আন্ত:জেলা ডাকাত দলের ৩ সদস্য গ্রেফতার

অপরাধ

নিজস্ব প্রতিবেদক: সাভারের আমিনবাজার এলাকায় ইতালি প্রবাসীকে প্রকাশ্য দিবালোকে গুলি করে টাকা ছিনতাই সংক্রান্তে ডাকাতির ঘটনায় জড়িত আন্তঃজেলা ডাকাত দলের ৩সদস্যকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব। গ্রেফতারকৃতদের কাছ থেকে তিন আগ্নেয়াস্ত্র বিপুল সংখ্যক গুলি ও দেশীয় অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে।
র‌্যাব জানায়, ইতালি প্রবাসী মো. আমানুল্লাহ (৪০) সস্ত্রীক গত ২৮ অক্টোবর সকালে আমিনবাজারে একটি ব্যাংক হতে টাকা উত্তোলন করেন।এরপর ভাড়াকৃত গাড়ি নিয়ে কেরানীগঞ্জের বাড়িতে যাচ্ছিলেন। এসময় রাস্তায় ভাকুর্তা লোহারব্রিজের কাছে তারা যাওয়ার পর পেছন থেকে অনুসরণ করে আসা ৩টি মোটরসাইকেল ও প্রাইভেট কারযোগে ডাকাতদল প্রকাশ্য দিবালোকে বেলা পৌনে ১১ টার দিকে উক্ত কারের গতিরোধ করে। এসময় ডাকাত দলের সদস্যরা এলোপাথাড়ি গুলি করে এবং ভুক্তভোগীর স্ত্রীর হাতে থাকা গোলাপী রঙের ভ্যানিটি ব্যাগে থাকা ৫ লাখ ৭০ হাজার টাকা ও মোবাইলসহ ভ্যানিটি ব্যাগটি ছিনিয়ে নিয়ে পালিয়ে যায়। পরে স্থানীয়দের সহযোগীতায় বাম পায়ে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় ভুক্তভোগী আমানুল্লাহ’কে সাভার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে ভর্তি করা হয়। এরপর প্রবাসীর স্ত্রী বাদি হয়ে সাভার মডেল থানায় অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামী করে ডাকাতি মামলা দায়ের করেন।
র‌্যাব-৪ এর সিও এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে জানান, উক্ত ক্লুলেস ডাকাতির ঘটনায় সংঘবদ্ধ চক্রটিকে গ্রেফতার করতে ঘটনার দিন থেকেই মাঠে নামে র‌্যাব-৪ এর একটি চৌকস গোয়েন্দা দল। র‌্যাব ছায়া তদন্তের শুরুতেই ব্যাংকের সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ থেকে ক্যাপ পরিহিত এক ব্যক্তিকে শনাক্ত করে র‌্যাবের গোয়েন্দা দল। তার সূত্র ধরে র‌্যাব-৪ এর দলটি গত শুক্রবার দিবাগত রাত সাড়ে ১২ টার দিকে সাভারের বিরুলিয়া জোড়া ব্রিজ এলাকায অভিযান চালায়। এসময় মোস্তাফিজুর রহমান (৩৮), নাসির (৩৮) ও আবদুল বারেক সিকদার (৪৫ নামে ডাকাত দলের তিন সদস্যকে গ্রেফতার করে। এসময় তাদের কাছ থেকে ডাকাতির কাজে ব্যবহৃত প্রাইভেট কারযোগে ডাকাতি প্রস্তুতি গ্রহণের সময় ১টি প্রাইভেট কার, ২টি বিদেশী পিস্তল, ১টি রিভলবার, ১২ রাউন্ড গুলি, ১টি ছুরি, ২টি লোহার পাইপ জব্দ ও লুন্ঠিত ৫০ হাজার টাকা উদ্ধার করা হয়।
