লাশ কাটা ঘরেই ৬ নারীর লাশ ধর্ষণ

অপরাধ আইন ও আদালত

নিজস্ব প্রতিবেদক : লাশ কাটা ঘর। যেখানে সুস্থ কোন মানুষ প্রবেশ করলেই তার গা ছম ছম করবে। আবার কেউ কেউ অজ্ঞান হয়ে পড়ে যেতেও পারেন। তারই নাম মর্গ। সেই মর্গেই নারীর মৃহদেহকে ধর্ষণ করা হয়েছে। শুধু একজন নয়, গত এক বছরে ছয়জন নারীর লাশ ধর্ষণ করা হয়েছে। আর এই ধর্ষণ যে করেছে, তার নাম মুন্না ভক্ত (২০)। ছয় নারীর এইচভিএসে (হাই ভ্যাজাইনাল সোয়াব) মুন্নার ধর্ষণের আলামত পেয়েছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ বা সিআইডি। ওই নারীদের লাশগুলো আত্মহত্যাজনিত কারণে মৃত ছিল। ১২ থেকে ২০ বছর বয়সের মধ্যে তুলনামূলক ভালো লাশ এলেই মুন্না ধর্ষণ করতো। তাকে সিআইডি পুলিশ অভিযান চালিয়ে গ্রেফতার করেছে। গ্রেফতারকৃত মুন্না ভক্ত আদালতে ১৬৪ধারায় জবানবন্দী দিয়েছেন বলে আদালত সূত্র জানিয়েছে।
সিআইডি সূত্র জানায়, রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের মর্গের ডোম এর সহকারী হিসেবে গত প্রায় ৪বছর ধরে কাজ করছে মুন্না ভক্ত। ওই হাসপাতালে প্রথম মর্গের লাশ কাটা শুরুর দিন থেকেই সে কাজ করছে। ময়নাতদন্তের আগে লাশ রাতে পাহারা দেওয়ার সময় এই কাজে লিপ্ত হতো সে। সিআইডি কর্মকর্তাদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে মুন্না তার এসব অপকর্মের কথা স্বীকারও করেছে মুন্না ভগত।
সূত্র জানায়, গত ২০১২ সালে বাংলাদেশ পুলিশের প্রথম ডিএনএ ল্যাব স্থাপিত হয়। ল্যাব স্থাপনের পর হতে ধর্ষণ ও হত্যাসহ আদালতের নির্দেশে প্রেরিত সব আলামতের ডিএনএ পরীক্ষা ও প্রোফাইল তৈরি করে সিআইডি। গত ২০১৯ সালের মার্চ থেকে চলতি বছরের আগস্ট পর্যন্ত সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগ কয়েকটি নমুনা পাঠিয়েছিল সিআইডিকে। সেখানে মৃত নারীর এইচভিএসে পুরুষ বীর্যের উপস্থিতি পাওয়া যায়। এরপর পূর্ণাঙ্গ ডিএনএ প্রোফাইল তৈরি করার চেষ্টা করে তারা।
সিআইডির এক কর্মকর্তা জানান, ‘কোডিস’ সফটওয়্যার সার্চ দিয়ে দেখা যায়, রাজধানীর মোহাম্মদপুর ও কাফরুল থানার কয়েকটি ঘটনায় প্রাপ্ত ডিএনএ’র প্রোফাইলের সঙ্গে একই ব্যক্তির ডিএনএ বারবার ম্যাচ করছে। যা অনেকটাই অস্বাভাবিক ছিল। একপর্যায়ে ধারণা করা হয়, একজন ব্যক্তি কর্তৃক ধর্ষণ পরবর্তী হত্যা অথবা ধর্ষণজনিত কারণে আত্মহত্যা হয়েছে। কিন্তু মরদেহগুলোতে কোনও আঘাতের চিহ্ন ছিল না। তখন মনে করা হয়, কোনও না কোনোভাবে ভিকটিমদের মৃতদেহের ওপরে কোনও ব্যক্তির বিকৃত যৌন লালসা চরিতার্থ হয়েছে। আর প্রতিটি মৃতদেহ মর্গে আনার পর তার মৃত্যুর কারণ জানতে ময়নাতদন্ত ও ডিএনএ বিশ্লেষণ করা হয়।
