বঙ্গবন্ধু’র পরিকল্পনা মোতাবেক ডিপ্লোমা চিকিৎসকদের উচ্চশিক্ষার ব্যবস্থা নিশ্চিত করুন

অন্যান্য স্বাস্থ্য

 

নিজস্ব প্রতিনিধি : বঙ্গবন্ধু’র প্রথম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় একটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তের কথা উল্লেখ ছিল। যখন তিনি ডিপ্লোমা ইন মেডিকেল ফ্যাকাল্টি ‘ডিএমএফ’ মেডিকেল এ্যাসিস্ট্যান্ট প্র্যাকটিশনার-ডিপ্লোমা চিকিৎসক নামে একটি পেশাদার জাতি তৈরি করেছিলেন।
আধুনিক এ্যালোপ্যাথিক চিকিৎসা সম্পর্কিত ইতিহাস বলে, ১৭০০ খ্রীষ্টাব্দের শুরুর দিক থেকেই আজকের এই বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান ছিল ব্রিটিশ সরকারের উপনিবেশ। যা এশিয়া উপমহাদেশ নামে পরিচিত ছিল। এই উপমহাদেশটি তিনটি ভাগে বিভক্ত ছিল।
প্রথমত, ভারত অনেকগুলো অঙ্গরাজ্যের সমন্বয়ে।


