নওয়াপাড়া নদীবন্দর বিআইডব্লিউটিএ কর্তৃপক্ষের খামখেয়ালীপনা

খুলনা সারাদেশ

 

 

সুমন হোসেন, অভয়নগর : যশোরের শিল্প-বাণিজ্যে ও বন্দর নগরীর একমাত্র প্রাণ হলো নওয়াপাড়া ভৈরব নদী। নওয়াপাড়া নদী বন্দরকে আধুনিকায়ন ও নদীর নাব্যতা ধরে রাখতে প্রতি বছর শত শত কোটি টাকা বরাদ্দ দিচ্ছেন। স্থানীয় বিআইডাব্লিউটিএ (বাংলাদেশ ইনল্যান্ড ওয়াটার ট্রান্সপোর্ট অর্থরিটি-বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষ) কর্তৃপক্ষের খামখেয়ালীপনায় বর্তমান সরকারের মহতী উদ্দ্যেগ ভেস্তে যেতে বসেছে। সেই সাথে সরকারের কাঙ্খিত রাজস্ব আদায় হচ্ছে না। বিভিন্ন শ্রেনীর ব্যবসায়ীরাও পাচ্ছেন না প্রকৃত বন্দরের সুযোগ-সুবিধা। কিছু অসাধু ব্যবসায়ী গোপনে অর্থ লেনদেন করে বিভিন্ন ধরনের সুযোগ-সুবিধা বাগিয়ে নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে নওয়াপাড়া বিআইডাব্লিউটিএ’র কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে।
নওয়াপাড়া নৌ-বন্দরের পূর্বের সীমানা ছিলো ভাটপাড়া ফেরিঘাট থেকে মহাকাল মহাশ্মশান পর্যন্ত নদীর মধ্যে থেকে দৈর্ঘ্য ১২কিলোমিটার। বর্তমান এই সীমানার দৈর্ঘ্য আরও ১০কিলোমিটার বৃদ্ধি করে ভাটপাড়া ফেরিঘাট থেকে মজুদখালি নালা পর্যন্ত মোট ২২কিলোমিটার করা হয়েছে। বর্তমান সরকার এই নওয়াপাড়া নদী বন্দর থেকে প্রতি বছর ৩ কোটি টাকা রাজস্ব আদায় করেন। এই বন্দরে ঘাটের মালিকানা নির্ধারন হয় সীমানা ভিত্ত্বিক(জমির মালিকানা ভিত্তিত্বে) এবং জেটি তৈরী করার অনুমোদন দেওয়া হয় লাইসেন্স এর মাধ্যমে। বর্তমানে নওয়াপাড়া নদী বন্দরে লাইসেন্স প্রাপ্ত জেটি আছে আনুমানিক ৮০/৯০টি। ১মেট্রিক টণ বিভিন্ন ধরনের মালামাল নদী বন্দর এলাকায় লোড-আনলোড করলে নদী বন্দর কতৃপক্ষ কে ৩০ টাকা দিতে হয়। এভাবে সরকারের রাজস্ব আয় হয়। নির্ধারিত ফি এবং প্রয়োজনীয় কাগজ-পত্র সহ বিআইডাব্লিউটিএ’র চেয়ারম্যান বরাবর আবেদনের মাধ্যমে জেটি করার অনুমোদন দেওয়া হয়।
স্থানীয় সূত্র জানায়, নিয়মিত তদারকি করার অভাবে নওয়াপাড়া ভৈরব নদীতে অবস্থিত ৪টি পল্টুন এবং ৫টি জেটি বিআইডাব্লিউটিএ কতৃপক্ষ নির্মাণ করেছিলো। যার বর্তমান সময়ে ১টি পল্টুন এবং ২টি জেটি আছে নামে মাত্র। বাকি গুলো সঠিকভাবে তদারকি করার অভাবে নষ্ট হয়ে গেছে। সরকারের লাখ লাখ টাকা ব্যায় করে নওয়াপাড়া নদী বন্দরে নির্মিত জেটি গুলো ভেঙ্গে চুরে বিলিন হয়ে যাচ্ছে। দেখা শোনা না করার জন্যে প্রকাশ্যে বহিরাগতরা যে যার মতো জেটি গুলোর বিভিন্ন প্রয়োজনীয় জিনিস(কাঠ ও পিলার) খুলে নিয়ে যাচ্ছে। দেখে কেউ বুঝতে পারবে