সব লাশই ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে রেখে দেওয়া হয়। সেখানে বেশ কয়েকজন ডোম নিয়মিত পাহারা দিতো। কিন্তু এই লাশগুলোর ক্ষেত্রে একজন ডোম সহকারী নিয়মিত ডিউটিতে থাকতো। প্রাথমিকভাবে ওই সহকারীকে সন্দেহ হয়। পরে তার সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। এরপর মর্গেও বাইরে নিয়ে কথা বলার নামে চা খাওয়ার ছলে তার ডিএনএ সংগ্রহ করে সিআইডি। সেটা সিআইডি ল্যাবে নিয়ে এসে বিশ্লেষণ করলে ওই ৬ মরদেহের ডিএনএ’র সঙ্গে ম্যাচ করে। তখন শতভাগ নিশ্চিত হয়ে তাকে গ্রেফতারে অভিযান চালানো হয়। কিন্তু এই বিষয়টি মুন্না ভক্ত বুঝতে পেরে সে গা ঢাকা দেয়।
সিআইডি সদর দফতর থেকে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে জানানো হয়, রাজধানীতে ৬ নারীকে ধর্ষণের অভিযোগে সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের মর্গের ডোম সহকারী মুন্নাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। আর মুন্নার ডিএনএ প্রোফাইল মিলে যাওয়ায় মৃতদেহের ওপর সে যে বিকৃত যৌনাচারের করেছে সেটা বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত হয়েছে। মর্গ সুত্র জানায়, মুন্না ভগত তার মামার সঙ্গে মর্গ সহযোগী হিসেবে মর্গে কাজ করতো। কিন্তু জঘন্যতম একটি অপরাধের অভিযোগে তাকে গ্রেফতারের পরই তার অপকর্মের তথ্য প্রকাশ হয়। সিআইডির অতিরিক্ত উপ-মহাপরিদর্শক সৈয়দ রেজাউল হায়দার জানান ঘটনাটি খুবই ন্যক্কারজনক।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, গ্রেফতার হওয়া মুন্না ভক্ত মামার নাম জতন কুমার লাল। ২/৩ বছর ধরে সে মর্গে থাকা মৃত নারীদের ধর্ষণ করে আসছিল। সম্প্রতি এরকম একটি অভিযোগ পেয়ে মুন্নার বিষয়ে অনুসন্ধান শুরু করে সিআইডি। প্রাথমিক অনুসন্ধানে ঘটনার সত্যতা পাওয়ায় মুন্নাকে গ্রেফতার করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে মুন্না মৃত নারীদের ধর্ষণের কথা স্বীকার করেছে। মৃত নারীদের ধর্ষণ করা পৃথিবীর জঘন্যতম একটি কাজ। সুস্থ ও স্বাভাবিক কেউ এমন জঘন্যতম কাজ করতে পারে না। গ্রেফতার হওয়া মুন্না বিকৃত মানসিকতার। তা না হলে এমন কাজ তার করার কথা নয়।
সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের মর্গে দায়িত্বরত ডোম ও মুন্নার মামা জতন কুমার লাল গতকাল জানান, তার ভাগ্নে মুন্না দুই থেকে তিন বছর ধরে তার সহযোগী হিসেবে মর্গে কাজ করে আসছে। তার বাবার নাম দুলাল ভক্ত। রাজবাড়ি জেলার গোয়ালন্দ বাজারে তার গ্রামের বাড়ি। সে আরও দুই তিন জনের সঙ্গে মর্গের পাশে একটি কক্ষেই রাতে থাকতো। মুন্না হঠাৎ করে গা ঢাকা দেয়। আর তার মোবাইল নম্বরও বন্ধ পাওয়া যায়। এজন্য বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় শেরেবাংলা নগর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (নম্বর- ১২৩৬) দায়ের করা হয়েছিল। মুন্নার মামা আরো জানান, সে মাঝে মধ্যেই গাঁজা সেবনসহ নেতা করতো। কিন্তু মৃত নারীর দেহ ধর্ষণ করার মতো ঘটনা আমার বিশ্বাস হচ্ছে বলে জানান তিনি।


বিজ্ঞাপন