তিনি আরো জানান, গ্রেফতারকৃতরা র‌্যাবের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছে, তারা ছদ্মনাম নামধারী ১০-১২ জনের আন্তঃজেলা সশস্ত্র দুর্ধর্ষ ডাকাত দলের সদস্য। দলকে তারা কোম্পানি বলে। প্রত্যেক সদস্যের একটি করে ছদ্মনাম থাকে। এ দলের অন্যতম সদস্য ব্যাংকে সেদিন ক্যাপ পরিহিত অবস্থায় ছিল এবং ব্যাংকের টাকা উত্তোলনকারীদের দিকে তীক্ষè নজর রেখে বাইরে মোটরসাইকেলে ওৎ পেতে থাকা নাসির (৩৮) সহ তার অন্যান্য সহযোগীদের’কে তথ্যটি জানায়। এরপর গ্রেফতারকৃত বারেক সিকদার (৪৫) মূলত ছিলেন ডাকাতদের অস্ত্র ও ছিনতাইকৃত টাকা বহন করার কাজে ব্যবহৃত প্রাইভেট গাড়ির চালক। তার গাড়ীটি ডাকাতির কাজে অন্যান্য সহযোগীদের অস্ত্রসহ বহন করে আসছিলো। জিজ্ঞাসাবাদে সে আরও জানিয়েছে, তারা ডাকাতির সময় নির্দিষ্ট মোবাইল ফোন ও নাম্বার ব্যবহার করতো এবং ডাকাতি শেষে সেসব মোবাইল ফোন-সিম নষ্ট ও ব্যবহৃত জামা-কাপড় ফেলে দিতো। গ্রেফতারকৃত বেশিরভাগ আসামীদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় অস্ত্র, ডাকাতি ও হত্যা মামলা রয়েছে এবং সেসব মামলায় জামিন পেয়ে পুনরায় একই কর্মে লিপ্ত হয়। আরো জানা যায় সেদিন ডাকাতিকৃতটাকা ১০ জনের মাঝে ৫০ হাজার করে বন্টন করে দেয়া হয়। গ্রেফতারকৃত আসামীরা উক্ত ডাকাতির ঘটনার সাথে জড়িত মর্মে স্বীকারোক্তি প্রদান করে।
র‌্যাব জানায়, তারা ডাকাতির কৌশল জানিয়েছে। আর বিভিন্ন ছদ্মনাম নামধারী ১০ সদস্যের আন্তঃজেলা ডাকাত দলের মূল হোতার রয়েছে ব্যক্তিগত নিজস্ব সোর্স যাদের মূল কাজ হচ্ছে কে কখন ব্যাংকে টাকা উত্তোলন করবে সে তথ্য সংগ্রহ দেয়া। আবার সোর্স হতে তথ্য প্রাপ্তির পর ডাকাতির দিন ও সময় ধার্য্যপূর্বক পরিকল্পনা প্রনয়ণ ও প্রস্তুতি গ্রহন করে। ডাকাতি সংঘটনের ২/১ দিন আগেই সরেজমিনে ঘটনাস্থল পরিদর্শন, পর্যবেক্ষণ ও যানজট পরিস্থিতি সম্পর্কে জানা এবং ডাকাতি সম্পন্ন করে পালিয়ে যাবার নিরাপদ পথ ঠিক করা হয়।
তাছাড়া, ডাকাত দলের সদস্যদের মধ্যে কারো দায়িত্ব থাকে অস্ত্রসহ গাড়ি বহন করা, কারো দায়িত্ব থাকে ব্যাংক হতে টাকা উত্তোলনের খবর বাহিরের সদস্যদের পাঠানো, আবার কারো দায়িত্ব থাকে মোটরসাইকেলযোগে হানা দেয়া। পালানোর সময় মোটরসাইকেলযোগে একটি নির্দিষ্ট স্থানে মিলিত হয়ে টাকা ও অস্ত্রসহ এক সদস্য প্রাইভেট কারে উঠে এবং নিরাপদ পথ দিয়ে একসাথে সবাই বেরিয়ে যায়। আর ডাকাতি শেষে এ দলের প্রতিটি সদস্য পূর্ব নির্ধারিত নির্জন স্থানে মিলিত হয়। আর সখানেই তাদের ব্যবহৃত মোবাইল ফোন, সিম ও জামা-কাপড় নদীতে ফেলে দেয়।পরবর্তীতে তারা কয়েকদিনের জন্য গাঁ ঢাকা দিয়ে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে এবং কোনো এক সময় আবারো তাদের মূল হোতার নতুন পরিকল্পনা অনুসারে অন্য একটি জেলায় একইভাবে ডাকাতি কর্মকান্ড চালায়। তাছাড়া, ডাকাতির মাধ্যমে আয়কৃত টাকা ও মালামাল ভাগ বন্টন করে নেয়। এ ঘটনায় র‌্যাবের পক্ষ থেকে দুটি মামলা করা হয়েছে। আর ঘটনায় জড়িত অন্যান্য আসামিদের গ্রেফতারের র‌্যাব অভিযান চালাচ্ছে।


বিজ্ঞাপন