না, পূর্বে এখানে কোনো জেটি ছিলো। পল্টুন গুলো অযতেœ-অবহেলায় দিনের পর দিন পল্টুন গুলো খুলে পড়ছে। বাকি দু’টি জেটি অসুস্থ্য অবস্থায় অকেজো হয়ে পড়ে থাকা সত্বেও জীবনের ঝুকি নিয়ে সাধারন শ্রমিকরা বিভিন্ন ধরনের মালামাল লোড-আনলোড করে যাচ্ছে। এত কিছু ঘটে চললেও নওয়াপাড়া নৌ-বন্দর কর্মকর্তাদের চোখের ঘুম যেনো ভাঙ্গছে না। এই বিষয় গুলো নিয়ে চলছে অভয়নগরের বিভিন্ন চায়ের দোকানে আলোচনার ঝড়।
একজন সাধারন শ্রমিক বলেন, অসাধু ব্যবসায়ীরা নদীর মধ্যে ২৫-৩০ ফুট দখল করে ইট-পাথরের খোয়া দিয়ে ভরাট করে নদীর পানির প্রবাহমান ¯্রােতকে বাধাগ্রস্থ করছে। কর্মকর্তারা পল্টুন এবং জেটি গুলোর নষ্ট হওয়ার জন্যে মূল দায়ী। সাহেবরা এসে বড় বড় ব্যবসায়ীদের সাথে অফিসে বসে চা খেয়ে গোপনে কি আলোচনা করে চলে যায়।
অভয়নগর-নওয়াপাড়া পৌর হ্যান্ডলিং শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি ফাল্গুন মন্ডল বলেন, হাজার হাজার শ্রমিক জীবনের ঝুকি নিয়ে নিয়মিত কাজ করেন এই নওয়াপাড়া ভৈরব নদীর বিভিন্ন ঘাটে। ভৈরব নদী এবং নদীর নব্যতা ধরে রাখার জন্যে বিআইডাব্লিউটিএ’র কতৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। সাধারন শ্রমিকদের কথা ভেবে অবৈধ দখলের বিরুদ্ধে মহামান্য হাইকোর্টে একটি মামলা করেছি। আশা করি মামলাটির মাধ্যমে অবৈধ দখল উচ্ছেদ অভিযানের মধ্যে দিয়ে এই ভৈরব নদী বেচেঁ থাকবে। সেই সাথে নদীর মধ্যে লংবুম বসিয়ে যে সকল ব্যবসায়ীরা অবৈধ দখল করে এই ভৈরব নদী কে মেরে ফেলতে চায় তাদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবী জানাচ্ছি।
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীন নৌ-পরিবহন কতৃপক্ষের নওয়াপাড়া নদী বন্দরের সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ শাহ আলম মিয়া বলেন, নওয়াপাড়া নদী বন্দরে আমি সম্প্রতি নতুন এসেছি। এখনো অনেক কিছু সম্পর্কে জানি না। অবৈধ দখল উচ্ছেদ সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন অবৈধ দখল উচ্ছেদ অভিযান খুব দ্রুত সময়ে বাস্তবায়ন হবে। আপনারা দেখতে পাবেন। নতুন একটি ১৫০০ কোটি টাকার প্রকল্প অনুমোদন হয়েছে। ঐ অর্থ দ্বারা নওয়াপাড়া নৌ-বন্দরের নতুন অফিস, নদীর ভেতরের পাশ্বে মালামাল লোড-আনলোডের জন্যে গাইড ওয়াল নির্মাণ, বিভিন্ন ধরনের মালামাল কার্গো-জাহাজ থেকে নামিয়ে রাখার জন্যে সরকারি গোডাউন নির্মাণ করা হবে। অপরিকল্পিত ড্রেজিং বিষয়ে জানতে চাইলে বলেন, এই বিষয়ে আমার জানা নেই। তবে খুলনা অফিসের এক্য্রেন ভালো বলতে পারবেন। তার সাথে কথা বলেন।


বিজ্ঞাপন