বিজ্ঞাপন

দ্বিতীয়ত, পূর্ব পাকিস্তান বর্তমানে বাংলাদেশ।
তৃতীয়ত, পশ্চিম পাকিস্তান বর্তমানে পাকিস্তান। অষ্টাদশ শতক পর্যন্ত এ উপমহাদেশ চিকিৎসা বিদ্যায় তেমন কোনো উন্নতি সাধন করতে পারেনি। যার কারণে ব্রিটিশরা চিকিৎসা বিদ্যার উন্নতির জন্য এই উপমহাদেশটির কিছু অঙ্গরাজ্য সমূহে ‘স্টেট মেডিকেল ফ্যাকাল্টি- রাষ্ট্রীয় চিকিৎসা অনুষদ’ তৈরি করে বিভিন্ন ‘মেডিকেল স্কুল’ সমূহে চিকিৎসা বিদ্যায় লাইসেন্সশিয়েট অব মেডিকেল ফ্যাকাল্টি (এল এম এফ) কোর্স মেম্বার অব মেডিকেল ফ্যাকাল্টি (এম এম এফ) কোর্স পরিচালনা করেছিলেন। যাতে করে এই উপমহাদেশে মধ্যম মানের চিকিৎসক তৈরি করা সহজতর হয়। ব্রিটিশদের সৃষ্ট্র স্টেট মেডিকেল ফ্যাকাল্টি সমূহ হল স্টেট মেডিকেল ফ্যাকাল্টি অব ইষ্ট বেঙ্গল, স্টেট মেডিকেল ফ্যাকাল্টি অব ওয়েষ্ট বেঙ্গল, স্টেট মেডিকেল ফ্যাকাল্টি অব মহারাষ্ট্র, স্টেট মেডিকেল ফ্যাকাল্টি অব ওয়েষ্ট পাকিস্তান, স্টেট মেডিকেল ফ্যাকাল্টি অব ইষ্ট পাকিস্তান, স্টেট মেডিকেল ফ্যাকাল্টি অব পাঞ্জাব, ইত্যাদি। এরই ফলস্রুতিতে ১৯১৪ সালে তৈরি হয় দি স্টেট মেডিকেল ফ্যাকাল্টি অব ইষ্ট বেঙ্গল, এবং ১৯৪৭ সালে তা রূপান্তরিত হয়, দি স্টেট মেডিকেল ফ্যাকাল্টি অব ইষ্ট পাকিস্তান, পরবর্তীতে বাংলাদেশ স্বাধীন হলে, এটিকে ‘দি স্টেট মেডিকেল ফ্যাকাল্টি অব বাংলাদেশ- বাংলাদেশ রাষ্ট্রীয় চিকিৎসা অনুষদ’ নামকরণ করা হয়। আস্তে আস্তে চিকিৎসা বিদ্যার উন্নতি হতে থাকে। এরই ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশে সর্ব প্রথম ১৯৪৬ সালে ঢাকা মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয়। তখন থেকে চিকিৎসা বিদ্যায় স্নাতক এমবিবিএস ডিগ্রি, ১৯৬১ সালে দন্ত চিকিৎসা বিদ্যায় স্নাতক বিডিএস ডিগ্রি চালু হয়। এই ডিগ্রি গুলো পরিচালিত হয় এদেশের বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে। পরবর্তীতে এদেশে চিকিৎসা বিদ্যায় ও দন্ত চিকিৎসা বিদ্যায় স্নাতকোত্তর ডিগ্রি চালু হয়। সেই সাথে ১৯৫৩ সালের দিকে পাকিস্তান আমলের মধ্যম মানের এলএমএফ, এমএমএফ চিকিৎসকের কোর্স গুলো সরকার বন্ধ করে দেয়। তবে, ঐ কোর্স বন্ধ করার পূর্বে তৎকালিন পূ্র্ব পাকিস্তান সরকার এলএমএফ, এমএমএফ চিকিৎসকদের কনডেন্সে এমবিবিএস কোর্স করিয়ে প্রশাসন, জেলা ও মহুকুমা হাসপাতালে নিয়োগ প্রদান করেন।
১৯৭১ সালের পরে এই যুদ্ধ পীড়িত ও যুদ্ধাহত নব স্বাধীন বাংলাদেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা এতটাই দুর্বল হয়ে পড়ে যে, অনেক গরীব, দুস্থ, অসহায় মানুষের সামান্য রোগের প্রাথমিক চিকিৎসা সেবা প্রদানও সরকারের পক্ষে অসম্ভব হয়ে পড়ে। সেটা মনে করতে হলে, আমাদের সেই পূর্বের কথা স্মরণ করতে হবে যখন সামান্য কলেরা রোগে গ্রামের পর গ্রাম জনশূন্য হয়ে যেত, অসংখ্য মানুষ মারা যেত। যা জনবান্ধব বঙ্গবন্ধু’র সরকারকে ভাবিয়ে তোলে। ঠিক তখনি স্বল্প সময়ে সবার জন্য মৌলিক অধিকার চিকিৎসা সেবা প্রদান বাধ্যতামূলক করার জন্য বঙ্গবন্ধু’র সরকার স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা ১৯৭৩-১৯৭৮ ইং মোতাবেক পূ্র্বেকার এলএমএফ, এমএমএফ কোর্সের কারিকুলাম অনুসারে চিকিৎসা বিদ্যায় ‘ডিএমএফ’ কোর্স আন্তর্জাতিক ভাবে অনুমোদন করিয়ে নিয়ে আসেন। ১৯৭৬ সালে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় অনুমোদিত, রাষ্ট্রীয় চিকিৎসা অনুষদ কর্তৃক অধিভূক্ত, বাংলাদেশ মেডিকেল এন্ড ডেন্টাল কাউন্সিল স্বীকৃত মেডিকেল এ্যাসিস্ট্যান্ট ট্রেনিং স্কুল ( ম্যাটস্ ) এর মাধ্যমে ‘ডিএমএফ’ ডিপ্লোমা চিকিৎসকতা পেশা কোর্স টি প্রথম যাত্রা শুরু করে। বর্তমানে এদেশে ৮ টি সরকারি ম্যাটস্ ও প্রায় ২০০ টি বেসরকারি ম্যাটস্ ডিপ্লোমা চিকিৎসকের ‘ডিএমএফ’ কোর্স টি পরিচালনা করে আসছে। এখানে ডিপ্লোমা মেডিকেল শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় ৩০,০০০ ত্রিশ হাজার। স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের হিসেব অনুযায়ী প্রায় ১২ হাজার ডিপ্লোমা চিকিৎসক ‘উপসহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার’ পদে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, ইউনিয়ন উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র, ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র সহ জেলা হাসপাতালে কর্মরত আছেন। এছাড়াও প্রায় ১৫,০০০ পনের হাজার ডিপ্লোমা চিকিৎসক বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক, স্বাস্থ্য কেন্দ্র, দেশি বিদেশি এনজিও-তে কর্মরত আছেন। বর্তমানে নতুন পাশ করা অনেক ডিপ্লোমা চিকিৎসক বেকার আছেন, যাদেরকে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধীন প্রায় ১৮ হাজার কমিউনিটি ক্লিনিকে পদায়ন করা হলে কমিউনিটির জনগণের চিকিৎসা সেবায় বৈপ্লবিক উন্নতি সাধিত হবে বলে সাধারণ জনগণ মনে করেন। তখন কমিউনিটি ক্লিনিক সারাবিশ্বের বিভিন্ন দেশের স্বাস্থ্য বিষয়ক রোল মডেল হিসেবে আরো দৃঢ় ভাবে উপস্থাপিত হবে। এখনই এ বিষয়ে সরকারের জরুরি ব্যবস্থা নেয়া উচিত।
বাঙ্গালীর স্বপ্নদ্রষ্টা বঙ্গ বন্ধু শেখ মুজিব বুঝতে পেরেছিলেন যে, এই ডিপ্লোমা চিকিৎসকদের পরবর্তীতে উচ্চশিক্ষার প্রয়োজন হবে, তাই তিনি বারং বার প্রথম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার পনের অধ্যায়ের ৫২০ ও ৫২১ পৃষ্টায় লেখে রেখে গেছেন এই মেডিকেল এ্যাসিস্ট্যান্ট প্র্যাকটিশনার-ডিপ্লোমা চিকিৎসকদের যেনো মেডিকেল সায়েন্সে কনডেন্সে উচ্চশিক্ষা ব্যাচেলর অব মেডিসিন এন্ড ব্যাচেলর অব সার্জারী ‘এমবিবিএস’ কোর্স করার সুযোগ দেয়া হয়। এ পরিকল্পনায় ডিএমএফ ডিপ্লোমা ডিগ্রিধারী ডিপ্লোমা চিকিৎসকদের উচ্চশিক্ষার বিষয়ে সুস্পষ্ট দিক নির্দেশনা দেয়া ছিল । মহামানব মুজিব অনুধাবন করতে পেরেছিলেন যে, অন্যান্য ডিপ্লোমা ডিগ্রিধারীদের যেমন; হোমিওপ্যাথি, ইউনানী, আয়ুর্বেদিক, নার্স।