার্থী অথি সরকার ও ঘুরতে আসা এক নারী সংবাদকর্মীকে উত্ত্যক্ত করা,চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী ইউনিয়নের সভাপতি পদপ্রার্থী শরীফ ও তার ভাইয়ের ওপর হামলা চালিয়ে দুটি মোবাইল ফোন ও ৩৫ হাজার টাকা ছিনিয়ে নেওয়ার সহ প্রায় এক ডোজন অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে ।

এছাড়া তার বিরুদ্ধে অসদাচরণের অভিযোগ রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশ কয়েকজন শিক্ষকের । অকথ্য ও উগ্রভাষা ব্যবহার, ক্ষমতার অপব্যবহার করে কাউকে মারধর করা তার জন্য নতুন কিছু না। তার বিরুদ্ধে একাধিক সুনির্দিষ্ট অভিযোগ থাকা সত্বেও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তদন্ত সাপেক্ষে কখনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। নানা অভিযোগে তদন্ত কমিটি গঠিত হলেও প্রকাশিত হয়নি কোন তদন্ত প্রতিবেদন। জনশ্রুতি রয়েছে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের শীর্ষ পর্যায়ের আশীর্বাদপুষ্ট হওয়াই তার বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেওয়া হয় না।

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, কোন অপরাধের শাস্তি না হওয়াই ক্রামগত তার হিংস্রতার শিকার হচ্ছেন একের পর একজন। এ বিষয়ে ক্ষুদ্ধ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ অংশীজনেরা। এসব ঘটনার প্রেক্ষিতে সুদীপ্তের অপসারণসহ চার দফা দাবিতে গণস্বাক্ষর অভিযান চালিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকটি প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠন। সোমবার থেকে বুধবার পর্যন্ত অনলাইনে গুগল ফর্ম পূরণের মাধ্যমে ৯ শত শিক্ষক -শিক্ষার্থী -কর্মকর্তা-কর্মচারী এতে অংশ নিয়েছেন বলে সময়ের আলোকে নিশ্চিত করেছেন, জাবি শাখা ছাত্রফ্রন্টের সাধারণ সম্পাদক সুদীপ্ত দে।

গণস্বাক্ষর অভিযানের নেতৃত্বে থাকা জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্র ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক রাকিবুল রনি বলেন, “আমরা এখন পর্যন্ত প্রায় নয় শত শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা কর্মচারীর স্বাক্ষর এবং তার কাছে সময়ে হেনস্তার শিকার হওয়া ১২১ জনের স্বাক্ষ্য সংগ্রহ করেছি। বিপুল সংখ্যক অংশীজনের এ স্বাক্ষর প্রমাণ করে সুদীপ্তের সকল ঘৃণ্য অপকর্মের। এই অসৎ ও উশৃঙ্খল নিরাপত্তা কর্মকর্তার অপকর্মের প্রশ্নে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের নির্মোহ নীরবতা আর একটি দিনের জন্যেও আমরা সহ্য করবোনা।”

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার রহিমা কানিজ সময়ের আলোকে জানান, রিকশাচালকে মারধরের ঘটনায় তার বিরুদ্ধে অভিযোগ নথিভুক্ত করা হয়েছে। আহত রিকশাচালকের চিকিৎসার ব্যায় ভার বিশ্ববিদ্যালয় বহন করবে। তার বিরুদ্ধে অভিযোগের প্রেক্ষিতে উপাচার্য তাকে (প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তা) মৌখিক ভাবে দায়িত্বপালন থেকে সাময়িক বিরত থাকার জন্য বলেছেন।

প্রসঙ্গত, “শুক্রবারে মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের শিক্ষক মরিয়ম লিজা বটতলার দোকানদার ও ভ্যানচালক নাহিদ কে ফোন করে প্রান্তিকে যেতে বলেন। সেখান থেকে তার বৃদ্ধ বাবা ও বোনকে কোয়ার্টারে পৌঁছানোর জন্যই তিনি ক্যাম্পাসে প্রবেশ করেন। রিকশা নিয়ে ক্যাম্পাসে প্রবেশের অপরাধে, শাহিন তাকে চৌরঙ্গী মোড় থেকে আটক করে কনট্রোল রুমে নিয়ে লাঠি দিয়ে বেধড়ক পেটান। এতে তার পা ভেঙ্গে যায়। মারধরের ঘটনা বাইরে বলবে না এই শর্তে তাকে মুক্তি দেয়। মারধরের ঘটনা নিয়ে মুখ খুললে মাদক ব্যবসায়ী হিসেবে পুলিশে ধরিয়ে দেওয়ার হুমকি এই দেন নিরাপত্তা কর্তা ।